E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজ বিশ্ব বাবা দিবস 

বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা আরো দৃঢ় হোক

২০২৩ জুন ১৮ ১৫:১৮:১৮
বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা আরো দৃঢ় হোক

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


পৃথিবীর সব ধরনের বিপদ থেকে পরম যত্নে আমাদের আগলে রাখেন বাবা-মা।পৃথিবীর ছোট ও মধুর শব্দগুলোর মধ্যে বাবা ডাকটি অন্যতম। এ শব্দটির সঙ্গেই যেন জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, নির্ভরতা আর ভরসার ছায়া।মাকে ভালবাসার যেমন আলাদা দিনের প্রয়োজন হয় না তেমনই বাবাকে ভালবাসারও বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। তবুও বছরের একটি দিন তো বিশেষ করে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতেই পারে। আর এই বিশেষ দিনে বাবাদের খানিক বিশেষ অনুভূত করানোই যেতে পারে। তাই বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস।

এ হিসেবে এবারের দিবসটি পালন করা হচ্ছে আজ (রবিবার) ১৮ জুন ২০২৩। বাবা দিবসের ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের হলেও দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই উদ্‌যাপন করা হয়।

ধারণা করা হয়, বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্ট এলাকার এক গির্জায় ‘বাবা দিবস’ প্রথম পালিত হয়। অন্যদিকে ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ায়ও বাবা দিবস পালন করা হয়। এরপর ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারীর উদ্যোগে ১৯১০ সালের ১৯ জুন বাবা দিবস পালন করা হয়।

মা-এর পাশাপাশি বাবাও যে সন্তানের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ এ ধারণা ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৩ সালে আমেরিকান সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়।

১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করেন। আর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে বা যেকোন সমস্যায় বাবা সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মধ্যে কোন ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা যায় না। বাবার কাছে কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না করেন না। অর্থাভাবে বাবার কোন কিছু দেয়ার সামর্থ না থাকলেও তিনি ভবিষ্যতে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। বড় কিছু চাওয়ার বায়না কেবল বাবার কাছে শোভা পায়। খেলনা বা সাইকেল শিশুদের অনেক প্রিয়। বাবার কাছে চাইলে সহজেই পাওয়া যায়। পরিবারে বাবার অসীম স্নেহ ও ভালোবাসায় সন্তান বেড়ে উঠে। তাঁর ধৈর্য ও পরিশ্রম দেখে মনে হয় তিনি এক জড়ো পদার্থ। সন্তানের কাছ থেকে কষ্ট পেলেও তিনি রাগ কিংবা অভিমান করেন না। আসলে সৃষ্টিকর্তা বাবা বলেই মনে হয় তাঁর মনকে এভাবে গঠন করেছেন।

সন্তান যখন উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে, কাজে কিংবা চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে যায় তখন বাবার মন বাধা দেয়। তারপরও বৃহৎ স্বার্থে মেনে নিতে বাধ্য হন। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগানে অনেক বাবা খুব কষ্ট করেন। সন্তান টাকা চাইলে কখনো বাবার মুখে না শোনা যায় না। প্রতিউত্তরে বাবা বলেন না এতো খরচ করো কেন? যার হাড় ভাঙা পরিশ্রম থেকে সন্তানের লেখাপড়া হয় সে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা জমা হবে অবশ্যই। নতুন চাকরি বা কাজ পেলে সন্তানের কাছে বাবার অর্থ প্রাপ্তির চিন্তা থাকে না। ভালো কিছু করলে গর্বে বাবার বুক ভরে যায়। নতুন পরিবেশে কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে কথা বলতে হবে সব কিছুই বাবার কাছ থেকে জানা যায়। তিনি যেন সন্তানের জন্য এক বটবৃক্ষ।তাই আধুনিক ও ডিজিটাল সমাজে আজও পত্রিকা খুললেই দেখা যায় বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে পালিয়েছেন নিজ সন্তান।

সত্যি এমন খবর আমাদের জন্য দুঃখজনক। সন্তানের শত দুঃখ-কষ্টে বাবারা কিন্তু ফেলে যায় না। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গোলাম মোস্তাফা’র ‘জীবন বিনিময়’ কবিতায়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে পিতার সাথে আমাদের সম্পর্ক যেন নিন্মগতি। কিন্তু তাঁরা আমাদের জন্য জান্নাত, তারাই আমাদের জাহান্নাম। অর্থাৎ, তাদের সাথে ব্যবহারের উপরই মৃত্যু পরবর্তী আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।শুরুর দিকে বাবা দিবসের এতটা জনপ্রিয়তা না থাকলেও বর্তমানে বাবা দিবসকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়।

পরিশেষে বলতে চাই,আজ ফেসবুক,টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘুরে ফিরেই আসবেন বাবা। পিতার ছবি খুঁজে নিয়ে পোস্ট করবেন সন্তান। নিজের ভেতরে বাবাকে নিয়ে আবেগ লিখে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করবেন। বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি। সন্তানের সকল বায়নাই মায়ের কাছে। এটা চাই, ওটা দাও। মা এসব আবেদন নিবেদন শোনেন। আর বাস্তবায়ন করেন বাবা। দিন রাত পরিশ্রম, খাটুনি-এর সামান্যও নিজের জন্য নয়। বরং সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর সব চেষ্টাই করেন তিনি।

‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’- সনাতন ধর্মালম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে দেবতা জ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন। কোরআনে পিতা-মাতার সম্মান প্রসঙ্গে বলা আছে, তাদের সংগে ‘উহ!’ শব্দ পর্যন্ত করো না। পিতা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়ার মতো, যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে। শিশু সন্তানের কচি হাতটি যখন বাবার হাতটি আকঁড়ে ধরে হাঁটতে থাকে তখন তাদের এ অটুট সম্পর্কের বন্ধন সৃষ্টি হয়।

আপাত দৃষ্টিতে অনেকের কাছেই বাবা দিবস পালনের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তাই বলে এ ধরনের দিবসগুলো একেবারেই যে অপ্রয়োজনীয় তেমনটা কিন্তু মোটেও বলা যাবে না। সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম

আমাদের দেশে একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, বড় হবার সাথে সাথে মা-বাবার সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। আমরা ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও তা খুব সহজে প্রকাশ করি না । মায়ের সাথে যদিওবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। কিন্তু বাবার সাথে বন্ধুত্ব খুব কম সন্তানেরই হয়ে উঠে। কেন এই দূরত্ব থাকবে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষটির সাথে? আসুন সব জড়তা কাটিয়ে একটি দিন না হয় বাবার আনন্দের জন্য কিছু করি।তাই আজ পৃথিবীর সকল বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাবার প্রতি আমাদের সম্পর্ক আরো গাঢ় হোক। বাবার সাথে প্রতিদিনই যেন ভালোভাবে কাটে। তাঁদের মতামত যেন পরিবারে প্রাধান্য দিতে পারি। তাঁদের জন্য নিরাপদ হোক পরিবার ও দেশ। পরিবারে সবচেয়ে ভালোটা যেন হয় বাবার জন্য। সুখে-দুঃখে সর্বদা বাবার প্রতি আমাদের আচরণ যেন কোমল হয়। তাদের সুস্থতার জন্য সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হবে সর্বদা খোঁজ রাখা।সকল বাবাদের জন্য 'বাবা দিবস'-এর শুভেচ্ছা, সকলের 'বাব দিবস' ভালো কাটুক।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test