E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষক দিবেসের ভাবনায় থাকুক শিক্ষক 

২০২৩ অক্টোবর ০৪ ১২:৫৫:০৫
শিক্ষক দিবেসের ভাবনায় থাকুক শিক্ষক 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


শিক্ষা এবং শিক্ষক একই সূত্রে গাঁথা এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষা অচল। শিক্ষার পরিপূর্ণতা আসে শিক্ষকের হাত ধরেই তা সবার জানা। তাই মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষার্থী অভিভাবক শিক্ষক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সবাই একমত হলেও কেন জানি হচ্ছে না কাজের কাজ। আমরা শিক্ষার অর্থের বিষয়টি এখনও খরচ হিসেবেই দেখছি। যদিও এটা সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হিসেবেই দেখার কথা। মুখে মুখে সব হলেও বাস্তবে মিলছে না অনেককিছুই। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে ৫ অক্টোবর কে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছরই শিক্ষকদের স্মরণে ও সম্মানার্থে এবং তাদের অধিকারে ও কল্যাণার্থে এদিনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরই এ দিবসের একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। 

এবছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “The transformation of education beings with teacher” অর্থাৎ “শিক্ষার পরিবর্তন শিক্ষক দিয়ে শুরু”। প্রতিবছরই এরকম কিছু সুন্দর ও প্রয়োজনীয় প্রতিপাদ্যের বিষয় উল্লেখ করা হয়। শিক্ষক সমাজ আশায় বুক বাঁধে এই বুঝি সরকারের সুনজর পড়বে কিন্তু সে আশা আর খুব একটা সফল হয় না। বিগত কয়েকটি সনের প্রতিপাদ্যের বিষয় উল্লেখ করে আলোচনায় যাব। “ শিক্ষকদের মূল্যায়ণ করা, তাদের অবস্থার উন্নতি করা” (২০১৬), “শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন করা” (২০১৭), “শিক্ষার অধিকার মানেই একজন যোগ্য শিক্ষকের অধিকার” (২০১৮), তরুণ শিক্ষক, পেশার ভবিষ্যৎ” (২০১৯) ও “ ভবিষ্যতের সংকট মোকাবেলায় শিক্ষক সমাজ” (২০২০)। প্রত্যেকটি প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সুন্দর ও যুক্তিগ্রাহ্য এটা না মানার কোন কারন নেই। তবে ভেবে দেখার বিষয় প্রতিবছরই শিক্ষক দিবস পালিত হয় একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে কিন্তু আমরা যদি একটু লক্ষ্য করে দেখি উপরে উল্লেখিত প্রতিপাদ্যের কয়টি বিষয় বাস্তবায়ন হয়েছে।

সুতরাং এদিবস পালনের সাথে সাথে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবারই যখন শিক্ষক দিবস আসে তখনই বিষয় গুলো নিয়ে খুব আলোচনা হয় কিন্তু তা বাস্তবায়নে চলে অনীহা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় হচ্ছে আর শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয় কিছুই হয় নাই। পৃথিবীর পুরাতন পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। অনেকেই শিক্ষকতা কেবল পেশা হিসেবেই নেয়নি এটাকে নেশা হিসেবেও নিয়েছে। সমাজ ব্যবস্থার সুন্দর পরিবর্তনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এবং সব থেকে এ পেশাকে এখনও আলাদা চোখেই দেখা হয় মুখে মুখে। মানুষের জীবনের পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষক।

পৃথিবীতে যারা সুন্দর মানুষ হয়েছেন এবং সমাজে আলো ছড়িয়েছেন তাদের জীবনে শিক্ষকের প্রভাবই বেশি বলে প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষা ছাড়া যেহেতু পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং এই শিক্ষার পরিবর্তনের জন্য ভালো শিক্ষকের প্রয়োজন অপরিহার্য। সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত শিক্ষার্থীর জীবনে আলো ছড়াতে ভূমিকা রেখে চলছে। সমাজ ব্যবস্থায় সরকার নিবন্ধিত শিক্ষক ছাড়াও প্রতিটি স্তরে রয়েছে অনেক মেধাবী শিক্ষক। প্রতিটি শিক্ষকই সমাজের মানুষের পরিবর্তনে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ভূমিকা রেখে চলছে। একজন শিক্ষক একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও শিক্ষার্থীকে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান করে থাকে যার ফলে মানুষ তার জীবনকে সুন্দর রাখতে পারে। সমাজে ভূমিকা রাখা এইসব শিক্ষকদের কল্যাণ কামনায় প্রতিবছরই এ শিক্ষক দিবসের আয়োজন।

শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক সঠিক অবস্থান বাস্তবায়নে এ শিক্ষক দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষকদের ত্যাগ ও দায়িত্ব পালনের জন্য সম্মান প্রদর্শনের জন্য এ দিবসটির গুরুত্ব অনেক। এখন প্রশ্ন হলো শিক্ষক দিবসে কাদের নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। শিক্ষক দিবসে সবার আলোচনাই প্রাধান্য দিতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত শিক্ষকদের কথা আলোচনায় আনতে হবে আগে। যদিও প্রত্যেক স্তরের শিক্ষকরাই দাবী করছে তারা অবহেলিত। আসলে কি তাই ? উত্তর অনেকটাই প্রশ্ন বোধক ? দেশের প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের জন্য যে পরিমাণে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন তা আজও হয়ে উঠেনি। কেবল মাত্র অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারী, প্রাইভেট ও এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একেক ব্যবস্থায় শিক্ষকরা একেক রকম সুবিধা পেয়ে থাকে। শিক্ষা ব্যয়ও অসঙ্গতিপূর্ণ। যার ফলে সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে শিক্ষক হতে উৎসাহিত হচ্ছে কম। অনেক জায়গায় বিপদে পড়েই ভালো মানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হিসেবে আসছে।

শিক্ষকরা সমাজ ব্যবস্থা থেকে যেমন প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছে না অন্যদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবেও সে স্বীকৃতি প্রদান করা হচ্ছে না। সরকারও নজর একেবারেই দিচ্ছে না একথা বলা যাবে না। তবে কথা হলো নজর দেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ধীর গতিতে হচ্ছে। প্রতিবছরই শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের প্রত্যাশা থাকে এবার মনে হয় কিছু প্রাপ্তির খাতায় যোগ হবে। কিন্তু দিন শেষে হিসেবের খাতায় আর কিছুই যোগ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এবং প্রাইভেট শিক্ষা ব্যবস্থায়ও মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এসব নিয়োগ নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন যেন মানুষের মাঝে জাগ্রত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে। সেই সাথে আধুনিক মানের সাথে জীবন নির্বাহের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধাও প্রদান করতে হবে কারন সুন্দর জীবনযাপন না করতে পারলে এ জায়গায় মেধাবী তরুণরা আসতে আগ্রহী হবে না। আর মেধাবীরা না আসলে সবকিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই এবছরের শিক্ষক দিবসে সরকারের ভাবনায় থাকুক কেবল শিক্ষক।

লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test