E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মন্ত্রীর অতৃপ্ততা!

২০২৩ অক্টোবর ১৩ ১৬:৩৮:৩১
মন্ত্রীর অতৃপ্ততা!

আবীর আহাদ


অগাধ ধনসম্পদ ও ক্ষমতা পেয়েও অনেকে চরম অতৃপ্তিতে ভোগেন। সব পেয়েও তাদের কাছে মনে হয়, আরো পেলে ভালো হতো। এমন চিন্তাধারায় তারা বিষণ্ণতায়ও ভোগেন। এমনি একজন মানুষের কথা আজ বহুদিন পরে হঠাত মনে পড়ে গেলো।

একবার সড়ক পথে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। পদ্মায় শাহ কেরামত আলী ফেরীর একেবারে টপ ফ্লোরে উঠতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে এক পুলিশ বাধা দিলেন। ওপরে উঠা যাবে না। কেনো যাবে না, জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম- মন্ত্রী মহোদয় ওখানে অবস্থান করছে। উঁকি দিয়ে দেখলাম, মন্ত্রী মহোদয় দিগন্ত বিস্তৃত পদ্মার দিকে অপলক চেয়ে আছেন। পাইক পেয়াদারা তাঁর তিনদিকে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ আঙুল তুলে দূরের কোনো কিছু সম্পর্কে হয়তো তাঁকে ব্রিফ করছেন। আমি পুলিশের বাধার মুখে ওপরে উঠতে না পেরে সেখানে দাঁড়িয়ে যেই না একটা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করতে গিয়েছি, অমনি পুলিশটি প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, দেখছেন না মাননীয় মন্ত্রী এখানে আছেন! এখানে ওঠাও যাবে না। থাকাও যাবে না! নামেন।

পুলিশ সাহেবের কথার ধ্বনিতে পাইক পেয়াদাসহ মন্ত্রী মহোদয় মনে হলো বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকালেন। চোখাচোখি হতেই মন্ত্রী মহোদয় ইষৎ হেসে বলে উঠলেন, আরে আবীর ভাই, আপনি ওখানে কেন ? উঠে আসেন!

পুলিশটি ততোক্ষণে সরে দাঁড়িয়েছেন। মন্ত্রীর এপিএস সাহেব পড়ি কি মরি দৌঁড়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে একেবার মন্ত্রী মহোদয়ের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। মন্ত্রী মহোদয় আমার হাতে সিগারেট দেখে বললেন, আরে ধরান, ধরান! আমারেও একটা দেন!

আমি জানতাম, এ মন্ত্রী মহোদয় সিগারেট খান না। আমি একটা সিগারেট তাঁর দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজ হাতে লাইটার জ্বালিয়ে আমারটায়ও অগ্নিসংযোগ করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললাম, আপনি তো সিগারেটে খান না, তো আজকে!

মন্ত্রী মহোদয় হেসে বললেন, পদ্মার এ মনোরম দৃশ্য দেখে মনটা বড়োই উদাস উদাস লাগছে! আপনার হাতে সিগারেট দেখে মনে হলো, দেখি একটু টানি! এই আর কি!

নানান কথার এক ফাঁকে মন্ত্রী মহোদয়কে জিজ্ঞেস করলাম, মন্ত্রণালয় কেমন চলছে ? অনাভ্যাসজনিত সিগারেটের ধোঁয়ার প্রভাবে কিছুটা কাঁশতে কাঁশতে বললেন, আরে ভাই, এ মন্ত্রণালয় চালাতে গিয়ে আমি তীব্রভাবে অনুভব করছি যে, এর সাথে যদি অর্থ মন্ত্রণালয়টি পেতাম তাহলে মনের মতো কাজ করে দেশের অনেক উপকার করতে পারতাম। নিজেও আনন্দ পেতাম। আবার এটাও চিন্তা করেছি, সেইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টাও যদি পেতাম, তাহলে আমি দেশটাকে বিশ্বের বুকে এক নম্বর দেশে পরিণত করে ছাড়তাম, ইনশাল্লাহ!' একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিষণ্ণকণ্ঠে বললেন, আপনিও তো জানেন আহাদভাই, মানুষের সব আশা, সব আকাঙ্ক্ষা, সব স্বপ্ন সাধ পূরণ হয় না! তাই একরাশ হতাশার মধ্যে ডুবে আছি। এভাবেই হয়তো এ মন্ত্রীগীরী করার মধ্য দিয়ে চরম অতৃপ্ত মনে হয় মন্ত্রী থেকে, অথবা জীবন থেকেই একদিন হারিয়ে যাবো।

আমি বিমোহিত হয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের আশা আকাঙ্খা স্বপ্ন ও সাধের কথা- তার আক্ষেপ ও অতৃপ্ত মনের গভীর বেদনাসহ সব সবকিছুই না পাওয়ার যন্ত্রণা অনুভব করে আরেকটা সিগারেট এগিয়ে দিতেই তিনি একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস পরিত্যাগ করে বললেন, আপনি আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ, তাই এসব বেদনার কথা বলে নিজেকে একটু হালকা করলাম আর কি!'

ততোক্ষণে ফেরী দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ভিড়লো। মন্ত্রী মহোদয় আমাকে বিদায় জানিয়ে পুলিশ এবং তাঁর পাইক পেয়াদা বেষ্টিত হয়ে নিচে নাতে লাগলেন। আমিও ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে আজকের মতো সেদিনও ভেবেছিলাম, কোনো মানুষই অল্পতে তুষ্ট নয়। সব পেয়েও সে না পাওয়ার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে চরম অতৃপ্ততায় হাহুতাশ করে। তাইতো কবিগুরুর গানের কথায় বলতে হয়।

অতৃপ্ত বাসনা লাগি ফিরিয়াছি পথে পথে
বৃথা খেলা, বৃথা মেলা, বৃথা বেলা গেল বহে---

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test