E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হিটলারের বংশ পরম্পরা

২০২৩ নভেম্বর ০১ ১৪:৩৫:৫৮
হিটলারের বংশ পরম্পরা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক হিটলার বলেন- “আমি আপনাকে ভালোবাসতে না বলে যুদ্ধ করতে বলি। কারণ যুদ্ধে হয় আপনি বাঁচবেন, না হয় মরবেন। কিন্ত ভালোবাসায় আপনি না পারবেন বাঁচতে, না পারবেন মরতে!”

হিটলার কথা রেখেছেন, সারা জীবন যুদ্ধের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। কত মানুষ তার হাতে নিহত হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও নেই; তার নেতৃত্বে নিহত মানুষের সংখ্যা হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ। তাছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে হিটলারের ইহুদি নিধনের হলোকাষ্ট আজও মানুষের মনে বিভীষিকার স্মৃতি। তার বন্দুকের গুলিতে নিহত মানুষের মাথার মগজ তার পরিধেয় বস্ত্রে লেগে থাকতো এবং এ অবস্থায় তিনি একদন্ড ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিতেন; আবার একই কাজ শুরু করার জন্য শক্তি সঞ্চয় করতেন। যুদ্ধ আর নিষ্ঠুরতার প্রতীক একটি নাম- হিটলার।

সর্বত্র যুদ্ধের ডামাডোল এবং নিরীহ মানুষ হত্যায় উম্মত্ততা দেখে মনে হচ্ছে হিটলারের রক্তধারা বংশ পরম্পরা পৃথিবী ব্যাপী ঘটেচলা তান্ডবের মূল অনুঘটক। চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যার নিষ্ঠুরতার সকল সীমা অতিক্রম করেছে।

এ নিষ্ঠুরতার অভিঘাত কেবল মধ্যপ্রাচ্যের অকুস্থলেই সীমাবদ্ধ নেই, সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষনরক জ্বালা ভোগ করছে। ইতোমধ্যে এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ব্যাপী ধর্ম বিদ্বেষ, বর্ণ বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গত ১৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে ৬ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি মুসলিম শিশু ওয়াদেয়া আল ফাইয়োমেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত ৭১ বছর বছর বয়সী জোসেফ সুবা শিশুটিকে ছুরি দিয়ে ২৬ বার আঘাত করেছিল; প্রকট ধর্ম বিদ্বেষের লোমহর্ষক নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত। এই ঘটনা নিয়ে পুলিশ বলছে হামাস ও ইসরায়েলিদের সঙ্গে চলমান সংঘাতের কারণে ওয়াদেয়া ও তার মা মুসলিম হওয়ায় তাদের ওপর ওই ব্যক্তি নৃশংস হামলা চালায় বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন।

যাকে হত্যা করা হয় তার কষ্টের অনুভূতির চেয়ে যে হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করে তার কষ্ট বেশি; কারণ প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে মানব অনুভূতি বা বোধশক্তি এক পর্যায়ে কাজ করে না।

প্রতিদিন আমরা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বোমা হামলা, বিমান হামলায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু দেখি, আহতদের আর্তনাদ দেখি। গাজায় হাসপাতালে হামলায় ৫ শতাধিক লোকের মৃত্যু দেখি, ৩ হাজারের বেশি শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু দেখি।

আমরা তো এ যুদ্ধের কোনো পক্ষ নই, তবু আমাদের এত কষ্ট কেন ? ওই যে বলছিলাম, খুন হওয়ার চেয়ে খুনের দৃশ্য দেখা বেশি কষ্টের!

জাতিসংঘে উথ্থাপিত গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে বাধাদানকারীরা চায় যুদ্ধ প্রলম্বিত হোক এবং সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষ দ্বারা নির্বিচারে মানুষ খুন হতে থাকবে। তারা আক্রমণকারীর পক্ষ অবলম্বনকারী, তারা হত্যা হোলি খেলায় অংশিদার। তারা নিজেরা খুন করেনি কিন্ত খুনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে; অপরাধের গুরুত্ব একই। হিটলারের চরিত্রের সাথে তাদের চরিত্রের কোনো মৌলিক পার্থক্য দেখি না। ঘটনা প্রবাহের নৃশংসতা স্মরণ করিয়ে দেয়, হিটলারের বংশধররা পৃথিবীতে দাপটের সাথে বিচরণশীল।

পূর্ব পুরুষের বংশগতির ধারা বা প্রভাব কখনো মুছে যায় না, বংশ পরম্পরায় দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যসমুহ মানব চরিত্রে বিদ্যমান থাকে। সময়ে প্রকৃত রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে, চাপা থাকে না। হিটলারের পুরুষানুক্রম থেকে জন্ম নেওয়া যুদ্ধবাজরা আজকের এ ধরিত্রী অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বিরতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য রাষ্ট্রের সদিচ্ছাই যথেষ্ট এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সকল পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌছানো অসম্ভব নয়। তবে সেক্ষেত্রে ওই ৫ রাষ্ট্রের নিজ দেশ কেন্দ্রীক রাজনীতি, কুটনীতির উর্ধে উঠে বিশ্ব মানবিকতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর সহযোগিতা পেলে বর্তমান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করার যথেষ্ট দক্ষতা রাখেন। প্রায় ১০ বছর যাবৎ শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার থাকাকালে এমন স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি এবং পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালেও বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন আন্তোনিও গুতেরেস। তাই আশার আলো দেখি।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test