E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দাবদাহে পুড়ছে সারাবিশ্ব

২০২৩ জুন ০৭ ১৬:০৬:১৪
দাবদাহে পুড়ছে সারাবিশ্ব

গোপাল নাথ বাবুল


আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সংগঠন আইপিসিসি গত মার্চ মাসে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশসহ ১৯৫টি দেশের সরকার গ্রহণ করেছে। সে রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ এতই তীব্র হবে যা মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে তেমন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ সরকার ৪ দিনের জন্য দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেছে। বর্তমানে দেশের সর্বত্রই মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের ৯০ শতাংশ এলাকায় প্রচন্ড দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার পর্যন্ত রাজশাহীসহ দেশের বেশিরভাগ জেলায় ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠা-নামা করেছে। যা আরও ৫/৬ দিন অব্যাহত থাকবে বলে রবিবার আবহাওয়া অফিস জানায়। আরও জানা যায়-চট্টগ্রামের বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ রয়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। যা দিনের বেলায় আরও বেশি হয়। ফলে অধিক তাপমাত্রার সঙ্গে বাতাসের বাড়তি আদ্রতা মিলিয়ে গরমের অস্বস্তিকে আরও চরমে নিয়ে গেছে। তার ওপর বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং নাগরিক জীবনে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। ফলে প্রচন্ড গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন এবং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ-ব্যধিও। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মাঠে-ঘাটে কাজ করা শ্রমজীবীরা অর্থাৎ রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ঠেলাগাড়িওয়ালা, নির্মাণ শ্রমিকরা। গরমে তাদের কর্মঘন্টা কমেছে। অনেকে আবার বেশি পরিশ্রম করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছে। কারণ, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি, মৎস্য, উৎপাদন, খনিজ, খনন, পরিবহন ও নির্মাণের মতো খাতের অবদান ৫০ শতাংশেরও বেশি। অতিরিক্ত গরমে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় শুধু চট্টগ্রামেই ২৫০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। এমন অস্বস্তিকর গরম থেকে সহজে মুক্তি পাওয়ার সুখবরও কারও কাছে পাচ্ছি না। 

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক কর্মকর্তা বলেছেন, গরমের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টা আমাদের জন্য এক নতুন উপলব্ধি হয়ে আসছে। আমরা অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নগরায়ণ ও শিল্পায়ন করছি। কিন্তু এসব উন্নয়নকাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার দিকটি উপেক্ষা করে করা হয়। এর ফলে এখন দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ উন্নতি হচ্ছে, তার একটি অংশ উল্টো অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হযে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতি কমিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের ওপর জোর দিতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশের ৪৯টি জেলার ওপর দিয়ে এখন দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র তাপমাত্রার কারণে নির্মাণ ও কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে কমার ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও কমে যায়।

এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভ্যাপসা গরম ও অতিরিক্ত আদ্রতাযুক্ত আবহাওয়ায় (হিউমিড হিট) শ্রম ও উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ। সেই তালিকায় শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। আবহাওয়ার এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রতিবছর ৩২০০ কোটি কর্মঘণ্টা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

সুতরাং দাবদাহে পুড়ছে সারাবিশ্ব। প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। পুড়ছে বনাঞ্চল। মরছে হাজার হাজার পশুপাখি। প্রচন্ড দাবদাহের হাত থেকে রেহাই পায়নি ইউরোপ-আফ্রিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইউরোপ। মাত্রাতিরিক্ত গরমে কাহিল এ মহাদেশের দেশগুলো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপের প্রায় অর্ধেক ভূখন্ড অতি খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ অবস্থার উন্নতি না হলে মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে ইউরোপ। গ্রীষ্ম যে ক্রমশ প্রখর থেকে প্রখরতর হচ্ছে তা গত কয়েক বছরে স্পষ্ট হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সর্বাধিক তাপমাত্রা ছিল। ওই বছর গ্রীষ্মেও ভারতে প্রবল তাপপ্রবাহ দেখা গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতেই কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষক রমিত দেবনাথ, রনিতা বর্ধনের নেতৃত্বে এক দল গবেষক এ ব্যাপারে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তাতে তাঁরা দেখিয়েছেন যে, ভারতের ৯০ শতাংশ এলাকা তাপসূচকে ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে। ২০ শতাংশ এলাকা প্রবল বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে তাপপ্রবাহজনিত কারণে ২৪ হাজার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে ওই গবেষকরা দেখিয়েছেন, যখনই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে তখনই সুস্থায়ী উন্নয়নের গতি হ্রাস পেয়েছে।

সম্প্রতি কাতার সম্মেলনে আইএলও’র পূর্বাভাস অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। আগামী বছরগুলোতে এ কারণেই সবচেয়ে বেশি ভুগবে দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলো। ভারত, বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর বহু মানুষ কৃষিজীবী। কোনও বিমাসুবিধা ছাড়াই সেখানের সিংহভাগ মানুষ অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কাজ করেন।

পেশাজীবী মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করেন বিদ্যা বেণুগোপাল। চেন্নাইয়ের ‘শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিট্যুট’র এ অধ্যাপক জানিয়েছেন, ভারতে মরুভূমির মতো আবহাওয়ায় কাজ করেন লক্ষ লক্ষ লবণশ্রমিক। এসব শ্রমিকের কিডনি ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাদের কোনও বিমাসুবিধা নেই। দিনমান তারা লবণক্ষেতে কাজ করেন। গ্রীষ্মকালে এ লবণশ্রমিকদের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রচন্ড গরমের কারণে সৃষ্ট কোনও না কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

ভারতের উত্তরাঞ্চলের কোটি কোটি শ্রমিক ঝুঁকিতে আছেন জানিয়ে বেণুগোপাল জানান, বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কখন কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তার অপেক্ষা করার মতো সময় নেই ভারত ও অন্য দরিদ্র দেশগুলোর। তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ মারা যাচ্ছে, রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যরা এ থেকে বাঁচতে যা যা করে, আমাদেরও সেসব করা শুরু করতে হবে।’

গবেষকরা বলছেন, বেশ কয়েকটি রোগের কারণ প্রচন্ড গরম। এতে শ্রমজীবী মানুষের হিট স্ট্রোক, কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। প্রচন্ড গরমে কাজ করায় এসব রোগে শ্রমিকদের প্রাণহানি বাড়ছে। মধ্য আমেরিকায় চিনিকল শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে ‘লা ইজলা নেটওয়ার্ক’ নামের একটি সংগঠন। পেশাজীবীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করা এ সংগঠনের প্রধান জাস্টিন গ্রেসার জানান, ‘গত এক দশকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে মধ্য আমেরিকায় ২০ হাজারেরও বেশি চিনিকল শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কিডনি রোগে শ্রীলঙ্কায়ও মারা গেছেন প্রায় ২৫ হাজার।

বিশ্বে কৃষিশ্রমিক আছেন প্রায় ১০০ কোটি। এছাড়া নির্মাণ-সহ অন্যান্য খাতে কোটি কোটি শ্রমিক খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন। মূলত এসব শ্রমজীবী মানুষ দাবদাহের বেশি ঝুঁকিতে আছেন বলে জানানো হয় গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত কাতার সম্মেলনে। এছাড়া বাগান, ডাকবিভাগ, খাবার ও পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত পেশাজীবী আর শ্রমিকরাও সমান ঝুঁকিতে বলে জানানো হয়।

২০২০ সালে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন তাইওয়ানের একদল গবেষক। তাতে বলা হয়, প্রচন্ড গরম ও দাবদাহ থেকে সৃষ্ট কিডনি রোগ হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে উদ্ভূত ‘প্রথম মহামারি।’

ভিয়েতনামেও এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। ৪ বছর আগেও রেকর্ড ছিল ৪৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ থান হোয়াতে এ তাপপ্রবাহ চলছে। যেখানে কর্মকর্তারা দিনের সবচেয়ে উষ্ণ সময়ে মানুষকে বাড়ির ভিতরে থাকার জন্য সতর্ক করেছিলেন। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোও এমন আবহাওয়ার সম্মুখিন হচ্ছে। থাইল্যান্ডের পশ্চিম মাক প্রদেশে তাপমাত্রা চলছে ৪৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির পূর্বের একটি শহরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বর্ষা মৌসুমের আগে উভয় দেশে গরম পড়লেও তাপের তীব্রতা আগের রেকর্ড ভেঙ্গেছে।

চীনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে গতমাসে প্রচন্ড গরমের পর এখনও পর্যন্ত অবিরাম দাবদাহের মধ্যে রয়েছে। দক্ষিণের প্রদেশগুলো ফুসকা পড়া গরমে পুড়ছে। সাংহাইয়ের মতো বড় বড় শহরগুলোতে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার চাহিদা বাড়ছে। তার মধ্যে ভয়াবহ এ গরম বিদ্যুৎ গ্রীডগুলোর উপর তুমুল চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানা গেছে। আগামী কয়েকদিন চীনের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়ার পূর্বাভাসদাতারা। চীনের দাবদাহ নিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী সারাহ পারকিনস কার্কপ্যাট্রিক বলেন, এমনটা হবে তাতে আমি বিস্মিত নই, এটা যে খুব বাজে রকমের হবে, সেটাতেও বিস্মিত নই; বরং বিস্মিত হই এটা যেভাবে রেকর্ড ভাঙ্গছে তাতে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা একটার পর একটা রেকর্ড ভাঙ্গছে। এটা অবিরাম চলছে।

সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শ্রমজীবী মানুষের ওপর কী প্রভাব ফেলছে।’ উক্ত সম্মেলনের এক তথ্যে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী দিন দিন আরও উষ্ণ হচ্ছে। বসন্তকালেও তাপমাত্রা ছাড়াচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ডেকে আনছে দাবদাহ। প্রচন্ড গরমে কাজ করার কারণে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের মৃত্যু ও শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। উক্ত সম্মেলনে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার শ্রমিক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ ও প্রচন্ড গরমের কারণে অন্যান্য অসুস্থতায় প্রাণ হারাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে শ্রমিকদের মৃত্যু ঠেকাতে দেশগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ‘অকুপেশনাল হিট স্ট্রেস’ বা ‘গরমে পেশাজীবীদের ঝুঁকি’ শীর্ষক এ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আরব অঞ্চলের প্রধান রুবা জারাদাত জানান, ‘বিজ্ঞান আমাদের বলছে, এ বিষয়ে দেশগুলো আরও বেশি কিছু করতে পারে।’

প্রচন্ড গরমে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয় এমন শ্রমিক বা কর্মীদের জন্য আন্তর্জাতিক কোনও মানও ঠিক করা হয়নি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বিশ্ব যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে, তাতে এ বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি দাবদাহে নাজেহাল হয়েছিল ইউরোপের জনজীবন। তবে শুধু সাইপ্রাস ছাড়া ইউরোপের আর কোনও দেশ এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। শ্রমজীবী মানুষদের প্রচন্ড গরম থেকে রক্ষায় কাজের সময় বেঁধে দিয়েছিল সাইপ্রাস সরকার। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় কাজ করার সময় বেশি বিশ্রাম ও সুরক্ষামূলক পোশাকবিধি তৈরি করে।

প্রাণঘাতী একটি দাবদাহের পর ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ নিয়ে নতুন নিয়ম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। হোয়াইট হাউস বলেছিল, ‘দেশের প্রধান আবহাওয়া-সম্পর্কিত ঘাতক গরম।’ তবে প্রতিশ্রুত সেই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট এখনও নেয়নি।

সুতরাং সারা পৃথিবীজুড়ে এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মানুষ, মানুষ এবং শুধু মানুষরাই। সৃষ্টির সেরা জীব এ মানুষরাই প্রকৃতি ও সভ্যতার বৈঠা উল্টোদিকে টেনে চলছে। সর্বত্রই প্রকৃতিকে পাল্টে দেওয়ার মহোৎসব চলছে। ফলে খরা, তাপদাহ দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তাই পৃথিবীকে এ বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে মানুষদেরই আন্তরিকতার সঙ্গে সুন্দর মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। গাছপালা ও পাহাড় কেটে বনভূমি ধ্বংসের বিরুদ্ধে কঠোর ও সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং প্রত্যেক দেশের সরকারকে এ ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কৌশল সমূহ আয়ত্ত করতে হবে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test