E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

এটি বাংলার প্রশ্নপত্র!

২০২৩ নভেম্বর ২৬ ১৬:০৬:৪১
এটি বাংলার প্রশ্নপত্র!

শিতাংশু গুহ


এটি বাংলার প্রশ্নপত্র। তৃতীয় শ্রেণী, বিষয়: বাংলা। তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন-২০২৩, উপশহর ক্লান্টর, সদর, যশোর। পূর্ণমান ১০০। বলা হচ্ছে, নীচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দাও, মোট নাম্বার ২৫। প্রশ্নগুলোর দরকার নেই, আমরা অনুচ্ছেদটি পড়ি: “হজরত মুহাম্মদের মৃত্যু’র পর যে চারজন খলিফা হয়েছিলেন, তাদের খোলাফায়ে রাশেদুন বলা হয়। আবুবকর ছিলেন খোলাফায়ে রাশেদুনের প্রথম খলিফা। তিনি ৫৭৩ খৃস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের তাইম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কুহাফা উসমান, আর মাতার নাম সালমা। মহানবী হজরত মুহাম্মদের সর্বাধিক প্রিয় সাহাবী ছিলেন হজরত আবু বকর। নবীজির সাথে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিলো। শিশুকাল থেকে আবু বকর কোমল হৃদয় ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রচুর জ্ঞানার্জন করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের জ্ঞান ছিলো তাঁর অসাধারণ। তিনি বড় কবি, সুবক্তা ও দানশীল ছিলেন”। প্রায় হুবহু একই প্রশ্ন হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, তৃতীয় শ্ৰেণীৰ বাংলা পরীক্ষায়। 

যশোর থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব অনেকটা, শিক্ষাবোর্ড ভিন্ন, কিন্তু প্রশ্ন একই! কি আশ্চর্য্য মিল, অনেকটা ‘দি গ্রেট মেন্ থিঙ্কস এলাইক’! প্রশ্নপত্র কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত নয় তা বোঝা যায়, যশোরে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পাওয়া যাবে ২৫, চট্টগ্রামে ৩৫? যে কেউ এটি ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসার প্রশ্নপত্র ভেবে ভুল করবেন না, এটি বাংলার প্রশ্ন। যেহেতু প্রশ্নপত্রটি বাংলায় লেখা তাই এতে ডবল লাভ, শিশুরা বাংলা হরফ শিখবে এবং একই সাথে ‘ইসলাম ধর্ম’ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করবে। যেহেতু সাধারণ স্কুল, সুতরাং অন্য ধর্মীয় শিশু থাকবে, ৯০% মুসলমানের দেশে সবার ইসলাম জানা প্রয়োজন বৈকি, শিশুদের তো বটেই, যদি ভবিষ্যতে কাজে ‘লাইগ্যা’ যায়! প্রশ্ন হচ্ছে, সকল ধর্মের শিশুদের একটি ধর্ম পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কেন? লোকে বলে, ‘শেখার বা জানার নাকি কোন শেষ নেই’, তাই এতকাল পরে জানলাম আবু বকর বড় কবি ছিলেন! ধারণা করি, তাঁর কবিতা শিগগিরই বাংলায় ঠাঁই পাবে এবং সেটি বাংলা ভাষাকে সমবৃদ্ধ করবে।

বাংলাদেশে কবি’র কোন অভাব নেই? এজন্যে প্রতিষ্টিত কবিরা মাঝেমধ্যে রেগে বলে ওঠেন, ‘সব শালা কবি হতে চায়–’। কবি আবু বকর খলিফা বাংলায় ঠাঁই পেলে মন্দ কি? এরশাদও তো কিছুকালের জন্যে কবি হয়েছিলেন? এদিকে কুমিল্লায় ভিকটোরিয়া কলেজে দু’টি ছাত্রাবাস (জমি হিন্দুর দেয়া); মুসলিম ছাত্রদের জন্যে সোহরাওয়ার্দী ছাত্রবাস ও হিন্দুদের জন্য রবীন্দ্রনাথ ছাত্রবাস, একই সাইনবোর্ডে দু’পাশে দু’টি নাম ছিলো। কিছুকাল আগে এটি নবায়ন হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ বাদ পড়েছেন, এখন শুধুই সোহরাওয়ার্দী ছাত্রবাস (নুতন, পুরাতন সাইনবোর্ড সংযুক্ত)। সোহরাওয়ার্দী বাঙ্গালী নন, খলীফাও নন, নাম আরবি বা উর্দু এবং অনেকে তাঁকে ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র!’ বলতে পছন্দ করেন! এগুলো বড় কোন ঘটনা নয়, ইসলামীকরণ চলমান প্রক্রিয়ার ছোট্ট ছোট্ট অংশ। দেশে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে, এদিকটা বাদ থাকবে কেন? আসলে দেশে সবগুলো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে নিয়ে এলে আর কোন সমস্যা থাকেনা।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test