E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্গোৎসব, শুরু-মহালয়া, সমাপ্তি- বিজয়া দশমী

২০২৩ অক্টোবর ২০ ১৫:১৬:০১
দুর্গোৎসব, শুরু-মহালয়া, সমাপ্তি- বিজয়া দশমী

মো: ইমদাদুল হক সোহাগ


দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত একটি হিন্দু উৎসব এবং বাংলাদেশে ঐতিহ্যগত বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। এটি বাংলা বর্ষপঞ্জির আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজা মূলত ১০(দশ) দিনের উৎসব, যার মধ্যে শেষ ৫(পাঁচ) দিন সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ।

দুর্গাপূজা সম্পর্কে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন গল্প রয়েছে কালিকা পুরাণের উপাখ্যান তুলে ধরা হলো :
যদিও কালিকা পুরাণের মূল উপজীব্য বিষয় কামাখ্যা মন্দির ও নরকাসুর বৃত্তান্ত - তবুও এর ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১তম অধ্যায়ে দুর্গাপূজার রীতিনীতির বিস্তারিত বিবরণ বিধৃত আছে, উপাখ্যানটির বিন্যাস মহাদেব আর বেতাল-ভৈরবের কথোপকথনের মাধ্যমে। কাহিনীর সূচনায় মহিষাসুরের বিনাশ কামনায় দেবতাদের সম্মিলিত স্তুতিতে প্রসন্নচিত্ত মহামায়া ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে আবির্ভূতা হয়ে দেবতাদের কাত্যায়নের আশ্রমে যেতে আদেশ করেন। সেখানে দেবতারা আদ্যাদেবীর দর্শনলাভের আশায় যান ও ত্রিমূর্তির ( ব্রহ্মা, বিষ্ণু , মহেশ্বর) সাক্ষাৎ লাভ করেন, ক্রমে তাঁরা মহিষাসুরের অত্যাচার-উৎপীড়নের কথা তুলে ধরলে ত্রিমূর্তি কোপাবিষ্ট হন। তাঁদের ও অন্যান্য দেবতাদের ক্রোধরশ্মি সুবৃহৎ এক তেজচক্র সৃষ্টি করে, যা ক্রমে দশভুজা তপ্তকাঞ্চনবর্ণা দেবী দুর্গার রূপ নেয়।

এদিকে মহিষাসুর নিশীথ দুঃস্বপ্নে দেবী ভদ্রকালীকে খড়্গাঘাতে তাঁর শিরশ্ছেদ করে রক্তপান করতে দেখেন। সন্ত্রস্ত অসুররাজ সপার্ষদে পরদিন সকালে দেবীর আরাধনা করলে দেবী মহামায়া তাঁকে ষোড়শভুজা অতসীপুষ্পবর্ণা ভদ্রকালী রূপে দর্শন দেন।

মহিষ শিবাংশী - শিবের বরে রম্ভাসুরের ঔরসে তাঁর জন্ম, শিবের প্রসাদেই তাঁর ত্রিলোকবিজয়ের বৈভব-প্রতিপত্তি, আবার নিয়তির নির্দেশে তিনি নারীরই বধ্য, তাই জাগতিক অন্যান্য কামনার পরিবর্তে তাঁর মনে জাগে ভিন্ন এক "অমরত্ব" লাভের আকাঙ্ক্ষা।

মহামায়ার হাতে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তাঁর কাছেই মহিষাসুর আসুরিক মনোবৃত্তির স্খালন আর যজ্ঞভাগ লাভের বর প্রার্থনা করেন। দেবী অসুরত্ব মোচনের বর দিলেও যজ্ঞভাগের মনোবাঞ্ছাটি অপূর্ণ রাখেন, বিকল্পে দেন ত্রিলোকপূজ্য হওয়ার বর। তিনি জানান যে তাঁর মহিষাসুর বধ এক সন্তত: ঘটনা - যুগ-যুগান্তরে, কল্পে কল্পান্তরে যা ঘটে চলেছে। ইতোপূর্বে অঞ্জননিভা অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডা ও অতসীপুষ্পবর্ণা ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে মহিষাসুরকে তিনি বধ করেছেন আর পরবর্তীতে দশভুজা তপ্তকাঞ্চনাভা কাত্যায়নী দুর্গা রূপে তাঁকে আবারো বধ করবেন। আর এই তিনরূপে দেবীর পদলগ্ন হয়ে মহিষাসুর দেব-দানব-মানব সবার পূজা পাবেন।

প্রতিশ্রুতিমতই দেবী দশভুজারূপে অন্তিমকল্পের যুদ্ধে মহিষকে বধ করেন আর মহিষও দেবীর পদসংলগ্ন হয়ে দেবীর সাথে সাথে পূজা পেতে থাকেন। আদ্যাশক্তির আশীর্বাদে মহিষের অসুরস্বভাব মুছে যায়, চলে যায় দেবতাদের প্রতি বিদ্বেষ আর পুনর্জন্মের চক্র থেকে অব্যাহতি মেলে।

এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অবশ্য আরও দুটি প্রতিশ্রুতির আখ্যান কালিকা পুরাণের এই অধ্যায়ে বর্ণিত আছে - একটি হল রম্ভাসুরের কঠোর তপস্যায় তুষ্ট মহাদেবের বরদান আর সেই অঙ্গীকারের দায়বদ্ধতা থেকে মহিষাসুর রূপে তিন কল্পে রম্ভের পুত্রত্ব স্বীকার। অন্যটি মহাদেবীর কাছে মহাদেবের অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া - তিন কল্পে যোগবদ্ধ মহিষ শরীরে দেবীর পদপ্রান্তে থেকে তাঁর সাযুজ্যলাভ ও মহিষ শরীরে সিংহরূপী হরির সঙ্গে দেবীর ভারবহন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক কমিউনিটি পুলিশ,কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ।

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test