E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্তি শিশুর বিকাশে বাধা; তৎপর হতে হবে বাবা-মাকে

২০২৩ অক্টোবর ১৪ ১৬:১৬:১৬
ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্তি শিশুর বিকাশে বাধা; তৎপর হতে হবে বাবা-মাকে

জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি


শহরে বসবাসরত একক পরিবারের শিশুকে মায়েরা মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, টেলিভিশন দ্বারা খেলতে দিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন কাজ করেন।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্তিই শিশুর দেরিতে কথা বলার অন্যতম কারণ। বর্তমানে অভিভাবকদের অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশুর কথা বলতে দেরি হওয়া।শিশুদের কথা বলতে দেরি হওয়ার পেছনে মূলত দুই ধরনের কারণ থাকতে পারে।

প্রথমটি জেনেটিক, দ্বিতীয়টি পরিবেশগত।

ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রভাব শিশুর বিকাশে বিঘ্ন ঘটার পরিবেশগত কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ শুরু করে আপনার শিশু। যেমন ধরুন, আপনি তাকে একটা খেলনা দিলেন সেটা সে এক ভাবে খেলবে।

তাকে আবার অন্য একটা খেলনা দিলেন সেটাও সে ঐ একই ভাবে খেলবে। অর্থাৎ তার সব খেলনা নিয়ে খেলনা নিয়ে খেলার প্যাটার্ন একই থাকবে।

যদিও আপনি তাকে ভিন্ন নিয়মে খেলার দুটি খেলনা তাকে দিয়েছেন। বা তাকে একটা গ্লাসে পানি আনতে বললে একই ভাবে সে বার বার পানি আনবে। আপনি তাকে কোনো প্রশ্ন করলে সে উত্তর না দিয়ে বরং আপনার করা প্রশ্নটিই আপনাকে করবে।

যদি আপনি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন বা কাজ করার চেষ্টা করেন তাহলে সে আপনার চোখের দিকে তাকাবে না। তার 'আই কন্টাক্ট' থাকবে না। কথা বলায় জড়তা থাকবে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাবে শিশু একেবারে কথাই বলছে না বা একটা বয়স পর্যন্ত কথা বললেও পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছে।

ডিভাইস আসক্ত শিশুদের ধৈর্য কম থাকবে। এমনকি একটা খেলনা দিলে সেই খেলনার প্রতি ধৈর্য নিয়ে এক মিনিট খেলা করাটা তার জন্য কঠিন হবে। এক-দুই মিনিট পর তার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। তার কোন জিনিসের প্রতি মনোযোগের দুর্বলতা থাকবে।

সাধারণত শিশুরা চার থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে 'মামা-বাবা'র মতো বাবলিং সাউন্ড করে, এক বছরে এক-দুইটা করে অর্থবহ শব্দ বলতে শেখে, দুই বছরে ছোট ছোট বাক্য গঠন করতে পারে, তিন বছরে ছড়া বলতে শেখে, এর কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে মা-বাবাকে বুঝে নিতে হবে শিশুর বিকাশে সমস্যা হচ্ছে।

অভিভাবকের সময় স্বল্পতায় শিশুকে ব্যস্ত রাখতে সহজ সমাধান হিসেবে এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে বেছে নেয় অধিকাংশ পরিবার। কিন্তু এই সহজ সমাধান বিপদের কারণ দাঁড়িয়।মোবাইল ফোনে আসক্তির কারণে ধীরে ধীরে শিশু হয়ে ওঠে অন্যমনস্ক। সরাসরি কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না। অন্য কোনো খেলাধুলায় আগ্রহী হয় না, ঘুমাতেও চায় না। একপর্যায়ে পুরোপুরিই কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারে শিশু।
সারাদিন তার চোখ আটকে থাকে মোবাইল স্ক্রিনে। কখনো ভিনদেশি কার্টুন আবার কখনো মোবাইল গেমস নিয়েই ঘরের এক কোণে নিশ্চুপ বসে থাকে। কেউ ডাকলে জবাব দেয় না, কারো সঙ্গে কথা বলায় কোনো আগ্রহ থাকে না।অতিরিক্ত হিন্দি-ইংরেজি নানান ভাষার কার্টুন দেখতে দেখতে কখনো কখনো নিজের বানানো অর্থহীন শব্দে কথা বলার চেষ্টাও করতে পারে সে।

এছাড়াও চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, ঘাড় ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো নানা শারীরিক সমস্যারও শিকার হয় শিশু। ডিভাইসের প্রতি আসক্তি থেকে 'স্ক্রিন ডিপেন্ডেন্সি ডিজঅর্ডারে'ও ভুগতে শুরু করে আপনার শিশু।

প্রথম তিন বছর বয়সটা শিশুদের বিকাশের জন্য 'গোল্ডেন উইন্ডো পিরিয়ড' হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে শিশু যে পরিবেশে বড় হবে সেটা তার সারাজীবনের উপর প্রভাব ফেলবে। এই সময়টায় কোনো কারণে শিশুর ব্রেনের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সারিয়ে তোলা কষ্টকর। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য প্রথম পাঁচ বছর বয়সকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করা হয়। শিশুর মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশ বিকাশ ঘটে তিন বছর বয়স পর্যন্ত। বাকি ২০ শতাংশ বিকাশ ঘটে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে। তাই এই বয়সেই শিশুদের দিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখতে হয় বাবা-মায়েদের।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেন শিশুর বিকাশে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে, সেজন্য সবচেয়ে বেশি তৎপর হতে হবে শিশুর বাবা-মাকে।

লেখক : সমাজকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test