E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এ কী কথা শুনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের মুখে!

২০২৩ মে ১২ ১৫:০৬:৩৯
এ কী কথা শুনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের মুখে!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


কিছুটা শারীরিক অসুস্হতার কারণে বিষয়টির ওপর আমার প্রতিক্রিয়া জানাতে বিলম্ব হলো, ইতোমধ্যে অনেকেই মতামত ব্যক্ত করেছেন, চোখে পড়েছে।তাদের সাথে তাৎক্ষণিক একাত্মতা জানাতে না পারা আমাকে বড় পীড়া দিচ্ছে, এ মনোবেদনা লাঘবের জন্য আজকের আমার কিছু কথা।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলমের নেতৃত্বে একজন মুক্তিযোদ্বার মৃত্যুরপর সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় নিয়মাচার অনুযায়ী “গার্ড অব অনার” দেওয়া হয়।একজন নারীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন এতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি “অসম্মান” প্রদর্শন করা হয়েছে। এমনকি এজন্য ইউএনওর প্রত্যাহার চেয়েছেন তিনি।

একাত্তরে রণাঙ্গনের সম্মুখ সারির বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার নারীর প্রতি এমন অবমাননাকর মন্তব্যে আমরা বিব্রত ও মর্মাহত হয়েছি।

ফারজানা আলম কেবল একজন নারী নন, তিনি রাষ্ট্রের একজন প্রতিনিধি এবং এখানে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সরকার যখন নিরন্তর কাজ করে চলেছে , তখন শত বছর পুরানো মনমানসিকতার প্রতিফলন ঘটিয়ে সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের মানুষের এমন মন্তব্য কেবল বেমানানই নয়, অসম্মানজনকও।

কাদের সিদ্দিকী সাধারণ নন, অসাধারণ মানুষ। মুক্তিকামী মানুষের মনে তাঁর একটা আলাদা উঁচু আসন রয়েছে , মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যা করণীয় মনে করেছেন তা অসম সাহসিকতার সাথে সে পথে এগিয়েছেন, বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন মানুষের ভরসার স্থল, সাহসিকতার প্রতীক। ওই সময়ে রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তান মনোভাবনার মানুষ কাদের সিদ্দিকীর নাম শুনলে বাঘের গর্জন শুনতে পেত।

কিন্ত নারী ইউএনও এর প্রতি এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ কেবল নারী বিদ্বেষ ও পুরুষ তান্ত্রিকতাকে উস্কে দেবে।

ইউএনও ফারজানা আলমকে সখীপুর থেকে অন্যত্র বদলি করা হলেও তাঁর কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি নেই, কারণ তিনি অন্য উপজেলায় বদলি হলেও সেখানেও তিনি সরকারের একজন প্রথম শ্রনীর কর্মকর্তা হিসেবে একই দায়িত্ব পালন করবেন। নারী বা পুরুষ এটা বিবেচ্য নয়, তিনি ইউএনও এটাই বিবেচ্য।ভাবতে বিস্ময় লাগে, নারীব গর্ভে জন্ম নিয়েও আমরা নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্য করতে দ্বিধা করি না।

আফগানিস্তান ও ইরানের নারীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা আমরা লক্ষ্য করছি।

শতবর্ষ আগে নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া এমন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে নারীরাও জজ, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেট হবে। সময়ের বিবর্তণে আমাদের দেশে সরকারি বেসরকারি সকল কর্মকান্ডে নারীর অংশ গ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে, সন্দেহ নেই। মৌলবাদী ধর্মান্ধদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নারীরা আজ মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট খেলছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নারীর সাফল্য রয়েছে। আজ যা বাস্তব ৫০ বছর পূর্বে তা ছিল কল্পনাতীত। শত প্রতিবন্ধকতা সত্তেও নারী অগ্রগতি থেমে নেই, সমাজ রাতারাতি পাল্টাবে না, ধীরে ধীরে পাল্টাবে। তবে সচেতন অগ্রসর মানুষদের অনুপ্রেরণা পেলে সমাজ বিবর্তণের ধারা ত্বরান্বিত হবে।

কিন্ত নারীর প্রতি বিশিষ্টজনের অবমাননাকর মন্তব্য নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে চলমান অগ্রযাত্রা কিছুটা হলেও বাঁধাগ্রস্ত হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test