E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম এবং আমাদের ভাবনা

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৮:০০:০১
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম এবং আমাদের ভাবনা

রহিম আব্দুর রহিম


একটি জাতির স্বপ্ন নিহিত  ওই জাতির পাঠক্রমে। যেখানে লোকায়ত থাকে শিক্ষার্থীকে শিখতে সাহায্য করা এবং তাকে পরিপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সকল কলা কৌশল। আপনার স্কুলটি কোন দেশ বা জেলায় অবস্থিত তা বিবেচ্য নয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের ফলাফল শুরু হবে একটি দৃঢ় এবং টেকসই পরিকল্পনা মধ্য দিয়ে। 

বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি এমন একটা পদ্বতি, যে পদ্ধতি দীর্ঘস্থায়ী হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঘিরে যাপিত জীবন ব্যবস্থায় গেড়ে বসা সকল প্রকার নেতিবাচক কর্মকান্ড,চিন্তা-ভাবনার আমুল পরিবর্তন ঘটবে।এই শিক্ষা পদ্বতি সকল ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে থেকে একজন ভাবী প্রজন্মকে মানবিক গুণাবলি সমৃদ্ধি স্বচ্ছ একজন মানুষ হিসাবে রূপান্তরিত করবে। যা কিনা ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, সর্বোপরি রাষ্ট্রের মূল যন্ত্রের শ্রেষ্ট সহায়ক হিসাবে পরিগনিত হবে।

বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে 'শেখা' এবং 'শেখানো' সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে সক্ষম। এই শিক্ষায় একটি জাতির সংস্কৃতি এবং ওই জাতির পরিচয় তৈয়ারের দিক নির্দেশনা যেমনটা রয়েছে; তেমনি করে তার প্রতিফলন ঘটানোর বহুবিধ দরজা উম্মুক্ত রয়েছে। অপূর্ব শিক্ষা পদ্বতি! প্রচলিত শিক্ষা পদ্বতিতে পরস্পরের সহযোগিতা ছিল অনুপস্থিত। বর্তমান পদ্বতিতে সহযোগিতার সকল দরজা খোলা। শিক্ষকরা একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। এই শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকালীন তুলনামূলকভাবে আর্থিক সাশ্রয় ঘটবে।

বর্তমান শিক্ষায় পরিমাপযোগ্য লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য স্থির করণেরও পরিপূরক। জরাজীর্ণ এখনটি পুরাতন পদ্ধতি থেকে শিক্ষাকে নতুন পদ্ধতিতে আনা হয়েছে। আগে, শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুঝে কিংবা না বুঝেই সংশ্লিষ্ট বিষয় মুখস্থ করে রাখত। যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য যথেষ্ট কল্যাণকর নয়। বর্তমানে পদ্ধতিতে যা হাতে-কলমে শেখার উপর জোর দিচ্ছে। ফলে একজন শিক্ষার্থী বাস্তবিক কাজের মাধ্যমে শেখার এবং তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারছে। শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে, আলোচনা করে, খেলার ছলে, অভিনয়ের আদলে, সশরীরে কর্মকৌশলে যোগদান করে টেকসই শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান শিক্ষায় একজন শিক্ষার্থী শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনেই শুধু পারদর্শীই হবে না, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী বিষয়টির সম্পাদনা করার যোগ্যতা অর্জন করবে। বর্তমান শিক্ষায় উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন হলো,আগে পাঠদানে ক্লাসে শিক্ষক এর ভূমিকা ছিল প্রায় আশি শতাংশ, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ। শিক্ষক বলে যেতেন, বিশ্লেষণ করতেন; শিক্ষার্থীরা হা- করে শোনতো।বর্তমানে শিক্ষক ক্লাসে শুধুমাত্র দিক নির্দেশকের ভূমিকা থাকবেন, শিক্ষার্থীরাই সবকিছু করবে। অর্থাৎ 'শিক্ষক-কেন্দ্রিক' পদ্ধতি পরিবর্তন হয়ে 'শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক' পদ্ধতি চালু হয়েছে। যা পূর্ববর্তী পাঠ্যক্রমে ছিলো, শিক্ষক জ্ঞান প্রদানে, শেখার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতেন। নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে থেকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং স্ব-নির্দেশিত শিক্ষায় উৎসাহিত হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা নিয়ন্ত্রণে নিতে এবং চলমান ইন্টারেক্টিভ শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

পুরাতন পাঠ্যক্রমকে শিক্ষার্থীদের হয়তবা যথেষ্ট হতাশায় কাটাতে হতো, সেখানে নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীরা আনন্দঘণ পরিবেশে শেখবে, পড়বে এবং নিবেদন করবে।নতুন শিক্ষাক্রম অপূর্ব এক অনন্য পথ!

নতুন শিক্ষাক্রমে রয়েছে, উদ্ভাবনী শিখন পদ্ধতি, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং ইন্টারেক্টিভ কার্যক্রমের সমাহার। যার মাধ্যমে ইতিবাচক শিখন পরিবেশ তৈয়ার হওয়া সম্ভব। যা শুধুমাত্র জ্ঞান ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায় না, বরং জ্ঞান অর্জনে প্রকৃত আগ্রহও জাগিয়ে তুলবে।

পুরনো পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা হয়তো ব্যবহারিক দক্ষতাগুলোর দিকে যথাযথ মনোযোগ দেয়নি। নতুন শিক্ষাক্রম নিশ্চিত করে যে, শিক্ষার্থীরা প্রকৃত কর্মের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে। এতে প্রকল্প, সিমুলেশন, সমস্যা সমাধান, সময় ব্যবস্থাপনা, জনসমক্ষে কথা বলা, নতুন পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ায়ে নেওয়া, টিমে কাজ করা, গবেষণায় দক্ষতা, সম্পাদনা ও প্রুফরিডিং, বা অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে। যেসমস্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা তাদের ভবিষৎ পেশার সাথে সম্পর্কিত।

নতুন শিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সাথে সাবলীলভাবে কথা বলা, একসাথে কাজ করা এবং চিন্তাভাবনায় সমন্বয় করার মত সফট স্কিলের দিকে অগ্রসর হবে। যে দক্ষতা বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার কর্মস্থলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অপূর্ব! এই শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, কেউ বলছেন, 'ছেলে মেয়েরা বাড়িতে পড়াশোনা করছে না, 'কেউ বলছেন, "পরীক্ষার না থাকায় লেখাপড়া লাটে উঠছে," আবার কেউ বলছেন, "পড়াশোনা রেখে কিসব রান্না-বান্না শেখাচ্ছেন," যারা বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বির্তকের ঝড় তুলেছেন, তারা নতুন পদ্ধতির ভেতর বাহির খতিয়ে দেখেছেন কি সন্দেহ আছে। আমি অধ্যাপনা পেশায় জড়িত। নতুন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আমিও কম মন্তব্য করি নি। মোট ৭টি স্কুলের হাতেগোনা একুশজন সুদক্ষ শিক্ষকদের সাথে নতুন পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছি, তাদের কাছে বুঝতে চেয়েছি পদ্ধতিটির ইতি বা নেতিবাচক দিকগুলো। সবাই বলেছেন, এটা আমাদের মত দেশের জন্য নয়। কেনো, কি কারণে? তা তাঁরা খোলসা করতে পারিনি। সম্ভবত মাস্টার ট্রেইনারদের দুর্বলতার কারণে এমনটি হতে পারে। সর্বোপরি দেশের প্রখ্যাত একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের এক নবীন শিক্ষক এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি, আলোচনা,সমালোচনা, ব্যাখা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে দীর্ঘক্ষণ।

জানতে চেয়েছিলাম শিক্ষা অর্জনের তিন সূচক 'বলতে পারবে, 'পড়তে পারবে, 'লেখতে পারবে?' এগুলো কি নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে আছে কি না? সে স্পষ্ট করেছেন, আগের তুলনায় এখন এই তিনটি সূচকের প্রসার তো হয়েছেই৷ সাথে আরও একটি সূচক যুক্ত হয়েছে, তা হলো 'করতে পারবে।' অর্থাৎ নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী, "বলতে পারবে,পড়তে পারবে,লেখতে পারবে সর্বোপরি করতে পারবে।" তাঁর কাছে আরও জানতে চেয়েছিলাম 'পরীক্ষা নেই,' 'শিক্ষার্থীরা বাসা বাড়িতে' পড়ার টেবিলেও নেই কেনো?' তিনি বলেছেন, "পরীক্ষা নেই মানে, এখন তো ধারাবাহিক মূল্যায়ন হচ্ছে।আগের চেয়ে এখন পরীক্ষা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্লাসেই পড়া শেখানো হচ্ছে। এখন আর মাথা ঝুঁকে, প্রাইভেট পড়ে কিংবা মুখস্ত করার মত শিক্ষার দরকার নেই।" নতুন শিক্ষা পদ্ধতি গবেষণালব্ধ টেকসই পদ্ধতি। এরপরও এনিয়ে কেনো বির্তক! তা গবেষণার দাবীদার।

লেখক : শিক্ষক ও শিশু সাহিত্যিক।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test