E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জনগণ কি আগুন সন্ত্রাস চায়?

২০২৩ নভেম্বর ০৭ ১৭:১৪:০৩
জনগণ কি আগুন সন্ত্রাস চায়?

ড. মো. আনিসুজ্জামান


বৈশ্বিক মন্দাবস্থা, যুদ্ধাংদেহী আবেশের মোড়কে চলমান আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, সদ্যপ্রয়াত করোনা মহামারির প্রবল আঘাতসহ নানান প্রতিকূলতাকে তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগে বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাসোপান যেখানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে একটি দেশ। একটি উন্নত স্মার্ট বন্দরে সফল নোঙরের উদ্দেশ্যে, সেখানে এই অদম্য যাত্রাকে বাধা দিতে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গিগোষ্ঠীর মদদদাতা এবং সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক গোষ্ঠী। যেখানে চলমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘ডিজিটাল’, ‘স্মার্ট’, ‘ভিশন’, ‘টেকসই উন্নয়ন’, ‘রূপকল্প-২০৪১’, ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’, ‘মহাপ্রকল্প’, ‘উন্নয়নের মহাসড়ক’ ইত্যাদি ইতিবাচক শব্দগুচ্ছকে সোনার বাংলার অভিধানে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে আরেকটি দল ইতিবাচক কোন কিছু উদ্ভব করায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় তো দিয়েছেই বরং বাংলার মানুষকে পরিচিত করেছে ‘আগুনসন্ত্রাস’ নামক একটি চরম নেতিবাচক শব্দের!

গত এক যুগে তিন দফায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের সুদক্ষ পরিকল্পনায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাব হয়ে ওঠা এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বদ্বীপটির জনগণ আজ সেই সব স্বপ্নগুলোর বাস্তব চাক্ষুষ সাক্ষী হতে পেরেছে, যা হয়তো একসময় ছিল কল্পনাতীত। আজ বাংলাদেশ এর রয়েছে দেশের দীর্ঘতম ও বিশ্বের গভীরতম পিলার বিশিষ্ট পদ্মা সেতু, দক্ষিণ এশিয়া তথা দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ কর্ণফুলী টানেল, দেশের প্রথম পরমাণু ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরও অনেক মহাপ্রকল্প। যেখানে ২০০৯ এ মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতাভুক্ত ছিল সেখানে আজ শতভাগ মানুষ পাচ্ছে বিদ্যুৎ সুবিধা, নতুন রেলপথ নির্মিত হয়েছে ৪৫১ কিলোমিটার, পুনর্বাসিত হয়েছে আরও ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ, নির্মিত হয়েছে ৪০০ এরও বেশি রেলসেতু। এ ছাড়াও দেশে এক যোগে উদ্বোধন করা হয় শতাধিক সড়ক সেতুর। এতসব উন্নয়নের যাত্রায় আজ মানুষ সন্ত্রাসী বিরোধী দলের ডাকা কোন হরতাল, অবরোধ, নাশকতা কিংবা অগ্নিসন্ত্রাস চায় না।

দেশের এই দুর্বার এগিয়ে চলার পথে বাধা দেওয়ার জন্য সেই শুরু হতেই জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি-জামায়াত জোট চালিয়ে যাচ্ছে হরতাল অবরোধের নামে তাদের আগুন সন্ত্রাস। জোটটি জানে বাংলার মানুষ তাদের অরাজকতা আর সহ্য করতে চায় না, তাই তারা বেছে নিয়েছে নৈরাজ্যের পথ। অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভয়ানক আগুনকে।

মূলত ২০১৩ হতে সূচিত হয় বিএনপি জামায়াত জোটের এই আগুন নিয়ে খেলা যার বিভীষিকার কথা ভুলে যায় নি বাংলার জনগণ। সে সময় যারা কখনও চায় নি বাংলাদেশ নামক একটি ভূখণ্ড হোক, সেই ঘাতক, পিশাচ, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে দলটি প্রায় ৪১৯ টি পৃথক ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্য সহ হত্যা করে ৪৯২ জন নিরপরাধ মানুষকে। এ সকল অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে আহত হয় প্রায় আড়াই হাজারের মত মানুষ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন কালীন সময়ে তারা দেখায় তাদের ভয়ংকরতম রূপটিকে। এ সময় তারা আগুন ধরিয়ে দেয় সারাদেশের প্রায় ৫৮২ টি ভোটকেন্দ্রে, শত শত যানবাহনে, রাস্তার পার্শ্ববর্তী বৃক্ষরাজিতে, এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় যেনে তারা পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে মারে বহু নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে। অগ্নিদগ্ধ অসহায় মানুষদের কান্নার আহাজারিতে প্রকম্পিত হতে থাকে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলো। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার সহ এই সন্ত্রাসী জোট গোষ্ঠী হত্যা করে ২৬ জন মানুষকে। একবছর পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি যখন আওয়ামী লীগ সে মেয়াদ কালের তাদের প্রথম বর্ষ উদযাপন করছিল, সেদিনও আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে আগুন সন্ত্রাসেরা। সেসময় ২ হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, ৮ টি যাত্রীবাহী লঞ্চ, ৭ টি ভূমি অফিসসহ ৭০ টি সরকারি অফিসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে সন্ত্রাসী সংগঠনটি। এসব ঘটনায় নিহত হয় ২৩১ জন মানুষ এবং গুরুতর আহত হয় ১ হাজার ২০০ মানুষ। এরপর থেকেই পুরোপুরিভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিএনপি-জামায়াত জোট গোষ্ঠী। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জুন কানাডার টরেন্টোর আদালতে এক মামলায় বিএনপিকে ৫ম বারের মত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এতকিছুর পড়েও আগুন নিয়ে খেলা পুরোপুরি শেষ হয় নি দলটির। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকায় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ডাকা সমাবেশে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে অগ্নি সংযোগ ঘটায়। কিন্তু বাংলাদেশের সচেতন জনগণ তাদের এসব নৈরাজ্য ও অরাজকতাকে তুমুলভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

বাংলাদেশের মানুষ এখন এগিয়ে যাওয়ার পথে, তারা শুধু স্বপ্ন দেখে উন্নত এক ভবিষ্যৎ এর। এই পথে এই দেশের জনগণ কখনো মেনে নেয় নি এবং মেনে নেবেও না আগুন সন্ত্রাসকে।

লেখক: অধ্যাপক, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সাইন্স বিভাগ এবং প্রক্টর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test