E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস

পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে গড়ে উঠুক পারস্পারিক সম্পর্কের বন্ধন

২০২৩ মে ১৪ ১৬:২৭:৩২
পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে গড়ে উঠুক পারস্পারিক সম্পর্কের বন্ধন

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


১৫ মে সোমবার  আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ২০২৩। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল। যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষে জাতিসংঘের মতে, দিনটি পরিবার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর এবং পরিবারগুলোকে প্রভাবিত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর একটি সুযোগ সরবরাহ করে।১৯৯৬ সাল থেকেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। পরিবার আত্মীক সম্পর্কের সূতিকাগার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গড়ে ওঠে স্নেহ মমতা, ভালোবাসা সৌহার্দ এবং পারস্পারিক সম্পর্কের বন্ধন। 

সুপ্রাচীন কাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র সারাবাংলা জুড়ে ছিল এখন তা অনেকটাই ম্লান। শহুরে জীবনে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে যৌথ পরিবারের চিত্র। আগে গ্রামে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন তাও নেই। বংশ মর্যাদা এমনকি ঐতিহ্যের পরিবারেও বিলীন একত্রে বাস করার ইতিহাস। পরিবার মানেই হচ্ছে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দাদী বাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস। আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের এই ধারণা প্রচলিত অতীত থেকেই। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে, আমরা যেন ততোই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। যেন ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছি আমরা পরিবারকে। সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। মা-বাবাকে হয়তো গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারে পারস্পরিক সম্প্রীতি গভীর হয়, অটুট থাকে। অসুখ বিসুখসহ নানা সমস্যায় একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

এতে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান হয়ে যায় অতি সহজে। সময়ের তাগিদে যৌথ পরিবার কিংবা পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার বিষয়টি যখন এই সমাজে ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আজকের এই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। রক্তের বন্ধন মানেই পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে অকৃত্রিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা অটুট রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলে পারিবারিক নানা জটিল সমস্যা ও মোকাবেলা করা যায়। সকলের এগিয়ে চলার পথ হয় মসৃণ।

পরিবারের ভূমিকা

মানবজীবনে প্রত্যেক মানুষের জন্য এই পারিবারিক শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর এগুলো আয়ত্ত করতে পরিবার-ই সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। নানাবিধ চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করতে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম।

ভদ্রতা, নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, কৃতজ্ঞতাবোধ শেখা,বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন,কনিষ্ঠদের স্নেহ-আদর করা,অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা,পরোপকারিতার মানসিকতা গড়ে তোলা,উদার মানসিকতাবোধ জাগ্রত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যতটা না অর্জন করা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিবার থেকে অর্জন করা যায়।

দিবসটির ইতিহাস

আধুনিক সামাজিক ব্যবস্থার প্রসার, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং সংখ্যানুপাতিক হারে জীবিকার তারতম্য ঘটতে থাকায় যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞানী নজরুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, জীবনের তাগিদেই আগের মতো ভাই-ভাই এক সঙ্গে বসবাস করেন না। এমনকি এই ঢাকা শহরে একই বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি ফ্লাটে থাকলেও কথা বা সামাজিক রীতির আদান প্রদান হয় খুবই কম।

কোন মানুষ পরিবারে একটু বড় হলে কিংবা বিয়ে করার পর সন্তান হলেই তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে যৌথপরিবার থেকে আলাদা হয়ে নতুন একটি ছোট্ট পরিবারের জন্ম দিচ্ছেন প্রায় সবাই। তার অনুযোগ, যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ার কুফল হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশে যা উদ্বেগজনক।

১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় শিল্প বিপ্লব ঘটতে থাকে। শিল্প প্রসারের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর যুব সমাজ অর্থ উপার্জনে ঝুঁকে পড়েন। এতে পরিবারের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যায়। অনেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবার থেকে। কাজ এবং অর্থের প্রয়োজনে যে যেখানে পারছে ছোট ছোট পরিবার গড়ে তুলেছে। এভাবেই ভেঙে গেছে অনেক যৌথ পরিবার।

১৯৮০ এর দশকে, জাতিসংঘ পরিবার সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করা শুরু করে। ১৯৮৩ সালে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের সুপারিশগুলির ভিত্তিতে, উন্নয়ন প্রক্রিয়াতে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে সামাজিক উন্নয়ন কমিশন (১৯৮৩/২৩) সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মহাসচিবকে অনুরোধ করে এবং পরিবারের সমস্যা এবং কার্যকরী পন্থায় পরিবারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

১৯৮৫ সালের ২৯ শে মে, ১৯৮৫/২৯ এর রেজুলেশনে কাউন্সিল জেনারেল অ্যাসেমব্লিকে তার চল্লিশতম অধিবেশনের অস্থায়ী কর্মসূচিতে “উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবার” নামে একটি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা বিবেচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, সরকার, আন্তঃসরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলো এবং জনমত নির্বাহের দিকে জড়িত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশ্ব সচেতনতার বিকাশের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করেন।

পরে, সামাজিক উন্নয়ন কমিশনের ৩০তম অধিবেশন অধিবেশন গঠনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সংসদটি সমস্ত রাজ্যকে পরিবারের একটি আন্তর্জাতিক বছরের সম্ভাব্য ঘোষণার বিষয়ে তাদের মতামত জানাতে এবং তাদের মতামত ও প্রস্তাব দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

পরিষদ সেক্রেটারি-জেনারেলকে তার ৩০তম তৃতীয় অধিবেশনে সাধারণ পরিষদকে এমন একটি বছরের সম্ভাব্য ঘোষণার বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মতামত এবং প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য অন্যান্য উপায় ও উপায়ের ভিত্তিতে একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ জানায় এবং পরিবারের মঙ্গল এবং সামাজিক অগ্রগতি এবং বিকাশের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার।

১৯৮৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর ৪৪/৮২ এর রেজুলেশনে, সাধারণ পরিষদ ১৯৮৯ সালে এক প্রস্তাবে ১৯৯৩ সালকে বিশ্ব পরিবার বর্ষ হিসেবে অনুমোদন করে।

জনসংখ্যার হিসাব

আমাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। বাড়ছে পরিবারের সংখ্যা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ। ২০০০ সালে এ জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ কোটিতে। ২০১৯ সালের জুনে প্রকাশিত খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৭৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ পরিবার স্থায়ী কাঁচা ঘরে বসবাস করে। ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ পরিবার বাস করে পাকা ঘরে। ঝুপড়ি ও অস্থায়ী কাঁচা ঘরে বাস করে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ পরিবার।বাংলাদেশে মোট খানার সংখ্যা এখন (এক হাড়ির রান্না খেয়ে যারা একসঙ্গে থাকেন) ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১টি। প্রতিটি খানায় গড়ে ৪ জন বাস করেন।
২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০টি, তখন প্রতি খানার জনসংখ্যা ছিল গড়ে ৪ দশমিক ৪ জন।দেশে মোট বাস গৃহের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৫১টি। এর মধ্যে পল্লী এলাকায় রয়েছে ২ কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৬৬৭টি; আর শহর এলাকার বাসগৃহের সংখ্যা ৮১ লাখ ৭৯ হাজার ২৮৪টি।

জনসংখ্যার ঘনত্ব

বর্তমানে দেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,১১৯ জন মানুষ বাস করে। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৭৬ জন।

বৈবাহিক অবস্থা

বর্তমানে দেশের ১০ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বিবাহিত, ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ অবিবাহিত, ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বিধবা/বিপত্নিক, ০.৪২ শতাংশ তালাকপ্রাপ্ত এবং দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন ০.৩৭ শতাংশ।

ধর্মভিত্তিক হার

গত ১১ বছরে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনসংখ্যা আরও বেড়ে মোট জনংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারিতে এই হার ছিল ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

অপরদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হয়েছে।

একইভাবে বৌদ্ধ ধর্মানুসারী ০.৬২ শতাংশ থেকে কমে ০.৬১ শতাংশ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর হার ০.৩১ শতাংশ থেকে কমে ০.৩০ শতাংশ হয়েছে।

বেড়েছে সাক্ষরতার হার

নতুন শুমারিতে দেশের ৭ বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারিতে এই হার ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বর্তমানে দেশের ৭৬ শতাংশ পুরুষ, ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ নারী এবং ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হিজড়ার সাক্ষরজ্ঞান রয়েছে।

মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী

দেশে ৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী।

আবার ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। তাদের ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ পুরুষ, ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ নারী।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী

৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আবার ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের ৩৭ দশমিক ০১ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

খাবার পানির প্রধান উৎস

দেশের ৮৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ মানুষ গভীর বা অগভীর টিউবওয়েলের পানি পান করেন। ট্যাপ বা পাইসে সরবরাহ করা পানি পান করেন ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ। ০.৫৯ শতাংশ মানুষ বোতল বা জারের পানি পানি করেন।

এখনও ০.৮৯ শতাংশ মানুষ পুকুর নদী খাল লেকের পানি, ০.৩৫ শতাংশ মানুষ কুয়ার পানি, ০.১২ শতাংশ মানুষ ঝরনা বা ছরার পানি এবং ০.৪২ শতাংশ মানুষ বৃষ্টির পানি পান করেন।

টয়লেট সুবিধা

দেশের ৫৬ দশমিক ০৪ শতাংশ মানুষ পানি ঢেলে নিরাপদ নিষ্কাশন সংবলিত টয়লেট ব্যবহার করেন। পানি ঢেলে অনিরাপদ টয়লেট ব্যবহার করেন ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

স্ল্যাবসহ পিট ল্যাট্রিন বা ভেন্টিলেটেড ইম্প্রুভড ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন ২১ দশমিক ৭২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া স্ল্যাব ছাড়া পিট ল্যাট্রিন বা উম্মুক্ত পিট ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। কাঁচা, ঝুলন্ত ল্যাট্রিন ব্যবহার করেন ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ মানুষ। ১ দশমিক ২৩ শতাংশ মানুষ কাজ সারেন খোলা জায়গায়।

বিদ্যুৎ সুবিধা

দেশের মোট জনসংখ্যার ৯৭ দশমিক ৬১ শতাংশ নাগরিক জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষ। ০.১৯ শতাংশ মানুষ অন্যান্য উৎসের (যেমন জেনারেটর) বিদ্যুৎ পেলেও ০.৭৫ শতাংশ মানুষ কোনো ধরনের বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে।৭১-এ পরিবার ছিল প্রায় ৯০ লাখ।বাংলাদেশের মানুষের এসব ঘরের ছাদ বা চাল ও দেয়াল বা বেড়া কোন ধরনের সামগ্রী দিয়ে তৈরি, তারও তথ্য দিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। ১১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ পরিবারের ঘরে ইট বা সিমেন্টের ছাদ। এই হার গ্রামের চেয়ে শহরে পাঁচ গুণ বেশি। ৮৪ দশমিক ২৯ শতাংশ পরিবারে ঘরের চাল টিন বা কাঠের। খড়, নাড়া, বাঁশ বা অন্য কিছু দিয়ে চাল তৈরি করেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ পরিবার।বর্তমানে জনসংখ্যা ধরা হয় ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২২-এর পোস্ট এনুমারেশন চেক (পিইসি)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনে দাঁড়িয়েছে।গতবছর ২৭ জুলাই জনশুমারি ও গৃহগণনার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল, সেখানে পুরুষের সংখ্যা দেখানো হয়েছিল ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। আর হিজড়ার আছেন ১২ হাজার ৬২৯ জন। প্রথমবারের মতো জনশুমারি ও গৃহগণনা কাজ পরিচালিত হয় গত বছরের জুনে।পূর্ববর্তী জনশুমারি ২০১১ অনুসারে, ২০১১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন।

দেশের প্রথম জনসংখ্যা ও খানাশুমারি ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় জনশুমারি, ১৯৯১ সালে ৩য় জনগণনা, ২০০১ সালে ৪র্থ শুমারি এবং ২০১১ সালে ৫ম জনগণনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।সর্বশেষ জন শুমারির রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। ১৯৮১ সালে এই হার ছিল ২.৮৪ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ২.০১ শতাংশ, ২০০১ সালে ১.৫৮ শতাংশ, ২০১১ সালে ১.৮৬ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ১.২২ শতাংশ।দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৭৪ শতাংশ এবং বরিশালে সর্বনিম্ন ০.৭৯ শতাংশ।১৫ জুন ২০২২ সালে একযোগে সারা দেশে ৬ষ্ঠ জনশুমারি এবং খানা গণনা কার্যক্রম শুরু হয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে সপ্তাহব্যাপী আদমশুমারির সূচনা করেন।
২১শে জুন জনশুমারি শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বন্যার কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে ২৮ জুন পর্যন্ত জনশুমারি চলে। বিবিএস ১১ বছরেরও বেশি সময় পর এই জনশুমারি করে।

পরিবারের কার্যাবলী

পরিবারের সদস্যদের সুন্দর ও নিরাপদ জীবন গড়ে তোলার জন্য পরিবার বহুবিধ কাজ করে। পরিবার সাধারণত যেসব কার্য সম্পাদন করে, সেগুলো নিম্নরূপ-

° জৈবিক কাজ : আমাদের মা-বাবা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি এবং তাদের দ্বারা লালিত পালিত হচ্ছি। অতএব, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করা পরিবারের অন্যতম কাজ। পরিবারের এই ধরনের কাজকে জৈবিক কাজ বলা হয়।

° শিক্ষামূলক কাজঃ আমাদের মধ্যে অনেকে বিদ্যালয় যাওয়ার পূর্বেই পরিবারের বর্ণমালার সাথে পরিচিত হই। তাছাড়া মা-বাবা-ভাই-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পারস্পারিক সহায়তায় সততা, শিষ্টাচার, উদারতা, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী শিক্ষালাভের প্রথম সুযোগ পরিবারেই সৃষ্টি হয়। এগুলো পরিবারের শিক্ষামূলক কাজ। আর পরিবারে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বলে পরিবারের শ্বাশত বিদ্যালয় বা জীবনের প্রথম পাঠশালা বলা হয়।

° অর্থনৈতিক কাজঃ পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি চাহিদা পূরণের দায়িত্ব পরিবারের।পরিবারের সদস্যরা বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে এসব চাহিদা মিটিয়ে থাকে।পরিবারকে কেন্দ্র করে কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, কৃষি কাজ, পশুপালন ইত্যাদি অর্থনৈতিক কাজ সম্পাদিত হয়।কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমে গিয়েছে। তবে আজও পরিবার আমাদের সকল প্রকার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করছে।

পরিবারের আদর্শ কার্যাবলি

° মিলেমিশে থাকাঃ একটি আদর্শ পরিবারে অন্যতম কার্যাবলী হলো পরিবারের সকলে মিলেমিশে একত্রে বাস করা। আর এ কাজটাই একটি আদর্শ পরিবার থাকে।

° শৃঙ্খলা বোধঃ পরিবারের সবাই একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা মধ্যে বাস করে। তারা বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ হতে নিজেদের বিরত রাখে এবং শান্তিতে বসবাস করে।

° মানসিক শক্তি বৃদ্ধিঃ পরিবারের কারো বিপদে পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ তাকে মানসিকভাবে সাহায্য করে। ফলে সে তার বিপদ হতে দ্রুত সেরে উঠতে পারে।

° সহযোগী মনোভাবঃ একটি আদর্শ পরিবারের লোকজন সর্বদা একে অন্যের প্রতি সহযোগী মনোভাব প্রকাশ করে। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্যের কমতে থাকে না।

° ক্ষমা পূর্ণ মনোভাবঃ পরিবারের কেউ ভুল কাজ করে থাকলে তাকে শাস্তি না দিয়ে বুঝানোর মাধ্যমে ক্ষমা করে দেওয়ার মনোভাব একটি আদর্শ পরিবার এর অন্যতম কার্যাবলী।

° একে অপরকে সময় দেয়াঃ এই আধুনিক যুগে সবাই এখন যন্ত্র হয়ে গেছে কিন্তু একটি আদর্শ পরিবার এ ক্ষেত্রে অন্যতম কার্যাবলী পরিবারের সব সদস্য একে অন্যকে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য আছে, আছে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এইসব কিছুকেই আমাদের ধারণ করে সামনে এগোতে হবে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন কিছু সংবিধান আছে তেমনি পারিবারিক সংবিধানও থাকা দরকার। যেমন পরিবারের সবার সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা। আমাদের জাতিগত একটি বৈশিষ্ট্য আছে, আছে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এই সবকিছুকেই আমাদের ধারণ করে সামনে এগুতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, অন্যের কাছ থেকে ধার করা কোনো কিছুতেই গৌরব নেই। বরং তা আমাদের জন্য অপমান।

সর্বোপরি, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে বলেই আমাদের সামাজিক নানা সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে অস্থিরতা। ধর্মীয় বিধানেও রক্তের সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার সমাজের ভিত্তিমূল।

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে বিশ্বের প্রতিটি পরিবারের বন্ধন দৃঢ় হোক এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য অক্ষুন্ন থাকুক-প্রতিটি পরিবারে বিরাজ করুণ অনাবিল সুখ শান্তি।'

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test