E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিজয়ের ৫২ বছর 

১৬ ডিসেম্বরের বিজয় আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের বিজয়

২০২৩ ডিসেম্বর ১৫ ১৬:২০:২৮
১৬ ডিসেম্বরের বিজয় আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের বিজয়

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


১৬ ডিসেম্বর ২০২৩।১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।আর বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের ৫৩ বছর পেরিয়ে আসার পথে আমরা।বছর ঘুরে আবার এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।

আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল–সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ। আর এ অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। এর জন্য বাঙালি জাতির ছিল সুদীর্ঘ তপস্যা ও সাধনা। এ সাধনার কাণ্ডারি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিরা যখন স্বাধীনতা স্পৃহায় উদ্দীপ্ত হতে শুরু করে, পাকিস্তানি বর্বরতার মাত্রা বাংলার মানুষের ওপর আরও বাড়তে থাকে। ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পর পাকিস্তানিরা আরও সোচ্চার হতে থাকে। ফল স্বরূপ ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে মুক্তিবাহিনী যখন আস্তে আস্তে সুগঠিত হতে থাকে তখন পাকবাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। গ্রামে-গঞ্জে ঘুমন্ত মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়, বেছে বেছে যুবকদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে ও পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।

পাকসেনা ও রাজাকারদের এমন নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাংলার সাধারণ মানুষ এক সময় সম্মিলিত প্রয়াসে জনযুদ্ধে নেমে পড়ে। এখানে ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক, কামার-কুমার, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শিশু-কিশোর, নারী সবাই অংশগ্রহণ করে এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করার আকাঙ্ক্ষায় তীব্র সংগ্রাম চালিয়ে যায়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের পর বাংলার মানুষের এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় ১৬ ডিসেম্বরে। তাই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় কোনো সাধারণ বিজয় নয়, এটি আমাদের রক্তে রঞ্জিত চেতনার বিজয়, আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের বিজয়। এ বিজয় আমাদের কাছে তাই একইসঙ্গে প্রেরণার ও গৌরবের।

বিজয় শব্দটি সব সময়ের জন্যই আনন্দদায়ক। বিজয় শব্দটি শুনলেই খুশি খুশি লাগে। তবে সেটা যদি হয় বাংলাদেশের বিজয় দিবস তাহলে তো বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের অনুভূতির আলোড়ন শুরু হয় হৃদয়ে। তবে বিজয় শব্দটি যতটা আনন্দের এই শব্দের পিছে লুকিয়ে আছে তার থেকে বেশি দুঃখ-দুর্দশা। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই বিজয়ী দেশকটাকে শহীদদের স্বপ্নে লালন করতে হবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিভিন্ন পেক্ষাপটে শুরু হয় বিভিন্ন দল-সংগঠনের স্বাধীনতা বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড। যা আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধাদের মনে লালিত স্বপ্নের বিপরীত। এমন বৈষম্য আচার-আচরণ তাদের আত্নাকে কষ্ট দেয়। আর তাই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, বাংলাদেশের বিজয় সম্পর্কে সকলের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সঠিক তথ্য বিশ্লেষণে ও জ্ঞান আহরণে পরিপূর্ণ হোক দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়।

প্রতিটি মানুষের মনে লালিত হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিজয়ের চেতনা।আর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে আমরা যেখানে ছিলাম, তা থেকে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বরে অনেক এগিয়েছি। বিশ্বব্যাংক ও তার অনুসারীদের উন্নয়নের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে এখন গর্ব করা যায়। মাথাপিছু গড় আয়, মোট জাতীয় আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলেছে। উৎপাদন বাড়ছে, আরও কিছু সূত্র থেকে রাষ্ট্রের আয় হচ্ছে। রাস্তাঘাট, দালান-কোঠা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ অনেক বেড়েছে।

১৯৭১-এ কোথায় ছিলাম আর আজ আমরা কোথায় আছি, এ প্রশ্নে উন্নয়নের হিসাব নিতে গেলে কিছুটা বিস্মিত হতে হয়। প্রশ্ন হলো, উন্নয়নের এই ধারা কি অব্যাহত থাকবে? বর্তমান অবস্থা নিয়ে জনমনে একটা সন্তুষ্টির ভাব আছে। জনগণ মনে করে ‘বর্তমান ভালো, ভবিষ্যৎ খারাপ।’ জনগণ অনেক সময় পরিবর্তনবিমুখ। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের (১৯০৫-১১) সময় থেকে এ দেশে মানুষ ছিল পরিবর্তন-উন্মুখ। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই এই অবস্থা আছে। উৎপাদন বাড়ছে, ধনী লোকদের সম্পদ বাড়ছে, জনসাধারণ পরিবর্তনবিমুখ, নিদ্রামগ্ন। ফরাসি বিপ্লব থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলয় পর্যন্ত কালে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রে জনগণ ছিল জাগ্রত, পরিবর্তন-উন্মুখ, প্রগতি-উন্মুখ। এখন জনমন সে অবস্থায় নেই। এখন কায়েমি-স্বার্থবাদীদের শান্তি ক্রমাগত বাড়ছে।

নাচ-গান-বিনোদনকে যদি সংস্কৃতির অংশ ভাবা হয়, তাহলে সংস্কৃতির দিক দিয়েও বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নতি করেছে। শিল্পী-সাহিত্যিকের সংখ্যা বিরাটভাবে বেড়েছে। টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র বাড়ছে। অনেক অনেক বই প্রতিবছর প্রকাশিত হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্র এই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। সব স্তরেই পরীক্ষার ফল অভাবনীয় রকম ভালো হচ্ছে। আর এ কথা ঠিক যে, গত ৫২ বছরে আমাদের অর্জন একেবারে কম নয়। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের অর্থনীতির ঈর্ষণীয় উন্নতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনে, এমডিজি অর্জনে, আমাদের সাফল্য যে কোনো বিবেচনায় উল্লেখ করার মতো; কিন্তু দেশের সম্পদের ১৬ শতাংশ যখন কয়েকটি পরিবারের হাতে চলে যায়, যখন বৈষম্যের হার ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত, যখন সাংবিধানিক অধিকারের ক্ষেত্রে ব্যবধান সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মূল নীতির আলোকে হিসেবটা গোলমেলে হয়ে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন ৩০ লাখ শহিদ আর ৩ লাখ মা-বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম আর সংস্কৃতির লড়াইয়ের সৈনিকদের আত্মত্যাগ আর ত্যাগের বিনিময়ে যে অর্জন আমাদের তা নিয়ে না ভেবে উপায় নেই।

বাঙালির প্রেরণার উৎস গৌরবময় এ বিজয় দিবস বর্তমানে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এবং বাঙালির জীবন চেতনায় গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এ বিজয়ের অনুপ্রেরণা থেকে বাঙালির আজকের দীর্ঘ পথচলা, যাবতীয় অর্জন। একাত্তরের বিজয়গাথা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তারই সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় বর্তমান বাংলাদেশের সমৃদ্ধি সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে শীর্ষে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দেশপ্রেমিক কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশে সমৃদ্ধির যে সুবাতাস বইছে, তা এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে বলে শেষ করা যাবে না। তবু তার দু’চারটি প্রসঙ্গ তুলে ধরতে চাই:-

আর্থ-সামাজিক অবস্থা: বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা গত কয়েক দশকের চেয়ে যে শীর্ষে অবস্থান করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যেভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে, তার তুলনা হয় না। যদিও সীমিত সম্পদের বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার শতভাগ পূরণ করা সম্ভব নয়, তবু আমরা বলতেই পারি যে, বর্তমান সরকারই দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে সফলতা অর্জন করেছে। এর ফলে আমাদের দেশে এখন ভিক্ষাবৃত্তিসহ সামাজিক নীচুতা বহুলাংশে কমে এসেছে। মানুষ আত্মমর্যাদার প্রশ্নে এখন অনেকটাই সচেতন হয়ে উঠেছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:বাংলাদেশ মূলত গ্রামভিত্তিক দেশ। এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও তাই উন্নত দেশের মতো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য সাফল্যের সঙ্গে বর্তমান সরকার আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। কী গ্রাম, কী শহর, দেশের সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখি, আমাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বিশেষ করে, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ স্থাপনে যে কী কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে, তা সবারই জানা। সারা দেশে এমন অনেক সুযোগ তৈরি করা হয়েছে যাতে মানুষ সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের আরেকটি সাফল্য। এ সেতু দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হয়ে আসছে। ঢাকা শহরে যানজট নিরসনের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। ঢাকায় প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল স্থাপন করার যুগান্তকারী পদক্ষেপও নিয়েছে বর্তমান সরকার। আর এসব সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে

তথ্যপ্রযুক্তি:তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দেশে তথ্যপ্রযুক্তিগত নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে মানুষের নানা বিষয়ে দুর্ভোগ অনেকটাই কমে এসেছে। ঘরে বসেই এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কাজই মানুষ করতে পারছে। একটা চিঠি পাঠানো, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টাকা পাঠানো ইত্যাদির জন্য গ্রামের মানুষকে আর কারও দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না।ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এখন প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ খুব সহজে এবং দ্রুত নিজেদের কাজকর্ম সেরে নিতে পারছে। স্যাটেলাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ সব ক্ষেএেই প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সুবাতাস বইছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে এমন সাফল্য আমাদের মহান বিজয়কে আর ও গৌরবান্বিত করেছে।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য :বিজয় দিবস আমাদের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এ দিনটিতে আমরা পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। অশ্রু আর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পতাকা, গাইছে বিজয়ের গৌরবগাথা। তাই বিজয় দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।প্রতিবছর এই দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দেয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযযাদ্ধাদের কথা, বীর শহীদদের কথা। আমরা অনুপ্রাণিত হই আমাদের দেশের গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মরণ করে। উদ্বুদ্ধ হই অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে।

বিজয় দিবসের পটভূমি

দুই দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। সে ইতিহাসের প্রথম মাইলফলক ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার। এই চেতনা ক্রমে বিকশিত হয়ে স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়। ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯- এর গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে ১৯৭১-এর ৭ মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে স্বাধিকার আন্দোলন চরম শক্তি লাভ করে। বাঙালি জাতি স্বাধীনতা আকাঙ্খায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিরোধ সংগ্রামে। ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর বিজয় ছিনিয়ে আনে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ। করে। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ ঐতিহাসিক ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে জাতীয় ইতিহাসে বিজয় দিবস হিসেবে মর্যাদা পায় দিনটি। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি, পেয়েছি স্বাধীনদেশ সেই শহীদদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের কাজ করতে হবে। তাদের আত্নার শান্তির জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে ভালোবেসে, দেশের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে বঙ্গবন্ধুরর আদর্শে দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বদা সচল থাকতে হবে। তবেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ উন্নয়নের শীর্ষে।

পরিশেষে বলতে চাই, বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশকে আমরা সঠিক পন্থায় গড়ে তুলতে পারিনি। সুতরাং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গঠন করে তুলতে হলে বিজয় দিবসের তাৎপর্য আমাদের অবশ্যই যথার্থভাবে অনুধাবন করতে হবে।আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের ঠাঁই হবে না। আজ প্রতিজ্ঞা হোক যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা সবকর্মে সততার পরিচয় দেব। তা না হলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা আমাদের অভিশাপ দেবে, এই নির্মম সত্য আমরা যেন ভুলে না যাই।এবারের মহান বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।


লেখক : লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test