E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ হাসিনা হেরে গেলে আমরা হেরে যাই

২০২৪ জানুয়ারি ১০ ১৬:০৭:১৫
শেখ হাসিনা হেরে গেলে আমরা হেরে যাই

চৌধুরী আবদুল হান্নান


শহর, গ্রাম সর্বত্র একই প্রশ্ন ৭ জানুয়ারির পর কী হবে? উত্তরটা এখন আর জটিল নয়; আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে এবং সংবিধান অনুযায়ী আগামী আরও ৫ বছর দেশ শাসন করবে।

অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা একইভাবে জনগণের জানমালের ক্ষতিসাধনসহ সমাজে অস্থিরতা অব্যাহত রাখতে চাইলে, সরকার তা দমন করবে। জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তারা ঠিকই ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাবে, যেমন হারিয়ে গেছে এক সময়ের প্রবল ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ।

বিএনপি ও সমমনাদের একযোগে নির্বাচন বর্জনের ফলে ভোটের মাঠ ফাঁকা হয়ে গেল, গোল দিতে আওয়ামী লীগের কোনো কসরতই করতে হলো না।

এ নির্বাচন যেমন অনিবার্য ছিল, কোনো বিকল্প ছিল না, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলার জন্য তেমনি শেখ হাসিনার বিকল্প আজও তৈরি হয়নি।

আমি যখন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সকালের নাস্তা করি, তখন মনে হয় শেখ হাসিনা আমাদের জন্য কী উপহার দিয়েছেন। পদ্মা সেতু আমাদের কেবল গর্বের বিষয় নয়, সক্ষমতারও প্রতীক।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে স্বজনহারা বেদনাহত লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ের ক্ষত লাঘব করেছেন তিনি। এ কাজ সম্পন্ন করা কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যার পক্ষেই সম্ভব।

তবে এখন আমাদের অতীত সাফল্যের স্মৃতিচারণ নয়, পিছনে ফিরে তাকাতে হবে , অতীতের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করার জন্য।

আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড পরিচালনা করব।”

সরকার পরিচালনার পথ পরিক্রমায় সাফল্য ও ব্যর্থতা দুই-ই থাকে, ভুলভ্রান্তি থাকে। আর যা কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে, তা তো জনগণের সাথেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমরা আশার আলো দেখি, অতীতে কোথায় ভুল হয়েছিল তা বুঝতে তিনি পিছনে তাকাতে চান।

সমস্যা অন্যত্র, সরকার প্রধান তো একা কাজ করেন না, উপদেষ্টা-মন্ত্রীদের পরামর্শ নেন। যতদূর জানা যায়, শেখ হাসিনা সকলের পরামর্শ শ্রবণ করেন কিন্ত সিদ্ধান্তটা নিজেই নেন। সরকারে দু-একজন অসৎ ও অযোগ্য লোকের অনুপ্রবেশ ঘটলে সরকারকেই তার মূল্য দিতে হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় একজন প্রতিমন্ত্রীর ঘুষকান্ড নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে দেড়জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল; লজ্জাজনক ঘটনাটি সরকারকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তিনি সহকারী শিক্ষকপদে নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দিয়ে প্রমান করেছেন যে তিনি ঘুষ খেয়েছিলেন। এমন ঘৃণ্য ঘটনার পরও তার মন্ত্রীত্ব বহাল থাকে, বিচারের আওতায় আনা হয় না।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া কয়েকজন এমপি-মন্ত্রীর হলপনামায় সম্পদের বৃদ্ধি দেখলে চোখ কপালে উঠে; মানুষ বোকা নয়, তারা সব বুঝতে পারে।

এসকল বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ততা মানুষের কাছে কী বার্তা গেল? — আইন সকলের জন্য সমান, এ কথা সত্য নয়। — যারা ক্ষমতাবান ও অর্থশালী, অপরাধ করলেও আইন তাদের স্পর্শ করতে পারে না।

তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিলে বা সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি পুলিশি রেইড করা হলে “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টোলেরেন্স” শ্লোগানের সমর্থনে অন্তত একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হতো।

বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, এমনকি তাঁর চরম শত্রুরাও তাঁকে দুর্নীতিপরায়ণ বলে সমালোচনা করেননি।হাসিনা-পরিবারের কোনো সদস্যের নামেও দুর্নীতির অভিযোগ নেই।

কিন্ত তাতে কী লাভ হলো?

সরকারের ছত্রছায়ায় অবিরাম ঘটে চলা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় কার, এ বিষয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে।

শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে, বিরোধী দলীয় নেতা থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তার জীবননাশের সর্বোচ্চ চেষ্টা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।ঘাতকদের নিশানা থেকে শেখ হাসিনার বেঁচে থাকা সত্যই এক বিস্ময়। তিনি স্মরণ করে দিয়েছেন যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন ততদিন মানুষের কল্যানে কাজ করে যাবেন।

ইতিহাস বলে, দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলে ক্ষমতার মোহ পেয়ে বসে, স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র প্রকাশ পায় এবং সরকার ক্রমান্বয়ে স্বাচ্ছাচারী হয়ে ওঠে।

যুগে যুগে স্বৈরশাসকদের পরিণতি কী হয়েছিল?

ফার্দিন্যান্দ মার্কোস ফিলিপাইনের দশম প্রেসিডেন্ট, রাজত্ব করেন ২ দশকের বেশি সময়। মার্কোস ও স্ত্রী ইমেলদার যৌথ দুর্নীতি আর জনবিরোধী নানা কার্যকলাপের জন্য এক পর্যায়ে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গোপনে দেশ ত্যাগ করেন, হাওয়াই দ্বীপে পালিয়ে যান।

মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি, প্রায় ৪০ বছর ইরান শাসন করেন, তার দীর্ঘ মেয়াদে মূলত সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এক সময় জনগণ ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৮ সালে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, আমেরিকায় আশ্রয় নেন।

ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা এমনই কিন্ত কেউ শিক্ষা নেয় না।অনেক ক্ষেত্রেই বেশি অভিজ্ঞ ব্যক্তি, দুর্নীতিতেও বেশি এগিয়ে; অতি প্রবীণদের সরে গিয়ে নবীনদের জায়গা করে দিতে হবে।

দেশ পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে চাটুকার, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ আর শিক্ষিত কান্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তিদের পরিহার করে সরকারে মেধাবী, সৎ মানুষদের সমাবেশ ঘটালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের বিদ্যমান আস্থা ও বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পাবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের। বিজয়ের প্রতীক শেখ হাসিনা হেরে গেলে আমরাও যে হেরে যাই।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test