E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক

২০২৩ আগস্ট ২৬ ১৫:৪৬:১৯
বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ-যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিস্মিত চোখের সামনে বাংলাদেশ অনেক ত্যাগে বিজয় অর্জন করেছিলো। পরবর্তী প্রায় পাঁচ দশক বাংলাদেশ একের পর এক আরও বিস্ময় সৃষ্টি করে চলছে। এরই মধ্যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। একদা বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ ছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অকল্পনীয় ছিল। এখন আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো মেগা প্রকল্পও প্রমত্ত পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। পদ্মা সেতু আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা আমাদের স্বপ্ন ছিল নিঃসন্দেহে, কিন্তু একই সঙ্গে প্রত্যয় ছিল সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ারও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে উপমহাদেশের আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প-কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘শান্তি, গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। সেই ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। বিগত বছরগুলোতে এই দুই ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুত ছিল সেগুলোই ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির পর এখন লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত আয়ের দেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাবার মতো আমাকে যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয়, আমি তা করতে প্রস্তুত।’ ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, কৃষকরত্ন, জননেত্রী- বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাকে কেন্দ্র করে, তার নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি অন্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন; জাতীয় সংকট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি জনতার আকাক্সক্ষা এবং টিকে থাকার বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধের সাহায্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছেন। তার নেতৃত্বের সাফল্যে বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন, তা বিশ্বের বিস্ময় বৈকি। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাঙালির সংগ্রাম যেমন স্বাধীনতার সংগ্রাম, তেমনি মুক্তিরও সংগ্রাম। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো যেমন বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তেমনি সংস্থাটি বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদানেরও ঘোষণা দিয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তা দৃষ্টান্তযোগ্য।

বাংলাদেশ এখন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা দেখেছি, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশ সফলভাবেই মোকাবিলা করেছে। এ দুর্যোগ অন্য দেশে যেভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়েছে, যেভাবে লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটেছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে এর প্রভাব আমরা কমই দেখছি। আমরা দেখেছি, করোনা সময়কার অর্থনৈতিক সংকটও সরকার কাটিয়ে উঠতে প্রণোদনাসহ নানা বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পাঁচ দশকে আমাদের দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাওয়া, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অসামান্য।

আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় কমবেশি এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন বাংলাদেশ নিজেই ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয়, খাদ্য ও অভয় দিতে সক্ষম হয়েছে। এসব অর্জন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের মাথা উঁচু করলেও দুর্নীতি নির্মূল এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়ও যে আমরা পিছিয়ে রয়েছি, তা সাম্প্রতিক এক সূচকে স্পষ্ট হয়েছে। বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না; বরং সব সংকট ও সমস্যা মোকাবিলায় আমরা কীভাবে কাঙ্ক্ষিত সুখী, সমৃদ্ধশালী ও বৈষম্যমুক্ত কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে পারি।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।এটি আমাদের সবার চিন্তায় জাগ্রত করতে হবে।

লেখক : উপপরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test