E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাতীয়করণ চাই: কখন কীভাবে

২০২৩ জুলাই ২৭ ১৭:৪৭:১৪
জাতীয়করণ চাই: কখন কীভাবে

অধ্যক্ষ শরীফ সাদী


শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের বিষয়টি খণ্ডিতভাবে কোন একটি শিক্ষক সংগঠনের চাওয়া নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকলেই চায়। আমিও চাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো কখন এবং কীভাবে? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। ধাপে ধাপে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাকেও জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসার প্রত্যয় ছিল সরকারের।

কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সবকিছু ভণ্ডুল করে দিয়েছিলো। তথাপি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সনে একসাথে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এবং ২০১৮ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৭শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজকে জাতীয়করণ করেছেন। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) এর ৪ নম্বর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেদিকেই যাচ্ছে। নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পাইপ লাইনে আছে।

জাতীয়করণ হচ্ছে এবং হবে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ‘এক্ষুনি এবং সকল প্রতিষ্ঠান একসাথে জাতীয়করণ করে ফেলতে হবে’ এই দাবি উত্তপ্ত মস্তিষ্কপ্রসূত। জাতীয়করণ অভিমুখী শেখ হাসিনার যাত্রাপথে কোন শিক্ষক সংগঠন অন্তরায় সৃষ্টি করলে তা হবে আত্মঘাতী। বিভিন্ন সময় জাতীয়করণের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন আন্দোলন করেছে।

গত ১১ জুলাই থেকে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের একটি শিক্ষক সংগঠন জাতীয়করণের ১দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছে। এ কথা ঠিক, শিক্ষার জাতীয়করণ নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় যৌক্তিক দাবি। আমাদের সমাজে যেন নাগরিকদের মধ্যে আকাশ-পাতাল বৈষম্য সৃষ্টি না হয় তেমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা কায়েমের জন্য সংবিধানে অঙ্গীকার ছিল। সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ২য় ভাগে ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা শিরোনামে বলা হয়েছে:

অনুচ্ছেদ ১৭।রাষ্ট্র (ক) “একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য-কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে”। সকলে নিশ্চয়ই একথা উপলব্ধি করে যে, "একই পদ্ধতির" বলতে কী বুঝানো হয়েছে? "গণমুখী ও সার্বজনীন" বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সংবিধানের এই ঘোষণার বাস্তবায়ন কে বা কারা করতে পারবে? পারবে '৭২ এর সংবিধান যারা ৩০ লাখ বাঙালির রক্তের কালিতে লিপিবদ্ধ করেছিলো। পঁচাত্তরের পর সরকারগুলো ক্ষমতায় এসে তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে এবং তাদের বাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতা শিক্ষাক্ষেত্রেও শুরু করে। এই মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে আমাদের সংবিধানে ঘোষিত "একই পদ্ধতির গণমুখী সার্বজনীন" শিক্ষা ব্যবস্থাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলে। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট রক্তাক্ত প্রতিবিপ্লব সংঘটিত করার পর যে সরকারগুলো ক্ষমতায় আসে তারা শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণের পাকাপোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফেলে। পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো কেবল শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্যসেবাকেও প্রাইভেট ব্যবসায় নিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে আজকের ব্যাংকিং সেক্টর, শিল্পখাত, স্বাস্থ্য খাতে যাচ্ছে তাই সিন্ডিকেশন চলছে। বিকৃত পুঁজিবাদী বাণিজ্যিকীকরণের এই থাবা থেকে শিক্ষাখাতও রেহাই পাচ্ছে না।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান বাণিজ্যিকীকরণের অব্যবস্থা দূর করতে জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করতে জাতীয়করণ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। ড. কুদরত-ই-খোদার শিক্ষা কমিশনেও ধাপে ধাপে জাতীয়করণের কথা বলা ছিলো। বাংলাদেশের সকল শিক্ষক সংগঠনের কর্মসূচিতে এই দাবিটি আগেও সন্নিবিষ্ট ছিল এবং এখনো আছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের কেবল একটি শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) ১ দফা জাতীয়করণের দাবি এমন এক সময় উত্থাপন করেছে যখন দেশে সরকার-বিরোধী একটি উগ্র রাজনৈতিক মহল সরকার পতনের ১ দফা উত্থাপন করেছে। ফলে প্রশ্ন এসেছে সরকার পতনের ১ দফার সাথে জাতীয়করণের এই ১ দফার কোনো অঘোষিত ও অলিখিত সম্পর্ক আছে কিনা? অন্তত শিক্ষক সমাজ 'পয়েন্ট অব নো-রিটার্নে' যাওয়ার মত উন্মত্ত কোনো আন্দোলন করতে পারে না। কোনোকালে কোনো পেশাজীবী আন্দোলন এরকম ১ দফায় সীমাবদ্ধ ছিলো না। অতীতে শিক্ষক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে অনেক দাবি পূরণ হয়েছে। সেখানেও এরকম ১ দফা ছিলো না। বর্তমান সরকারকে বাধ্য করে একসাথে ৩৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা ১৬ হাজার ৮৬৩ টি মাধ্যমিক স্কুল জাতীয়করণ করার দাবি বাস্তবসম্মত নয় এবং কোনো সরকারের পক্ষে তা মেনে নেয়াও সম্ভবপর নয়।

জাতীয়করণের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা না থাকার উচ্চাভিলাসী হিসাব দেখিয়ে শিক্ষক সমাজকে ক্ষণিকের জন্য বিভ্রান্ত করা গেলেও চূড়ান্ত বিচারে তা হাস্যকর বলেই প্রতীয়মান হবে। কারণ যারা ভুল অংক করে হিসাবটি দিয়েছেন তারা জাতীয়করণের পর পেনশন প্রদানের হিসাবটি দেননি। বিভ্রান্ত এবং উগ্র মস্তিষ্কের কতিপয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দের মাথায় তা আসেনি। আরেকটি বিষয়ে আমরা গভীর মর্মবেদনা, তীব্র অসন্তোষ ও প্রচণ্ড ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি যে সরকারি বিধির আওতাধীন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে থেকে কোনো কোনো শিক্ষক মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ভাষা ব্যবহার করছেন যা চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শিক্ষা পরিবারের অভিবাবকের প্রতি এমন অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করছেন এবং আদবের সীমানা এমনভাবে অতিক্রম করছেন যা শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাকর। একজন চিকিৎসক কীভাবে শিক্ষামন্ত্রী হন এমন বালখিল্যসুলভ অবান্তর প্রশ্ন উত্থাপন করছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশে এইবারই প্রথম একজন চিকিৎসক শিক্ষামন্ত্রী হননি। এর আগেও একজন বিখ্যাত চিকিৎসক কিছুদিনের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। সেই প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের জানা উচিত বাংলাদেশে ইতিপূর্বে আইনজীবীও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। বিশ্বের অনেক দেশেই চিকিৎসক কিংবা আইনজীবী কিংবা অন্য কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন।

ড. মেথিউ ওপোকু প্রেমপে একজন চিকিৎসক, ঘানার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সানিয়া নিশতার একজন কার্ডিওলজিস্ট পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন, ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী একাধারে চিকিৎসক এবং আইনজীবী। তিনি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তারা হয়াতো জানেন না, তিনি একজন ভাষা সৈনিকের সন্তান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর এবং ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা মরহুম আব্দুল ওয়াদুদ সাহেবের সন্তান। এ ধরনের প্রশ্ন তুলে কাউকে ছোট করা যায় না।

মনে রাখতে হবে, কাউকে গালি দিলে তিনি ছোট হন না বরং যিনি গালি দেন তিনিই ছোট হন। আমরা শিক্ষক, অবশ্যই আমাদের ভাষা হবে মার্জিত, আমাদের ব্যবহার হবে ভদ্রোচিত। হ্যাঁ, শিক্ষক তো শাণিত ভাষার সতেজ ভাষণ দেবেনই। কিন্তু কটাক্ষ করে নয়, হেয় প্রতিপন্ন করে নয়। আজ ১৭ দিন যাবত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একটি সংগঠনের ব্যানারে বেশকিছু শিক্ষক প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তায় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারা অপরিণামদর্শী হঠকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে একটি 'ডু অর ডাই' কর্মসূচি দিয়েছেন। এটি অবশ্যই অবিবেচকের মত একটি কর্মসূচি। শিক্ষক সমাজের কাছে জাতীয়করণ একটি জনপ্রিয় ইস্যু। এই ইস্যুতে অন্যান্য কোনো সংগঠনের সাথে পরামর্শ না করে ১ দফার আন্দোলনের হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে এই সংগঠন মূলতঃ দেশের ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে 'অতি প্রিয়পাত্র' হওয়ার অপকৌশল অবলম্বন করেছেন। সংগঠনসমূহের মধ্যে অসুন্দর প্রতিযোগিতা হলো 'জাতীয়করণের বল' নিজের পায়ে রাখা। একই লক্ষাভিমূখী সহযোগী কাউকে না দিয়ে একা একা গোল করার কৃতিত্ব নিয়ে চলছে অশুভ প্রতিযোগিতা। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক শব্দ ব্যবহার করলেই কোনো পেশাজীবি সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী একমাত্র সংগঠন হয় না।

জাতীয়করণের লং-টার্ম দাবির পক্ষে বেশকটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী শিক্ষক সংগঠনও আছে। বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিশ), বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি(বাকবিশিশ) দুইটি গ্রুপ,বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিশ) দুইটি গ্রুপ ও ১৬ বছরের তরুণ সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ(স্বাশিপ)। শেষেরটি ছাড়া এই সংগঠনসমূহ সেই '৭৩ সন থেকেই আন্দোলন করে আসছে। জন্মলগ্ন থেকেই এই সংগঠনগুলো জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছে। জাতীয়করণ কখনোই আন্দোলনের একমাত্র দাবি ছিলো না, এর সাথে অন্যান্য দাবি যুক্ত থাকতো। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অনেকবার এই কথাগুলো আমরা বলেছি, বেসরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও মেডিকেল ভাতা প্রদানের জন্য। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন তাদের ব্যানারে নিয়মতান্ত্রিক আন্দলন করেছে পাশাপাশি আমরা শিক্ষক সংগঠনসমূহের পক্ষে সরকারের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার টেবিলে কথা বলেছি। আমরা কথা বলেছি বলেই বর্তমান সরকার ২০১৮ সনে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমরা কথা বলেছি বলেই ২০% বৈশাখী ভাতার সিদ্ধান্ত এসেছে। আমরা কথা বলেছি বলেই অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী এ যাবত শুধুমাত্র অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ২২৫৭ কোটি টাকা প্রদান করেছেন, কল্যাণ ট্রাস্টে ৩১০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন। আগের সরকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য এক টাকার আর্থিক অনুদান দেয় নাই।

এ অবস্থায় আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি বাংলাদেশকে দরিদ্র অর্থনীতির অতল গহ্বর থেকে টেনে তুলে এনেছেন, মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের ভাষার "তলাবিহীন ঝুড়ির" দেশ বাংলাদেশকে আজ যিনি বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করে দিয়েছেন। সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা এবং সেইসাথে আমাদের সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নীতিগতভাবে উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও মেডিকেল ভাতা প্রদানের বিষয়ে সরকার ইতিবাচক। নীতি-নির্ধারকদের কেউ কেউ অতিমারি ও যুদ্ধ পরিস্থিতির অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর কথা বলে কিছুটা সময় নিচ্ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছাকাছি থেকে আমরা যারা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য কাজ করছি তারা জানতাম ২০১৮ সালের কোন সময়টিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ইনক্রিমেন্ট এবং বৈশাখী ভাতার উপহার দিচ্ছেন।

সেই সময়ও কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হয়নি, শিক্ষকদেরকে রাস্তায় নামতে হয়নি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়নি, শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করতে হয়নি। গত এক মাস আগে সরকারি কর্মচারীদের মতো বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য ৫% প্রণোদনার টাকা পেতে কাউকে কোনো বিবৃতি পর্যন্ত দিতে হয়নি, আন্দোলন তো দূরের কথা। উৎসব ভাতা, মেডিকেল ভাতা ও বাড়ি ভাড়া প্রাপ্তির এই সময়টি এখন অতি নিকটে। যে সংগঠনটি এখন প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় জাতীয়করণের আন্দোলন করছেন, এই সংগঠনের কতিপয় ব্যক্তি হয়তো অনুমান করেছেন ২০২৩ এর শেষপ্রান্তে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য সরকারের একটি উপহার থাকবে। প্রাপ্তির পর তারা কৃতিত্বের দাবিদার হওয়ার খেলায় এগিয়ে থাকার কুটকৌশল হিসাবে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছেন। সংগঠনসমূহের মধ্যে কৃতিত্ব দাবির টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী কোনো একটি শিক্ষক সংগঠনের পকেটে কৃতিত্ব তুলে দেবেন না। এ যাবৎ তিনি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য যা কিছু দিয়েছেন তা কেবল তাঁরই কৃতিত্ব। এই মুহূর্তে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ কোনো বিবেকবান শিক্ষক চাইতে পারেন না এবং হয়তো তারাও মনে করেন জাতীয়করণ এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তারা হয়তো এও বিশ্বাস করেন যে সরকার যেভাবে ধাপে ধাপে জাতীয়করণ করছে এটিই সঠিক।

শিক্ষামন্ত্রী একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে জাতীয়করণ হতে পারে মর্মে নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কোন রাজনৈতিক চতুরতার আশ্রয় না নিয়ে তিনি বলেছেন, সরকারের চলতি মেয়াদের দুই তিন মাসের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। শিক্ষামন্ত্রী ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোন কথা বলেননি। আন্দোলনকারীরা নিশ্চয়ই জানেন জাতির পিতা যেমন সদ্য স্বাধীন দেশে ৩০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন তেমনি প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের চলতি মেয়াদে প্রায় ৭শতাধিক স্কুল, কলেজকে জাতীয়করণ করেছেন। ইম'ম্যাচিউর ডেলিভারির সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জাতীয়করণের শিশুকে জন্ম দিলে সে অবধারিতভাবে মারা যাবে। অপরিপক্ক নেতৃত্ব বুঝে হোক, না বুঝে হোক এই সময়টি জাতীয়করণের একদফার আন্দোলন বেছে নেওয়ার সময় নির্ধারণ করেছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একটি মহল যখন রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তখন শিক্ষকগণ এমন কোন আন্দোলন কিংবা নৈরাজ্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ করে দিতে পারেন না। কেউ কেউ বসে আছেন পুলিশের লাঠি যেন শিক্ষকের পিঠে পড়ে, পুলিশকে ক্ষেপিয়ে দিতে ঢিল মারার লোকেরাও ওঁৎ পেতে বসে আছে। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লোকেরও অভাব নেই। সকল পক্ষই ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক : সচিব, অবসর সুবিধা বোর্ড।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test