E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান: পর্ব ৪

২০২৩ আগস্ট ২০ ১৬:১২:৫৯
বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা এবং সমাধান: পর্ব ৪

শিতাংশু গুহ


বাংলাদেশে মূর্তিভাঙ্গা, মন্দির আক্রমন একটি নিত্যনৈমত্যিক ঘটনা। যারা এগুলো করে তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই তা করে। প্রশাসন বিচার করেনা, কারণ তারা এটিকে ‘অপরাধ’ মনে করেনা। পুলিশ এদের ‘পাগল’ আখ্যায়িত করে ছেড়ে দেয়। এসব কারণে বাংলাদেশে হাজার হাজার মূর্তিভাঙ্গা বা মন্দির আক্রমন হলেও আজ পর্যন্ত এ অপরাধে কারো বিচার হয়নি, বা কেউ শাস্তি পায়নি। বাংলাদেশে এমন কোন একটি প্রতিষ্ঠিত মন্দির পাওয়া যাবেনা, যা কখনো না কখনো আক্রান্ত হয়নি? 

তাহলে মূর্তিভাঙ্গা বন্ধ হবে কিভাবে? মন্দির আক্রমন ঠেকানো যাবে কিভাবে? যেহেতু প্রশাসন বা সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে, তাই হিন্দুদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে, হিন্দু যদি তার আরাধ্য মূর্তি বা মন্দির রক্ষা করতে না পারে, তাহলে পূজা করা বা মন্দিরে যাওয়ার অধিকার থাকে কি? মূর্তি বা মন্দির রক্ষার প্রথম দায়িত্ব তো ভক্তের বা হিন্দুর। হিন্দু কি কখনো মন্দির রক্ষায় সোঁজা হয়ে দাঁড়িয়েছেন? ভবিষ্যতে দাঁড়াবেন এমন চিন্তা কি মাথায় আছে?

মন্দিরে প্রচুর চাঁদা উঠে। এই চাঁদার কিছু অংশ মন্দির রক্ষায় ব্যয় হয়কি? মন্দিরে প্রহরী রাখা হয়না কেন? বর্তমান যুগে সিসি ক্যামেরা সহজলভ্য, ক’টি মন্দিরে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে? নাই কেন? চাঁদার সামান্য অংশ দিয়েই তো এটি সম্ভব। তদুপরি মন্দির কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে একাজে দান করতে ভক্তের অভাব হবার কথা নয়?

প্রায় সকল মন্দিরে বা পূজামণ্ডপে একটি পরিচালনা পরিষদ বা কমিটি থাকে। এই কমিটি’র অন্যতম ‘লক্ষ্য ও কর্ম’ হওয়া উচিত মূর্তিভাঙ্গা প্রতিরোধ এবং মন্দির রক্ষা। দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যায় মন্দির কমিটি’র প্রেসিডেন্ট/ সেক্রেটারি মিডিয়ায় কথা বলেন, দুস্কৃতিকারীদের ওপর দোষ দেন, বিচার চান; কিন্তু দুর্ঘটনা রোধে তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা বলতে পারেন না? এর কারণ হচ্ছে, তারা কোন ব্যবস্থা নেননি? হরদম মূর্তিভাঙ্গা বা মন্দির আক্রমনের ঘটনা ঘটলেও তাঁরা কেন কোন আগাম ব্যবস্থা নেননা, এর কারণ কি?

কোন মন্দির আক্রান্ত হলে প্রথমেই উচিত প্রতিরোধ করা। আগাম ব্যবস্থা নেয়া না হলে বা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলে, প্রথমেই মন্দির কমিটি’র সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা পুরো কমিটি’র পদত্যাগ করা। ভক্তদের উচিত তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা। কমিটি’র উচিত মামলা করা। স্থানীয় থানা মামলা না নিলে উচ্চতর আদালতে মামলা করা উচিত। থানার সামনে, বা ডিসি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা। এগুলো কমিটি’র কাজ, কমিটি এর দায়িত্ব পালন করলে মন্দিরে হামলা বা মূর্তিভাঙ্গা অনেকাংশে বন্ধ হবে।

শুধু প্রশাসন, সরকার বা মৌলবাদীদের দিকে আঙ্গুল তুলে লাভ নেই? আপনার মন্দির আপনাকেই রক্ষা করতে হবে। মন্দিরগুলো রক্ষনাবেক্ষন করুন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করুন, সাহসী, যোগ্য লোক নিয়ে মন্দির কমিটি গঠন করুন। শাখারী বাজারে পাকিস্তান আমলে কখনো রায়ট বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি, এর কারণ শাখা কাটার ‘করাত’। আগে হিন্দুর বাড়িতে একটি রামদা থাকতো, এখন থাকেনা। হিন্দুর সকল দেবদেবী যোদ্ধা, কিন্তু হিন্দু সকল সমরাস্ত্র দেবতার হাতে দিয়ে নিজে নিরস্ত্র হয়ে বসে আছে। হিন্দু ভুলে গেছে যে, আত্মরক্ষার জন্যে কখনো কখনো যুদ্ধ করতে হয় বৈকি! ‘সারভাইবেল অফ দি ফিটেষ্ট’ কথাটি সত্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test