E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রাজনীতিকদের অদক্ষতার খেসারত জনগণের ঘাড়ে

২০২৩ নভেম্বর ১৫ ১৬:২৮:৪৭
রাজনীতিকদের অদক্ষতার খেসারত জনগণের ঘাড়ে

চৌধুরী আবদুল হান্নান


বর্তমানে রাজনীতিকদের কথা কেউ বিশ্বাস করে না, তারা সত্য কথা বলেন না। অপরকে আক্রমণ করাআর হেয় করার প্রবণতা তাদের বক্তব্যে প্রাধান্য পায়। কোনো কোনো নেতার বক্তব্য কানে এলে মনে হবে, রুচিবোধের কত অভাব! তবুও তাদের বক্তৃতা বিরামহীন, শুনতেই হয়।

এমন মানহীন নেতাদের কাছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান গুণী নেতারা আজ কোনঠাসা। ছোটরা বড়দের কাছে শিক্ষণীয় বিষয় খুঁজে পায়, তাদের অনুসরণ করে। কিন্ত বর্তমান বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজকের রাজনীতিকদের কাছ থেকে কী শিক্ষা নেবে? রাজনীতি শিক্ষার কোনো স্কুল নেই।

একজন সজ্জন ব্যক্তি দেশের সাবেক প্রসিডেন্ট (সাবেক প্রধান বিচারপতিও) সাহাবুদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শত শত ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে বলেছিলেন, “আমাদের দেশের রাজনীতিকদের কাছ থেকে ছাত্রদের কিছু শিক্ষার নেই।”

প্রায় দুই যুগ পূর্বে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ এমন মন্তব্য করেছিলেন; রাজনীতিকদের কার্যকলাপেতিনি কতটা হতাশ ছিলেন তা বোঝা যায়। রাজনীতির ধারা এতদিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে সন্দেহ নেই কিন্ত সে পরিবর্তন ইতিবাচক হয়েছে তাকেউ বলবে না।

দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের চিরচেনা বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একটু কৌলিন্য দাবি করতেই পারে কিন্ত যুদ্ধ জয়ের পর তাদের অনেকেরই চরিত্র পাল্টে যায়, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়, বিশেষ করে ব্যাংকের অর্থ লুটপাটে বেপরোয়া হয়ে পড়ে।

জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একবার বলেছিলেন, “ব্যাংকের জালিয়াতি ধরতে বাধা দলীয় লোক, কয়েকজন ব্যাংক পরিচালক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও তাদের জেলে নিতে পারছি না, তারা সকলেই জালিয়াতি মামলার আসামি। আমাদের লোকজন সমর্থন দিচ্ছে তাদের।”

দেশের অর্থমন্ত্রী যখন অর্থ আত্মসাতকারীদের দৌরাত্ম্যের কাছে এভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, তখন দেশের অর্থনীতির কী অবস্থা তা ব্যাখ্যা করার দরকার হয় না।

অপর বড় দল বিএনপি, যে দলে বীর মুক্তিযোদ্ধার অভাব নেই কিন্ত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে একাত্ম হয়ে রাজনীতি করায় তারা অনেকটাই বিতর্কিত দল হিসেবে চিহ্নত। স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আঁতাত করে ২১ বছর একটি স্বাধীন দেশের শাসন ক্ষমতা দখলে রাখার কালো ইতিহাস রচিত হয়ে আছে।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেশের জন্মলগ্ন থেকে চলে আসছে এবং নির্বাচন আসন্ন হলে তা সহিংসতায় রূপ নেয়; প্রাণহানী, সম্পদহানী ঘটে।

সংকট কালে দেশের স্বার্থেই ক্ষমতাসীন দলকে প্রতিপক্ষের সাথে সমঝোতার হাত বাড়াতে হয়; কারণ দেওয়ার ক্ষমতা তাদেরই বেশি থাকে। তবে গ্রহণযোগ্য সমঝোতার জন্য কেউ কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি, কাজটি কঠিন কিন্ত একেবারেই অসম্ভব নয়।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পর্কে একটি কথা ব্যাপক প্রচলিত আছে — ক্ষমতা একটা মোহ, একটা মাদকতা। এ মাদকতায় আশক্ত হয়ে পড়লে দেশ ও দশের চিন্তা তখন গুরুত্ব পায় না। দেশের স্বার্থে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থানরত দলের মধ্যেও সমঝোতার নজির রয়েছে বিভিন্ন দেশে।

নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবন্দী থেকে নির্যাতন সহ্য করে, মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ সময়পাড়ি দেওয়ার পর বিজয়ীর বেশে বেরিয়ে এসে তিনি অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গ শাসকদের সঙ্গেও সমঝোতার পথে চলেছিলেন। প্রধান প্রতিপক্ষ ডি ডব্লিউ ক্লাককে তার সরকারেও রেখেছিলেন ইতিহাসের এই মহানায়ক ম্যান্ডেলা।

এক সময় বৈশ্বিক মন্দার বিপাকে পর্যদস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার কেবিনেটে রিপাবলিকান দল থেকেও কয়েকজন মন্ত্রী নিয়েছিলেন; কেবল প্রতিপক্ষের সাথে যথাযথ ঐক্য সৃষ্টির জন্য। তার নিজ দলীয় প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে বানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এভাবেই প্রকৃত বিজয়ীরা অনেক উদার হতে পারেন এবং জাতিকে ঐক্যের পথ প্রদর্শন করতে পারেন।

সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে কোনো প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে কাজ করে না; তখন বিপর্যয় ঠেকানো যায় না। ব্যাংকের অর্থ লুটপাট, বিদেশে পাচারসহ নানা দুর্নীতির ফলে দেশের অর্থনীতিতে যখন অশনিসংকেত দেখা দেবে, মানুষের জীবনযাত্রায় নাভিশ্বাস অবস্থা হবে, তখন সরকারের অন্যান্য সফলতা মানুষকে সান্তনা দিতে পারবে না; মানুষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে। জন প্রত্যাশার বিপরীতে ক্ষমতা কিছুদিন ধরে রাখা গেলেও, বেশি দিন নয়।

সিদ্ধান্ত নিজে নিতে না পারলে অসহায়ের মতো অন্যের সিদ্ধান্ত মেনে বাধ্য হতে হয়। এ স্বাধীন ভূখন্ড বাংলাদেশের মালিক বাঙালি জাতি, যে কোনো সিদ্ধান্ত তারাই নেবে, তা না হলে বাইরের “মোড়লদের” আনাগোনা থাকবেই।

বর্তমানে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগেরই মুলত দায়িত্ব দলীয় রাজনীতির উর্ধে উঠে, জাতীয় স্বার্থে এবং সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে যে কোনো উপায়ে সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমঝোতায় পৌছানো। অন্যথায় একদিন ক্ষমতাও যাবে, মুক্তযুদ্ধের চেতনাও থাকবেনা; আম ও ছালা দুই ই যাবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test