হেপাটাইটিস নির্মূল করতে চাই পারিবারিক ও সামাজিক জনসচেতনতা
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
শুক্রবার বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৩। ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’ বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। এর পর থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হেপাটাইটিস, আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা নয়’। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে হেপাটাইটিস পরীক্ষা করুন, প্রয়োজনে এর প্রতিষেধক ও চিকিৎসা নিন।’২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির স্বীকৃতি দেয়।আর ভাইরাল হেপাটাইটিস বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর ২৮ জুলাই হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আবিষ্কারক নোবেল বিজয়ী আমেরিকান চিকিৎসক প্রফেসর ব্লম বার্গ এর জন্ম তারিখকে সম্মান জানিয়ে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়।চারদিকে ডেঙ্গু ও কভিডের ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত। আরও কোনো রোগব্যাধি আছে কিনা, তা যেন আমরা ভুলতে বসেছি। কিন্তু সচেতন না হলে করোনা তো বটেই, অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির শিকার আপনি যে কোনো মুহূর্তে হতে পারেন। এমনই এক ভয়ানক ব্যাধি হেপাটাইটিস। সাধারণ কথায় লিভার তথা যকৃতের প্রদাহকে বলা হয় হেপাটাইটিস। কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস হওয়ার অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। তবে এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস। এ ধরনের ভাইরাস সরাসরি যকৃতকে সংক্রমিত করে এবং যকৃতেই বংশবৃদ্ধি করে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই, জি ইত্যাদি হলো বিভিন্ন ধরনের হেপাটোট্রপিক ভাইরাস; যা বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিসের অন্যতম কারণ।
হেপাটাইটিস শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ "হিপার " যার অর্থ লিভার এবং ল্যাটিন শব্দ আইটিস যার অর্থ প্রদাহ, অর্থাৎ হেপাটাইটিস বলতে বুঝায় লিভার কোষের গঠনগত পরিবর্তন ও প্রদাহ। আমেরিকান হেরিটেইজ ডিকশনারী অনুসারে হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ যার কারণ সংক্রামক বা বিষক্রিয়ার দ্বারা জন্ডিস, জ্বর, লিভার ইনলার্জ এবং পেটের বেদনা প্রভৃতি।
প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট কিছু দিনের অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণকরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। তেমনই বিশ্বব্যাপী পালনীয় সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ ও প্রতি ৩০ সেকেন্ডে ১ জন হেপাটাইটিস বি ও সি এই দুই ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করে।আর আমাদের দেশে প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে।
তবে আশার কথা, এই দুই নীরব প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধযোগ্য। আমাদের দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই দুই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আত্মনিয়োগ করা। ’আর অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের ৩৫ শতাংশ, ক্রনিক হেপাটাইটিসের ৭৫ শতাংশ, লিভার সিরোসিসের ৬০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের ৬৫ শতাংশের জন্য হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দায়ী।
পুরুষেরা নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত। এদের মধ্য শিশু রয়েছে ৪ লাখ। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ। ১৮ লাখ প্রজনন সক্ষম নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। চাকরিপ্রার্থী ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের নাগরিকদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষ বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের হার শূন্য দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ।কোভিড-১৯- মহামারি আকারে বিস্তারের ফলে সবাই এর ভয়াবহতায় আতঙ্কিত। এই ভাইরাসগুলো ধীরে ধীরে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা মানুষ প্রথম পর্যায়ে বুঝতে পারে না।আশঙ্কার বিষয় হলো, হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’-কে জনস্বাস্থ্যের হুমকি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সাল নাগাদ তা নির্মূল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ রোগীর সংখ্যা ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং মৃত্যুহার ৬৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বসবাস করছে। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে সাধারণ জন্ডিস থেকে শুরু করে লিভার ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল ও দুরারোগ্য অসুখ হতে পারে।আর প্রতি ১০ জনের নয়জন জানেই না তারা হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাসে আক্রান্ত।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত জনসংখ্যা ৫ দশমিক ১ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের বাস। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫৭ লাখ। নারীর সংখ্যা ২৮ লাখ ও শিশু রয়েছে ৪ লাখ। আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। লিভারের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর ভাইরাস হলো হেপাটাইটিস সি। লিভার সিরোসিসের ৩০ শতাংশ ও লিভার ক্যানসারের জন্য ১৭ শতাংশ দায়ী হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য দশমিক ২ থেকে ১ শতাংশ। তাঁদের বেশির ভাগের বয়স ২৮ বছরের বেশি।
লিভার ক্যান্সারে মারা যাওয়া প্রতি ৩ জনের ২ জনই হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’-তে আক্রান্ত থাকেন। আমাদের দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে আক্রান্ত। তাদের কারো কারো বিভিন্ন সময়ে ক্যান্সারসহ লিভারের অন্যান্য জটিল রোগ হচ্ছে।সারা বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ৯ জন ব্যক্তি জানে না তারা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জীবাণু বহন করছে। ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স ২০৩০ সাল নাগাদ ৯৫ শতাংশ অনির্ণীত রোগীকে রোগনির্ণয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অধিকন্তু, ২০৩০ সাল নাগাদ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দেশের প্রায় ৬৬ লাখ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ লাখ ৬০ হাজারে নামিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
হেপাটাইটিস প্রথম আক্রান্তের সময়
হেপাটাইটিসের বড় শিকার সেনাবাহিনীর সদস্যেরা। ১৮৬১ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে হেপাটাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেপাটাইটিসের বলি হন এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত হেপাটাইটিসের কারণ বিজ্ঞানের কাছে ছিল এক প্রহেলিকা। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এর কারণগুলি বোঝা সম্ভব হয়। ১৯৬৩ সালে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করলেন জেনেটিক বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ। তিনি বিভিন্ন অসুখের জিনগত সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করছিলেন। কাকতালীয় ভাবে এক অস্ট্রেলীয় আদিবাসীর রক্ত পরীক্ষার সূত্রে আবিষ্কার করলেন হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসকে। তাই নাম দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্টিজেন। দু’বছর পরে মাইক্রোবায়োলজিস্ট মিলম্যান-এর সঙ্গে আবিষ্কার করলেন হেপাটাইটিস বি-এর ভ্যাকসিন। হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ডি, হেপাটাইটিস-সি এবং হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস আবিষ্কৃত হল যথাক্রমে ১৯৭০, ১৯৭৭, ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালে। ব্লুমবার্গ তাঁর আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
হেপাটাইটিস কি
ডেঙ্গু ও করোনার এ সময়ে আমরা প্রায় ভুলেই গেছি অন্যান্য মরণব্যধির কথা।হেপাটাইটিস বলতে যকৃতের প্রদাহ (ফুলে যাওয়া) বোঝায়। ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ বা অ্যালকোহলের মত ক্ষতিকারক পদার্থের কারণে ঘটা যকৃতের একটি রোগ। হেপাটাইটিস অল্প কিছু উপসর্গসহ বা কোনো উপসর্গ ছাড়াই ঘটতে পারে। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে জন্ডিস, এনরেক্সিয়া (ক্ষুধমান্দ্য) ও অসুস্থতাবোধ এর লক্ষণ বা উপসর্গ। দুধরণের হেপাটাইটিস দেখা যায় : তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী। তীব্র হেপাটাইটিস ৬ মাসেরও কম স্থায়ী হয়, অন্য দিকে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকে। মূলত হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে এই রোগটির সূত্রপাত, তাছাড়া অ্যালকোহল, নির্দিষ্ট কতগুলো ওষুধ, শিল্প-জৈব দ্রাবক এবং উদ্ভিদের টক্সিক জাতীয় পদার্থের কারণে এই রোগটি ঘটে,
হেপাটাইটিসের প্রকারভেদ
১. হেপাটাইটিস ' এ ' ভাইরাস ২. হেপাটাইটিস ' বি ' ভাইরাস ৩. হেপাটাইটিস ' সি' ভাইরাস ৪. হেপাটাইটিস ' ডি' ভাইরাস এবং ৫. হেপাটাইটিস ' ই ' ভাইরাস , নিম্মে হেপাটাইটিস ৫ ধরনের ভাইরাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো. হেপাটাইটিস এ: হেপাটাইটিস্ এ রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ এ ভাইরাস। এটি সবচেয়ে পরিচিত হেপাটাইটিস্ রোগ। এটি সাধারণত সেইসব জায়গায় দেখা যায় যেখানে স্যানিটেশন ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব খারাপ। সাধারণত দূষিত খাদ্য ও জল-আহারের মাধ্যমে এর সংক্রমণ ঘটে। এটি স্বল্পমেয়াদি রোগ, যার উপসর্গগুলো সাধারণত তিন মাসের মধ্যে চলে যায়। হেপাটাইটিস এ রোগ হলে ইবুপ্রোফেন জাতীয় পেনকিলার দেওয়া ছাড়া নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। টিকাকরনের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধ করা যায়। সংক্রমণের সম্ভাব্য স্থানগুলোতে যেমন; ভারতীয় উপমহাদেশ, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, দূরপ্রাচ্য এবং পূর্ব ইউরোপ যাঁরা ভ্রমন করেন তাঁদেরকে হেপাটাইটিস রোগের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
হেপাটাইটিস বি: হেপাটাইটিস বি রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ বি ভাইরাস। রক্ত ও বীর্য এবং যোনি তরলের মত শরীরের তরলে এটি সংক্রমিত হয়।
এটি সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন মিলন বা ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাধারানত এটি ঘটে। এই রোগটি সাধারণত ভারতবর্ষ ও চীন, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উপ-সাহারান আফ্রিকায় হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজে থেকে এই সংক্রমণটিকে প্রতিরোধ করতে পারে ও প্রায় দু-মাসের মধ্যে সংক্রমণমুক্ত হয়ে যায়। তবে, সংক্রমিত ব্যক্তি সংক্রমণের সময় অত্যন্ত অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে, কিন্তু এটি সাধারণত সুদূরপ্রসারী কোনো ক্ষতি করে না। অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে অবশ্য এর সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হয়, যাকে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি। হেপাটাইটিস বি'র টিকা পাওয়া যায়। ড্রাগ ব্যবহারকারী ও উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন অঞ্চলে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদেরকে এই টিকাকরণের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
হেপাটাইটিস সি: হেপাটাইটিস্ সি রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ সি ভাইরাস। এটি সাধারণত রক্তে ও খুব অল্প ক্ষেত্রে সংক্রামিত ব্যক্তির লালা, বীর্য বা যোনি তরলে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত যেহেতু রক্তে পাওয়া যায় তাই রক্ত থেকে রক্তের সংস্পর্শে এই রোগটি ছড়ায়। এই রোগের লক্ষণগুলো অনেকটা ফ্লুয়ের মত, তাই অনেকে সাধারণ ফ্লুয়ের সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলেন। অনেক রোগীই নিজে থেকে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন ও ভাইরাসমুক্ত হয়ে ওঠেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর থেকে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে একে বলা হয় দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস সি। দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস সি'তে যাঁরা ভুগছেন তাঁরা এন্টিভাইরাল কতগুলো ওষুধ নিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে কতগুলো অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও দিতে পারে। হেপাটাইটিস সি'র নির্দিষ্ট কোন টিকা এখনও পাওয়া যায় না।অ্যালকোহলজনিত হেপাটাইটিস: প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করলে এটি দেখা যায়। প্রচুর পরিমাণে মদ্যপানে যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে এটি ক্রমশ: হেপাটাইটিস রোগ ডেকে আনে। এটির সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, একমাত্র রক্ত পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে। অ্যালকোহলজনিত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি মদ্যপান চালিয়ে যায় তবে তা অত্যন্ত ঝুঁকির হতে পারে। সেক্ষেত্রে , অন্ত্রের কঠিনীভবন (সিরোসিস) ও যকৃতের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আরো বিভিন্ন ধরণের হেপাটাইটিস
হেপাটাইটিস ডি : হেপাটাইটিস্ ডি রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ ডি ভাইরাস। একমাত্র যাঁদের হেপাটাইটিস্ বি হয়েছে তাঁদের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে। একমাত্র হেপাটাইটিস্ বি'র সঙ্গে হেপাটাইটিস্ ডি বাঁচতে পারে।
হেপাটাইটিস ই: হেপাটাইটিস্ ই রোগটির কারণ হল হেপাটাইটিস্ ই ভাইরাস। এটি হল স্বল্পস্থায়ী ও এর তীব্রতা কম। এক্ষেত্রে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সংক্রমণ কম।
অটোইমিউন হেপাটাইটিস: এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদী রোগ নয়। এক্ষেত্রে শ্বেত রক্ত কণিকা যকৃতের মধ্যে আক্রমনণ ঘটায়। এরফলে যকৃতের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সাংঘাতিক কিছু ঘটতে পারে। এই রোগটির সঠিক কারণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। এর উপসর্গগুলোর মধ্যে পড়ে ক্লান্তি, তলপেটে ব্যথা, গাঁটের ব্যথা, জন্ডিস (চোখ ও চামড়ায় হলুদাভ বর্ণ) ও সিরোসিস। .স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ (প্রিডনিসোলন ) ক্রমশ: কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফোলা ভাব কমাতে পারে ও রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
মায়াজমেটিক কারণ
*সোরা *সিফিলিস *সাইকোসিস *টিউবারকুলার।
>কারণঃ * ভাইরাস- হেপাটাইটিস ' এ ' ভাইরাস; হেপাটাইটিস ' বি ' ভাইরাস ; হেপাটাইটিস ' সি' ভাইরাস ; হেপাটাইটিস ' ডি' ভাইরাস ; হেপাটাইটিস ' ই ' ভাইরাস * ছোঁয়াচে (একের থেকে অন্যের ) মল মূত্র থেকে হতে পারে। সরাসরি মুখ থেকে যেমন এক গ্লাসে পানি খাওয়া বা আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে চুমু খাওয়া; পরোক্ষভাবে আসতে পারে যেমন কাপড় চোপড় থেকে আসতে পারে। *ঘনবসতি এলাকায় যদি আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে তাহলে ছড়াতে পারে। * শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। *সহজে পানি , দুধ এবং সীল মাছ ইত্যাদি মাধ্যমে সহজে ছড়ায়। *অস্বাস্থ্যকর পরিবেশজনিত কারণে। * রক্ত দেওয়া ও নেওয়ার মাধ্যমে। * এ্যালকোহল।
> যেই সব লক্ষণ দেখা প্রকাশ পাইতে পারে.*জন্ডিস, *বমি বমিভাবওবমি,*জন্ডিস থাকতে পারে, *ডায়ারিয়া। *পেশী ও গাঁটের ব্যথা,*কম্পন *ক্ষুধামন্দা। * জ্বর থাকতে পারে, *উচ্চ তাপমাত্রা (৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট অর্থাৎ ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশী।*অসুস্থ বোধ, *ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। *মাথা ব্যথা*সমস্ত শরীরে ব্যথা, *মাঝেমধ্যে চোখ ও চামড়ার হলুদ হয়ে যাওয়া (যা জন্ডিস হতে পারে)*দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিসের লক্ষণের মধ্যে পড়ে *সময় সময় ক্লান্ত হয়ে যাওয়া,*প্রসাবে হলুদ হয়। *হতাশা বা বিষণ্নতা,*ওজন হ্রাস পায় *সার্ভাইক্যাল লিস্ফনোড বৃদ্ধি পেতে পারে। *অসুস্থতার সাধারণ অনুভূতি*রক্ত স্বল্পতা *লিভার স্থান স্পর্শকাতর। *শরীরে আমবাত,চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
হোমিও সমাধান
রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা.হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে হেপাটাইটিস সহ যে কোন জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিওিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগত ভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিরন্তন সত্য বলে কিছুই নেই। কেননা একসময় আমরা শুনতাম যক্ষা হলে রক্ষা নেই , বর্তমানে শুনতে পাই যক্ষা ভাল হয়। এ সবকিছু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ফসল।
হেপাটাইটিস চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। সামগ্রিক উপসর্গের ভিত্তিতে ওষুধ নির্বাচনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়। এটিই একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগীর কষ্টের সমস্ত চিহ্ন এবং উপসর্গগুলি দূর করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের অবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়। বিবিসি নিউজের ২০১৬ তথ্য মতে, দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আরোগ্য লাভ করে, আবার ইদানিং অনেক নামদারি হোমিও চিকিৎসক বের হইছে,তাঁরা হেপাটাইটিস রোগীকে কে পেটেন্ট টনিক, দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকে তাদের কে ডা. হানেমান শংকর জাতের হোমিওপ্যাথ বলে থাকেন, রোগীদের কে মনে রাখতে হবে, হেপাটাইটিস কোন সাধারণ রোগ না, তাই সঠিক চিকিৎসা পাইতে হইলে অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিন।প্রতিবছর বিশ্বের ১৬০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে ও বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়।
লেখক : চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক।
পাঠকের মতামত:
- আমার একটাই প্রতিজ্ঞা, 'দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা'
- পাকিস্তানের হলে চলছে বাংলাদেশের সিনেমা
- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফল ১ মে, ক্লাস শুরু ১ আগস্ট
- টানা চতুর্থবার কমলো স্বর্ণের দাম
- যমুনা নদীর বামতীরে সমন্বিত পানি সম্পদ সম্ভাব্যতায় মতবিনিময়
- সাবেক এমপি মকবুল হোসেন স্মরণে লোহাগড়ায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল
- হাসপাতালের নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উম্মনের বিরুদ্ধে
- টানা ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল উপহার পেলো ৪ কিশোর
- স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, তিন সন্তান নিয়ে বিপাকে স্ত্রী
- সুবর্ণচরে আ.লীগ নেতার হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
- দাবদাহে ঢাকায় উৎপাদনশীল খাতে বছরে ক্ষতি ২৭০০ কোটি ডলার
- ঘুমন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে হত্যা: একজনের দায় স্বীকার, দুজনের রিমান্ড
- ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রউফ উন নবী
- বউ-শাশুড়ির ঝগড়ায় মধ্যস্থতা করতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের
- মস্কো উৎসবে পুরস্কৃত ‘নির্বাণ’
- মাভাবিপ্রবিতে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
- মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
- শৈলকুপায় তীব্র তাপদাহে শরবত বিতরণ
- এজেন্টদের মেরে যমুনায় ফেলার হুমকি, ২ আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
- রানা প্লাজা নিছক দুর্ঘটনা নয়: আইবিসি
- চুয়াডাঙ্গায় তীব্র রোদ ও গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন
- গরমে স্বস্তি দিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ’র শরবত বিতরণ
- কুমিল্লায় সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায়
- মা-মেয়ের লেবুর শরবতে চলে সংসার
- বরগুনায় তীব্র তাপপ্রবাহে ছাত্রলীগের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
- শরণখোলায় শুকিয়ে গেছে খাবার পানির উৎস, নেই গোসল টয়লেটের পানিও
- দিনাজপুরে শেষ হলো তথ্য ও আদিবাসী মেলা
- ‘দেশ বর্তমানে কঠিন সংকটে পড়েছে’
- নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর
- ‘লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি’
- ‘প্লিজ কেউ বোলারদের বাঁচান’
- ভারতের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী?
- দিনাজপুরে ৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
- ‘আ. লীগের নেতাকর্মীরা এখন পাকিস্তানের প্রশংসায় গদগদ’
- ‘গাছ লাগিয়ে গিনেজ বুকে নাম লেখাবে ছাত্রলীগ’
- শনিবার সাপ্তাহিক ‘ছুটিই থাকছে’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
- ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে কে এই সর্বভুক আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর
- বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে ডেমরায় বাসে আগুন
- কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সম্পত্তি দখলমুক্ত করার দাবিতে মাদারগঞ্জে মানববন্ধন
- নড়াইলে বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ
- হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার না থাকায় অনেককে শোকজ, নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা
- কক্সবাজার সৈকতে হিটস্ট্রোকে পর্যটকের মৃত্যু
- তীব্র তাপপ্রবাহে বেঁকে হয়ে যাচ্ছে রেললাইন, দুর্ঘটনার আশংকা
- পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হলো ইসতিসকা নামাজ ও বিশেষ দোয়া
- যোগারদিয়া বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হলেন সোহেল রানা ফরহাদ
- বাগেরহাটে ট্রাক চাপায় তিন ভ্যানযাত্রী নিহত
- ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের পদ পেলেন সুবর্ণ সন্তান জাহিদ
- দিনাজপুরে ইকো ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আঞ্চলিক কর্মশালা
- বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মহা সম্মেলনে সভাপতি দিপ্তীময় তালুকদার সম্পাদক মৃনাল তঞ্চঙ্গ্যাঁ
- ফরিদপুর ডুমাইনের ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা জেলা প্রশাসকের
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !