E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঘরে ঘরে আনন্দের বান ডেকেছে

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২১ ১৬:২১:০৫
ঘরে ঘরে আনন্দের বান ডেকেছে

পীযূষ সিকদার


লিখতে বসে আমার হাত কাঁপছে। হৃদপিন্ডটা কেমন জানি কষ্টে ধরফর করছে। আমি লিখতে পারছি না। কলম কেবলি থামে। লেখা এগোয় না। কী লিখবো তাও জানি না। শুধু একটি নাম জানা আছে ড. আফসার আহমদ। অনেক কিছুইতো জানি তবু লেখা এগোয় না। কষ্টে আমার বুক ধরফর করছে। কাকে নিয়ে লিখতে বসেছি। তাও মনে করতে পারিনে। তিনি আমার কী হন! তাও জানিনা। শুধু মনে পড়ে তিনি আমাদের গ্রীক সাহিত্য পড়াতেন। আকাশের দিকে মুখ তুলে। আকাশ থেকে কথা পাড়তেন। সেই কথা আমরা বিভোরভাবে শুনতাম। তাঁর বলার মধ্যে একরাশ স্নিগ্ধতা ছিলো। এতো সুন্দর করে কথা বলতেন! কথা শোনার চেয়ে তাঁর মুখের দিকে একখন্ড মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারি না। এখনো তাঁর চলে যাওয়া মানতে পারিনে। স্যার, চলে গেলেন! আর আসবেন না ফিরে। বলবেন না পীযূষ আমি আছি! তোর একটা কিছু হয়ে যাবে! স্যার, আমারতো কিছুই হলো না। না চাকরি না টাকা। এখন চলে আমার ক্রমাগত মানসিক বাস। এই জেল থেকে স্যঅর ছাড়া পাবো কবে? কবে থেকে আবার নাটক করতে পারবো! স্যার আকাশের তারা হয়ে কী আমাকে দেখতে পান। আপনি চলে যাবার ৪/৫ দিন আগে আপনার সাথে আমার কথা হরো কী অফুরন্ত হাসি। এই কী শেষ হাসি হেসেছিলেন!

আমি এখনো মানতে পারি না। আপনি চলে যাবেন! আপনিই বলেন মানতে কী পারি! আপনার কথা বোঝা যায় না কেবল ফ্যাস ফ্যাসে গলায় উত্তর আসে। সে উত্তর বোঝা না বোঝার মধ্যে হামাগুড়ি খায়। স্যার, আমার দেখা মানুষগুলির মধ্যে আপনি অন্যতম। কত সুন্দর করে ব্যাটা বলতেন। জানি না কী কারণে কী অভিমানে পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে প্রস্থান করলেন। আর আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি এক বুক ভাঙ্গা কষ্ট নিয়ে ধ্রুবতারার দিকে তাকিয়ে থাকি। যদি আপনার ঠিকানা পেয়ে যাই! কলম শুধু থামে। লেখা এগোয় না। কী লিখতে কী লিখে ফেলছি। কেনই বা লিখছি। কত মানুষই তো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। কেউ কী মনে রাখে? স্যার, আপনি বিশেষ কী যে আপনাকে মনে রাখতে হবে। হ্যাঁ মনে রাখতেই হবে। আপনি যে আমার দেখা প্রিয় মানুষগুলির অন্যতম। স্যার, মনে আছে আপনাকে কী যমের মতো ভয় পেতাম। কথা বলতাম না। খালি কথা শুনতাম। কী সুন্দর করে আপনি কথা বলতেন। গ্রীক সাহিত্য সংস্কৃত সাহিত্য রবীন্দ্রনাথ এক লহমায় বুঝিয়ে দিতেন।

স্যার, আপনার মৃত্যুতে আমি কাঁদিনি। কাঁদতেও ভুলে গেছিলাম। চোখের জলে আমি সাগর হয়ে ছিলাম। তোমার কথা লিখ লিখতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কী লিখবো। কী লেখা যায়! কলম শুধু থামে। আমার কপালের বলি রেখায় পদ্মা মেঘনা যমুনার উজান চলে। কেবলি উজানে বৈঠা মারি। স্যার আপনার সাথে তেমন কোন স্মৃতি নেই! তবুও স্মৃতির উঠান পেরিয়ে যত কাছে আসি আপনি তত সরে সরে যান। মৃত্রুতে আপনি কী লীন হয়ে আছেন জীবনের সঙ্গে! আপনার লেখায়, সুরে, নাটকে এক মহাকাব্যিক দ্যোতনা এনে দেয় আমাদের বোধে মননে মগজে। কলম থেকে থেকে কালির অক্ষরে কেবলি লাল নীল কালো হয়ে যায়। ভেতরে দহন জ্বলে। আকাশ কী বৃষ্টির আগে কালো হয়। অমন কালো মুখে কাকে খুঁজছিলেন! কবিতায় নাটকে। সুরে সুরে আপনিই হয়ে উঠেছিলেন একটা যুগের স্রষ্টা।

আপনার হাত ধরেই ১৯৮৬ সালে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ খুলেছিলেন। আপনি তো সেই ড. আফসার আহমদ। প্রিয় শিক্ষক আচার্য সেলিম আল দীন আপনার সঙ্গী হয়েছিলেন। আমি ছিলাম আপনাদের সবচেয়ে শেষে বসা ছেলে। বলতে শিখেনি। শুধু শুনেছি। এখন একটু একটু বলতে শিখেছি। লিখতে শিখেছি।

আসলে লিখতে বসেছি নাট্য দিশারী ড. আফসার আহমেদ এর কথা। কী লিখবো ছাই পাশ কিছু বুঝি না। কেবলি ভেতরটা গুমুরিয়া কাঁদে। দেখতে পাচ্ছেন স্যার, এইতো আমি! বন্ধুর দেয়া টেবিলে বসে লিখছি। সেই কবে থেকেই নিঃস্ব হয়ে আছি। আপনি চলে আসার পর। আমার পরানটা ভরে গেছে। আপনিতো মরেননি। এতো মৃত্যু মৃত্যু খেলা। আজ আপনার জন্মদিন। জন্মদিনে জুই বেল ও গন্ধরাজের শুভেচ্ছা। জন্ম ও মৃত্যু বৃত্তের এপীঠ ওপীঠ। আজ আপনার ৬৩তম জন্মদিন। স্যার, প্রতিবছর আচার্য সেলিম আল দীনের জন্ম মৃত্যু দিনে যেতাম। আপনাকে দেখে শোক ভুলতাম। একজন চলে গেছেন সীমানা ছেড়ে দূরে। আরেকজনতো আছে সীমানায়। কত যে সেলফি তুলতাম। স্যার মাথাটা একটু ঘুরিয়ে আকাশের দিকে চোখ তুলতেন।

আমি তো জেগে উঠেছি কুমার নদের পারে। মৃত্যু জীবনের সীমানা টেনে দিলেও। কেউ কেউ সীমানা ডিঙিয়ে জীবন পানেই পড়ে থাকে। তাঁর সৃষ্টি সম্ভারে অথবা জীবন আচারে। কেউ কেউ নিজেই কৃত্য হয়ে উঠে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

নাট্যদিশারি ড. আফসার আহমদ। নমি তোমায়। ঘরে ঘরে যে আজ তোমার জন্মদিনে আনন্দের বান ডেকেছে।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test