E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পঞ্চম দফায় ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন

ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার  অবদান অবিস্মরণীয় 

২০২৩ জুলাই ৩০ ১৮:২৫:২৪
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার  অবদান অবিস্মরণীয় 

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


পঞ্চম দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে রবিবার (৩০ জুলাই)। ওইদিন সকাল ১০টায় পঞ্চম দফায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। এর আগে চার দফায় আমরা ২০০ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এবার পঞ্চম দফায় উদ্বোধন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে ষষ্ঠ দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার সদর ও খুলনার ফুলতলা মডেল মসজিদের সভাকক্ষে উপস্থিত জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মডেল মসজিদ দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় স্থাপন করতে ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক (২য় সংশোধিত) প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এরই মধ্যে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ে, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ে, ২০২৩ সালের ১৬ মার্চে তৃতীয় পর্যায়ে এবং গত ১৭ এপ্রিল চতুর্থ পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ২০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জমির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও ৩টি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ঠ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৯টি (নবগঠিত ৪টি উপজেলাসহ) এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট (নিচতলা ফাঁকা থাকবে) ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে তিনতলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদগুলোয় একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।

মসজিদগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ কক্ষ, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হেফজখানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র, পাঠাগার, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন, লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ই-কর্নার, বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের থাকার ব্যবস্থাসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যে জেলা-উপজেলায় উদ্বোধন করা হয়েছে। মডেল মসজিদ:গাজীপুরের শ্রীপুর, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও হোসেনপুর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, টাঙ্গাইল সদর, বগুড়ার আদমদিঘী ও সোনাতলা, নওগাঁ জেলা, নওগাঁর রানীনগর ও বদলগাছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, নাটোরের সিংড়া, পাবনার সদর উপজেলা, পাবনার বেড়া ও ঈশ্বরদী, রাজশাহীর পুঠিয়া ও দুর্গাপুর, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, দিনাজপুরের বিরামপুর, লালমনিরহাটের হাতীবান্দা, নেত্রকোণা সদর উপজেলা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, বরিশাল সদর, ভোলার দৌলতখান, ঝালকাঠির নলছিটি, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, চাঁদপুরের হাইমচর ও হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী সদর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও সদর, কক্সবাজার সদর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, রাঙ্গামাটির কাউখালী, নানিয়ারচর ও রাজস্থলী, খুলনার ফুলতলা ও পাইকগাছা, মাগুরা জেলা ও সদর উপজেলা, মেহেরপুর সদর, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বায়তুল মোকাররম সোসাইটি’ এবং ‘ইসলামিক একাডেমি’ নামক তৎকালীন দুটি সংস্থার বিলোপ সাধন করে এ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বড় সংস্থা হিসেবে দেশ-বিদেশে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের বাংলা তরজমা, তাফসির, হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূল (সা.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস,

ইসলামী আইন ও দর্শন, ইসলামী অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবি ও মনীষীদের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকার প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয়, আর্ত-মানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বৃহত্তর কলেবরে ২৮ খণ্ডে ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২ খণ্ডে সিরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে।বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার সঙ্গে সংগতি রেখে সারা দেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ইসলামি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠবে।এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত মডেল মসজিদের লোগো সংবলিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্তকরণ করেন।আর ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর নানামুখী ষড়যন্ত্র তাকে কিছু সময়ের জন্য দেশসেবা থেকে দূরে রাখলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তিনি পুনরায় সরকার গঠন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী দেশের চেয়েও এখন বাংলাদেশের জিডিপি ও এসডিজির অগ্রগতি ভালো।

বিভিন্ন অবকাঠামো ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পাশাপাশি দেশরত্ন শেখ হাসিনা ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নয়নের দিকেও নজর দিয়েছেন। পিতার দেখানো পথ ধরে তিনি জাতিগত সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এই জন্যই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ইবাদতের জায়গার নির্মাণ শুধু নয়, সেটিকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

পরিশেষে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দর্শন ও দূরদর্শিতা ফুটে উঠেছে এসব মডেল মসজিদে। তিনি যতদিন আছেন, ততদিন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ‘দাবায়ে’ রাখতে পারবে না।সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য এতগুলো মডেল মসজিদ এক বিরল ঘটনা। ইতিহাস হয়ে থাকবে শেখ হাসিনার এই কৃতিত্ব ও মুসলমানদের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসার কথা। শুধু এই মসজিদ নির্মাণই শেষ নয়। এর আগেও মুসলমানদের প্রতি ভালোবাসা এবং ইসলামের শান্তির বার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, আলিয়া মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অন্যতম। মুসলমানদের জন্য এই যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করার পর সর্বশেষ বর্তমান সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাহা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ধর্মীয় দিক থেকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। যেখানে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এটি সম্পন্ন করছেন। তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে মডেল রাষ্ট্র হবে।আর যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করে তাদের মাঝেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন চিরকাল।বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে বিপুল অবদান রেখেছেন,।ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে বিপুল অবদান রেখে যাচ্ছেন।ইসলামের এই বিশাল খেদমতের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সকল সদস্যদের জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন!

লেখক : কলাম লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test