E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মনের পশুকে কোরবানি দিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে

২০২৩ জুন ২৫ ১৫:২৭:২০
মনের পশুকে কোরবানি দিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


কোরবানির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ ধর্মীয় উৎসব ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত। হালাল পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করেন। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দেয়া ওয়াজিব। যার সামর্থ্য আছে সে কোরবানি দেবে, যার সামর্থ্য নেই দেবে না। সে ঈদের অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে চলবে। দেখা গেছে, এ ওয়াজিব পালন করতে গিয়ে আসল ফরজের খবর রাখে না অনেকে।

কোরবানি আল্লাহর নবি হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর অতুলনীয় নিষ্ঠা ও অপূর্ব ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। কোরবানি দ্বারা মুসলিম মিল্লাত ঘোষণা করে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা জানমাল সবকিছু কোরবানি করতে প্রস্তুত। কোরবানির নজিরবিহীন ত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করে মুসলমানগণ আল্লাহর দরবারে শপথ করেন যে, হে আল্লাহ! আমাদের জান-মাল, জীবন-মৃত্যু তোমারই জন্য উৎসর্গিত। তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমরা যেভাবে পশু কোরবানি করছি, তেমনিভাবে আমাদের জীবন উত্সর্গ করতেও কুণ্ঠিত হব না।

কোরবানি করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে। তবে দম্ভ-অহংকার বা গর্বের মনোভাব নিয়ে নয়। আল্লাহ তায়ালা সুরা হজ্জের ৩৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিকট সেগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত এবং রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া।’

নামাজের খবর নেই, গরু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। আল্লাহর জন্য, তার সৃষ্টির জন্য, মানবতার জন্য ত্যাগেও যে আনন্দ আছে, তা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এ উৎসবে প্রতিফলিত হয়।

কোরবানির উদ্দেশ্য পশু জবাই করে তার মাংস রান্না করে খাওয়া নয়; এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহর পথে, তার সৃষ্টির কল্যাণের পথে সর্বোচ্চ ত্যাগের পরীক্ষায় প্রতীকী অর্থে পশু কোরবানি করার মধ্য দিয়ে ত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করা।

মহান আল্লাহ পাক তো আর কোরবানির মাংস চান না। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চান তার বান্দারা তার জন্য, মানুষের জন্য, মানবতার জন্য ত্যাগের পরীক্ষায় পাস করতে পারে কিনা।

সঠিকভাবে কোরবানির জন্য বেশি দাম দিয়ে বড় গরু কিনে শোডাউন করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ কাজ যারা করেন, তারা কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে না পেরেই তা করে থাকেন।

‘আল্লাহকে ভালোবেসে তার রাস্তায় ত্যাগের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমি কোরবানি করছি’- এমন উপলব্ধি হৃদয়ে স্থান না পেলে সে কোরবানি শুধু পশু জবাই করে মাংস খাওয়ার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কোরবানির পশুর মাংস, রক্ত কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না; পৌঁছে একমাত্র তাকওয়া। আর এই তাকওয়ার উপস্থিতি না থাকলে পশু কোরবানির কোনো সার্থকতা নেই।

এজন্য নিষ্পাপ পশুর গলায় ছুরি চালানোর আগে নিজের মনের পশুটাকে কোরবানি দিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে মনের কোণে ঘাপটি মেরে থাকা অসভ্য পশুটি জবাই না দিতে পারলে গতানুগতিক পশু কোরবানিতে কোনোই ফায়দা নেই।

যারা পশু কোরবানি দিচ্ছেন, তারা কি সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করেছেন, যিনি কোরবানি দিচ্ছেন তার টাকায় কোনো ভেজাল আছে কিনা! গরিব, মজলুম, অসহায়ের হক মেরে কোরবানির টাকা জমিয়েছেন কি?

ঘুষ-দুর্নীতির টাকা দিয়ে কোরবানি দিচ্ছেন না তো? কোনো পাওনাদার আপনার কাছে টাকা পায় কি? কাউকে ঠকিয়েছেন কখনও? তাহলে আপনার পশু জবাই হবে; কিন্তু কোরবানি হবে না।

কোরবানির আসল বিষয় হচ্ছে ত্যাগ ও আত্মবিসর্জন। নিজেকে স্রষ্টার সামনে নিঃশর্ত সমর্পণ। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন তার সন্তুষ্টির জন্য পশু জবাই করতে, কোনো লাভ-ক্ষতির হিসাব না করে তা বাস্তবায়ন করাই হল আনুগত্য।

নিজের ছেলেকে জবাই করার মতো কঠিন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল হজরত ইব্রাহিমকে (আ.)। সেই মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইব্রাহিম (আ.) খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পশু জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। তবে সেটা নির্ভর করে নিয়ত ও ইখলাসের ওপর।

মনের মধ্যে অন্যের ক্ষতি করে নিজে লাভবান হওয়ার পাশবিকতাকে উজ্জীবিত করে পশু কোরবানি করলে কোরবানি হবে না।

মনের মধ্যে পাশবিকতা থাকলে তাকেও কোরবানির পশুর সঙ্গে জবাই করে দিতে হবে। মুসলমান হিসেবে মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সহিহ্ নেক আমলের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থে অন্তরের সব কালিমা দূর করে মনের পশুকে কোরবানি দেয়ার পাশাপাশি পশু কোরবানি দেয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট) অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test