E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন 

উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০১ ১৬:৪৮:৩৮
উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


রাজধানীবাসীর বহুল প্রতিক্ষীত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২৩) পুরোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিভিআইপি, ভিআইপি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের সদস্য, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপক লোকসমাগম অংশগ্রহন করেন। আজ আংশিকভাবে চালু হলো গতিময় এই সড়ক। আপাতত ২০ কিলোমিটারের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে ১২ কিলোমিটার। এই যাত্রায় বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত অংশের ৫টি পয়েন্ট দিয়ে, গাড়ি উঠতে ও নামতে পারবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উঠা ও নামার জন্য থাকবে একটি করে র‍্যাম্প। কুড়িলে উঠার পথ ২টি আর নামার একটি। বনানীতে দুটি র‍্যাম্প উঠার আর দুটি নামার। মহাখালীতে নামা যাবে দুই পথে,তবে উঠা যাবে একটি পথে। আর ফার্মগেটে নামার পথ একটি তেঁজগাও কলেজের সামনে, আর উঠার র‍্যাম্প ৩টি। শুরুতে মোট ১৬টি র‍্যাম্পের মধ্যে ১৩টিতে যানবাহন চলাচল করবে। 

এরইমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, এই পথে উঠবে না তিন-চাকার আর দুই চাকার কোনো যানবাহন। থাকবে না ফুটপাত। নির্ধারণ করা হয়েছে যানবাহনের টোলও। প্রাইভেট কারে সর্বনিম্ন ৮০ টাকা। একই টোল-হার মাইক্রোবাস, পিকআপ, হালকা ট্রাকের ক্ষেত্রে। তবে মাঝারি ট্রাকে ৩২০ টাকা এবং ভারী ট্রাক চলাচলে গুনতে হবে ৪শ’ টাকা। এছাড়া বাস-মিনিবাসে গুনতে হবে ১৬০ টাকা।

২০১১ সালে কাজ শুরু হওয়া দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। মাঝের এই বছরগুলোতে কয়েক দফা বেড়ে এখন হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ কমবে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৯.৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। র‍্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

ফ্লাইওভার বা উড়ালসেতু কী?

উড়ালসেতু বা অধিসরণি ফ্লাইওভার বা ওভারপাস হচ্ছে এক ধরনের সেতু, সড়ক, রেলরাস্তা বা এ ধরনের কোনো স্থাপনা। এটি কোনো সড়ক বা রেলপথের ওপর দিয়ে নির্মিত হয়। গাঠনিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিম্ন ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট সড়কের ওপর অপেক্ষাকৃত বেশি ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট রাস্তা তৈরি করা হলে তাকে ফ্লাইওভার বলে। কোনো সিগন্যাল ছাড়া এক রাস্তাকে অন্য আরেকটি রাস্তার সঙ্গে মেলানোর কাজটি করে ফ্লাইওভার।

বাংলাদেশের ফ্লাইওভার

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভার হলো ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার বা যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার’। এর দৈর্ঘ্য ১০.৩ কিলোমিটার। মূল ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ৪.১ কি.মি.। এটির সংযোগকারী সড়কের দৈর্ঘ্য ৬.২ কি.মি.।এছাড়াও আছে ৩.১ কিলোমিটার বিশিষ্ট কুড়িল ফ্লাইওভার, ১.৯ কিলোমিটার বিশিষ্ট খিলগাঁও ফ্লাইওভার। রাজধানী ঢাকার আরও কটি ফ্লাইওভারের মধ্যে রয়েছে মহাখালী ফ্লাইওভার (১.১২ কিলোমিটার), বিজয় সরণি ফ্লাইওভার (১ কিলোমিটার), জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার (১.৭৯৩ কিলোমিটার), মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভার (৮.২৫ কিলোমিটার)।

এই হিসেবে রাজধানী ঢাকাকে অনেকটা ফ্লাইওভারের নগরী বলা যায়। মূলত যানজট কমানো এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যেই এসব উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কী?

এটি এক ধরণের হাইওয়ে। যার অবকাঠামো ফ্লাইওভারের মতই। ফ্লাইওভার শুধু নির্দিষ্ট একটি স্থানের ট্রাফিক ওভার করে। অপরদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বয়ে যায় একটা শহর বা অঞ্চলের ওপর দিয়ে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এটি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এটি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কসহ এর দৈর্ঘ্য হবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বাংলাদেশের দ্বিতীয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এটি। চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত নির্মিত হবে এই উড়ালসড়ক। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে নগরীর সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফ্লাইওভার এবং এলিভেটেড একপ্রেসওয়ের পার্থক্য

এক ধরনের সেতু হলেও ফ্লাইওভার আর এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে এক নয়। কোনো সড়ক বা রেললাইনের ওপর দিয়ে যে সেতু নির্মিত হয় তা ফ্লাইওভার। এর দৈর্ঘ্য কম হয়। অন্যদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হলো একটি শহর বা অঞ্চলের ওপর বয়ে যাওয়া দীর্ঘ উড়ালসড়ক। এর দৈর্ঘ্য অনেক বেশি হয়।

এক্সপ্রেসওয়ে এবং এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে কী এক?

এই প্রশ্নের উত্তর হবে— না। প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত বিশ্বমানসমৃদ্ধ মহাসড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। সব মহাসড়কে বিরতিহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ, এসব মহাসড়কে রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। আছে একের পর এক মোড়।

এমন নানা জটিলতায় মহাসড়ক বা হাইওয়েতে চলাচলকারী যানবাহন নির্দিষ্ট গতিতে চলতে পারে না। ফলে গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি থাকে অনিশ্চিত। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতেই বিশেষ সুবিধাসহ যে হাইওয়ে নির্মিত হয় সেটি এক্সপ্রেসওয়ে। এতে প্রবেশের পথ একটি, বের হওয়ারও পথ একটি। হাইওয়ের তুলনায় এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করতে কম সময় লাগে। বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’। অন্যদিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংজ্ঞা আগেই বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার মাধ্যমে রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। অসহনীয় যানজটে নাকাল নগরবাসী পাবে কিছুটা স্বস্তি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করা সম্ভব হবে।

তাছাড়া রাজধানীর বাইরে অবস্থান করা বিদেশগামী কিংবা বিদেশফেরত যাত্রীরা কোনো সিগন্যাল ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে পৌঁছে যেতে পারবেন সায়েদাবাদ। যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না তাদের। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৩৭টির অধিক পুরস্কার ও পদক অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্রাউন জুয়েল’ বা ‘মুকুট মণি’ আখ্যায়িত করেছে আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক। আন্তর্জাতিক অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি শেখ হাসিনার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম এবং ভারতের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, সাহিত্য, লিবারেল আর্টস এবং মানবিক বিষয়ে ৯টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এমডিজি) অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটি’র ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। দেশের উন্নয়নে তার অব্যাহত অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ পদক প্রদান করা হয়। উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। এছাড়া পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৯) সিইআরইএস পদক, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড (২০১১, ২০১২) ও নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭) পেয়েছেন শেখ হাসিনা।

শুধু পুরস্কারপ্রাপ্তিতেই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার কথা এখন বিশ্বনেতারা জানতে চান বিভিন্ন ফোরামে। বহুপক্ষীয় সম্মেলনগুলোতে শেখ হাসিনা উপস্থিত হলেই অন্যান্য রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারপ্রধান কাছে এসে অভিনন্দন জানান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন পরিচিতি বাংলাদেশের আর কোনো নেতা পাননি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারীনেত্রী। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এবং শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাকেও টপকে গেছেন শেখ হাসিনা। উইকিলিকসের সর্বশেষ গবেষণা মতে, শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের পুনরুত্থান করা সবচেয়ে আইকনিক নেত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় ও চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন-দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এর মধ্যে দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেন। জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর তৈরি কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে করেন বিচার ব্যবস্থা পূর্ণগঠন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু, রাজনৈতিক হত্যা, বঙ্গবন্ধু ও তার সপরিবার, কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দলে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন ও নেতৃত্বশূন্য করতে বেশ কয়েকবার মরণ আঘাত চালায় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর ২০০৮ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। তারপর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩, ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ সালে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস করেন।

তারপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন (এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় ১,৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর বাস্তবায়নে কাজ করেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কাজে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ খাত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দেশের ভেতর-বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষাখাতে অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিনামূল্যে বই বিতরণ, মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ যা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলের ১৩ গুণ বেশি, শিক্ষক নিয়োগ ও মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা, দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড, কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।

বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেস সহ আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদও সফলতার সঙ্গে শেষ করবেন তা হলফ করে বলা যায়। বর্তমান হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নারীনেত্রী। শেখ হাসিনা নানা ইস্যুতে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধানও।

এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জনও বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তিনিই দিয়েছেন। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনা একজন প্রভাবশালী নেতা হিসবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

পরিশেষে বলতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদাত্ত আহবানে আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি যা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পথ।

এই সময়ের বাংলাদেশে তিনি একজন ব্যক্তি মাত্র নন, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে গণমানুষের আশা-জাগানিয়া অভিভাবক। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। সকাল-দুপুর-বিকাল-রাত কেটে যায় দেশ মানুষের মঙ্গল চিন্তায়। তিনি দীর্ঘ জীবনের সুস্থতা নিয়ে আমাদের মাঝে সজীব থাকবেন এই প্রত্যাশা আমাদের।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লষক।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test