E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস  

আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য আদর্শ পুরুষ দরকার  

২০২৩ নভেম্বর ১৮ ১৬:০৪:০৩
আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য আদর্শ পুরুষ দরকার  

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আগামীকাল রবিবার  আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ২০২৩। বিশ্বব্যাপী লিঙ্গভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান উপলক্ষ হিসেবে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর দিবসটি পালন করা হয়।তথ্য মতে, পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো।

তবে বলা যায়, প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়- নারী দিবসের অনুরূপভাবেই দিবসটি পালিত হয়। ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। কথিত আছে, ১৯২৩ সালে, অগণিত পুরুষ ৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মতো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনের দাবি তুলেছিলেন। সেই সময় পুরুষরা ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনের জন্য নির্দিষ্ট করেছিল। ১৯৬৮-তে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস একটি নিবন্ধে লেখেন, সোভিয়েত-রাশিয়ায় লিঙ্গবৈষম্য মারাত্মক। সেখানে নারী দিবস পালিত হলেও পুরুষ দিবসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপরেই হ্যারিস পুরুষ দিবস পালনের দাবি জানান।

নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি, অংশগ্রহণও ছিল কম।

১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রথম আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়েছিল। ড. জেরোম তিলক সিং পুরুষদের অবদানের স্বীকৃতির দানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তা তার বাবার জন্মদিনে প্রথম বিশ্ব পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়। ধীরে ধীরে এভাবেই ১৯ নভেম্বর হয়ে ওঠে পুরুষদের মুখ। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান উপলক্ষ হিসেবে দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।

প্রতি বছর বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে পালন করা হয় দিবসটি। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, ক্রোয়েশিয়া, জ্যামাইকা, কিউবা, স্কটল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মাল্টা, কানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, ইউক্রেন ইত্যাদি। পৃথিবীতে কতশত দিবস আছে, সেটা হয়তো আপনি নিয়ম করে মনে রাখেন না। তবে আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন, তবে আজকের দিনটি অবশ্যই আপনাকে মনে রাখতে হবে। কারণ, দিনটি শুধুই আপনার।আন্তর্জাতিক নারী দিবস যতটা আলোচিত, পুরুষ দিবস ততটা নয়। আলোচনা কম হোক বা বেশি, প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর কিন্তু পালিত হয় বিশ্ব পুরুষ দিবস। তারিখ শুনে বুঝতেই পারছেন, আজ পুরুষ দিবস। তবে আর দেরি কেন, বাবা, ভাই, বন্ধু, সহকর্মী, স্বামী বা প্রেমিক যিনি হোন না কেন, কাছের পুরুষটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেলুন আজই। দিতে পারেন তাঁর পছন্দের কোনো উপহারও। আর পুরুষরা পরিবার, সমাজ তথা গোটা বিশ্বে যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছে দিবসটি তারই স্বীকৃতি স্বরূপ। যেসব মহাপুরুষ যুগে যুগে এই মানবসভ্যতা বিনির্মাণে আত্মত্যাগ করে গেছেন, এই দিবস তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দিবস পুরুষ এর কল্যাণার্থে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পুরুষ দিবসের ৬টি প্রধান প্রতিপাদ্যের মধ্যে অন্যতম ‘নারী ও পুরুষ এর আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন এবং নারী ও পুরুষ উভয় এর লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ।

এই দিবসের বিষয় ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে-

১. বিভিন্ন ক্ষেত্রের ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের প্রচারণা।

২. সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশুর যত্ন ও পরিবেশে পুরুষদের অবদানকে উদ্‌যাপন।

৩. পুরুষের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক, আবেগীয়, শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে ওঠায় জোর দেওয়া।

৪. সামাজিক সেবা, আচরণ ও প্রত্যাশা এবং আইনের ক্ষেত্রে পুরুষদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের বৈষম্যকে সবার সমানে তুলে ধরা।

৫. লৈঙ্গিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও সমতা।

৬. মানুষের জন্য নিরাপদ ও উত্তম পৃথিবী গড়া, যেখানে সে নিরাপদে ও তার সকল সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।

পুরুষরা কেন নিগৃহীত হচ্ছেন?

বর্তমানে দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার বন্ধন আগের চেয়ে অনেকটা হালকা। এছাড়া সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়া, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশ্বায়নের ক্ষতিকর প্রভাব, অবাধ আকাশ সাংস্কৃতিক প্রবাহসহ নানা কারণেই এমনটা ঘটছে। যার চরম পরিণতি হচ্ছে সংসারের ভাঙন ও নির্যাতন। পারিবারিক অশান্তি ও সংসার ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সমাজের সব অংশই প্রতিনিয়ত ভুগছেন নানা পারিবারিক যন্ত্রণায়। এক্ষেত্রে নির্যাতিত নারীর পাশে সমাজের অনেকেই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পুরুষশাসিত এ সমাজে পুরুষও যে নির্যাতিত হতে পারে সেটি যেন কারও ভাবনাতেই নেই। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আড়ালেই থেকে যায় পুরুষ নির্যাতনের করুণ কাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না পুরুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যৎ, সামাজিক মর্যাদা, চক্ষুলজ্জা, জেল-পুলিশ আর উল্টো মামলার ভয়ে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর নির্যাতন নীরবে সহ্য করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। পুরুষ চাইলেও নির্যাতনের কথা বলতে পারছে না। অন্যদিকে একজন নারী আইনের অপব্যবহার করে ইচ্ছে করলেই ঘটনা সাজিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতে সহজেই নারী নির্যাতনের মামলা বা যৌতুক মামলা দিতে পারছেন।

জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির চেয়ারম্যান আইনজীবী সাইদুল হক সাঈদ বলেন, স্ত্রীরা নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় পুরুষও স্ত্রী কর্তৃক শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্টভাবে নেই কোনো আইন। নারী ও শিশু নির্যাতনে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য একটিও নেই। ফলে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়াটা দুরূহ হয়ে পড়ছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সমাজের উচ্চ পদধারী থেকে শুরু করে নিুশ্রেণীর রিকশাচালক পর্যন্ত অনেক পুরুষই আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য আমাদের কাছে আসছেন।

নারী নির্যাতন আইনের খক্ষ

নারী উন্নয়ন ছাড়া একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাইতো পৃথিবীর অনেক দেশ নারী উন্নয়নের প্রসার ঘটিয়ে উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে। আমাদের দেশও নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অতীতের অনেক সময় থেকে বর্তমানে আমাদের দেশের নারী সর্বক্ষেত্রে পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এ আইনগুলোকে কিছু নারী পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সামান্য কিছুতেই স্বার্থান্বেষী নারী স্বামীদের নাজেহাল করতে এসব আইনের অপপ্রয়োগ করছেন। অন্যদিকে দেশে ‘পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ’ আইন এখনও সৃষ্টি হয়নি। নেই পুরুষ নির্যাতনবিরোধী ট্রাইব্যুনালও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কারণে আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগী পুরুষ।

যৌতুক আইনের অপপ্রয়োগ

পুরুষ নির্যাতনের ক্ষেত্রে যৌতুক আইনের অপপ্রয়োগ সবচেয়ে বেশি। আইনজীবীরা বলেন, যৌতুক আইনের অধিকাংশই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। পারিবারিক যে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ঝগড়া হলে সেটি থানা পুলিশে গড়ালে পরিণত হয় যৌতুক মামলায়। কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হলে অথবা স্ত্রীকে তালাক দিলে অথবা উচ্ছৃঙ্খল স্ত্রীকে শাসন করলে অথবা স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা দিলে সেই স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন থানায় বা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০-এর ১১(খ) অথবা যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০-এর ৪ ধারায় একটি মামলা করেন। একজন পুরুষের জীবন অতিষ্ট করার জন্য এ একটি মামলাই যথেষ্ট।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপকমিশনার বলেন, শুধু নারীই নন, পুরুষও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেক পুরুষ খারাপ মেয়েদের ট্র্যাপে পড়ে যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে। শুধু নারীই নন, পুরুষও নারীর দ্বারা ভিকটিমাইজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা পেশাগত দায়িত্বের বাইরে অনেক কিছু গোপন রেখে কাউন্সেলিং ও আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকি।আর পারিবারিক মামলার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের সঙ্গে যৌতুকের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু দাম্পত্য কলহ হলেই যৌতুকের মামলা দেয়া হয়। এতে পরিবারের সন্তানরাও কিন্তু দিশেহারা হয়ে যায়।

পারিবারিক মামলা শুধু পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা নারীর তুলনায় অনেক কম। পরিবারে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। ভুল বোঝাবুঝি হলে নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে হবে। নির্যাতন বন্ধ হতে হবে ঘর থেকেই।

দেনমোহর কেলেঙ্কারি

আমাদের দেশে সাধারণত বিয়ের সময় পাত্রী পক্ষ জোরপূর্বক পাত্রকে সাধ্যের অতিরিক্ত টাকা কাবিন নামায় ধার্য করতে বাধ্য করেন। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কাবিন হয় বাকিতে। অর্থাৎ দেখা গেল কনে পক্ষের দাবি অনুযায়ী, কাবিন করা হল ১০ লাখ। এর মধ্যে গহনা ও অন্যান্য জিনিস বাবদ ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে পুরোটাই বাকি রাখা হয়। যদিও ইসলামী বিধান হল বিয়ের সময়ই দেনমোহর পুরোটা পরিশোধ করা। তবে এই কথা শোনে কে? বাকি থাকা বা বাড়তি এই দেনমোহরই পরে কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন কেস স্টাডি থেকে জানা গেছে, অতিরিক্ত দেনমোহরের কারণে স্বামী তার স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজনের অনৈতিক দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন।

পবিত্র কোরআনের সুরা আল বাকারার আয়াত নং-২২৯ অনুসারে যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে মুক্ত হতে চান তবে তাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে হতে হবে; যা তার মোহরানার অতিরিক্ত হবে না। তাই ইসলাম অনুসারে দেখা যায়, স্ত্রী কর্তৃক স্বামী ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্ত্রী স্বামীকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের দেশীয় আইন অনুযায়ী স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদান করা হলেও স্বামীকে দেনমোহর প্রদান করতে হয়; যা ইসলামের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পরিশেষে বলতে চাই, মানবিক উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, নৈতিকতার বিশেষণে ভূষিত ও উত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত মানুষকেই আদর্শ মানুষ বলা যায়। এই আদর্শ মানুষই সমাজের মূলভিত্তি। এদের দ্বারাই সমাজ সুন্দরভাবে চলে। মানবতা হয় উপকৃত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে সে নিবেদিত হয়। এসব গুণে কোনো পুরুষ গুণান্বিত হলে তাকেই আদর্শ পুরুষ বলে। আদর্শ সন্তানের জন্য যেমন আদর্শ মায়ের দরকার, আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য যেমন আদর্শ নারী-পুরুষ দরকার; তেমনি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য আদর্শ পুরুষ দরকার। কারণ সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকে পুরুষরাই।আর দীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ যেমন পুরুষদের কেই নবুওয়াত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন, তেমনি তিনি পুরুষদের কেই কর্তৃত্বশীল করেছেন। তাই দেশ-জাতি, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পুরুষদেরকে আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তাহলে তাদের দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ-রাষ্ট্র সবাই কল্যাণ লাভ করবে, সবাই সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

আর নারী-পুরুষ আসলে সমাজের দুটি স্তম্ভ, যার ওপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে থাকে একটা সুস্থ-স্বাভাবিক সমাজ। তবে, নারী দিবসে যতটা উন্মাদনা দেখা যায়, পুরুষ দিবস তা সেরকম দেখা যায় না।আর দিবসটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হোক বালক, কিশোর ও পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক প্রচারণা, নারী-পুরুষ সমতার প্রচার, পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা, পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা, পুরুষ ও বালকদের অর্জন ও অবদানকে উদযাপন করা।

সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে পুরুষদের অবদানকে তুলে ধরাও এই দিবসের আরেকটি লক্ষ্য। আর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে পুরুষের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। পুরুষদের অন্যদের সঙ্গে মিশতে ও যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হয়। তাই আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস একজন পুরুষকে ভালো মানুষ হওয়ার মূল্যবোধ, চরিত্র এবং দায়িত্বের প্রতি উত্সাহিত করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৪৫ বছরের কম বয়সী পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এটি ঘটছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষের তুলনায় নারীরা বিষণ্নতায় বেশি ভোগেন। কিন্তু, পুরুষের আত্মহত্যার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই পুরুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে ও মানসিক সুস্থতার জন্য পুরুষ দিবস উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ।

এটা মনে রাখতে পুরুষ দিবসের উদ্দেশ্য নারী দিবসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা নয়। বরং পুরুষের সামাজিক অভিজ্ঞতাকে সবার কাছে তুলে ধরা এই দিবসের উদ্দেশ্য। তাই সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি উদযাপন করা যেতে পারে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test