E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জানুয়ারিতে নির্বাচন, কতটা প্রস্তুত রাজনৈতিক দলগুলো

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০২ ২২:৪৫:০৯
জানুয়ারিতে নির্বাচন, কতটা প্রস্তুত রাজনৈতিক দলগুলো

সুপ্রিয় সিকদার, ঢাকা
আগামী (২০২৪) বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। এরই মধ্যে নানা আয়োজন শুরু করেছে কমিশন। চলছে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। ঘোষণা করা হয়েছে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকাও।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ শনিবার নির্বাচনের সম্ভাব্য মাসের ঘোষণা দিলেও রাজনৈতিক দলগুলোতে বেশ আগে থেকেই নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। চলছে মিটিং-মিছিল, নিজেদের কাজকর্মের প্রচার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নানা অবস্থান। এর মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে বিদেশি চাপও।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই বিদেশি চাপ নিয়ে একে-অপরকে দুষছেন বরাবরের মতোই। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেদিকে চেয়ে আছে বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বাম দলগুলো বলছে তদারকি সরকারের কথা। সব মিলিয়ে ভোট উৎসবের একটা আমেজ দেশে বিরাজ করছে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দাবি করছে, তাদের অধীনেই হবে এবারের নির্বাচন। তারা সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবে। এরই মধ্যে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীসহ সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে শুরু করেছেন ভোটের প্রচার। ভোট চাইছেন নৌকার জন্য। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে ভোট চাইছেন নৌকার জন্য।

বিদেশি চাপকে তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তাঁরাই করতে পারবেন। তাঁরা দাবি করছেন, বিদেশিরা শুধু চায়- সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সুতরাং সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে কোনো বাধা দেখছেন না তাঁরা।

সম্প্রতি দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, বিদেশিরা কখনোই তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে না।

দলটির নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এটা স্পষ্ট, তাঁরা বাইরের দেশগুলোকে বোঝাতে চাচ্ছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানে বড় দল বিএনপি। ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি এখন সরকার পতনের একদফা দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে দলটি অংশ নেবে কি না, সেই অবস্থান এখনও পরিষ্কার করেনি।

বলা যায়, এক বছর ধরে রাজনীতির মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে বিএনপি। নিজেদের কর্মী বাহিনীকে তৎপর করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সম্প্রতি বিএনপি ঘোষিত সবগুলো বড় রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনই পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা আসন্ন নির্বাচনকে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে দলটি পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, পতাকা মিছিল থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচিও দিচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত কোনো বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে বিএনপির এসব কর্মসূচির দিকে কড়া নজর ক্ষমতাসীনদের।

জানুয়ারিতে নির্বাচন। সেই হিসাবে বিএনপির হাতে আছে আর চার মাস। এর মধ্যে নভেম্বর বা অক্টোবরের শেষে ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের তফসিল। এই সময়ের মধ্যে কতটা শক্ত আন্দোলন করা সম্ভব, সে নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা। তবে এ নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণ আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে চান তাঁরা। তিনি বলেন, গণ আন্দোলনে মানুষের বিস্ফোরণ কখন হবে, তা বলা যায় না। তবে আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটবে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

তবে নির্বাচন নিয়ে দেশে ভাবলেশহীন অবস্থানে আছে বর্তমান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। দলটির নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছুটা তৎপরতা দেখা যায় জি এম কাদেরের বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে। সম্প্রতি ভারতে গিয়েও বৈঠক করেছেন জি এম কাদের।

রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরর সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখার লড়াই রয়েছে মোটাদাগে। তাঁরা কেউই আগ বাড়িয়ে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ করছেন না। করছেন না কোনো প্রচারও। তবে দলটির রাজনীতি একদম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বলে নানা মহলে আলোচনা আছে। একদল চাচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে টিকে থাকা, আর আরেক দল চাচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে।

আওয়ামী লীগ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশলে যেতে চান, জি এম কাদের, যা তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট। সম্প্রতি তিনি সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী বেশ শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। এটিকে আবার ভালোভাবে দেখছেন না রওশনপন্থীরা। তাঁরা চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকায় চড়েই ভোট পার করতে।

এদিকে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তদারকি সরকারের দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালন করছে বামদলগুলো।

দলগুলোর নেতৃবৃন্দ বলছেন, চলতি নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকারিতা হারিয়েছে। আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রধান দাবি। এই মূহূর্তে এর কোনো বিকল্প নেই। তাঁরা মনে করেন, বিনা ভোটের এ সরকার বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

ক্ষমতাসীনদের দলীর সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইচ্ছে, বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, বামদলের তদারকি সরকার, জাতীয় পার্টির অস্পষ্ট অবস্থান আর সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিদেশি চাপ- এই মিলে নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠে বেশ উত্তাপ আছে। কী হবে এই চার মাসে, এই নিয়েও চলছে জল্পনা-কল্পনা।

লেখা: ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন থেকে নেওয়া

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test