E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অপশক্তিরা পবিত্র পেশায়, নির্বাচন আসলেই জেগে উঠে

২০২৩ নভেম্বর ০১ ১৩:২৫:৩৪
অপশক্তিরা পবিত্র পেশায়, নির্বাচন আসলেই জেগে উঠে

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ


আমি তখন শত্রু মিত্র বুঝি না। সেই জামায়াত বিএনপি আমলের কথা। ২০০৪ সাল। দেশে কি হয়েছিলো জানি না। তবে আমার পরিবারে কি হয়েছিলো সেটা খুব ভালো করে মনে আছে।আমার চোখ তখন কেবল দেখতে শুরু করেছে।একটু একটু করে চিনতে শুরু করেছিলাম পাশের বাড়ির মানুষ গুলোকে। সবাইকে তেমন চিনতাম না। হাতে গোনা ক জনকে চিনতাম। খুব ভালো করে চিনতাম আমার পরিবারের নিরীহ খেটে খাওয়া বাঙ্গালিপনা মানুষগুলোকে। পরিবারের সবার সাথে আমার ভাব ছিলো। বিশেষ করে আমার দাদা ভাইয়ের সাথে। এক সাথে ঘুমাতাম, খেতাম, গোসল করতাম, নামাজ পড়তাম, মাঠের ফসল চৌকি দিতাম, আত্মীয়দের বাড়ি যেতাম।খুব সাদা সিধে মানুষ ছিলো আমার দাদা ভাই।কাউকে কখনও শক্ত করে কথা বলতে শুনিনি তাকে। প্রথমে সুস্থ ছিলো। তারপর একপাশ অচল হয়ে গিয়েছিলো। চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছিলো।তবে পুরোপুরি না। একই পাড়ায় বিয়ে দেওয়া ছিলো ছোট ফুফু হামিদাকে। মূলত অঘটন ঘটেছিলো সেখানে।

তারা প্রায় আমাদের সাথে গন্ডগোল করত। ওরা নাকি যৌতুক চাইত। টাকা নাই দিবে কোথা থেকে। এ সব নিয়ে চলমান থাকত গন্ডগোল।একদিন সেকেলে বহুল পরিচিত পাড়ার মোড়ল সাহেব নাকি লোকজন নিয়ে শালিস করতে বসবে বলেছিলো। আমাদেরকে বলেছিলো ২/৪ জন লোক ডাকতে। আর তারা ডেকে ছিলো কয়েক ডজন। দাদা আমার খুব ভীতু ছিলো। রাতে শালিসের ভেতর স্ট্রোক করে মারা গিয়েছিলো।কেউ নাকি আমার দাদার সাথে প্রতারণা করেছিলো, বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো। আমরা বিচার দাবি করি নি। কারণ আমরা বিচার পেতাম না। তখন ছিলো অন্যায়ের জয় গান। তখন ছিলো পাকিস্তানির দালালদের হাতে সব ক্ষমতা। তখন ছিলো গরীবের উপর শোষণ আর ধনীর বুকে বিছানো মীরজাফরদের আসন। ধিক্কার সমাজপতি তোমাদের যারা সেদিন সমাজের রন্ধে রন্ধে অন্যায়, অবিচারের আবাদ ভূমি করেছিলে।

তখন আমার বাবা চাচারা তাদের পিতাকে হত্যা করার বিচার দাবি করতে পারেনি। এলাকার জামায়াত, বিএনপির নেতারা প্রতিনিয়ত চাপ দিত। এমনকি আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারতাম না। আমার বাবা তার বাবার বড় ছেলে। প্রচন্ড মানসিক চাপ তাকে সহ্য করতে হয়েছে। পিতাকে হত্যা করা ওই সব নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মত এলাকায় কেউ ছিলো না। আমার দাদা মারা পাওয়ার পর আমার বাবা চাচাদের নামে আমার ফুফুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিথ্যা ডাকাতি মামলা দেয়। আমার মাটির মত মানুষ বাবা চাচারা কখনও কারো বাড়িতে ডাকাতি করতে পারেন না। এটা ওই অল্প বয়সে আমি ভালো করেই জানতাম। বাড়িতে প্রায় পুলিশ আসত। আমি ভয়ে দৌড়ে এসে এক জামায়াত নেতার বাড়ি গিয়ে বলেছিলাম আমার আব্বারে ধরে নিয়ে যাবে। তারা আমাদের এই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর সাথে জড়িত ছিলো আমি জানতাম না। স্থানীয় জামায়াতের চেয়ারম্যান আমার পরিবারের বিরুদ্ধে লিখিত দিয়েছিলো। আমার পরিবার আরও বেশি বিপদে পড়ে যায়। কোটে মামলা উঠে। কোট খরচ চালাতে আমরা ধান কিনে সিদ্ধ করে চাউল বানিয়ে বিক্রি করতাম। তখন আমাদের পরিবারের সবাই এক সাথে ছিলো। ছোট ফুফু যশোরের একটা বাড়িতে কাজ করত। প্রতিমাসে ২/১ বার কোট বসত। অনেক দিন পর মামলা খারিস হয়। আমার নির্দোষ বাবা চাচারা মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পায়।

এত কঠিন সময়ের ভিতরে যখন কেউ আমাদের পাশে ছিলো না। তখন আমার পরিবার একজন সাংবাদিকের সহযোগিতা পায়। তার লেখা রিপোর্টের পেপার কার্টিং আমি এখনও সংগ্রহ করে রেখেছি। তখন থেকে উপলগ্ধি করেছি মানুষ যখন কোথায় বিচার না পায়, আশ্রয় না পায় তখন একজন সৎ, নিষ্ঠাবাদ সাংবাদিকের দারস্থ হয়। আর একজন মূল ধারার সাংবাদিক মানুষের কল্যানে, দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারেন। আমার শৈশব থেকেই এই পেশাটার প্রেমে পড়া। বাকিটা জীবন একজন সংবাদকর্মী হিসাবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।

দুঃখের সাথে বলতে হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি দীর্ঘ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক জামাতি, বামাতি ভোল পাল্টে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সাংবাদিকতা পেশায় ডুকে গেছে। গণমাধ্যমে হতটা যাচাই, বাচাই না থাকাতে অনেক ছাত্রশিবিরের ক্যাডার, ছাত্রদলের নেতা আজ প্রভাবশালী সাংবাদিক। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিক সংগঠনগুলোতেও তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যে কারণে দেশের যে কোনো পরিস্থিতিতে খুব সহজে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। আমার সাংবাদিকতার লেবাস লাগিয়ে অনেকে অপসাংবাদিকতা করে চলেছে। এ বছরের প্রথম হরতাল ২৮ শে অক্টোবর একজন যুবদল নেতা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তিনি কোনো না কোনো ভাবে সাংবাদিকের একটা কার্ড জোগাড় করেছে। দেশে অনেক ভূই ভোঁড় নিউজ পোর্টার, পত্রিকা চ্যানেল রয়েছে। যারা টাকার বিনিময়ে কার্ড বিক্রি করে। জামাতি, বামাতি সহ স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির মানু্ষগুলো সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। সরকার পন্থি দলগুলো কোনো কিছু করলে ফলোআপ করে নিউজ করা হয়। সাহসিকতার সাথে অপপ্রচার চালানো হয়। এটার মূল কারণ সাংবাদিকতায় স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির অনেক লোক ডুকে পড়েছে। তাছাড়া ঔই সব অশুভ শক্তির মানুষগুলো সংঘবদ্ধ। যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি তারা এখনও সংঘবদ্ধ হতে পারেনি। এখুনি সময় সাদাকে সাদার দলে আর কালোকে কালোর দলে দিয়ে সাদা কালো আলাদা করা। তা না হলে ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে বিকৃত করে ফেলবে অপশক্তির দল। জাতীয় নির্বাচন আসলেই চোখের সামনে রং বদল করতে দেখা যায় কিছু সাংবাদিক লেবাসে থাকা স্বাধীনতার বিপক্ষের মানুষদের। আসুন অপশক্তি বর্জন করে, স্বাধীনতার বিজয় নিশান উড়িয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে। জয় বাংলা। জয় হোক স্বাধীনতার কথা বলা মুক্তিযুদ্ধের শক্তির।

লেখক : সংবাদকর্মী

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test