E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিজয় দিবসের ভাবনা

২০২৩ ডিসেম্বর ১১ ১৫:৪৯:৫১
বিজয় দিবসের ভাবনা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


আমাদের বিজয় দিবসের আনন্দ কত তা পরিমাপের যেমন কোনো মাপকাঠি নেই; তেমনি শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তানের কবল থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে কতটা মূল্য দিতে হয়েছিল সেই কষ্ট-বেদনারও কোনো পরিমাপ করা যাবে না।

বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের (১৬৪৪-১৭২৭ ) পদার্থ বিজ্ঞানের একটি সূত্র আছে— “প্রতিটি ক্রিয়ার ঠিক সমান এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে।” নিউটনের এই ফরমুলাটি বিজ্ঞান জগতকে সম্মৃদ্ধ করে রেখেছে; ক্রিয়া এবং তার প্রতিক্রিয়া যে সমান তা অংক শাস্ত্রে নির্ভুলভাবে প্রমানিত।

দৈনন্দিন জীবনের সকল কর্মকান্ডও এই সূত্রের বাইরে নয় বরং একই সূত্রে গাথা, তবে বিজ্ঞান দিয়ে তা প্রমান করা যায় না। আমরা দেখি, যেমন কর্ম তেমন ফল।

পাকিস্তানি সেনারা ৯ মাস ব্যাপী বাংলার এই ভূখন্ডে যে বিভীষিকাময় নির্যাতন চালালো, গণহত্যা সংঘটিত করলো যার ফল হিসেবে দুটি ঘটনার উদ্ভব হয়েছিল। একটি রাষ্ট্রের ভাঙন আর একই সাথে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম। এর পিছনে রয়েছে বাঙালি জাতির সাগরসম রক্তদান আর সীমাহীন ত্যাগ।

১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ের সূচনা হয়েছিল। বিশ্বের কথিত অন্যতম সেরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার দুর্ধর্ষ যোদ্ধা কাপুরুষের মতো বাংলার মাটিতে নতজানু হতে বাধ্য হলো; যে মাটি তারা রক্তাক্ত করেছিল গণহত্যা করে। কোথায় গেল দম্ভ আর বীরত্ব?

ড. জিল্লুর রহমান খান তাঁর “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্ব ও স্বাধীনতা সংগ্রাম” গ্রহ্নে লিখেছেন, নিয়াজি দম্ভ করে বলেছিলেন, ঢাকার পতন ঘটবে কেবল আমার লাশের ওপরে ।কিন্ত যখন শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াইয়ের সময় এলো তখন তিনি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পথ বেছে নিলেন। পরিণতি যা হওয়ার তাই হলো।

দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু জাতিকে প্রস্তুত করে উপযুক্ত সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন; একটি বিপন্ন জাতির প্রতি সহযোগিতায় এগিয়ে এলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত।বাংলাদেশ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাওয়া এক কোটি শরণার্থীকে তাদের ভূখন্ডে আশ্রয় দিলো, মুক্তযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং অস্ত্র সরবরাহ করে স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত করেছিল বিপদের বন্ধু এই রাষ্ট্রটি।

পাকিস্তানকে পরাভূত করার পেছনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্ব কীভাবে কাজ করেছে; বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, সে ঘটনা প্রবাহ গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছে।

শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ফলে প্রতিরোধ যুদ্ধরত বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের ভাগ্য বরণ করতে হয়নি।

কমরেড হো চি মিনের নেতৃত্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে সময় লেগেছিল ২০ বছরের অধিক।

ইতোমধ্যে আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধশতাব্দীর অধিক সময় হয়ে গেছে কিন্ত বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন আজও অধরা। বিদেশীরা এখন নেই, আমাদের শাসন আমাদেরই হাতে; আমাদের দেশ আমরাই গড়বো।

জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে এখন দেশ গড়ার দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে বিএনপিকে বিরোধীদল হিসেবে পেয়েছে, সাথে আবার সংমিশ্রণ ঘটেছে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির। ফলে বিরোধীদলকে সামলাতেই বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে, সরকার আসল কাজে মনোযোগ দিতে পারেনি।

তাছাড়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে যাদের পরামর্শ নেবেন তারা সকলেই দক্ষ নন বরং দু-একজন রয়েছেন যাদের কথাবার্তা শুনলে একজন সাধারণ লোকেরও মনে হবে “কান্ডজ্ঞানের কত অভাব”।

এ কারণেই হয়ত শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলা হয় - শি ইজ ফাইটিং অ্যালোন; যুদ্ধটা একাই করছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা শেখ হাসিনা সম্পর্কে একবার বলেছিলেন- “আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখিনি কিন্ত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সাহস, মেধা, প্রজ্ঞার মধ্যে সেই মহামানবের পরিচয় পেয়েছি।”

বাংলাদেশে হাসিনা যুগে অনেক ক্ষেত্রে অভাবিত সফলতা অর্জিত হয়েছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে কিন্ত ব্যর্থতার পাল্লাও কম ভারী নয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে দুর্নীতি এখন লাগামহীন, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার হচ্ছে বাধাহীন, দেশের অর্থনীতি দুর্দশাগ্রস্ত আর ভোটারবিহীন নির্বচন করার অভিযোগ তো রয়েছেই।এসকল ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতে হবে; অন্যের ওপর চাপানোর কোনো সুযোগ নেই।

বর্তমানে চলমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যেই একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সকল দলের অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক দল নির্বাচন বয়কোট করে হরতাল-অবরোধ দিয়ে নাশকতা করে যাচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা না থাকায় বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হতে চলেছে; মনে হচ্ছে পরিস্থিতি যা ই হোক আওয়ামী লীগ ৫ম বারের মতো ক্ষমতায় আসীন হতে চলেছে।

আওয়ামী লীগ চালাবে সরকার আর বিএনপি কিন্ত বসে থাকবে না। তবে এমন ক্ষমতারোহন একটি দলের বা কিছু লোকের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে কিন্ত জাতির জন্য শুভ হতে পারে না।

শেখ হাসিনার ধমনীতে জাতির পিতার রক্তধারা প্রবাহিত, দেখার বিষয় গণতন্ত্র ফেরাতে, মানুষের মনে স্বস্তি আনতে তিনি কী কারিশমা দেখাবেন।

আমরা আশাহত হবো না, স্বপ্ন দেখে যাবো। শত হতাশা, প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা দেশকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন সালন করে যাবো। আমরা না পারি পরবর্তী প্রজন্ম পারবে এবং এটাই হোক আমাদের এবারের বিজয় দিবসের ভাবনা।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test