E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সঙ্গীত সম্রাট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ১০৩তম জন্মজয়ন্তীতে প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০২৩ জুন ১৫ ১৬:৩২:৩৬
সঙ্গীত সম্রাট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ১০৩তম জন্মজয়ন্তীতে প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আবীর আহাদ


ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরশিল্পী সলিল চৌধুরী বলেছেন, ঈশ্বর যদি গান গাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতেন তাহলে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গাইতেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে আর কিছু কি বলার আছে? নিশ্চয়ই নেই। সঙ্গীতের কোথায় নেই তিনি। হিন্দি ঊর্দু পাঞ্জাবি গুজরাটি অসমী প্রভৃতি ভাষাসহ মাতৃভাষা বাংলার সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী। বিশেষ করে হিন্দি ও বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবির গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত নজরুল গীতি, ডিএল রায় সঙ্গীত, রজনী কান্ত সঙ্গীত, শ্যামা সঙ্গীত, পল্লিগীতি, বাউল সঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, গজল, গণসঙ্গীত-হেন কোনো সঙ্গীত নেই যখানে তার জাদুভরা মেঘমন্দ্রিত মিষ্টিমধুর কণ্ঠস্বরের স্পর্শ পড়েনি। তিনি শুধু কণ্ঠশিল্পী ছিলেন না। ছিলেন অন্যতম প্রধান সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। তাঁর সুরে ও সঙ্গীত পরিচালনায় কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের সব প্রখ্যাত শিল্পী যেমন লতা মঙ্গেশকর, মোহাম্মদ রফি, মান্না দে, কিশোর কুমার, তালাত মাহমুদ, মুকেশ, গীতা দত্ত, আশা ভোশলে, মহেন্দ্র কাপুর, ভূপেন হাজারিকা, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে 'দাদা' বলে সম্বোধন করতেন এবং তাঁর পায়ে হাত দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলতেন, সবার পায়ে হাত দেয়া যায় না, একমাত্র হেমন্তদা ছাড়া! তাইতো তাঁকে সঙ্গীতের ঈশ্বর, সঙ্গীত সম্রাট প্রভৃতি অভিধায় অভিহিত হয়ে আসছেন। 

১৬ জুন। উপমহাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী, প্রখ্যাত সুরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ১০৩তম জন্মজয়ন্তী। তাঁর এ জন্মদিনের আবহে তাঁর সাথে আমার একটি ছোট্ট স্মৃতি আজ আমার মানসপটে ভেসে উঠছে। সেটি হলো:

১৯৭১ সালের জুন মাসের সম্ভবত: ৮/৯ তারিখ। বনগাঁর টালিখোলা ইয়ুথ ক্যাম্প। আমাদের দ্বিতীয় ব্যাচের উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণার্থে চাকুলিয়া গমনের প্রাক্কাল। আমিও এ ব্যাচে যাওয়ার অপেক্ষায়। এ সময় মুজিবনগর বিপ্লবী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে আমিই বনগাঁ টালিখোলা ইয়ুথ ক্যাম্পে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসি।

অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে হঠাত্ মনে হলো এসময় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলে ভালো হয়। এ-ভাবনার এক পর্যায়ে কলকাতার বালিগঞ্জে স্বাধীন বাংলা বেতারে যেয়ে আবদুল জব্বারের সাথে দেখা করি। তাকে আমি আমার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বললাম : আপনি, অজিত রায়, ফকির আলমগীর, রথীন্দ্রনাথ রায়, আপেল মাহমুদ প্রমুখ তো থাকবেনই, তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছাড়া কিন্তু আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবো না! আবদুল জব্বার বললেন, অবশ্যই! তো চলো, এখনই ওস্তাদের কাছে যাই।' মূলত: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে আবদুল জব্বার ওস্তাদ বলতেন। সেদিনই আবদুল জব্বার ও আমি বালিগঞ্জে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাসভবনে যেয়ে তাঁর সাথে দেখা করি। এর আগেও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সাথে আমার একবার দেখাসাক্ষাত ঘটেছিলো। সেদিন অতিবিস্ময়ের সাথে উপলব্ধি করি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো কন্ঠশিল্পী আমাদের কন্ঠশিল্পী আবদুল জব্বারকে কতখানি স্নেহ করেন, ভালবাসেন, মূল্যায়ন করেন। আমার পরিকল্পনার কথাটা আবদুল জব্বারই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করার সাথে সাথে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন : আমার বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধাদের ডাক তো আমি ফিরিয়ে দিতে পারি না। যদিও তোমাদের অনুষ্ঠানের দিন বোম্বেতে একটি ফিল্মের জন্য আমার কয়েকটি গানে কন্ঠ দেয়ার কর্মসূচি রয়েছে, সেটি বাতিল করে দেবো!

হ্যাঁ, সেই কর্মসূচি বাতিল করে আবদুল জব্বারের সাথেই আমার অনুষ্ঠানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন। গেয়েছিলেন সেই অমর সঙ্গীত : ও আমার দেশের মাটি তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা; মাগো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে; নাই নাই ভয়, হবে হবে জয় এবং সবশেষে 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি। আর আবদুল জব্বার গেয়েছিলেন : সাড়ে সাতকোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবর মুজিবর মুজিবর ও মুজিব বাইয়া যাওরে।

আমার অত্যন্ত প্রিয় শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাঁর প্রতি জানাই প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি আজ এ ভুবনে নেই, কিন্তু সঙ্গীত জগতে ধ্রুবতারার মতো তিনি উপমহাদেশের বুকে চির ভাস্বর হয়ে থাকবেন।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test