E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পূজা এসে গেলো 

২০২৩ অক্টোবর ১৯ ১৫:৫৯:২৬
পূজা এসে গেলো 

শিতাংশু গুহ


পূজা এসে গেলো। ঢাকার দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকা ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ জানিয়েছে যে, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাংচুর করেছে। বাংলা ৭১ জানিয়েছে, ওসি নাসিরুদ্দিন মৃধা বলেছেন, ‘ঘটনা তেমন বড় নয়’! 

কালের কণ্ঠ, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৩। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে প্রতিমা ভাঙচুর। ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সাবেক গভর্নর বিজেপি নেতা ড: তথাগত রায় বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্গাপ্রতিমা ভাংচুর উৎসব শুরু ফরিদপুর দিয়ে।

ফরিদপুর তাম্বুলখানা বাজার, মাছবাজার সংলগ্ন মন্দিরের গণেশ’র নাক ও দূর্গা’র হাত ভাঙ্গা হয়েছে। ঢাকার দৈনিক ভোরের কাগজ ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ নিয়ে ‘ফরিদপুরে প্রতিমা ভাংচুর: দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা নয়’ শীর্ষক এক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, “সর্বশেষ ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের তাম্বুলখানা বাজারের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা রাতের আঁধারে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। মন্দিরের গণেশ মূর্তির মাথার অংশ, লক্ষীর দুই হাত ও দেবী দুর্গার বাম হাত ভাঙা রয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে রাতের আঁধারে এই মন্দিরের কালী প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে”।

জানা যায় গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের আলাপদী গ্রামে প্রকাশ্যে শিব মন্দিরে হামলা করে। প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলে ও অনেক মূল্যবান জিনিস লুটপাট করে।

এবারে শারদীয় দুর্গা পূজার প্রতিমা ভাঙ্গচুর হয়েছে ৫টি জেলায়। এগুলো হচ্ছে: ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নড়াইল। পূজার এখনো ঢের বাকি, আরো ভাঙ্গবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে বারবার মন্দির আক্রমন ও হাজারো প্রতিমা ভাঙ্গচুর হলেও আজ পর্যন্ত ১জন এ অপরাধে শাস্তি পায়নি। কখনো সখনো কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও পুলিশ ‘পাগল’ বলে ছেড়ে দেয়।

কলকাতায় এবার কোন নামীদামী মণ্ডপে দুর্গাপূজা হোক ভাঙ্গা প্রতিমা দিয়ে, লেখা থাকুক এবারে পূজার থিম ‘বাংলাদেশের ভাঙ্গা দূর্গা প্রতিমা’। এটি করে অন্তত: পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। না করলেও তেমন কিছু আসবে যাবেনা, কারণ পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ইতিমধ্যে মাঝেমধ্যে মূর্তি ভাঙ্গছে, সামনে আরো ভাঙ্গবে, শুধু সময়ের অপেক্ষা। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু হয়তো আরো কিছুটা সময় রাতজেগে প্রতিমা দেখতে বের হতে পারবে, এরপর রাতজেগে প্রতিমা পাহারা দিতেই রাত কেটে যাবে।

চাঁদে দুর্গাপূজা!

ভারত চাঁদে গেছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা খুশি, তাঁরা চাঁদে দুর্গাপূজা করতে চায়। এতে সুবিধা অনেক। যেমন, চাঁদে পূজা হলে কেউ দেবীমূর্তি ভাঙ্গবে না! নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্র বন্ধের ফতোয়া থাকবে না! পুলিশ প্রহরা লাগবে না, মানে পুলিশ ছাড়া পূজা করা যাবে। কেউ দেবতার পায়ে অন্য ধর্মীয় বই রেখে হিন্দুপল্লীতে আক্রমন করবে না! কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যাচার করবে না যে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার কল্প-কাহিনী। পূজার সময় কোন নাবালিকা জোরপূর্বক অপহৃত ও ধর্মান্তরিত হবেনা। কেউ মেয়েদের গায়ে হাত দেবে না? আর? কোন সরকার বা সাম্প্রদায়িক মানুষগুলো নির্লজ্জ্বভাবে মিথ্যাচার করবে না যে, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির মডেল’।

এত্তো সুবিধা, পারলে বাংলাদেশের হিন্দুরা চাঁদে চলে যেতো। সেখানে শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন দিয়ে সরকার জমি কেড়ে নেবে না। ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট দিয়ে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অজুহাতে জেলে ভরবে না; হিন্দুপল্লী আগুনে ভস্মীভূত হবে না? সংবিধানে ৫ম ও ৮ম সংশোধনী থাকতো না। প্রশাসন ও সরকারে বৈষম্য থাকতো না। হিন্দুরা ২য় শ্রেণীর নাগরিক হতোনা, সমানাধিকার পেতো। ‘মালাউন’ গালি শুনতে হতোনা। শুক্রবার তটস্থ থাকতে হতোনা। কেউ ধর্ম পরিবর্তনের দাওয়াতের নামে জোরজবরদস্তি করতো না, হিন্দু দেবদেবীর বিরুদ্ধে গালাগালি শুনতে হতোনা।

এবার তো পূজা এসেই গেছে, এবার তো চাঁদে পূজা হচ্ছেনা, সামনের বার কি হবে? চাঁদটা তো ভারতের, আমাদের না, দাদারা চাইলে তো চাঁদে দুর্গাপূজা হবে। দাদারা কি বাংলাদেশের হিন্দুদের দিকে ফিরে তাকায়? দাদাদের ছাড়া যেখানে বাংলাদেশে নির্বাচনে জেতা যায়না, সেখানে চাঁদে যাওয়া যাবে কিভাবে? দাদারা তো ‘মুরগীর গলা’ (চিকেন নেক) রক্ষার খাতিরে হিন্দুদের কথা শুনতেই চায়না। শুনলে তো হিন্দুরা দেশেই পুলিশ ছাড়া পূজা করতে পারতো, চাঁদে যাওয়া লাগতো না। দাদারা জানে বাংলাদেশের হিন্দু ‘জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ’ নিয়েই বেঁচে আছে, ভারত ছাড়া তাদের গতি নেই, তাই তাদের কথা চিন্তা করে সময় নষ্ট করার দরকার কি?

দাদারা চাইলেও কি বাংলাদেশ সরকার যেতে দেবে? দেবে, দাদারা চাইলে সবই সম্ভব। তবে তখন সরকারি লোকজন, এমনকি তথাকথিত প্রগতিশীলরাও চাঁদে যেতে চাইবে। সমস্যা হচ্ছে, ওনারা গেলে তো আবার ‘যেই লাউ, সেই কদু’? ওনারা গেলে তো চাঁদেও মূর্তি ভাঙ্গবে, হিন্দুর ওপর অত্যাচার হবে, ওনারা তো চাঁদকে ধর্ম দিয়ে ঢাকতে চাইবে? হিন্দুরা তো চাঁদে যেতে চাচ্ছে ওনাদের বাদ দিয়ে, যাতে একটু শান্তিতে থাকতে পারে! ওঁরা গেলে ওখান থেকেও শান্তি চলে যাবে।

এরমধ্যে ভারত আবার ‘আদিত্য’-কে সূর্যের কক্ষপথে পাঠিয়েছে। ভারত ক্রিকেটে জিতলে যাঁদের খারাপ লাগে, চাঁদে গেলে কি ভালো লাগবো? এদিকে ইন্ডিয়া আবার ভারত হয়ে যাচ্ছে। ইন্ডিয়া ভালো ছিলো, মোদী সবকিছুর মধ্যে ‘হিন্দুত্ব’ ঢুকাচ্ছেন, এমনকি চাঁদের গায়েও ‘শিব’ লিখে দিয়েছেন। এতে অনেকের অনুভূতিতে আঘাত লাগছে। মোদী পার্লামেন্টে নারীদের এক-তৃতীয়াংশ আসন দিতে চাইছেন। এক দূর্গা প্রতিবছর অসুর মারছেন, লক্ষ দূর্গা দাঁড়িয়ে গেলে কি হবে?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test