E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভেজাল কারবারীদের ধরুন, দেশের মানুষ বাঁচান

২০২৪ জানুয়ারি ৩১ ১৬:১৮:২২
ভেজাল কারবারীদের ধরুন, দেশের মানুষ বাঁচান

মীর আব্দুল আলীম


ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ-ব্যাধি আমাদের পেয়ে বসেছে। হঠাৎ করে কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হার্ড বিকল হচ্ছে, ফুসফুস ঝাজড়া হয়ে যাচ্ছে। ভেজাল আর বিষাক্ত খাবার খেয়ে পঁচে যাচ্ছে আমাদের দেহ। রোগী বেড়েছে; রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে বেড়েছে হাসপাতালও। প্রতিদিন মানুষ লাশ হচ্ছে। আমার পরিবারের কষ্টের কথাটাই আগে বলছি- ক্যন্সারে মারা গেছেন চাচা-চাচী, মামা, শ্বশুর আর ফুফতো ভাই। অচেনা রোগে বাবাকে হারিয়েছি বছর দুই আগে। মা অসুস্থ হয়ে বিছানায়। ৫ বছর আগে ভাইয়ের একটা কিডনি ফেলে দিতে হয়েছে; আরেকটাতে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। মায়ের মতো বড় বোনটা বেশ ভালোই ছিলেন এতো দিন। হঠাৎ শুনি তাঁর ফুসফুসের এমন অবস্থা যে চিকিৎসকের ভাষায় সেটা নাকি ঝজড়া হয়ে আছে, তাঁর হর্টের অবস্থা প্রায় যায়যায়, কিডনিও শেষ পর্যায়ে। এদেশের প্রতিটি পরিবারেই আমার মতো এমন কষ্টের অনেক গল্প আছে।

প্রতিনিয়তই খাবারের সাথে বিষ আমাদের পেটে পরছে। আমরার খাবার খাব, আর সেই খাবার হবে বিশুদ্ধ; বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। এটাতো আমাদের অধিকার। আমরা কি বিশুদ্ধ খাবার পাচ্ছি? মাছে, ভাতে, আমে, জামে, কোথায় নেই বিষ? ক’দিন আগে এক বিখ্যাত কলামিষ্ট তার লেখায় লিখেছিলেন- “আমরা প্রতি জনে; প্রতি ক্ষনে; জেনে শুনে করেছি বিষ পান।” প্রতি দিন আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে কোন এক মাত্রায় বিষ মেশানো আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খাদ্যে ভেজালের শাস্তি ৭ থেকে ১৪ বছর কারাদন্ড। ক’জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বোধ করি একজনকেও না। তাই ভেজালকারবারীরা ভেজাল মিশাতে সাহস পাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজাল নেই বললেই চলে। আমাদের পাশের দেশ ভারত, ভুটানেও ভোক্তা অধিকার আইন খুবই কর্যকর। সেসব দেশে খাদ্যে ভেজাল প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তিও হয়। আর ভেজাল পণ্য বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশে ভেজার খাদ্যের কঠোর আইন আছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঠিকভাবে ফলোআপ করে না। লোক দেখানো অভিযানও চলে মাঝেমাঝে। কেউ ধরা পড়লে আইনে ফাঁকফোঁকড়ে আবার বেরিয়ে যায়। শাস্তি হয় না। তাই তারা ভেজাল মেশাতে সাহস পায়। কঠিন শাস্তি দরকার।

ভেজাল খাদ্যের বিষই আমাদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিচ্ছে। কেবল হাসপাতাল গুলোতে গেলেই বুঝা যায় কত প্রকার রোগই না এখন মানব দেহে ভর করে আছে। আসলে আমরা জেনে শুনেই বিষ খাচ্ছি। না খেয়ে উপায়ইবা কি? তবে উপায় একটা আছে। না খেয়ে থাকলে এ থেকে হয়তো নিস্তার মিলবে। কিন্তু তাতো হবার নয়। তাই আমে, জামে, মাছে, সবজিতে বিষ মেশানো আছে জেনেও তা কিনে নিচ্ছি। আর সেই বিষ মেশানো খাবারই স্বপরিবারে গিলে চলেছি দিনরাত। আমরা যা খাচ্ছি তার অধিকাংশতেই কোননা কোন বিষ মিশানো। তরতাজা মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছি বাসায় সে মাছে হরমোন, অ্যান্টিবায়টিকসহ নানা ক্ষতিতকারক উপাদান রয়েছে। মাংস কিনছি সেটা গরু, ছাগল কিংবা মুরগী সব কিকছুই এখন মোটাতাজা করতে গিয়ে নানা ক্ষতিকর উপাদান তাতে যুক্ত হচ্ছে। দেশী মোরগ মুরগীর নামে বাজার থেকে যা কিনছি তাও দ্রুত বড় করতে ওজন বাড়াতে অ্যান্টিবায়টিকসহ ক্ষতিকর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। চাল কিনছি তা নাকি বিষাক্ত ক্রোমিয়াম যুক্ত। একটু স্বাধের জন্য চিকন চাল খাব তাও মোটা চাল কেটে কেটে নাকি চিকন কওে আমাদেও খাওয়ানো হচ্ছে। শরীর তাজা করতে ফল খাব সেখানেও কোন না কোন বিষ মিশানো। এসব খেয়ে রোগাক্রান্ত হব, আর ঔষধ কিনে খাব এদেশে সে ঔষধেও ভেজাল করা হয়। এসব কষ্টে বাজার থেকে একটু বিষ এনে খাব বিষেও নাকি মহা ভোজাল। মদপানির কথা নাহয় নাই বললাম। ভেজাল মদ খেয়ে যে মানুষ প্রায়ই মরছে তাতো খবরের কাগজে আমরা দেখছিই। এদেশে বিশুদ্ধ খাবার কি তা হলে দুস্প্রাপ্য?

ভেজাল আমাদের জীবনে যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তেল, মসলা, লবণ, মুড়ি, চিনি, মাছ, দুধ, ফলমূল, সবজি, গুঁড়াদুধ, কেশতেল, কসমেটিকস সর্বত্রই ভেজাল। ফলের জুস, কোমল পানীয় এসবের বেশির ভাগই কৃত্রিম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফল প্রথমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়, পরে ফরমালিন দিয়ে প্রিজারভ করা হয়। দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিরিয়ানি, জিলাপি, জুস, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারে সস্তাা দামের টেক্সটাইল গ্রেড বিষাক্ত রং ব্যবহার করে থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাবারে কৃত্রিম রং এবং জুসে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এমনকি আমাদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধও ভেজাল থেকে শতভাগ মুক্ত নয়। খেতে ফলানো চালে, ডালেও ভেজাল। ক্রোমিয়াম নামক বিষ পাওয়া যাচ্ছে ওসবে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং ইথোফেন ব্যবহার করে আম, কলা, পেঁপে, আনারস, বেদানা, ডালিম, আপেলসহ এমন কোনো ফল নেই যা পাকানো না হয়। আবার ১০০/২০০ মি. গ্রা. বোতলজাত প্রভিট (ইথোফেন) বাজারজাত করা হয়- যা সবজির সজীবতা রক্ষা করে। এই প্রকারের কেমিক্যালটি ব্যবহার করে তরি-তরকারিকে দীর্ঘস্থায়ী করা হয়- যা বাজারের সবজির মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শুধু ফলমূল, মাছ আর সবজিতেই নয়- মিষ্টির দোকান হতে শুরু করে মুদিদোকানের নিত্যপণ্য আর মনোহারি প্রসাধনীর এমন কোনো বস্তু নেই যাতে কেমিক্যালের সংশ্রব নেই।

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। এদেশের মানুষরুপী কিছু মানব বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন করে ফেলছে। দেশে ভেজাল দাতার জন্য আইন প্রনয়ণ হয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড? তবে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ভয়ংকর কোন শাস্তির ব্যবস্থা করা না গেলে দেশে ভেজাল সন্ত্রাস কোনভাবেই বন্ধ করা যাবে না। এসব মানব ঘাতক তথা খুনীদের জন্য দ্রুত বিচারের ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই? রাষ্ট্রকে ভেজাল খাদ্য রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে অবিলম্বে। এত মানুষ ভেজাল খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে; আর মারা যাচ্ছে এর ব্যর্থতার দায় নিয়ে রাষ্ট্রকে একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে সরকারকে। এ জাতিকে বাঁচাতে, সুস্থ্য রাখতে এক্ষুনি এই মুহুর্তে প্রয়োজন ভেজালদাতাকে জনসমক্ষে কঠিন শাস্তি দেওয়া।

ভেজালকারবারীরা ইতোমধ্যে ২ কোটি মানুষকে কেবল কিডনি রোগে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে অবলীলায়। এর মধ্যে প্রায় ৫০-৬০ হাজার লোক ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে জীবন ধারণ করছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৫০ হাজার। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। ক্যান্সারসহ কোননা কোন রোগে আক্রান্ত আর আরও ২ কোটি মানুষ। প্রতিনিয়ত ভেজাল দ্রব্য খেয়ে কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাকি ১৪ কোটি মানুষ। এসব তথ্য জনমনে আতংক তৈরি করে বৈকি! কেবল ক্যান্সারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন অন্তত ২৭৩ জনের মৃত্যু হয় বলে খোদ তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী এক সেমিনারে বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রতি বছর আরও প্রায় এক থেকে দেড় লাখ মানুষ এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে এই তালিকায়। মৃত্যুও হয় লাখের কাছে। রোজ মারা যায় ২৭৩ জন।

ক্যান্সার সম্পর্কিত গ্লোবোক্যানের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে ৯১ হাজারের অধিক মানুষই মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল পরিচালক বলছেন প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের উদ্ধৃতি বাংলাদেশে ৬০ ভাগ ক্যান্সার রোগী প্রায় ৫ বছরের মধ্যে মারা যায়। দেশে ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর হার বর্তমানে প্রায় ৮ ভাগ এবং এই সংখ্যা ২০৩০ সালে এটি ১৩ ভাগে উন্নীত হবে। দেশের উন্নয়নের কথা শুনছি, হচ্ছেও। জঙ্গি দমন করেছে সরকার, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে, স্বপ্নের পদ্মায় সেতু হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগীয় শহর এমনকি উপজেলা পর্যায়েও ফ্লাইওভার হয়েছে, দেশের বিভিন্ন নদী পথের ফেরি বদলে সেতু হয়েছে, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ঘটেছে মানব উন্নয়নও। বলতেই হয় বহি:বিশ্বেও দেশের মর্যাদা বেড়েছে। এতসব কাদের জন্য? এদেশের মানুষের জন্যইতো? দেশের মানুষ সুস্থ্য না থাকলে, বেঁচে না থাকলে এসবে ফায়দা কি? মানুষকে সুস্থ্য রাখতে সরকার কঠোর হচ্ছে না কেন? এ ব্যাপারেতো রাষ্ট্রের কোন দুর্বলতা থাকার কথা নয়। তাহলে এ জায়গাটাতে সরকারের এতো কার্পণ্যতা কেন?

কয়েক বছর আগের কথা। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে “নিরাপদ খাদ্য শীর্ষক আলোচনাসভা” চলছে। সে সভায় দেশে তিনজন ক্যাবিনেট মন্ত্রি উপস্থিত ছিলেন, ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ভেজাল বিরোধী মহানায়ক আমার বন্ধুবর মেজিষ্ট্রেট রোকন-উ-দৌলা, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ দেশের অনেক গুণী মানুষ। সৌভাগ্যক্রমে আমি সে সভার অতিথি ছিলাম। দ্বায়িত্ব ছিল মূল প্রবন্ধ পাঠের। শুরুতেই বলছিলাম- “এখানে উপস্থিত আছেন দেশের প্রভাবশালী তিন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, আছেন দেশের বিজ্ঞ নাগরিকগণ। আমরা যেহেতুক এদেশের মানুষ কোননা কোনভাবে প্রতিনিয়ত হয়তো খাবারে বিষ খাচ্ছি। জানিনা আমাদের ভেতরে কোন রোগ বাসা বেঁধে আছে কি না। আমরা কেউ কিডনি কিংবা ক্যান্সার আক্রান্ত কিনা। আল্লাহ মাফ করুক এমনটা চলতে থাকলে সামনে একটা সময় আসবে হয়তো ঘরে ঘরে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী মিলবে। জেলায়, উপজেলায় ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির কথা ভাবতে হবে সরকারকে। এ ভাবনার আগে সরকারকে দেশের মানুষের হাতে নিরাপদ খাদ্য পৌছে দেয়া দ্বায়িত্ব হয়ে পরেছে”। প্রবন্ধের একটুকু পাঠ করতেই সেদিনকার প্রধান অতিথি সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম নড়েচড়ে বসলেন। আয়োজকদের কাছে মাইকি চাইলেন। মাইক হতে নিয়েই বললেন- মূল প্রবন্ধ যিনি পাঠ করছেন মীর আব্দুল আলীম নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করে বলছেন। এদেশের খাদ্য এত অনিরাপদ নয়। আরও বললেন- ভেজাল যতটুকু আছে ফলমুল বেশি করে ধুয়ে খেলেই হয়।” আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে পুরো প্রবন্ধটি পাঠের অনুমতি চাইলাম এবং পুরো প্রবন্ধটি পাঠের পর মন্তব্য আশা করলাম। আমার মূল প্রবন্ধ পাঠের পর সকলের আলোচনার পর্ব। সেদিন মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, রোকোন-উ-দৌলাসহ সকলে ভেজাল খাবারের ব্যাপারে সকলে শঙ্কাই প্রকাশ করলেন।

এরপর কয়েকটা বছর গেছে মাত্র। এখন কিন্তু জেলা এমনকি উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সার হাসপাতাল এবং চিকিৎসার কথা ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। আসলে দেশে যারা লিডিংয়ে আছেন তাদের নিরাপদ খাদ্যের কথা বেশি ভাবতে হবে। সেই ভাবনাটা দেশে বোধ করি একটু কমই আছে। তানা হলে এতো ভেজাল খাবার কেন দেশে? আইন থাকলেও ভেজাল ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? অসাধু ভেজাল ব্যবসায়ীরা কিনা করছে? খাবারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিরিয়ানি, জিলাপি, জুস, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারে সস্তা দামের টেক্সটাইলগ্রেড বিষাক্ত রং ব্যবহার করে থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাবারে কৃত্রিম রং এবং জুসে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এমনকি আমাদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধও ভেজাল থেকে শতভাগ মুক্ত নয়। খেতে ফলানো চালে, ডালেও ভেজাল। ক্রোমিয়াম নামক বিষ পাওয়া যাচ্ছে ওসবে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং ইথোফেন ব্যবহার করে আম, কলা, পেঁপে, আনারস, বেদানা, ডালিম, আপেলসহ এমন কোনো ফল নেই যা পাকানো না হয়। আবার ১০০/২০০ মি. গ্রা. বোতলজাত প্রভিট (ইথোফেন) বাজারজাত করা হয়Ñ যা সবজির সজীবতা রক্ষা করে। এই প্রকারের কেমিক্যালটি ব্যবহার করে তরি-তরকারিকে দীর্ঘস্থায়ী করা হয় যা বাজারের সবজির মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শুধু ফলমূল, মাছ আর সবজিতেই নয় মিষ্টির দোকান হতে শুরু করে মুদিদোকানের নিত্যপণ্য আর মনোহারি প্রসাধনীর এমন কোনো বস্তু নেই যাতে কেমিক্যালের সংশ্রব নেই। মাংসও ভেজাল মুক্ত নয়। অধিকাংশই খামারের গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়াসার ও খাবার সোডা। এতে গরু দ্রুত মোটাতাজা হলেও এর মাংস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব গরুর মাংস খেলে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও মানুষের লিভার ও কিডনি ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন
মাংসও ভেজাল মুক্ত নয়।

অধিকাংশই খামারের গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়াসার ও খাবার সোডা। এতে গরু দ্রুত মোটাতাজা হলেও এর মাংস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব গরুর মাংস খেলে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও মানুষের লিভার ও কিডনি ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, দেশে ল্যাব পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলেও শিশু খাদ্যের অন্যতম উপাদান দুধে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টিতে এখনো গুরুত্ব দেয়নি বিএসটিআই। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন আমলে না নেয়ায় নগরীর ছোট বড় অধিকাংশই দুগ্ধজাত প্রতিষ্ঠানে অবাধে ভেজাল ও বিষাক্ত উপাদানযুক্ত দুধ, চাল, আটা, ডাল, মাছ ও ফলমূলসহ নানা বিষাক্ত খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বছর রমজানের সময় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ভেজাল এবং নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রেতা ও উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে বিষাক্ত খাদ্যের ছোবল থেকে দেশ বাঁচাতে এখনো সময়োপযোগী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। শুধু বাজারই বিষ মেশানো খাদ্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। নামিদামি হোটেল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকানদাররা এ ধরনের খাদ্য দেদার বিক্রি করছে। আর আমরাও যেনে শুনে প্রতিনিয়ত বিষ খেয়ে চলেছি।

যত অনৈতিকই হোক, যতই বিষাক্ত হোক, মানুষ বেঁচে থাকুক আর মরুক তাতে যায় আসেনা এদেশের মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কাছে। তা তাদের কোনো বিবেচনার বিষয়ও নয়। মাছ, ফল, সবজি, দুধ, সব কিছুতেই ফরমালিন মিশিয়ে দীর্ঘদিন টাটকাভাব রাখার জন্য যে কৌশল তা সত্যিই খুই অনৈতিক। মাছ তাজা রাখার জন্য সাধারনত বরফ দেওয়া হয়ে থাকে। এটা বহুকাল ধরে চলে আসছে। বরফ দেওয়া কোনো অপরাধের বিষয় নয়। যেহেতু বরফের চেয়ে ফরমালিনের দাম কম; অল্পতেই কাফি! তাই বরফের বদলে ফরমালিন দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফরমালিনের কার্যকারিতা বেশি বলে বরফেও কয়েক ফোঁটা ফরমালিন মিশিয়ে দেওয়া হয় এখন। তাতে ভেজালটা ধরবার ক্ষমতা নেই। ভাবা কি যায় নৈতিকতার মান কোথায় নেমেছে! আজকাল নাকি কিছু ঠকবাজ ব্যবসায়ী ফরমালিন মেশানো মাছের ওপর কিছু গুড়, চিনি জাতীয় খাবার ফেলে রাখে। তেতে মাছে মাছি এসে বসে। এসব দেখে ক্রেতা ভাবে মাছ ফরমালিন মুক্ত। এভাবে ক্রেতাদের ধোঁকা দেওয়ার কৌশলও তারা আবিষ্কার করছে। ছি! কী সর্বনাশের কথা! জাতি হিসেবে আমরা কত নিচে নেমে গেছি।

কেমিক্যাল একটি সংরক্ষিত ক্ষতিকর পদার্থ। যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে অতি সাবধানতায় বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অধুনা সর্বত্র এর যথেচ্ছ ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে এটা লবণের মতো অতি সস্তা, সহজলভ্য এবং ব্যবহারযোগ্য। আর এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত ভেজাল খাবার খাচ্ছি আমরা। রোগবালাইও হচ্ছে। শরীরে ক্যান্সারের মতো কঠিন ব্যধি বাসা বাঁধছে।

ফরমালিনসহ খাবারে ব্যবহৃত ক্ষতিকারক ক্যামিকেল বিভিন্ন কাজে লাগে। ক্ষেত্র বিশেষ এটা দরকারিও। তাই আমদানি একেবারে নিষিদ্ধ করার উপায় নেই। তবে আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমদানিকারক ও ক্রেতাদের ওপর নজরদারি রাখতে হবে। ফরমালিন বা অনুরূপ রাসায়নিক দ্র্রব্যে বিক্রয় ও ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে।

দেশে ল্যাব পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলেও শিশু খাদ্যের অন্যতম উপাদান দুধে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টিতে এখনো গুরুত্ব দেয়নি বিএসটিআই। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন আমলে না নেয়ায় নগরীর ছোট বড় অধিকাংশই দুগ্ধজাত প্রতিষ্ঠানে অবাধে ভেজাল ও বিষাক্ত উপাদানযুক্ত দুধ, চাল, আটা, ডাল, মাছ ও ফলমূলসহ নানা বিষাক্ত খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বছর রমজানের সময় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ভেজাল এবং নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রেতা ও উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে বিষাক্ত খাদ্যের ছোবল থেকে দেশ বাঁচাতে এখনো সময়োপযোগী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। শুধু বাজারই বিষ মেশানো খাদ্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। নামিদামি হোটেল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকানদাররা এ ধরনের খাদ্য দেদার বিক্রি করছে। আর আমরাও যেনে শুনে প্রতিনিয়ত বিষ খেয়ে চলেছি। ভাবা কি যায় আমাদের নৈতিকতার মান কোথায় নেমেছে? ছি! জাতি হিসেবে আমরা কত নিচে নেমে গেছি। দেশের মানুষকে আগে সুস্থ্য রাখতে হবে। ভেজালমুক্ত খাদ্য মানুষের হাতে তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। সরকারকে জনগনের জন্য ভেজাল মুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই সুস্থ্য সবল সোনার দেশ। চাই সুস্থ মানুষ।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test