E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্পোরেট বুদ্ধিজীবী!

২০২৩ ডিসেম্বর ১৩ ১৫:৩৩:০৮
কর্পোরেট বুদ্ধিজীবী!

শিতাংশু গুহ


বেশ কিছুকাল আগে একটি পোষ্টার দেখেছিলাম, যাতে লেখা ছিলো, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী, তোমরা শান্তিতে ঘুমাও, আমরা জেগে আছি’। ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা যে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলো, ৫২ বছর পর তাঁদের উদ্দেশ্য বাঙ্গালীরা সফল করে দিয়েছে। না, হত্যা করে নয়, ফ্ল্যাট, প্লট, পুরুস্কার, টুকটাক পদ-পদবি দিয়ে। এ ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, বাঙ্গালীরা পাকিস্তানীদের চেয়ে যথেষ্ট স্মার্ট। ২০২৩-এ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রাক্কালে তাই হয়তো জোর দিয়েই বলা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা তো ঘুমিয়ে আছেনই, জীবিত বুদ্ধিজীবীরাও কুম্ভকর্ণের মত ‘মরণ ঘুম’ ঘুমাচ্ছেন। 

দেশে বুদ্ধিজীবীরা মোটামুটি দুই ভাগে বিভক্ত, আওয়ামী-পন্থী এবং বিএনপি-পন্থী। অনেকে আবার এদের প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল বলতে পছন্দ করেন। এর বাইরে হাতে গোনা কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ ভাবতে পছন্দ করেন, অথচ তাঁরা চীনপন্থী, এন্টি-ভারত, বঙ্গবন্ধু বিরোধী এবং ভোট দেন্ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে! অধুনা ভোটার জন্যে ওদের আর দায়ী করা যায়না, কারণ ভোট দেয়ার সুযোগ নেই? বিএনপি-পন্থী বুদ্ধিজীবীরা এখন দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে সোচ্চার, পক্ষান্তরে আওয়ামী-পন্থীরা চুপচাপ, তাঁর চান আওয়ামী লীগ যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় থাকুক।

এ সময়ে দেশ বেশ সংকটে আছে, বুদ্ধিজীবীরা ভাবছেন, শেখ হাসিনা ‘আলাদীনের চেরাগ’ দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে দেবেন এবং তাঁরা পুনরায় তোষামোদি সেরে সুখ-নিদ্রায় যেতে পারবেন। ভরসা শেখ হাসিনা। তাদের যে একটি দায়িত্ব ছিলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে সঠিক পথে দেখানো তাঁরা তা বেমালুম ভুলে থেকেছেন, কি আর করা ‘হাত পাতলে’ তো কিছু বলা যায়না। এঁরা এখনো ‘তোষামোদে’ ব্যস্ত। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধ হয়তো এদের জন্যেই লেখা! এতে ভারত খুশি, কারণ তেলের রফতানি বেড়েছে। বাংলাদেশে এখন স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবী নেই, প্রায় সবাই ‘কর্পোরেট বুদ্ধিজীবী’।

প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগে কিছু বুদ্ধিজীবীকে ‘আঁতেল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আসলে দেশে প্রায় সব বুদ্ধিজীবীই আঁতেল। সত্যিকার বুদ্ধিজীবী কৈ? দেশে রাজনৈতিক নেতা নেই, প্রায় সবাই ধামাধরা, ছা-পোষা। দেশে শিল্প-শিল্পী কোনটাই নেই, সাংস্কৃতিক আন্দোলন নেই, এমনকি পেঁয়াজ পর্যন্ত নেই!! ‘সব শালা কবি হতে চায়’-কবিতার সাথে সুর মিলিয়ে বলা যায়, ‘শিল্পী-খেলোয়াড় সব শালা এমপি হতে চায়? যাত্রা নেই, পালাগান নেই, নাটক নেই, সিনেমা নেই, এমনকি ভালোমানুষ পর্যন্ত নেই (সামান্য কিছু হয়তো আছেন)।

এই নাই-নাই’র মধ্যে বুদ্ধিজীবী কি আকাশ থেকে পড়বে? বুদ্ধিজীবীরা এই সমাজেরই মানুষ, সমাজ যেমন, রাষ্ট্র যেমন, বুদ্ধিজীবীও তেমনই হবার কথা! যাহোক, দেশে আর কিছু থাকুক বা না-থাকুক, বুদ্ধিজীবী থাকুক বা না-থাকুক, ‘ধর্ম’ আছে!!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test