E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লাগ ভেলকি লাগ, চোক্ষে মুক্ষে লাগ

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বনাম সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ

২০২৩ মে ১৩ ১৫:০৪:১৪
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বনাম সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ

রহিম আব্দুর রহিম


নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোজাসাপটা পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের স্কলে ১০মের বিকালে থেকে ভাসছে, "সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা না.গঞ্জে।" শিরোনামের একটি সংবাদ।প্রেসবিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদটির সারসংক্ষেপ, "নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কার্যকরি পরিষদের সদস্য আবু সাউদ মাসুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করেছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর নেতৃত্ববৃন্দরা এই ধরণের মামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জানিয়ে  মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন।" জেনেছি, এই মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পিএস হাফিজুর রহমান। 

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ডিজিটাল আইনে মামলার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই ধারনা করা যাচ্ছে। একজন কলাম লেখক হিসেবে, বিষয়টি নানাভাবে জানার চেষ্ঠা করেছি। জানা যায় নি, তবে সোজাসাপটা দৈনিক পত্রিকার ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি, ওই রিপোর্টের শিরোনাম "সাময়িক প্রকাশনা বন্ধ করে দেবার ষড়যন্ত্র", সোজাসাপটা প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টির শুরু হয় এইভাবে,"প্রাণি জগতে শিয়াল অত্যন্ত চতুর প্রাণি। কিন্তু মানুষ লালন করে কুকুর। কারণ কি? চালাকের চেয়ে মানুষের বিশ্বস্ততা বেশী প্রয়োজন। তাই কুকুর শিয়ালের চাইতে মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করে। চতুর্দিকে একদল শিয়ালের মাঝে বসবাস ছিল আমাদের। এখনো আছে। কারণ একটাই, তাদের চাতুরতার পরিধিটুকু মাপার জন্য। শেষ পর্যন্ত কতটুকু যেতে পারে তা দেখার জন্য।

অপরদিকে ইবলিশের কাজ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে তার অনুগামী করা। ইবলিশের সকল অবৈধ কাজকে মানুষের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান করা। এক ইবলিশের কবলে পড়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী। চিহিৃত এই ইবলিশের কবলে পড়ে অনেকেই হয়রানীর শিকার হয়েছেন। কেউ যুদ্ধ করে টিকে আছেন, আবার কেউবা ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। শহরময় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, এমপি শামীম ওসমান দৈনিক সোজাসাপটা পত্রিকার অনমুতিপত্র বাতিলের জোর তদবীর চালাচ্ছেন।" সোজাসাপটার প্রতিবেদক, শামীম ওসমানই যে পত্রিকাটি বন্ধের জন্য যে চেষ্টা করছেন, এ বিষয়ে বেশকিছু যৌক্তিক তথ্যাদি এই রিপোর্টের গর্ভাংশে সন্নিবেশিত করেছেন। যে তথ্যাদির সত্য মিথ্যার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের। উদাহরণ স্বরূপ ধরে নিলাম, শামীম ওসমান একজন অগণতান্ত্রিক চেতনার মানুষ। তিনি চান না, দৈনিক সোজাসাপটা পত্রিকাটি প্রকাশ হোক। যেকোন মূল্যে এই প্রকাশনাটি বন্ধ করা দরকার। তাই তিনি হয়তবা তাঁর সরকারের স্থানীয় প্রশাসনকে নেতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন(এটা আমার কাল্পনিক)। এই বলে কোন সাংবাদিক কি প্রত্যক্ষভাবে কাউকে গালিগালাজ করতে পারেন কি না, ক্ষুব্ধ হয়ে কারো বিরুদ্ধে লেখতে পারেন কি?

আবার কোন সাংবাদিক যদি কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার বা ভুলবাল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করেন, তবে ভীকটিম ক্ষুব্ধ ওই সংবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি পাঠাতে পারেন, এতেও যদি আশাতীত ফলাফল না আসে তবে তিনি প্রেসকাউন্সিলে অভিযোগ করত পারেন, এতেও কাজ হলো না, এবার উকিল নোটিশ, এরপর মামলা। দু'পক্ষই অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়টি হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন থেকেই শামীম ওসমানকে আমি চিনি। আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত সৈনিক। তাঁর বড় দোষের মধ্যে, তাঁর সুন্দর কথাটাও কর্কষ মনে হয়, অর্থাৎ তিনি কোকিল কন্ঠী নন। কাক কন্ঠী। বহুদিন পর, কোভিডকালীন 'হিরো অব দা কোভিড নাইনটিন খোরশেদ আলম" শিরোনামে"র একটি নিবন্ধ লেখার প্রাক্কালে কলামিস্টের পরিচয় দিয়ে তাঁকে ফোন করেছিলাম, নারায়ণগঞ্জের মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সম্পর্কে জানার জন্য। অত্যন্ত বিনিময়ে স্বরে খোরশেদের কর্মকান্ডের প্রশংসা করেছেন তিনি।

জানতাম, নারায়ণগঞ্জের মেয়র আইভি রহমানের সাথে শামীম ওসমানের রাজনৈতিক সম্পর্ক দা-কুমড়া। বিষয়টির কৌশলগত ধারনা নিতে ওই সময় আইভি রহমানকেও ফোন করেছিলাম। তিনিও খোরশেদের সেবার প্রশংসা করেছে। নারায়ণগঞ্জের এই দু'ব্যক্তির সেলফোন নম্বর দিয়েছিলেন, সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ। খোরশেদকে নিয়ে ওই লেখাটি সাংবাদিক মাসুদ সম্পাদিত অনলাইন পোর্টাল নারায়ণগঞ্জ নিউজে ২৯মে ২০২০ আপলোড হয়েছিল। যে লেখাটি এবার অমর একুশে বই মেলায় আমার, 'তিতা মিঠা কড়া কথা' বইটিতে 'একালের হিরো' শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে।

লেখক হওয়ায় সাংবাদিক মি. মাসুদকেও আমি নানাভাবে জেনেছি এবং চিনেছি। এমনটাতো হবার কথা নয়। ক্ষমতা বা জয় পরাজয়ের বিষয় নয়, দেখতে চাই, দু'প্রান্তের, দু'ধারার, দুই সিনিয়রের মধ্যে কেউ প্রথম সিনিয়রত্বের পদকটা গ্রহণ করেন। শেষ করার আগে একটি কাল্পনিক গল্প তুলে ধরছি, তাঁদেরই জ্ঞাতার্থে। 'ক' আর 'খ' দুইবন্ধু। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনমানুষের খেদমত করছেন। অন্যজন সংবাদকর্মী হিসেবে মানুষের শোকে দুঃখে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। একদিন 'ক' আর 'খ' এর মধ্যে টেবিল হট টক হচ্ছিল। হঠ্যাৎ 'ক','খ'কে ইবলিশ শয়তান বলে গালি দিলো, 'খ' 'ক'কে গর্দভ বলে গালি দিল। এই নিয়ে আশেপাশের 'ট', 'ব', 'চ' রা 'ক' এবং 'খ'কে উসকানি দেওয়া শুরু করলো দুটি কারণে, তার প্রথমটি মজার দেখার, দ্বিতীয়ত দু'জনকেই ডুবানো।

'ক' উৎসাহ পেয়ে এবার 'খ'কে শয়তান বলে আখ্যা দিয়ে তা মারবেল পাথরে খোদাই করে গ্রামের জনবহুল জায়গায় স্থাপন করে দিলো। 'খ'এবার এই বিষয়ে ন্যায় বিচার পাবার জন্য, গ্রাম-গঞ্জের সবার দ্বারে দ্বারে ঘটনা বলে বেড়াতে শুরু করলো। একদিন গ্রাম্য বিচারে রায় হলো, 'ক' যে 'খ'কে শয়তান বলেছে, তার প্রমাণ, জনবহুল স্থানে স্থাপিত খোদাই করা মারবেল পাথর। 'খ' যে 'ক'কে গর্দভ বলেছে এটা শোনা কথা, ভিত্তিহীন, বিকৃত। কারণ এটার প্রমাণ নেই। তথাকথিত সুশীল সমাজের কারিগরের একাংশ এখনো 'লাগ ভেলকি লাগ, চোক্ষে মুক্ষে লাগ' মন্ত্রে সক্রিয়। আমরা চাই, সাংবাদিকতা যেনো ক্ষোভের অস্ত্র না হয়, আবার আইন প্রণেতা দ্বারা যেনো আইনের অপব্যবহার না ঘটে।

লেখক : শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test