E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আওয়ামী লীগের নৌকা বনাম স্বতন্ত্রের আওয়ামী লীগ

২০২৩ ডিসেম্বর ১৪ ১৮:১৪:২৭
আওয়ামী লীগের নৌকা বনাম স্বতন্ত্রের আওয়ামী লীগ

রিয়াজুল রিয়াজ


আওয়ামী লীগের বরাত দিয়ে দেশের একটি মুলধারার সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে কমপক্ষে ১৩০ টি আসনে নিজ দলের শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮০ টি আসনে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। রাজনৈতিক বিশ্লেষণদের ধারণা এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (নৌকা) সবচেয়ে বেশি আসন পাবে এবং আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আসনের দিক থেকে থাকতে পারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। বাকী আসদ গুলো অন্যান্য দলগুলো পেতে পারে। সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল থেকে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারে ৭০ থেকে ১০০ জন। আর, আওয়ামী লীগ মনে করছে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সরকার গঠন করতে যে কয়টি আসন দরকার তা তাদের নেতৃত্বে শরিক দলগুলো অনায়াসেই পেয়ে যাবে।

নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার তাঁর নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাহায্যের প্রয়োজন নাও হতে পারে; এমনটি ধারণা নৌকার ভোটারদের। অপর দিকে এবার বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আগের মতো বিদ্রোহী প্রার্থীর চোখে নাও দেখতে পারে আওয়ামী লীগ। কারণ, এখন পর্যন্ত দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন ও দলীয় পদে বহাল তবিয়তেই আছেন। এটি সম্ভব হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘিরে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পরিকল্পনা নীতির কারণে।

যেসব আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা তাদের নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠে মোকাবেলা করতে হচ্ছে, তাঁরা কেহই মুলতঃ স্বত্তিতে নেই। অস্বস্তিতে ভুগছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও। বিএনপি নির্বাচনে আসলে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতোনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া দল আওয়ামী লীগকে। অপর দিকে দল নমনীয় না হলে দলের এতো স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে আসতো না। এতো উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনও হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো না।
অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নীতির কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (২০১৪) তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০২৪) ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি হবে।

মুলতঃ দশম ও দ্বাদশ এই দুইটি জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো ছাড়া।
বৈশিক নজরদারি, দেশি বিদেশি চাপ, নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় শেখ হাসিনা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই এই নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক করতে হবে! ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সরকার বিরোধীরা যে নগ্নভাবে বিদেশিদের কাছে উপস্থাপন করেছে বা করার সুযোগ পেয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক! বিরোধীদের ওসব অভিযোগ শুধুই গুজব, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা প্রমাণ করতে হবে শেখ হাসিনাকেই, এবং তা এই নির্বাচনের মাধ্যমেই।। নির্বাচন কোনভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য হলে- সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনার নতুন সরকারকে বিএনপি-জামাতের পাশাপাশি বিদেশি শক্তি/মহাশক্তি'র মোকাবেলা করতে হতে পারে! এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে যেসব সাধারণ জনগণ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তাদের জবাবদিহিতা তো থাকছেই।

সুতরাং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে ইসকাপনের টিক্কা দিয়ে অভার ট্রাম করে আয়ত্তে নিতে হবে। কোন ভাবেই এই খেলায় ট্রাম-অভার ট্রাম খাওয়া যাবে না দলটির। রাজনীতির এসব হিসেব-নিকেশ কষে বলাই যায়, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে। আর হ্যাঁ! আওয়ামী লীগের কৌশলগত পরিকল্পনা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে দলটির নমোনীয় মনোভাবের কারণে এই নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে। আর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও ভোটের খেলায় কোন রকম দুর্নাম ছাড়া জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে, আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে সফল খেলোয়ার হিসেবে সর্ব মহলে বিবেচিত হবে।

অপরদিকে, ব্যার্থ আন্দোলন ও রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় ফেল করা বিএনপি-জামাত ধীরে ধীরে বিলুপ্তির মহাসড়কে উঠে যাবে। দলীয় সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে শেখ হাসিনা সরকার সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতেও সক্ষম হবে। দেশের রাজনীতিতে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নই উঠবে না। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো বাংলাদেশেও সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনের স্রোতধারা তৈরী হবে।

বিশ্বে রাজনৈতিকভাবে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অবস্থান। সব ঠিকঠাক থাকলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারবে নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে দলের কে কোথায় বেশি জনপ্রিয়, দলীয় মনোনয়ন কাকে কাকে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো, আর কাকে কাকে দেয়া ঠিক হয়নি!

নিজ দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগ একটি বড় দল ও নিজ দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ভাবে সেটিও প্রতিষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে সম্প্রতি গণভবনে দলীয় প্রধানের মত বিনিময় অনুষ্ঠানে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্যের কয়েকটি নির্দেশনামুলক উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটি শেষ করছি, "এবার ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কেউ যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে না আসে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়ে আসলেই ব্যবস্থা। দলের কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চায়; হতে পারবপ। আমরা বাঁধা দিবো না, যার জনপ্রিয়তা বেশি সে জিতে আসবে। যে জিতে আসতে পারবে, আমি তাকে নিবো। ভোটে বাঁধা দিলেই কঠোর ব্যবস্থা। কাউকে হুমকি ধামকি দেয়া যাবে না। অবাধে যেনো সবাই ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।'

লেখক: সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test