E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রথযাত্রার ইতিবৃত্ত

২০২৩ জুন ২১ ১৬:১০:৪২
রথযাত্রার ইতিবৃত্ত

গোপাল নাথ বাবুল


রথযাত্রা একটি অতি প্রাচীন সনাতন ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং জনপ্রিয় উৎসব। সনাতনী পঞ্জিকা অনুসারে আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ধুমধামের সঙ্গে রথযাত্রা পালিত হয়। উড়িষ্যার পুরীতে এ উৎসব শুরু হলেও বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। রথযাত্রাকে ঘিরে টানা ১০ দিন যাবৎ হই-হুল্লোড় ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান চলে। ওইদিন জগন্নাথদেব দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসি গুন্ডিচার বাড়ি যান। সেখানে ৭দিন অবস্থান করার পর আবার ফিরে আসেন। যাওয়ার সময়কে বলে সোজা রথ এবং ফিরে আসার সময়কে বলে উল্টোরথ। পুরাবিদরা বলেন, রাজা ইন্দ্রদ্যুস্নের স্ত্রীর নামই গুন্ডিচা। তবে এ নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। জগন্নাথ দেবকে শ্রীবিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের আরেক রূপ মনে করা হয়। অন্যদিকে জগন্নাথ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘জগৎ’ বা ‘বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রভূ।’

স্কন্দ পুরাণ, নারদ পুরাণ, পদ্মা পুরাণ ও ব্রহ্মা পুরাণে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার উল্লেখ রয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, রথের দড়িতে টান দিলে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে করা সমস্ত পাপ ধুয়ে-মুছে যায়, জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং একশত যজ্ঞ করার সমান পূণ্য অর্জন করা যায়। শাস্ত্রে আছে, ‘রথস্থ বাম নং দৃষ্টাপুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।’ অর্থাৎ রথের ওপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথকে যিনি দর্শন করেন তার পুনর্জন্ম হয় না। তাই রথের দড়ি টানাকে পুণ্যের কাজ হিসেবে গণ্য করেন ধর্মপ্রাণ সনাতনীরা।

শ্রী জগন্নাথ দেবের হস্তপদবিহীন অদ্ভূত মূর্তির রূপের বিষয়ে মানুষের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। তবে এর একটি প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোপনিষদে বলা হয়েছে, ‘আত্মানং রথিনং বিদ্ধি শরীরং রথমেব তু / বুদ্ধিং তু সারথিং বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমেব চ।।’(১/৩/৩)। অর্থাৎ এ দেহই রথ আর আত্মা দেহরূপ রথের রথী। রথ মানবদেহের প্রতীক। মানবদেহ যেমন ২০৬টি হাড় দিয়ে গঠিত তেমনি রথও ২০৬টি কাঠ দিয়ে নির্মিত। অন্তরাত্মাই সেই রথের আসল চালক। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে, মানব দেহও রথের মতোই একটা কাঠামো মাত্র এবং সেই কাঠামোতে প্রাণ দেন রথে অধিষ্ঠিত রথী। যিনি এ ভবসাগর পরিভ্রমণ পরিচালনা করেন। আত্মা হলো পরিভ্রমণকারী এবং দেহ তা ধারণ করে জন্ম থেকে জন্মান্তরে বিচরণ করেন। প্রাণশক্তি, পরধর্মসহিষ্ণুতা, আত্মসংযম, দয়া, দাক্ষিণ্য, সমতা, প্রশান্তিকে ধারণ করে যেই দেহধারী সঠিক পথ ধরে পরিক্রমা করতে পারে সেই রথ ঈশ্বরের নির্ধারিত আবাসস্থলে পৌঁছতে পারে এবং তার আর পুনর্জন্ম হয় না। বিষ্ণুলোকে বা নিত্যধামে গমন করে মহামিলনের মাধুরী আস্বাদন করতে পারবে। এমন এক আধ্যাত্মিক ভাবনা লালন করে রথযাত্রা উপলক্ষে লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রভু জগন্নাথকে রথে আসীন অবস্থায় দর্শন করতে বা রথের রশি ধরে টানতে গিয়ে যে কোনও ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকেন। জগন্নাথদেবের রথের প্রতিটি অংশই অতি পবিত্র। কারণ ৩টি রথেই বিরাজ করেন ৩৩ কোটি দেবতা। তাই এ রথের রশি একটু স্পর্শ করা বা টানা মানে, এ ৩৩ কোটি দেবদেবীর চরণ স্পর্শ করা। ঈশ্বরের কোনও রূপ নেই। তিনি থাকেন অন্তরে। তিনি সর্বত্র বিরাজমান।

কৃষ্ণ যজুর্বেদিয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে-‘অপাণিপাদো জাবানো গ্রহীতা / পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্নঃ। স বেত্তি বেদনং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা / তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্ ।’ অর্থাৎ তার লৌকিক হস্ত নেই, পদ নেই, চোখ নেই, কান নেই অথচ তিনি সকল দ্রব্য গ্রহণ করেন, সর্বত্রই চলেন, সবই দেখেন, সবই শোনেন। তাকে জানা কঠিন। তিনি জগতের আদি পুরুষ। তিনিই বিশ্বাত্মা। তিনিই পরমাত্মা। উপনিষদের এ বর্ণনার প্রতীক রূপই হলো পুরীর জগন্নাথদেব। বলা যায়, রথযাত্রা মহাকালের প্রতীক। বলরাম, জগন্নাথ ও সুভদ্রা যথাক্রমে সত্ত্ব, রজ ও তমগুণের প্রতীক। এ উৎসব কালক্রমে হয়ে ওঠেছে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি নির্বিশেষের মহামিলন তীর্থ। সকলের হাতের স্পর্শে সেই রথ চলে অর্থাৎ সকল জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতীকী বার্তা বহন করে রথযাত্রা।

রথযাত্রার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এ ইতিহাসে রয়েছে পৌরাণিক তত্ত্ব, ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-প্রথার বর্ণনা। রথ শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষ, যুদ্ধযান বা কোনও প্রকার যানবাহন অথবা ৪ চাকা বা ২ চাকাযুক্ত ঘোড়ায় টানা হালকা যাত্রীবাহী গাড়ি। সাধারণত অভিজাত শ্রেণির ঘোড়ার গাড়িকে রথ বলা হয়। রথের ব্যবহার দেখা যায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মতো বিভিন্ন পৌরাণিক যুদ্ধক্ষেত্রে। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথ শব্দের অর্থ ভিন্ন। গুরুত্ব এবং শ্রদ্ধার দিক থেকেও বেশ ওপরে। তাদের কাছে রথ একটি কাঠের তৈরি যান, যাতে স্বয়ং ভগবান চড়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করেন। ভগবানের এ রথারোহণই ‘রথযাত্রা’ নামে পরিচিত।

পুরীর রথের মোট ৪২টি চাকা দেখা যায়। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা প্রত্যেকের রথ আলাদা আলাদা। ৩টি রথের যাত্রার নিয়ম, আকার ও রঙে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন-প্রথমে যাত্রা করেন বলরামের রথ। এ রথের নাম তালধ্বজ বা হলধ্বজ। এ রথের ১৪টি চাকা। ১৪টি চাকা দ্বারা বোঝায় ১৪টি ভূবনের কথা। এ রথের উচ্চতা ৪৪ ফুট। রথের আবরণের রঙ নীল। তারপর যাত্রা শুরু করেন সুভদ্রার রথ। এ রথের নাম দর্পদলন। যেহেতু রথটির ধ্বজা বা পতাকায় পদ্মচিহ্ন আঁকা থাকে। তাই রথটিকে পদ্মধ্বজও বলা হয়। এর উচ্চতা প্রায় ৪৩ ফুট। চাকা ১২টি। ১২টি চাকা দ্বারা বোঝায় ১২ মাসই ভজনের সময়। এর আবরণের রঙ লাল। সর্বশেষ যাত্রা শুরু করেন শ্রীকৃষ্ণ বা জগন্নাথদেবের রথ। এ রথের নাম নন্দীঘোষ। পতাকায় কপিরাজ হনুমানের মূর্তি আঁকা থাকে বলে এর আরেক নাম কপিধ্বজ। রথটির উচ্চতা ৪৫ ফুট। চাকার সংখ্যা ১৬টি। ১৬টি চাকা ১০ ইন্দ্রিয় এবং ৬ রিপুর প্রতিনিধিত্ব করে। রথটির আবরণের রঙ হলুদ। ৩টি রথের আবরণের রঙ আলাদা হলেও প্রতিটি রথের উপরিভাগের রঙ লাল।

পুরাণে আছে, এক বিশেষ সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বড়ভাই বলরাম, ভগিনী সুভদ্রা এবং দ্বারকাবাসীকে নিয়ে কুরুক্ষেত্রের পবিত্র দ্বৈপায়ন হ্রদে পুণ্যস্নানে যান। সেই সময় এ পুণ্যস্নানে বৃন্দাবন থেকে আসা ব্রজবাসীরা জানতে পারেন, এ পুণ্যস্না নে তাঁদের নয়নের মণি ব্রজের গোপাল শ্রীকৃষ্ণও এসেছেন। ব্রজবাসীরা শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রথের ঘোড়াগুলোকে ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই রথের দড়ি টেনে শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রাকে বৃন্দাবনের ব্রজধামে নিয়ে যান। সেদিনটি ছিল আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বলা হয়, ওই শুভ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতিবছর এ দিনে রথযাত্রা উৎসব পালন করা হয়।

সত্যযুগে প্রচলন হওয়া রথযাত্রা সম্পর্কে ‘পদ্মপুরাণে’-এ বলা হয়েছে, এক সময় উড়িষ্যার নাম ছিল মালবদেশ। সূর্যবংশীয় মালবরাজ পরম বিষ্ণুভক্ত ইন্দ্রদ্যুস্ন গড়ে তুলেছিলেন শ্রীক্ষেত্র (বর্তমানের জগন্নাথধাম) নামে বিগ্রহহীন এক মন্দির। একদিন রাজা রাজসভায় বিষ্ণুর আরেক রূপ নীলমাধবের কথা শুনলেন। কিন্তু কারও জানা নেই তাঁকে কোথায় বা কীভাবে পাওয়া যাবে। তাই রাজা চারদিকে লোক পাঠালেন নীলমাধবকে খুঁজতে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও নীলমাধবকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া বিদ্যাপতি ছাড়া সবাই ফিরে এলেন। পরবর্তীতে বিদ্যাপতিকে শবররাজ বিশ্ববসুর কন্যা ললিতা খুঁজে পেয়ে তাঁর প্রেমে পড়েন এবং দু’জনে বিয়ে করে সুখে সংসার করতে লাগলেন। কিন্তু তাঁর শ্বশুর প্রতিদিন স্নান সেরে কোথায় যান কৌতুহলবশত তা জিগ্যেস করলে ললিতা জানান, গহীন জঙ্গলে নীলমাধবের পূজা দিতেই তাঁর বাবা নীল পর্বতে যান। নীলমাধবের কথা শুনে বিদ্যাপতি খুশিতে আত্মহারা হয়ে নীলমাধবের দর্শন পেতে শ্বশুর বিশ্ববসুকে অনুরোধ করলে প্রথমে নারাজ হলেও পরে নাছোরবান্দা জামাইয়ের অনুরোধে রাজী হন। নীলমাধবের দর্শন পেয়ে বিদ্যাপতি ভক্তিভরে পূজা করার পর দৈববাণী শুনতে পান, ‘এতদিন আমি দীন-দুঃখীর পূজা নিয়েছি, এবার মহা-উপাচারে রাজা ইন্দ্রদ্যুস্নের পূজা নিতে চাই।’

এদিকে এ খবর পেয়ে রাজা ইন্দ্রদ্যুস্ন মহানন্দে জঙ্গলে এসে দেখেন, বিদ্যাপতি ও নীলমাধব কেউ নেই। এমন সময় দৈববাণী শোনা গেল, ‘সমুদ্রের জলে ভেসে আসবে যে কাষ্ঠখন্ড, তা থেকেই তৈরি হবে নীলমাধবের বিগ্রহ।’ এরপর রাজা নিজ রাজ্যে চলে এলেন। হঠাৎ এক রাত্রে স্বপ্নে স্বয়ং ভগবান শ্রী হরি বলছেন, ‘আমি সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে তোমার কাছে আসছি। পুরীর বাঙ্কিমুহান নামক স্থানে তুমি আমাকে দারুব্রহ্ম রূপে পাবে।’ কিন্তু রাজা ভেসে আসা কাষ্ঠখন্ডটি হাতি-ঘোড়া-সৈন্য এনেও নড়াতে পারলেন না। পরে আবার স্বপ্নাদেশ পেয়ে জঙ্গল থেকে শবররাজ বিশ্ববসুকে নিয়ে এলেন। তারপর বিশ্ববসু, রাজা, বিদ্যাপতি, তিনজনে মিলে কাষ্ঠখন্ডটি নিয়ে এলেন রাজপ্রাসাদে। এবার আরেক সমস্যায় পড়লেন রাজা।

কাষ্ঠখন্ডটি খোদাই করতে পারলেন না কেউ। রাজা আবারও চিন্তায় পড়ে গেলেন। ঠিক তখনি মহারানা নামক এক ছুতোর এসে বললেন, তিনি নীলমাধবের মূর্তি গড়ে দেবেন। অনেকের মতে, ছুতোরের বেশে স্বয়ং ভগবানই এসেছিলেন মতান্তরে ভগবানের আদেশে বিশ্বকর্মা এসেছিলেন। তিনি শর্ত দিলেন, তার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ২১ দিন পর্যন্ত এ মন্দিরে কেউ যেন প্রবেশ না করেন। কাজ শুরু হলো। কিন্তু রানী গুন্ডিচা মনকে মানাতে না পেরে ১৪ দিনের দিন মন্দিরে প্রবেশ করে দেখেন, ছুতোর নেই। তিনি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা অসম্পূর্ণ মূর্তি দেখে অবাক হলেন! একি মূর্তি! নীল নবঘন শ্যামল শ্রীবিষ্ণুর এমন গোলাকৃতি নয়ন, হস্তপদহীন, কালো মেঘের মতো গাত্রবর্ণ দেখে রানী কিংকর্তব্যবিমূঢ়। খবর পেয়ে রাজা এসে রানীর ওপর ক্ষিপ্ত হলেন। সে রাতেই রাজাকে স্বপ্নে শ্রী হরি বলেন, তিনি এরূপেই পূজিত হতে চান। এরপর থেকে ভক্তদের কাছে এ রূপেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন জগন্নাথদেব। অন্যদিকে আরেকটি মিথ প্রচলিত আছে। অর্ধসমাপ্ত মূর্তি দেখে রাজা চিন্তিত হয়ে পড়লে দেবর্ষি নারদ মুনি রাজাকে বলেন, এ অর্ধসমাপ্ত মূর্তিই পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত রূপ। তিনি এমন রূপই চেয়েছিলেন।

এভাবেই রথযাত্রার প্রচলন হয়। পুরাবিদদের মতে, চৈতন্য মহাপ্রভুর মাধ্যমে বাংলায় প্রচলন ঘটে পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার। মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমীর তিথিতে কাঠ সংগ্রহ করে রামনবমীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঠগুলো কেটে অক্ষয় তৃতীয়া থেকে রথ নির্মাণ শুরু হয়। রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test