E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ট্রুডোর রাজনৈতিক স্বার্থই ভারত-কানাডা সংকটের জন্য দায়ী

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৯ ১৭:৪৭:৩৭
ট্রুডোর রাজনৈতিক স্বার্থই ভারত-কানাডা সংকটের জন্য দায়ী

গোপাল নাথ বাবুল


দুই উপমহাদেশের দুই অন্যতম বৃহত্তম দেশ কানাডা ও ভারত। দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর ও ঘনিষ্ট। শিক্ষা ও বাণিজ্য সহ বিভিন্ন খাতে দুই দেশের লেনদেন ভালোই চলছিল। কানাডায় মোট বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই ভারতীয়। উচ্চশিক্ষায় ভারতীয়দের কানাডায় কদর বেশি। কানাডিয়ান ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন-এর ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী কানাডায় ভারতীয় শিক্ষার্থী প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজারের মতো এবং কানাডায় বসবাসকারী ২০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজারের মতো শিখ সম্প্রদায়ের লোক বাস করেন।

শিক্ষা ছাড়াও কানাডার সঙ্গে ভারতের রয়েছে খুবই মজবুত বাণিজ্য সম্পর্ক। পণ্য আমদানি-রফতানির মাধ্যমে দু’দেশ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ভারত কানাডাতে রপ্তানি করে ভোগপণ্য, যানবাহন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, তৈরি পোশাক, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, বিমানের যন্ত্রপাতি সহ নানাবিধ উপকরণ এবং কানাডা থেকে আমদানি করে সার, কয়লা, কোক, ব্রিকেটের মতো উপাদান। ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক দৃঢ়তার সঙ্গে উন্নত করা দেশের তালিকায় কানাডার স্থান প্রায় ১০ নম্বরের কাছাকাছি এবং ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তালিকায় ১৭ নম্বরে রয়েছে কানাডা। কানাডা ২০০০ সাল থেকে ভারতের বাজারে ৩৬০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। ২০১৯-২০ সালে ভারত ও কানাডার মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হতো যা ২০২২ সালে এসে ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। দু’দেশের মধ্যে এমন সুন্দর ও মধুর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটার কারণঃ

গত ১৮ জুন কানাডার বৃটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের এক শিখ মন্দিরের সামনে ২ মোটর সাইকেল আরোহী খালিস্তানি নেতা হারদীপ সিং নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করে। এর জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার হাউজ অব কমন্সের সভায় জাস্টিন ট্রুডো এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে বলে দাবি করেন এবং কানাডার মাটিতে কানাডার একজন নাগরিককে হত্যায় বিদেশি কোনও সরকারের সংশ্লিষ্টতা তাাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন। এ ঘটনায় কানাডা ভারতীয় এক উচ্চ পদস্থ কুটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও স্থগিত করে।

ভারত সরকার ট্রুডোর এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং এ অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে নাকচ করে দেয়। কারণ বিদেশে গুপ্ত হত্যা ঘটানোর রেকর্ড স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে নেই। আইনের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল ভারত। কানাডা কর্তৃক ভারতীয় কুটনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা হিসেবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং ভারত বিরোধী কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার কারণে কানাডীয় এক কুটনীতিককে পরবর্তী ৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয় ভারত সরকার। দু’দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের কারণে কানাডা এবং ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়নের বিষয়টির আরও অবনতি ঘটে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতে থাকা কানাডার নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জরুরি ভিত্তিতে জারি করা এক নির্দেশিকায় ট্রুডো সরকার সরাসরি কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে খোঁচা দেয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে জঙ্গী উপদ্রুত এলাকা কাশ্মীরে যেতে কানাডিয়ান নাগরিকদের বারণ করা হয়েছে। সেখানে যেকোনো মুহূর্তে খুন ও অপহরণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়। শুধু কাশ্মীর নয়, গোটা ভারতেই সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে ভারতে থাকা কানাডিয়ানদের সতর্ক করা হয়। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ‘ভারত ভ্রমণে আপনার নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ওই দেশে যাওয়ার আগে দশবার ভাবুন।’ পাশাপাশি যারা এই মুহূর্তে ভারতে আছেন, খুব প্রয়োজন না হলে তাদের ভারত ছাড়ার পরামর্শ দেয় কানাডা প্রশাসন।

ভারতও কানাডায় থাকা ভারতীয়দের কানাডার বিপজ্জনক এলাকায় ভ্রমণ পরিহার করার জন্য সতর্ক করে এবং কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা দেওয়ার পরিসেবা স্থগিত করে। দু’দেশই তাদের দূতাবাসে কুটনীতিকদের সংখ্যা কমানোর নির্দেশ দেয়। খালিস্তানি নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক কুটনীতিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ভারত সরকার একটা বড় পদক্ষেপ নেয়। এনআইএ নিষিদ্ধ খালিস্তানি সংগঠন শিখস্ ফর জাস্টিসের প্রধান গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের পাঞ্জাবের চন্ডীগড়ের বাড়ি এবং অমৃতসরে তার মালিকাধীন জমি বাজেয়াপ্ত করে। পান্নুন পাঞ্জাবে রাষ্ট্রদ্রোহের ৩টি মামলাসহ ২২টি ফৌজদারি মামলার আসামি। এ পান্নুনই সম্প্রতি ইন্দো-কানাডিয়ান হিন্দুদের কানাডা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। পান্নুনের বিরুদ্ধে বড় ক্র্যাকডাউনের একদিন পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দুবাই, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশে বসবাসকারী ১৯ জন পলাতক ব্যক্তির তালিকা তৈরি করে তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে ভারতে থাকা তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন ইউএপিএ-এর অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

সম্প্রতি জি টুয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ট্রুডো বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তখন সম্পর্কের শীতলতা প্রকট হতে শুরু করে। ভারতে থাকাবস্থায় জাস্টিন ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার কথা বলে যাচ্ছিলেন। এতকিছুর পরেও যখন ট্রুডোর প্লেন খারাপ হয়ে যায় তখন ভারত সরকার ট্রুডোকে তাদের বেস্ট প্লেন ‘এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান’ যাতে প্রেসিডেন্ট যাতায়াত করেন, সেটা জাস্টিনকে তার নিজের দেশে যাওয়ার জন্য অপার করে। কিন্তু ট্রুডো তাও রিজেক্ট করে।

২০১৯ সালে সরকার তৈরির পর থেকে জাস্টিন ট্রুডো একের পর এক ভারতের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করে আসছিলেন। গত ২০২০ সালে ভারতব্যাপী পালিত হওয়া কৃষক আন্দোলনে জাস্টিন ট্রুডোর সমর্থন ছিল প্রকাশ্যে। যে আন্দোলনে শিখ ও জাঠ সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ছিল নজরকাড়া। ওই আন্দোলনে খালিস্তানিদের মদত ছিল বলে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডায় খালিস্তান দাবির পক্ষের লোকজন ভারতীয় দুতাবাসেও হামলার চেষ্টা চালায়।

খালিস্তানপন্থীদের এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে কানাডা সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বললে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রক কানাডার সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচীর অধিকার স্বীকৃত বলে ভারতের দাবি এড়িয়ে যায়। এতে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের চিড় আরও চওড়া হতে থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু সমস্ত শিষ্টাচার এবং কুটনৈতিক রীতিনীতি জলাঞ্জলি দিয়ে ট্রুডো যে কৌশলে কানাডায় খালিস্তানি নেতা হত্যায় ভারত সরকারকে দায়ী করেছেন, তা রীতিমতো বিরল ও নিঃসন্দেহে দু’দেশের বিশ্বাস ও আস্থায় যে বড় ধাক্কা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ট্রুডো মনে করেছিলেন, এ ঘটনায় কানাডার মিত্র দেশগুলো তার পক্ষে সোচ্চার হবে। ফলে চেষ্টা চালিয়েছিলেন, ফাইভ আইস এলায়েন্সকে (যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা এ ৫টি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার জোট) ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে। তাতে সমর্থন পাওয়া যায়নি। ওল্টো কানাডায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গার্সেটি বলেন, উই কেয়ার ডিপলি ফর কানাডা জাস্ট এস উই কেয়ার ডিপলি ফর ইন্ডিয়া এন্ড থিং দ্যাট মোমেন্ট লাইক দিজ ডোন্ট ডিফাইন আওয়ার রিলেশনসীপ। বাট দে চার্টেনলি ক্যান স্লো ডাউন প্রগ্রেস। অর্থাৎ কানাডা আমেরিকার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ইন্ডিয়াও আমেরিকার কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ।

এরপর জাস্টিন ট্রুডো চেষ্টা করেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে কমনওয়েলথ ছাড়াও নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) এবং জি-৭ কে ব্যবহার করতে। তাতেও ট্রুডো ব্যর্থ হন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো চায় না যে, ভারতের সঙ্গে দুরত্ব বাড়াতে। তাদের আশঙ্কা, ভারত সম্প্রতি নিজেকে ‘গ্লোবাল সাউথ’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। এ দেশগুলোর অনেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের নিন্দা জানাতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সে দেশগুলো যদি ভারতের পক্ষ নেওয়া শুরু করে তাহলে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে।

এ ছাড়াও বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর দাবার বোর্ডে ভারত বর্তমান সময়ে এক গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। ভারত যে শুধুই একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি তা নয়- ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক শক্তি। চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবেও ভারতকে দেখে পশ্চিমা দেশগুলো। সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনেও ভারত তা জানান দিয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে নাম উল্লেখ না করেও একটি চুড়ান্ত বিবৃতিতে ঐক্যমত্যে পৌঁছায় ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো। এ বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর মাধ্যমে তারা ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রক্ষা করার পথ বেছে নেয়।

বর্তমানে ভারতবিরোধী ৯ জঙ্গী গোষ্ঠী কানাডায় সক্রিয় বলে দিল্লির দাবি। একাধিক অনুরোধের পরেও ট্রুডো সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালার খুন-সহ একাধিক জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত ওই সংগঠনগুলোর সদস্যরা। দিল্লির দাবি, ডব্লিওএসও, কেটিএফ, এসএফজে-এর মতো বড় জঙ্গী সংগঠনগুলো কানাডার মাটি থেকে পাকিস্তানের আইএসআই-এর নির্দেশে ও নীলনকশাতে কাজ করে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ট্রুডো প্রশাসন। নয়ের দশকের গোড়ার দিকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে জড়িত গুরবন্ত সিং-সহ বেশ কয়েকজনকে ভারতে ফেরানোর অনুরোধ অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশের পরেও জঙ্গী হস্তান্তরের বিষয়ে রাজি হয়নি কানাডা। এ ব্যাপারে কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলার স্বীকার করেছেন, খালিস্তান টাইগার ফোর্স নামের জঙ্গী গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা নিজ্জরের বিরুদ্ধে ‘ইন্টারপোল নোটিশ’ ইস্যু হওয়ার পরেই কানাডা তাকে নাগরিকত্ব দেয়।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা- ভারতকে হেনস্থার পরিকল্পনা সফল হলে রাজনৈতিকভাবে ট্রুডোর লাভ হবে। কারণ, কানাডায় ট্রুডোর জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামে। মারাত্মক রাজনৈতিক চাপে আছেন তিনি। জিনিসপত্রের দাম ব্যাপক আকারে বেড়ে যায়। ফলে মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারার কারণে বিরোধী দল প্রচন্ড চাপের মধ্যে রেখেছে। তিনি শুধু যে মূল্যস্ফীতি নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন তা নয়, বর্তমানে আবাসন সঙ্কটও চরমে। বাড়ি ভাড়া বেড়ে গেছে অনেক। মানুষের চেয়ে বাড়িঘর কম। এমন নানা সমস্যায় তিনি জর্জরিত। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, এখন নির্বাচন হলে তার দল পরাজয় বরণ করবে অথবা জাগমত সিং এর নিউ ডেমোক্রেটিভ পার্টির ২৪ জন সংসদ সদস্য তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করলেও তাকে ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হবে। কেননা কানাডার ৩৩৮ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭০টি আসন। কিন্তু গত নির্বাচনে ট্রুডোর দল পায় ১৫৭টি আসন। ফলে খালিস্তানি নেতা জাগমত সিং-এর নিউ ডেমোক্রেটিভ পার্টির ২৪ আসন নিয়ে ট্রুডো সরকার গঠন করেন। তাই সরকার টিকিয়ে রাখতে ট্রুডো জাগমত সিং, তার দল এবং সর্বোপরি শিখদের খুশি রাখতে চান। বলা যায়, তার এ খুশি রাখার প্রয়াস অর্থাৎ তোষামোদই আজকের ভারত-কানাডা সংকটের মূল।

অথচ খালিস্তানি নেতা হত্যাকান্ডের পরবর্তী ট্রুডো প্রশাসনের ভূমিকায় বিশ্বব্যাপী ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। আমেরিকার দেশগুলোতে বসবাসকারী শিখ ধর্মাবলীদের সংগঠন ‘শিখস অব আমেরিকা’র প্রধান জেসি সিংহ জাস্টিন ট্রুডোকে শিখদের মধ্যে বিভাজন ঘটানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি ট্রুডোর উদ্দেশ্যে বলেন, “কানাডায় বসবাসকারী শিখ মানেই খালিস্তানপন্থী নন। ভারতের বাইরে অবস্থানকারী বেশির ভাগ শিখ খালিস্তান মতাদর্শকে সমর্থন করেন না। তারা ভারতকেই সমর্থন করেন।” তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতের পক্ষেই দাঁড়িয়েছি।’ সংখ্যালঘু সরকার চালানোর জন্যই দীর্ঘদিন ধরেই ট্রুডো সরকার শিখ উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে নরম মনোভাব নিয়ে চলছে এবং ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি ও সরকার টিকিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতার জন্য ট্রুডোকে খালিস্তান প্রসঙ্গে চোখ বুজে থাকতে হচ্ছে। এ নিয়ে ভারতীয় কুটনীতিকদের আবেদন, অনুরোধেও তিনি কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ করেন জিসি সিং। সুতরাং বলা যায়, ভারত-কানাডার আজকের সংকটের জন্য দায়ী জাস্টিন ট্রুডোর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি ও উচ্চাবিলাসী রাজনৈতিক স্বার্থ।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test