E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিজ্ঞান আর আধুনিকতার কুফল বনাম সুফল

২০২৩ জুন ১৪ ১৭:৩৬:২৪
বিজ্ঞান আর আধুনিকতার কুফল বনাম সুফল

মীর আব্দুল আলীম


প্রযুক্তির শীর্ষে এসে আমরা কেমন যেন দিনদিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছি। এটা বিজ্ঞান আর আধুনিকতার কুফল! বিজ্ঞানের সুফলতো অনেক রয়েছে। কিছু মানুষ বিজ্ঞানের সফলতাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিকতায় গাঁ ভাসিয়ে এর অপব্যবহার করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিবটক, ইনোষ্ট্রগ্রাম এ জাতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমরা যেমন এগিয়ে দিয়েছে, আবার অনেক অপরাধের জন্ম দিচ্ছে এসব যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা দক্ষ হচ্ছি, ব্যবসায়ীকভাবে সমৃদ্ধশালী হচ্ছি, আবার উল্টো পথ ধরে নানা অপকর্ম জড়িয়ে পড়ছি আমরা। নীতিনৈতিকতার বাইরে চলে যাচ্ছি কখনো। নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধহীন মানুষ দেশ ও দশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাদের জন্য দেশ পিছিয়ে যায় অনেকটা পথ। পারিপার্শ্বিক যে অসভ্যতা দেখি তাতে আমাদের সেই নৈতিকতা এবং মানবিক পথ যেন বিচ্চুত। বিজ্ঞানের কল্যাণের সে পথ ধরে যতটা এগিয়েছি, পিছিয়ে গেছি অনেকটা পথ।  মানবিক গুণাবলী সম্পূর্ণ বহু মানুষ তৈরি হয়েছে এর কল্যাণের পথে হেঁটে। নিঃসন্দেহে এসব সম্পন্ন মানুষ দেশ, জাতি এবং পরিবারের জন্য গর্বের।

তথ্য প্রযুক্তিকে আমরা ব্যবহার করব; অপব্যবহার নয়। সচেতনতার মাধ্যমেই তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব। সরকার এবং সমাজের বিজ্ঞজনদের তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে এবং এর অপব্যবহার রোধে যথেষ্ট সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে একটি সুস্থ সমাজ, জাতি ও দেশ গড়ে তোলা সম্ভব। মনে রাখতে হবে। বিজ্ঞান ক্যাণের জন্য; অমঙ্গলের জন্য নয়।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে অগচঝ মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে। আশির দশকের শেষে চালু ছিল পেজার যন্ত্র, যা কোমরের বেল্টে বেঁধে অনেকেই ঘুরতেন। ওই সময়েই, ওয়াকিটকি ধরনের একটি মোবাইল ফোনও চালু হয়েছিল বাংলাদেশে। বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনে মোবাইল টেলিফোন প্রযুক্তি। তবে পথটা খুব সহজ ছিল না। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রাস্তায় দুই একজনের হাতে দেখা যেত অদ্ভুত দর্শন একধরনের যন্ত্র, যা কানে ঠেকিয়ে মানুষ কথা বলছেন দেখে মানুষজন অবাক হয়ে যেত। সেই মোবাইল এখন সবার হাতে হতে। ১৯৯৩ সালে সিটিসেল নিয়ে আসে প্রথম মোবাইল ফোন। এটা শুধু বাংলাদেশেই প্রথম ছিল না, উপমহাদেশের মধ্যে প্রথম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ছিল। চড়া মূল্য এবং সীমিত নেটওয়ার্ক এর কারণে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের অল্প কিছু মানুষ এই ফোন ব্যবহার করেেতা।

গ্রামীণফোন ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম চালু করে প্রি-পেইড প্যাকেজ যার নাম ছিল ‘ইজি’। নেটওয়ার্ক তেমন একটা সম্প্রসারণ না হওয়া এবং কারিগরি কারণে সীমিত আকারে সংযোগ বিক্রি করতো। বলা চলে ২০০১ সালের জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের গতি কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সিটিসেল যখন ৯৩ সালে বাজারের মোবাইল নিয়ে আসে তখন আমি দেশের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এখলাস গ্রুব অফ ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহি পরিচালকের দ্বায়িত্বে থাকার সুবাদে একটি সিটিসেল সেট আমাকে দেওয়া হয়। তখন এই গ্রুপের ৫জন পরিচালকের হাতে ছাড়া নিজস্ব আর কারো সাথে কথা বলার সুযোগ ছিলো না। মনেমনে খোঁজতাম নিজেদের মধ্যে কেউ ব্যবহারকারী আছেন কিনা।সেই থেকে আজকের সহজলভ্য মোবাইলের যুগে এসে পৌঁছেছি আমরা। যেহেতু এর শুরুতে ব্রবহারকারী ছিলাম সে হিসাবে এর সুফল কুফর দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সেই পর্যবেক্ষণ থেকে এই এ লেখাটি লিখছি।

সেই স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখি করছি। মোবাইল জখন বিকশিত হচ্ছে, দিনদিন আধুনীক হচ্ছে। আমার লেখালেখি কাজকর্ম তত সহজলভ্য হচ্ছে। কিছু একটা লিখতে গেলে রাজধানীর পাবলিক লাইব্রীতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতে হতো। এবই ওবই নিয়ে ঘাটতে হয়েছে। আর এখনতো দুনীয়াটা হাতের মুঠোয়। কত সালে প্রথম মোবাইল চালু হয়েছে লিখতে গিয়ে সনটা মনে ছিলোনা তাই গুগুলে সার্চ দিয়ে জেনে নিলাম। তখন লিখতে গিয়ে কতকিছু সংগ্রহের রেখেছি। এখনো সেসব গ্রামের বাড়ির ষ্টেরে রেখে দিয়েছি নয়াপ্রজন্মকে দেখাব বলে। সে বথ্যভান্ডার খুব একটা কাজে আসে না। কোন কিছু জানতে চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ানলাইন মিডিয়া আর গুগোলই যথেষ্ট।

তবে অবিশ্বাসের জায়গাও তৈরি হয়েছে অনেক। যে যেভাবে পারছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যরমে মিথ্য তথ্য দিচ্ছে। কেউ আবার ভাইরাল হতে হচ্ছে করেই এমনটা করছে। তাই লিখতে গিয়ে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্য কিংবা তথাকথিত হাজার হাহার অনলাইন পোর্টালের উপর বিশ্বাস রাখতে পারি না। গুগোলকেতই বিশ্বাসের জায়গায় রাখতে হয়। আমি নিজে বলতে পারি ইন্টারনেট প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাকে অনেক এগিয়ে নিয়েছে। বিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে বিশ্বব্যাপী তথ্য ও প্রযুক্তিতে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ফলে মানুষের জীবন যাপনেও বহুমাত্রিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ফলে মানুষ উন্নতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করলেও এর অপব্যবহারের ফলে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

উল্টে চিত্র বহু আছে। এট প্রযুক্তির কুফলতা বলব। নীতি বিবর্জিত কিছু মানুষ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কী করে অন্যকে বিপদে ফেলছে, এ সংক্রান্ত খবর পড়ে আমরা বিস্মিত হই বটে!কষ্টের কথা হলো, এক পরিসংখ্যান বলছে দেশের অর্ধেকেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফেসবুক, টিকটক এবং লাইকির মতো অ্যাপসহ পর্নোগ্রাফিক এবং বিভিন্ন অনলাইন গেম ব্যবহার করছে। রাকঢাক না রেখেই তারাঁরা উল্লেখ করেছেন স্কুল কলেজের শিক্ষাথী এমনি মিশুরা আজ পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। এর সংখ্যা ৭০ শতাংশের কম নয়। প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলেই আগামী প্রজন্ম পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি হয়ে বখে যাচ্ছে। ওরা এখন বইয়ে আসক্ত নয় সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমেই বেশি আসক্ত। বর্তমান প্রজন্ম বইয়ের পরিবর্তে ফেসবুক, মোবাইল ও ইন্টারনেটে সময় কাটায় বেশি। তাই মিক্ষার্থীরা সহজে ইচড়ে পেগে গেলেও শিক্ষায় বেশি এগুতে পারে না। আমাদের নয়া প্রজন্ম স্মার্ট হলেও তাদের শিক্ষার ভিত শক্ত হচ্ছে কম। ইন্টানটের সুফল জায়গা তারা ব্যবহার না করে ক্ষতিকারক সাইটগুলো ব্যবহার করছে। তাই অচিরেই এসব বন্ধ করা উচিত বা প্রবেশাধিকার প্রতিরোধ করা উচিত। তা না হলে অচিরেই আমরা সভ্যতার উল্টো পিঠ অন্ধকারে তলিয়ে যাব।

বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির ওপর ভর করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি অবশ্যই মানবকল্যাণ্যের জন্য এক বড় আশীর্বাদ। নয়া প্রযুক্তির একটি বড় অবদান মোবাইলফোন। এই যন্ত্রটি ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। এই যন্ত্রটি আমাদের অনেক কাজে লাগে বলেই এটার প্রতি আমাদের এত ঝোঁক। কিন্তু এই যন্ত্রটি একটি শিশু বা একটি কিশোরের হাতে কতটুকু নিরাপদ? বড়দের চেয়ে এখন শিশু কিশোর কিশোরীরাই এখন এই স্মার্ট ফোন বেশি ব্যবহার করছে। মাবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহার বেড়েছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বহুগুণ। পর্নোগ্রাফির যথেচ্ছা ব্যবহার তরুণ ও কিশোরদের বিপথগামী করছে। মেমোরি কার্ড যেমন সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি মেমোরির সুবাদে নগ্ন যৌনাচারের ছবি দেখে ছেলেমেয়েদের মধ্যে কাম উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণ কিশোরদের বিপথগামী করতে পারে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার রোধ করতে না পারলে যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

কিশোর গ্যাং বেড়েছে। আজ প্রতিটি ঘরে প্রতিটি শিশু-কিশোরের হাতে স্মার্টফোন। এক চরম নেশায় বুঁদ হচ্ছে আমাদের শিশু-কিশোর। আর এরা সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে দেখা অপরাধ রপ্ত করছে। তাই প্রতি পাড়ায় মহল্লায় এখন কিশোর গ্যায়ের ছড়াছড়ি। আগে কিন্তু আমরা কিশোর গ্যায়ের কথা শুনিনি কখনো। এখন কিশোর গ্যাং অপ্রতিরোধ্য। পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ চর্চার ঘাটতিতে বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। অন্যদিকে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির অপপ্রভাব, ইন্টারনেটের আগ্রাসন এবং অভিভাবকদের তদারকির গাফিলতির ফলে নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা কিশোর অপরাধের পরিসংখ্যান ক্রমশ বড় করছে। কয়েক লাখ ছিন্নমূল শিশু-কিশোরের পুনর্বাসন সম্ভব না হওয়ায় একশ্রেণির অসাধু ও স্বার্থান্বেষী কথিত রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় এদের বড় একটা অংশ অপরাধের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করছে।

বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে যারা তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে। তারা খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিং ইত্যাদি অপরাধ করে থাকে। এই কিশোর গ্যাংরা মূলত ফেসবুক, টুইটার এবং হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপভিত্তিক অপরাধ করে থাকে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র বিভিন্ন প্রকার অপরাধ সংগঠন করে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি, অর্থ চুরি, নারী ও শিশু পাচার, অর্থ পাচার, জঙ্গিবাদের বিস্তার, গুজব ছড়ানোসহ নানাবিধ অপরাধ করে থাকে। এরা অনেকটাই প্রতিরোধ্য হয়ে পরেছে। সাবেক একজন আইজিপি কিশোর গ্রাস সম্পর্কে বলেছেন। এদের রোধ করা কঠিন। কারনে শিশু কিশোরদের আইনের ফা*কফোকড় রয়েছে। তাছাড়া কিশেুরা এখন রাজনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওদের থাকে রানৈতিক গডফাদার তাই ওদের রুখে কে?

নতুন প্রযুক্তির আরেকটা কুফল হচ্ছে নেশা। অভিভাবকরা কোনোমতেই তাদের সন্তানদের যেন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না এই ঘাতক নেশাকে।

আমরা এমনিতেই মাদক নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। কিশোর তরুণদের হাতে আজ মাদক তুলে দেয়া হচ্ছে। মাদক গ্রাস করেছে বহু তরুণের জীবন। মাদকের নেশায় তরুণ সমাজের অনেকে বুঁদ হয়ে বিপৎগামী হয়েছে। মাদকের ভয়াল থাবা প্রতিনিয়ত তৈরি করছে কিশোর অপরাধীদের। আজ দেশে প্রচুর কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে এবং আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। মাদকের নেশা থেকে কিশোর তরুণদের বাঁচাতে যখন আমরা হিমসিম খাচ্ছি, ঠিক তখনই স্মার্টফোন নীরবে শিশু-কিশোরদের জন্য আরেক বড় নেশা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাদকের নেশা থেকে মোবাইলের নেশাকে কোনো অংশে নগণ্য করে দেখার সুযোগ নেই।

চিকিৎসকরা বলেছেন স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ১. হীনমন্যতা ২. অটিজম ৩.স্বার্থপর মানসিকতা ৪. অমনোযোগ ৫. হতাশা ৬. বিদ্রোহী মনোভাব ৭. কিশোর অপরাধ ৮. জীবনের প্রতি উদাসীনতা ৮. দুশ্চিন্তা ৯. সাইবার বুলিং ১০. আত্মহত্যার প্রবণতা ১১.যৌন ইচ্ছা ১২. ধর্ষণ প্রবনতা বাড়ছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৩ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ১ জন শিশু। প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ শিশু ইন্টারনেট দুনিয়ায় সংযুক্ত হচ্ছে।

ফেসবুক ব্যবহারকারীর ২৫ শতাংশের বয়স ১০ বছরের কম। ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ১৭- ২৮ বছরের মধ্যে। এ জন্য শিশু, কিশোর অপরাধ বেড়ে গেছে। মোবাইল আসক্তির কারনে মিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অমনোযোগি হয়ে পরেছে। পড়াশুনা ছেড়ে শিক্ষার্থীরা অধিক রাত পর্যন্ত জেগে মোবাইল নিয়ে কাজ করছে। পর্ণ সাইডগওলো তাদের মানষিকতা বদলে দিচ্ছে। এসব কারনে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা দেশে দিনদিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উঠতি কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’? স্কুল-কলেজের গ-ি পেরোনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাড়া-মহল্লা, বাজারের অলিগলিতে এদের আড্ডা এবং বিভিন্ন সময় তারা অপরাধ ঘটিয়ে আলোচিত সমালোচিত হয়।

এ সমস্যা নিরসনে দরকার সর্বসম্মতিক্রমে সামাজিক আন্দোলন। এক্ষেত্রে পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে বেশি। কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি পুনর্বাসনেও জোর দিতে হবে।মাতাপিতা হলো সন্তানদের প্রথম ও প্রধানতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই সন্তানদের সঠিকভাবে বেড়ে উঠার পিছনে মাতাপিতার নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নরজদারি নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চর্চার মাধ্যমে সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করে তাদের মধ্যকার বিদ্যমান সামাজিক শূন্যতা দূর করে সমাজের মূলধারায় তাদের সম্পৃক্ত রাখা আবশ্যক। পাশাপাশি বাড়ন্ত শিশু-কিশোরকে সর্বদা গঠনমূলক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রাখাও অত্যন্ত জরুরি।আমাদের দেশে বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের মূল কারণ হলো অভিভাবকের অসচেতনতা ও দায়িত্বহীনতা।

ছেলেমেয়েদেরকে হাতে হাতে নামিদামি মোবাইল, খেলনাসহ ইত্যাদি দিতে দিতে এখন তারা বাস্তবে ঐগুলো প্রয়োগ নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিটি পরিবারের উচিত ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে কাউন্সিলিং করা। এখন প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় কিশোর অপরাধীদের খবর। এরা মাদক, চাঁদাবাজি, এমনকি হত্যার মতো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এদেরকে সুপথে আনা জরুরী হয়ে পরেছে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমাতে হলে সার্বিকভাবে সব মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। তার মধ্যে পরিবারের পিতা-মাতা, শিক্ষক অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি-সবার সহযোগিতায় বিপথগামীদের সুপথে ফেরাতে হবে।এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি। সেই সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের অনুশীলন, পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাসহ সর্বক্ষেত্রে অশ্লীলতাকে শুধু বর্জনই নয় প্রতিরোধ করা আজ আমাদের সবার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।

তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে কিশোর-তরুণরা নানাভাবে যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি এর অপব্যবহারও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উঠতি বয়সের তরুণদের কাছে অতি সহজেই অশ্লীল ছবি বা ভিডিও পৌঁছে যাচ্ছে। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ। উঠতি বয়সের সবার মধ্যে অতিচঞ্চলতা ও উদ্যমতা বিরাজ করে। এ সময় মন্দের আকর্ষণ থাকে প্রবল মাত্রায়। তাই প্রযুক্তির লাগামহীন ব্যবহার কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তথ্য-প্রযুক্তি বলা যায় অকল্যানই বয়ে এনেছে অনেকটা। সমাজিক অবক্ষয় অনেকটাই স্পষ্ট।

সমাজিক অবক্ষয় রোধে, আমাদের প্রজন্ম, আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ অবকাঠামোতে আনতে স্বচ্ছ ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা প্রয়োজন। সমাজ পরিচালনা যারা করেন মোটাদাগে নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে হবে এবং তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমরাই পারি নৈতিকতা, মানবিকতার এবং ব্যক্তিসচেতনতার দৃঢ অবস্থাহানের সঙ্গে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।আর নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে একজন আদর্শবান নাগরিক ও সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলেই এ অবক্ষয় থেকে জাতি, সমাজ এবং দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test