E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহালয়া

শুভ শক্তির আরাধনায় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা

২০২৩ অক্টোবর ১৪ ১৫:৫৪:৪৮
শুভ শক্তির আরাধনায় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা

মানিক লাল ঘোষ


বছর ঘুরে আবার চারদিকে  দেবী দূর্গা মায়ের  আগমনী সুর। আজ শুভ মহালয়া। পিতৃ পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে দিনের শুরু। আজ থেকেই শুরু হয়ে গেল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব  শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা। ভক্তদের মাঝে শুরু হলো দুর্গা পূজার, মায়ের আগমনের দিনগণনার পালা।

বাঙালি হিন্দুদের জীবনে মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহালয়া থেকেই পূজার আচার - আচরণ আর রীতিনীতির শুরু। পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবী পক্ষের পূর্ববতী অবস্থাকে বলা হয় মহালয়া।আজ দেবীপক্ষ। দক্ষিণায়নের দিন। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম ‘মহালয়া’। হিন্দু পুরাণে আছে, সৌর উত্তরায়ণকালে বিষ্ণুলোকে যখন দিন, যমলোকে তখন রাত-দক্ষিণায়ন। উত্তরায়ণের ছয় মাস দেবতারা জেগে থাকেন, বিষ্ণুলোকের তোরণ থাকে অবারিত। দক্ষিণায়নের ছয় মাস দেবতারা থাকেন নিদ্রায়।কিন্তু যমলোকে দিনমান, দুয়ার খোলা। দক্ষিণায়নের প্রথম দিনে ঘুম ভেঙে জেগে উঠেই বন্ধ দুয়ার ঠেলে পিতৃপুরুষেরা ছুটে আসবেন মর্ত্যলোকে। এ সময় তারা থাকেন ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর। উত্তরপুরুষদের হাতে একটু শ্রাদ্ধাহার পেলেই তারা পরম তৃপ্ত। সে অর্থে মহালয়া মর্ত্যলোকে পরলোকগত পিতৃগণের একত্র ক্ষণিক আবাস।

শাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, পিতৃপক্ষের অবসানে, অমাবস্যার অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আলোকোজ্জ্বল দেবীপক্ষকে আগমন করি, তাই সেই মহা লগ্ন আমাদের জীবনে ‘মহালয়া’। এ ক্ষেত্রে দেবী দুর্গাকেই সেই মহান আশ্রয় বলা হয়ে থাকে এবং আঁধার থেকে আলোকে উত্তরণের লগ্নটিকে বলা হয় মহালয়া।

এই বিষয়ে মতান্তর রয়েছে অনেকের। 'মহ' শব্দের অর্থ পূজা। আবার 'মহ' বলতে উৎসবও বোঝায়। অন্যদিকে মহান ও আলয় নিয়ে মহালয়। 'মহ' এর সঙ্গে 'আ' যুক্ত করে পূজার আলয়। আলয় শব্দের অর্থ আশ্রয়। আবার মহালয় বলতে বোঝায় পিতৃলোককে, যেখানে প্রয়াত পিতৃপুরুষের অবস্থান।

শাস্ত্র মতে, পিতৃপক্ষের অবসানের পরই শুরু হয় দেবীপক্ষের সূচনা। প্রথমে পিতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রণাম ও শ্রদ্ধা নিবেদন। দীর্ঘকাল ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে জল অঞ্জলি নিবেদন করে চলছেন পূর্ব পুরুষদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায়। মহালয়ার ভোরে চন্ডী পাঠের রেওয়াজ আছে।

দুর্গাপুজো বাঙালিদের কাছে শ্রেষ্ঠ উৎসব। মহালয়ার দিন থেকেই যেন আরও পূজা পূজা ভাব চলে আসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে। আনন্দের জোয়ারে ভাসে ভক্তকূল। পূরাণে কথিত রয়েছে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর মানুষ এবং দেবতাদের কাছে অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল। শুধুমাত্র কোনো নারীশক্তির কাছেই তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন বর পেয়ে দেবতাদের উপর মহিষাসুরের তান্ডব ক্রমশ বাড়তে থাকে। অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গধাম থেকে বিতাড়িত করে বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। তখনই তাকে বধ করার জন্য এক নারীশক্তির জন্ম দেন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। তাঁরা নিজেদের শক্তি দিয়ে মহামায়ারূপী যে নারীশক্তিকে তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি।

হিন্দুশাস্ত্র মতে কথিত রয়েছে যে, মহালয়ার দিনই অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। এই বিশেষ দিনেই মহিষাসুরকে বধ করে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছেন। শুভ শক্তির আরাধনায় তাই মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

"মহালয়া " শব্দটির অর্থ মহান আলয় বা আশ্রয়। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হচ্ছেন সেই মহান আলয়। মহালয়ার দিন গঙ্গাবক্ষে দাঁড়িয়ে পূর্ব-পুরুষদের উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেওয়া বা তর্পণের রীতি রয়েছে। কালো তিল আর কুশ সহযোগে পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। বহু বছর ধরে বাঙালিদের কাছে মহালয়ার আরও একটা বিশেষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুকরণীয় কণ্ঠস্বরে 'মহিষাসুরমর্দিনী' অনুষ্ঠান।

এ বছর দুর্গাপূজোর মহাষষ্ঠী পড়েছে আগামী ২০ অক্টোবর। মহাসপ্তমী ২১ অক্টোবর। মহাষ্টমী ২২ অক্টোবর। মহানবমী ২৩ অক্টোবর এবং বিজয়া দশমী ২৪ অক্টোবর।

কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে এবার বাবার বাড়িতে আসছেন মা। শ্রদ্ধাভরে তিনি পূজিত হবেন মন্ডপে-মন্ডপে। চারদিকে উৎসবের আমেজ মায়ের আগমনী বার্তায়। মা আসছেন, মা আসছেন সকল অশুভ শক্তির বিনাশ করে শান্তির বার্তা নিয়ে।

লেখক : তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং সহ সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test