E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং আগামীর স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকি

২০২৩ মে ০৬ ১৫:৫১:২৫
আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বরং আগামীর স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকি

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার আশপাশে থাকা একজন বিকলাঙ্গ মানুষ বা গরিব দিনমজুর জীবনের প্রতিকূলতার মাঝে থেকেও খুশি মনে কীভাবে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে? অথচ আপনি সামান্য কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আত্মহত্যার কথা ভাবছেন! আত্মহত্যা মানেই সবকিছুর সমাধান নয় বরং জীবনযুদ্ধে হার মেনে নেওয়া।

আত্মহত্যা শব্দটি শুনলে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া। কাগজ-ধুলাবালু উড়ছে। চোখ খুলে রাখা যাচ্ছে না। নিজেকে যেন আশপাশের পরিবেশ থেকে গুটিয়ে নিতে হয়। কোনো ঝোড়ো হাওয়া থেকে বাঁচতেই কি মানুষ এই পথ বেছে নেয়? পৃথিবীর যে অপরূপ সৌন্দর্য, তাকে কি আর কাছে টানে না? কিন্তু গুটিয়ে নেওয়ার পথ কোনো পথ নয়। জীবনের সন্ধানে খুঁজে নিতে হয় কোনো নিরাপদ স্থান। আত্মহত্যা নয়, জীবনের সন্ধানই তাকে দেয় মুক্তির পথ।

মানসিক অবসাদ থেকে সহজ ও মুক্তির পথ হিসেবে আজকাল আত্মহত্যাকে বেঁচে নিচ্ছে দেশের সার্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের অনেকেই। উদ্বেকজনক হারে বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা। কয়দিন পরপর এমন ঘটনা আমরা দেখছি। সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজনের আত্মহত্যার খবর প্রকাশ পায়। বিভিন্ন কারণে এইসব ঘটনা ঘটছে। এই আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আমাদের ভাবিয়েছে এবং ভাবাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে আত্মহত্যাই একমাত্র পথ নয়। বেঁচে থাকার আকুতি প্রতিটি জীবের সহজাত প্রবৃত্তি। পরিবেশের সাথে লড়াই করে কীভাবে টিকে থাকতে হয় তার কৌশল জীবের মধ্যে লুকিয়ে আছে। সব মানুষই বাঁচতে চাই। তারপরও কিছু মানুষ আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেই। বেঁচে থাকা তাদের জন্য এতোটাই কষ্টের হয় যে, মরে যাওয়ার মাধ্যমে মুক্তির স্বাধ খুঁজে তারা। নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেশি, কিন্তু আত্মহত্যার কারণে মৃত্যু বেশি হয় পুরুষের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে আট লক্ষেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। যার অর্থ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। এছাড়াও আরো বহুগুণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সারা বিশ্বে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে তার ৭৫ শতাংশ হয়ে থাকে নিম্ন বা মধ্য আয়ভুক্ত দেশগুলোতে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হলো দশ নম্বরে। গোটা দুনিয়ায় ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যাই মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এতো আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ধরা হয় মূলত বেকারত্ব, মানসিক চাপ, তীব্র বিষন্নতা, একাকিত্ব, পারিবারিক জটিলতা,সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকটকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সেশনজটে পড়ে পিছিয়ে যাওয়া, চাকরি পাওয়ার অনিশ্চিয়তা, পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা এইসব কারণে বিষন্নতা তৈরী হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। যা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু এটাও মানতে হবে যে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। তাছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা উদাসীন। কেন যেন মানতেই পারি না ভালো মন্দ যাই ঘটুক, সেটি জীবনেরই অংশ। জীবনটা অনেক মূল্যবান। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে ধৈর্য্যশীল হতে হবে।

প্রতিযোগিতা নয় বরং সহযোগিতাই পারে পৃথিবীটাকে বদলে দিতে। একটি মানুষ আত্মাহত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তার মধ্যে জ্ঞান বুদ্ধি কাজ করে না। কত তুচ্ছ কারণেই না মানুষ আত্মহত্যা করে। আমরা কি কিছু করতে পারি না? আশেপাশের নিরাশাগ্রস্থ মানুষগুলোকে কি একটু সাহস যোগাতে পারি না? যারা নিজেরা নিজেদেরকে সহায়তা করতে পারছে না তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে আপন করে একটু কথা বলতে পারি না?

হ্যা পারি। যারা মরতে চাই তাদের মনকে জীবনের প্রতি ভালোবাসা তো জাগাতে পারি। বেশি কিছু না একটু উদ্যোগী হতে বলছি। অশনি সংকেত পেতে চোখ কান সজাগ রাখতে হবে। আমাদের আশেপাশের কেউ যেন মানসিক সমস্যার গুমরে না মরে আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। জীবনে চলতে হবে সাহসিকতার সঙ্গে, নির্ভয়ে, নির্ভারে। ছোট এই জীবনটাকে নিজ হাতে আরও ছোট করা কেন? কষ্টকর করা কেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, দেশে প্রতিবছর ১০ হাজার ১৬৭ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ২০১২ সালের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে ৭ দশমিক ৮ জন আত্মহত্যা করে। খুবই উদ্বেগজনক এই চিত্র। পুলিশের হিসাব বলছে, বছরে চার-পাঁচ হাজার লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ওদিকে আপন সত্তার বিভ্রমে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। সারা দুনিয়ায় বছরে আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। আর আত্মহত্যার চিন্তায় মনোরোগে ভোগে ১০ কোটি মানুষ। বিষয়টি হেলাফেলার নয়। আত্মহত্যা চিন্তার বেঘোরে থাকা মানুষদের মধ্য থেকেই অনেকে সচেতনতার অভাব, পরিবারের অবহেলার জন্য এই পথ বেছে নেয়। সচেতনতাই হলো এই মনোব্যাধির প্রধান ওষুধ।
মনের আকাশে যদি কালো মেঘ উঁকি দেয়, তখন আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা জরুরি। চারপাশের সমস্যাগুলোকে ছোট মনে করে নিজের জন্য বাঁচতে হবে।

অন্যের জন্য নিজে কেন আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন? এটিও ঠিক যে কিছু কিছু সমস্যা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। তবু আত্মহত্যা কোনো সমাধান দিতে পারে না। তিনিই আসল মানুষ, যিনি সমস্যার মধ্যে থেকে তার মোকাবিলা করেন। পায়ের তলার মাটি শক্ত করা প্রয়োজন। অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না চেপে নিজের প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেওয়া উচিত। আসুন আত্মহত্যাকে না বলি, জীবনকে ভালোবাসতে শিখি।সবাই মিলে সুন্দর -সুশোভিত একটা পৃথিবী গড়ি।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test