E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকার বদল নয়, এ নির্বাচন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লড়াই

২০২৩ ডিসেম্বর ২৫ ১১:৩৩:৪৩
সরকার বদল নয়, এ নির্বাচন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লড়াই

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, এই নির্বাচন আদর্শের লড়াই। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থীদের সরকার পরিচালনায় প্রত্যাখ্যান করার উপযুক্ত সময়। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ শাসিত হবে- এই প্রত্যাশা বর্তমান প্রজন্মের।

তরুণ প্রজন্ম এই লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা পরিপন্থীরা নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। সীমিত ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নিদারুণ দুঃখ-কষ্টের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা-পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ এবং দেশের অভ্যন্তরে হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি শুধু অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেনি, মানবতাবিরোধী অপরাধও হচ্ছে।

সাধারণ অর্থে শ্রমজীবী মানুষের কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তাঁরা দেশকে ভালোবাসেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে তাঁরা দেশ স্বাধীন করেছেন। দেশের যেকোনো দুর্দিনে, দুঃসময়ে শ্রমজীবী মানুষই প্রতিবাদী হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন।চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে হরতাল-অবরোধের মতো জনবিচ্ছিন্ন হিংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের জীবন দুর্বিষহ করা মানবতাবিরোধী অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা পরিপন্থী শক্তি নির্বাচন বর্জন করে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বিরোধী শক্তি নানাভাবে নানা পথে জাতীয় নির্বাচনকে অর্থহীন করার চেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করবে। সব শ্রেণি-পেশার ভোটারের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার পরও বিরোধী শক্তি নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অর্থহীন করার চেষ্টা পাকিস্তানিজমে বিশ্বাসী শক্তি করতেই থাকবে। তাদের দেশি-বিদেশি প্রচারমাধ্যম ও ফেসবুক এবং আন্তর্জাতিক লবিস্টদের মাধ্যমে তারা এই কাজগুলো করে থাকে। নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প কিছু নেই; বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে, শাসনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলনের জন্য।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকা বিশেষ প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কোনো দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী অবস্থান গ্রহণ করেন, তাহলে বোঝা যাবে যে তিনি বিরোধী শক্তিকে সহযোগিতা করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল দলীয় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি হলেও ভোটের সময় দেখা যায়, সব প্রার্থীর নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত হয় না। এসব দেখে আমার এক সহকর্মী মন্তব্য করেছিলেন, রাতের দল আর দিনের দল এক নয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল দলের অনেক নেতা পাকিস্তানিজমে বিশ্বাসীদের সঙ্গে গভীর হৃদ্যতা বজায় রাখেন। প্রগতিশীলের ঝাণ্ডা উড়িয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে বিজয়ী করেছেন- এমন উদাহরণ বিরল নয়। প্রশ্ন জাগে, তাঁরা কি সত্যিকার কোনো আদর্শ লালন করেন, নাকি শুধু নিজের লাভ-লোকসান দেখেন? ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচনে ব্যতিক্রম ঘটবে আশা করাই যায়। কারণ দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।

জাতীয় নির্বাচনে ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে নিরাপদে-নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি, ভোটগ্রহণ, ভোটগণনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্ট থাকে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োগকৃত পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করেন, ভোটগণনার কাজ সম্পন্ন করেন। সাধারণত স্কুল, কলেজ এবং মাদরাসার শিক্ষকরা এই দায়িত্বগুলো পালন করে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী শক্তি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে তাদের দলীয় লোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দিয়েছে। এই লোকগুলো কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল আদর্শের পক্ষে কাজ করেন না। তাঁরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম। সময়ে-সুযোগে তাঁরা হুল ফুটান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল যদি মনে করে থাকে যে বিরোধী শক্তির নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করবেন, তাহলে এজাতীয় ভুল থেকে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যায়। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, যাঁদের কখনো রাজনৈতিক দলের বা শক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল, তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা। ১৫ আগস্টের খুনিদের সমর্থক, ২১ আগস্টের বোমা হামলার পরিকল্পনাকারীকে যাঁরা আদর্শ হিসেবে দেখে থাকেন, তাঁদের অবস্থান কি পরিষ্কার নয়? অনেক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পকারীর ছবি বুকে ধারণ করেন। তাঁরা আবার ন্যায়ভিত্তিক শাসনের কথাও বলে থাকেন। অনেকে আবার নিরপেক্ষতার চাদরও গায়ে দেন।

পাকিস্তানিজমে বিশ্বাসী বিরোধী শক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় সক্রিয়। ভেতরে পিসমিল থাকলে বাইরে বিরোধী শক্তির সঙ্গে গভীর হৃদ্যতা থাকে। হৃদ্যতা থেকে প্রণয় বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। ১৫ আগস্টের খুনি এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনাকারীদের যাঁরা আদর্শ হিসেবে দেখে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রগতিশীলদের হৃদ্যতা হলে বোঝা যায় ডালমে কুচ কালা হ্যায়। আদর্শহীন মানুষ বুনো মানুষ। আদর্শকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখা যায় না। এক আদর্শ লালন করে অন্য আদর্শের সঙ্গে এক ঘরে বসত করা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। ২০২৪ সালের নির্বাচনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, ১৫ আগস্টের খুনি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী এবং আগুন-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আপস নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।

গত ১৫ বছরে দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাস-জঙ্গি দমন, আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের ধারার সঙ্গে বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির সমীকরণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা আজ এমন একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে যে জনগণের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার পর নতুন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে গণভবনে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের লাইন পড়ে যাবে কে কার আগে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাবেন। বিএনপির সঙ্গে এখনো যারা ঘুরঘুর করছে তারাও নিজ স্বার্থ রক্ষায় কেটে পড়বে। দুনিয়ার নিয়মই এই, ট্রেন ছাড়ার সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য সহযাত্রীর জন্য প্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করলেও সময় হলে আর কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ট্রেনে উঠে নিজ আসন দখল করে নেয়। ট্রেনও কে উঠল আর কে উঠল না সেটি দেখে না, সময় হলেই ছেড়ে যাবে।
আসুন, আমরা সবাই অগ্নি সন্ত্রাস, অবরোধের নামে সহিংস অচরণ এবং গনতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। নিজেরা হরতাল ও অবরোধের নামে সহিংস আচরণ পরিহার করি। দেশকে এগিয়ে নিতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করে উন্নয়নের ধারা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হই।

লেখক : উপপরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test