E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষা ক্যাডারের হাতে থাকলে শিক্ষার মান উন্নয়ন সমুন্নত থাকবে

২০২৩ অক্টোবর ২১ ১৫:২৬:৫৯
শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষা ক্যাডারের হাতে থাকলে শিক্ষার মান উন্নয়ন সমুন্নত থাকবে

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারে প্রাপ্যতা অনুযায়ী কখনোই পদ সৃজন করা হয়নি। ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছরেও এ পদগুলো সৃজন হয়নি। ফলে দিন দিন বাড়ছে শিক্ষক সংকট। এর প্রভাব পড়ছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থায়। কারণ শিক্ষক ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা প্রদান নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়া, অর্জিত ছুটি না দেওয়া, নতুন পে স্কেলের সমস্যা সমাধান না হওয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার।

পদোন্নতি, গ্রেড, অর্জিত ছুটি নিয়ে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে পদোন্নতি বৈষম্য, কর্তৃত্ব বৈষম্য, আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দিকে দিয়ে বৈষম্য, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে, খবরদারি ও যৌক্তিক ও বৈধ প্রাপ্তিতে বৈষম্য বিদ্যমান। একই পরীক্ষায় একই দিন যোগদান করে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেও কোনো কোনো ক্যাডার দ্রুত পদোন্নতিসহ সবককিছু পেয়ে যায় আবার কিছু কিছু ক্যাডার এগুলো থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। বলা যায় শিক্ষা ক্যাডার এ ক্ষেত্রে একেবারেই পেছনের সারিতে অবস্থান করছে।

শিক্ষা ক্যাডারকে বিলোপের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারা মনে করেন শিক্ষা ক্যাডার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা বলছেন, সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্যাডারবান্ধব নানা সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাধা সৃষ্টি করছেন। পাকিস্তানি বা ব্রিটিশ ব্যুরোক্র্যাটিক লিগ্যাসির কারণেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ২৪তম থেকে ২৭তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। অথচ দুই বছর পদোন্নতি না দিয়ে জট তৈরি করা হয়েছে। পদোন্নতিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার পরিবার হতাশ বলেও মন্তব্য করেন। গুরুত্ব বিবেচনায় যোগ্য সব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। প্যাটার্ন অনুযায়ী পদ সৃজন না করে এ পদোন্নতি আগের সমস্যাকে আরও তীব্রতর করা হয়েছে। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা সমুন্নত এবং কর্মস্পৃহা ধরে রাখার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির সুযোগ তৈরির একটি নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি সমিতি বারবার কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেটিকেও কোনো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এবারের পদোন্নতিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে সাপ্লিমেন্টারি ডিপিসি সভা করে সর্বস্তরে যোগ্য কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ক্যাডারের মর্যাদার রূবরিক হতে পারে না। বিষয়, সনদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ক্যাডারে প্রবেশ হয় না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট শিক্ষকের প্রয়োজন এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক পেশাকে সর্বোচ্য মূল্য দেওয়া উচিত। শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস প্রস্ফুটিত করর জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেসব উদ্যোগ নেওয়ার পথে বাধা আছে এবং প্রশাসনে যারা আছেন তাদের দিক থেকেই বাধাটা আসে বলে শিক্ষক নেতারা মনে করেন।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তার শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্ব নিলেই, শিক্ষার সুদিন ফিরে আসবে, শিক্ষকদের দুর্দশা দূর হবে এমন অনুকরণীয় উদাহরণও কিন্তু আমরা কোথাও এ পর্যন্ত দেখছি না। এনসিটিবি, শিক্ষাবোর্ড ও মাউশি-সর্বত্রই কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করছেন, ।আমরা এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, প্রাথমিকে কোনো প্রশাসন বা অন্য কোনো ক্যাডারের লোক নয়, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতে হবে।

মোট সাত হাজার শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন কিন্তু তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়েছে মাত্র ৯৫টি পদ। শিক্ষা ক্যাডারের ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দীর্ঘ ৯ বছর আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের অর্জিত ছুটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তপশিলভুক্ত প্রাথমিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তপশিল বহির্ভূত করে নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি করা হয়েছে যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ অন্যরা দখল করেছেন।

মোট সাত হাজার শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন কিন্তু তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়েছে মাত্র ৯৫টি পদ। শিক্ষা ক্যাডারের ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব দীর্ঘ ৯ বছর আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের অর্জিত ছুটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তপশিলভুক্ত প্রাথমিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তপশিল বহির্ভূত করে নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি করা হয়েছে যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ অন্যরা দখল করেছেন।

পরিস্থিতিতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা, শিক্ষা ক্যাডারকে ননভ্যাকেশন সার্ভিস ঘোষণা করে অর্জিত ছুটি দেওয়া, ক্যাডার কম্পোজিশন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি বাতিল করা, শিক্ষা ক্যাডারের পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃজনের দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে জেলা উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার দাবিও জানাই। এ প্রশাসন কেমন হবে? বর্তমানে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা থাকবেন তবে তাদের নেতৃত্ব দেবে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরীভূত করা দরকার জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে। আর সেটি দূর করতে হলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা, পদোন্নতির ধারা সবকিছুতেই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সুযোগ সুবিধার দিক দিয়েও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য প্রকট।

দেশের আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনায় দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বিশেষ করে বিশেষায়িত পড়াশোনায় এর প্রভাব সংশ্লিষ্ট সেক্টরের যুগোপযোগী গ্রাজুয়েট তৈরিতে একদিকে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে সেক্টরগুলোতে হতাশা ও ক্ষোভের কারণে মানসম্মত সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ক্যাডারে সুপারনিউমারারি তো দূরের কথা গ্রেড-২ পর্যন্ত উঠারও সুযোগ নেই। শিক্ষা ক্যাডারের অবস্থা এখানে যেন বেশি শোচনীয়। এর আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।

লেখক : উপপরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test