E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারত সকল ধর্ম বিশ্বাসীর আবাস: আমেরিকায় মোদী 

২০২৩ জুন ২৮ ১৫:২০:১৭
ভারত সকল ধর্ম বিশ্বাসীর আবাস: আমেরিকায় মোদী 

শিতাংশু গুহ


আমেরিকা আসলেই কি বাংলাদেশের কাছে ‘সেন্ট-মার্টিন’ চেয়েছে এবং র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল ইত্যাদি কি এ কারণেই? ঘটনা তা নয়, নির্বাচনী বছর কতকিছুই তো শোনা যাবে। এসব বলা হচ্ছে ‘নির্বাচনী কৌশল’ হিসাবে। আমেরিকা জানে ভারত তাঁর নাকের ডগায় ‘সেন্ট-মার্টিন’ দ্বীপে কাউকে বসতে দেবেনা। এ মুহুর্তে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে, বাংলাদেশ তা করবে না? বাংলাদেশ যদি কখনো ‘মিনি-পাকিস্তান’ হয়, এবং এর সরকার ‘এন্টি-ইন্ডিয়া’ হয়, তখনো এটি কতটা সম্ভব তা ভবিষ্যৎ বলবে। এরই মধ্যে সোমবার (২৬ জুন ২০২৩) মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট’র প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন যে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কখনই বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি। তিনি বলেন, যা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। 

এদিকে বারাক ওবামা’র টিভি সাক্ষাৎকার নিয়ে ট্রল হচ্ছে। টিভি সাংবাদিক ক্রিস্টিনা মারিয়া হাইদে আমানপুর (৬৫)’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেছেন যে, মানবাধিকার ও সাম্প্রদায়িক ইস্যু বাড়তে থাকলে বা সংখ্যালঘু স্বার্থ না দেখলে ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। স্মর্তব্য যে, এই টিভি সাংবাদিক কিছুকাল আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা’র একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। মোদীর সফরকালে এই সাক্ষাৎকার ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ তা বোঝা খুব একটা কষ্টকর নয়? বাইডেন মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, একদা তাঁর ‘বস’ ওবামা উল্টো বাঁশ দিচ্ছেন। এটাই আমেরিকা। সত্য হচ্ছে, ভারত সৃষ্টির পর থেকেই ভারত ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র চলছে, ওবামা এতে নুতন সংযুক্তি। একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যথেষ্ট পুলকিত।

এক সময় অধিকাংশ বাংলাদেশী মুসলমান ‘হুসাইন’ দেখে ওবামাকে ভোট দিয়েছিলো, এখন ‘হুসাইন’ আবার আলোচনায় এসেছে। হোয়াইট হাউস যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-র সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি মানবাধিকার ও মুসলিম অধিকার নিয়ে মোদিকে একটি প্রশ্ন করেন, এ মুহূর্তে তাকে নিয়েও ট্রল হচ্ছে, বলা হচ্ছে তিনি ‘পাকিস্তানি মুসলমান’, কথা কিন্তু সত্য? হোয়াইট হাউস অবশ্য সাংবাদিক হয়রানীর নিন্দা করেছে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কাউন্সিলওমেন শাহানা হানিফও মোদীর সফরের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। ৭৫জন আইনপ্রণেতা মোদির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, এই তালিকায় বার্নি স্যান্ডার্স থেকে জয়পাল পর্যন্ত আছেন। যারা মোদির বিরোধিতা করেছেন, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাঁরা ‘বাম-ঘেঁষা’ অথবা ‘ইসলাম-পছন্দ’ এন্টি-ইন্ডিয়ান।

নানান কারণে বাইডেন প্রশাসন ডেকে এনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে যথেষ্ট সন্মান দিয়েছেন। এটি রাষ্ট্রীয় সফর, দুই-দুইবার মোদী কংগ্রেসের যৌথ-সভায় ভাষণ দিয়েছেন। আমেরিকায় এই প্রথম সর্বত্র ‘মোদী, মোদী’ ধ্বনিতে উচ্ছসিত উল্লাস দেখা গেছে, এতে বিরুদ্ধবাদীরা ভড়কে গেছে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন শেষে ‘ভারত মাতাকি জয়’ শুনে ভারত বিরোধীদের ভাল লাগার তো কোন কারণ নেই? গার্ডিয়ানের মতে উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মত সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বারবারই মোদী মোদী ধ্বনি উঠেছে, সবাই উঠে দাঁড়িয়ে হাত-তালি দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেখানে মোদী দীপ্তকণ্ঠে বলেছেন, ‘উই আর হোম্স টু অল ফেইথ’।

হোয়াই হাউসে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মানবাধিকার ও মুসলিম অধিকার নিয়ে সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি’র প্রশ্নের উত্তরে মোদী বলেছেন, ভারত আমেরিকার মতই গণতান্ত্রিক দেশ, সেখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আমাদের ‘ডিএনএ’-তে আছে, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সহনশীল ও সমানাধিকারের ওপর ভিত্তিশীল। প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় একই কথা বলেছেন। পরক্ষনে যৌথ সভায় মোদী বলেছেন, আমেরিকাতে ৯/১১ হয়েছে, ভারতের মুম্বাইতে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ এখনো হুমকী, আমাদের যৌথভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে। কেউ কেউ একথাটি ‘শেখ হাসিনা’র’ সরকারের পক্ষে বলে মন্তব্য করছেন। কারণ শেখ হাসিনা’র বিকল্প ‘মৌলবাদী’ সরকার, যা ভারত চায়না। একজন ভারতীয় সাংবাদিক নয়নীমা বসু কিছুকাল আগে বলেছিলেন যে, মোদী বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন মেনে নিতে ট্রাম্প প্রশাসনকে রাজি করিয়েছিলেন। হ্যাঁ, সম্ভবত: এবারো মোদী গরম বাইডেনকে নরম করবেন।

মোদী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকা হচ্ছে ওল্ডেস্ট ডেমোক্রেসী, আর ভারত হচ্ছে লারজেস্ট ডেমোক্রেসী। মোদী এবং বাইডেন দু'জনই বলেছেন বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সর্বকালের ঘনিষ্টতম। এই উষ্ণ সম্পর্ক আনন্দঘন করতে হলে বাইডেন প্রশাসনকে হয়তো ‘ঢাকা-কে কিছুটা ছাড় দিতে হবে? বাইডেন প্রশাসন মোদিকে যতই সমাদর করুক, দেখা যাচ্ছে আমেরিকায় একটি শক্তিশালী ‘এন্টি-ভারত’ লবি সু-সংঠিতভাবে কাজ করছে, এবং এই গ্রূপ একই সাথে ‘এন্টি-শেখ হাসিনা’ বা ‘এন্টি-আওয়ামী লীগ’? মৌলবাদী ইসলামী এই গ্রূপ আমেরিকায় গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে কখনো মোদী বিরোধিতা, কখনো শেখ হাসিনা বিরোধিতা করে দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে মদত দিচ্ছে। এঁরা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক নড়বড়ে করতে চায়?

ভারত এরমত করে বিরোধিতা মোকাবেলা করতে সক্ষম। ভারত মাথা নত করেন। ১৯৭১-এর প্রমান, আমেরিকা-চীনের বিরোধিতা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মোদীর ভাষণ বয়কট করা ক’জন আইনপ্রণেতা বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর-র বৈঠকের কর্মসূচি ছিলো। ভারত শর্ত দেয়, কংগ্রেসওমেন প্রমীলা জয়পাল ডেলিগেশনে থাকতে পারবেন না, তাঁরা রাজি হন’নি, তাই জয়শংকর বৈঠক বাতিল করে দেন্। এটাই ভারত। মোদীর সফরে ভারত যদি লাভবান হয়, তবে বাংলাদেশও লাভবান হবে। লেখাটা শেষ করবো, কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের সংসদে একটি মন্তব্য দিয়ে, তিনি বলেছেন, ভারত বিরোধী কোন শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবেনা। তারমতে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে এদেশ থেকে ভারত ভাঙ্গার পরিকল্পনা হচ্ছে, আমরা তা হতে দেবোনা। এমপি কমল-কে ধন্যবাদ, তিনি রাজনীতিটা বুঝেছেন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test