E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাবিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : ধর্ষকদের উচ্চ ডিগ্রী দরকার!

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৬ ১৭:২৮:৫৪
জাবিতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : ধর্ষকদের উচ্চ ডিগ্রী দরকার!

মীর আব্দুল আলীম


ধর্ষকদের উচ্চ ডিগ্রী দরকার! তাই তারা ধর্ষণের জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বেছে নিয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি  রাতে জাবির কয় ছাত্র স্বামীকে বেঁধে রেখে তাঁর স্ত্রীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ করেছে। ধর্ষণ কর্মের ভিন্ন স্বাদ, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই হয়তো শিক্ষার্থী ধর্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিয়েছে। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক কাজ, মাদকের সংশ্লিষ্টতা এবং এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সম্পৃক্ততা দেশ ও জাতির জন্য সূখকর খবর নয়। এ ঘটনা দেশ ও জাতির জন্য চরম অবমাননাকর।

দেশে ধর্ষণ খুব বেশি হচ্ছে। অসহনীয় মাত্রায় নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনায় সঠিক বিচার হচ্ছে না বলেই দেশে ধর্ষণ বেড়েছে। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধর্ষণের খবর পাই তা, প্রকৃত ধর্ষণের বোধ করি অর্ধেকও না। ধর্ষিতা হয়ে প্রকাশ করে ক'জন? এ লজ্জার কথা জানায় কি করে অবলা নারী? তাছাড়া ধর্ষণের বিচার ক'টা হয় যে নারী ধর্ষণ হলে থানা আদালত পর্যন্ত যাবে? ধর্ষণের পর বিচার চাইতে গিয়ে যা হয় তাতো নির্যাতন আর গণধর্ষণ!

পত্রিকান্তে প্রকাশ, গণধর্ষণের স্বিকার ওই নারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পুলিশের ভাষ্যমতে, ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে কৌশলে ওই নারী ও তার স্বামীকে ক্যাম্পাসে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর স্বামীকে একটি কক্ষে আটকে রেখে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সহযোগী মামুন। মামুন ভুক্তভোগী পরিবারের পূর্বপরিচিত ছিলেন। তার কথায় এই দম্পতি ক্যাম্পাসে এসেছিলেন।

ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে, মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহ পরানের সনদ স্থগিত এবং মো. মুরাদ হোসেন, সাগর সিদ্দিকী, সাব্বির হাসান সাগর ও হাসানুজ্জামানের সনদ স্থগিত এবং সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া তাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মোস্তাফিজুরকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাময়িক বহিষ্কার এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা নারীর পরিবারের সদস্যদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক চরম নিরাপত্তাহীনতার শংকা তৈরি করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী গণধর্ষণের আগের একটি ঘটনা। ঘটেছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায়। খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক তরুণী। ২৮ জানুয়ারী রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হওয়া ঐ তরুণী ও তাঁর মাকে অপহরণও করার হয়। তাদের হাসপাতাল ফটক থেকে মাইত্রেবাসে তুলে নিয়ে এমন ভয়ভীতি দেখানো হয় যে তারা পরে এ ঘটনা অস্বিকার করে। ধষর্ণের প্রায় প্রতিটি ঘটনা এমনই হয়। ভয়ে মুখ খুলতে চায় না ধর্ষিতা ও তার পরিবার। কথা না বলার চাপ মেয়েদের উপর। মুখ খুললেও ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষিত হলে শ্লিলতাহানীর শিকার হলে পরিবার থেকে বলা হয় চুপ থাকতে হবে, নইলে মান যাবে। আবার মেয়েদেরও পুলিশের উপর আস্থা থাকে না। তাই বিচারহীনসাংস্কৃতি নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ধর্ষণের অনেক তথ্য উপাত্ত প্রকাশিত আছে, কিন্তু সঠিক কোন পরিসংখ্যান বা তথ্য আমাদের নেই। এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে কোথাও না কোথাও প্রতি ২১ মিনিটে একটি করে ধর্ষণকান্ড ঘটে। প্রকৃত সংখ্যাটা সম্ভবত এর চাইতে বহু গুণ, কেননা ৯০ শতাংশ ধর্ষণই লোকলজ্জায় কিংবা পরিবারের অমতে গোচরে আনা হয় না। এই বিপুল পরিমাণ ধর্ষণের যারা শিকার, তাদের ১৮ শতাংশই নাবালিকা, অনেকেই চার-ছয় বছরের শিশু। সর্বোপরি নথিভুক্ত ধর্ষণকান্ডগুলির ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষকরা ধর্ষিতাদের আত্মীয়, স্বজন, নিকট প্রতিবেশী বা পূর্বপরিচিত। আর এখানেই সামাজিক ভরসা ও বিশ্বাসের সনাতন, সযত্নলালিত ধারণাগুলি ভাঙ্গে পড়ার প্রসঙ্গটি উঠে পড়ে। দেহরক্ষীর হাতে নিহত হওয়ার মধ্যে যেমন বিশ্বাসহানি রযেছে, তেমনই বিশ্বাসভঙ্গের ব্যাপার আছে আত্মজনের হাতে যৌননিগ্রহের ঘটনায়ও। যাকে রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত, তাকেই হত্যা করা যেমন কৃতঘ্ন বিশ্বাসঘাত, আত্মীয়তা কিংবা পূর্বপরিচয়ের সূত্রে অর্জিত বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ করাও সমান নারকীয়তা।

শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ধর্ষণের পরিণতিই এক ও অভিন্ন হলেও এ ধরনের ধর্ষণকে ইদানীং ‘পারিবারিক হিংসা’র পর্যায়ভুক্ত করা হয়। পরিবারের ভিতরে পুরুষ আত্মীয় ও গুরুজনদের দ্বারা বা পরিবারের বাহিরে নিকট প্রতিবেশীদের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হওয়া মহিলারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের দুর্গতির কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না, পুলিশের কাছে অভিযোগ করা তো দূরস্থান। কারণ পরিবারই সেই নিগ্রহ-লাঞ্ছনার কথা চেপে যায়, লাঞ্ছিতাকে পরিবারের সামাজিক মর্যাদাহানির ভয় দেকিয়ে চুপ করিয়ে রাখে, প্রায়শ তাাদের দূরে কোথাও পঠিয়ে দেয়। তাতে পরিবারের ‘মর্যাদা’ অক্ষত থাকে, ধর্ষক পুরুষ আত্মীয়ও নিষ্কলঙ্ক থাকে যায়। আর এখানেই ভিতরে ভিতরে চলতে থাকে পিতৃতন্ত্রের লীলা, নারীর প্রতি বৈষম্যের অনুশীলন। পরিবারের গন্ডির মধ্যে শুরু হওয়া এই অনুশীলনই বৃহত্তর সমাজেও ছড়িয়া পড়ে।

ধর্ষিতা ধর্ষণের স্বীকার হননা কেবল; ধর্ষিতাকে নিয়ে আজে বাজে কথাও রটনা করা হয়। ধর্ষকদের পক্ষ নেওয়া ক্ষমতাধরগণ ধর্ষিতা নারীর পোশাক-আশাক, ‘স্বভাব-চরিত্র’, একাকী, ‘অসময়ে’ পথে চলার দুঃসাহস নিয়ে কটাক্ষ করে কার্যত ধর্ষকদের অপরাধ লঘুকরতে সচেষ্ট হন। তখন তাতে ধর্ষিতা নারীর মর্যাদা ও সম্মান ভূলুণ্ঠিতই হয় বটে! পুলিশ যখন ধর্ষণকারী দুর্বৃত্তের সাথে ধর্ষিতা মহিলার ‘আগে হতেই সম্পর্ক থাকা’র অজুহাত দেয়, তখনও দুষ্কৃতী-দমন অপেক্ষা তার শিকারদের দোষ ধরার কদর্য চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটা ধর্ষকদেও প্রশ্যয় দেয়ার সামিল। এ কারণেই ধর্ষণ বাড়ছে।

যৌন নির্যাতন করছে জনপ্রতিনিধি, কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারি, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী,আয়া,বুয়া; গৃহবধু। রাস্তা ঘাটে, চলন্ত বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে ঘটছে এই পৈচাশিক ঘটনা। কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। যৌন হয়রা! ধর্ষণের পর খুন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে থাকছে না বয়স, স্থান, কাল, পাত্রের ভেদ। দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ব্যভিচারের চূড়াান্ত- প্রকাশ্য ধর্ষণকামিতা। রাত-বিরাতে নয় শুধু, দিনদুপুরে প্রকাশ্য ধষর্ণের ঘটনাও ঘটছে। শুধু ধর্ষণই নয়, রীতিমতো গণধর্ষণ হচ্ছে। অপসংস্কৃতি আর ভিনদেশীসংস্কিৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকে কতটা ক্ষতবিক্ষত করছে তা হালআমলের ধর্ষণের চিত্র দেখলেই বেশ টের পাওয়া যায়। বাসের ভেতরে ধর্ষিত হচ্ছে মেয়েরা,শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, এমপির কথিত এপিএসর দ্বারাও এদেশে ধর্ষিত হচ্ছে যুবতী। এই হলো বাস্তবতা। তবে এটি নতুন কোন বিষয় তা নয়; বলা যায় আমাদের সমাজ বাস্তবতার এক করুন চিত্র। কছু মানুষরূপী নরপশু সভ্যতার ভাবধারাকে পাল্টে দিতে হাযেনার নখ মেলে বসেছে। অপরাধের সাজা না হলে এ জাতিয় অপরাধ বাড়ছে।

যৌন হয়রানি শুধু নারীর বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ। বিশ্বের যেসব দেশে ধর্ষণ বাড়ছে এশিয়ার মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশে ধর্ষণের অপরাধ বেশি হয়ে থাকে। খুন, ধর্ষণ আজকাল এই আধুনিক পৃথিবীর নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা হলেও আমাদের দেশে এর মাত্রা যেন সব বিচিত্রতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞকদের মতে, ধর্ষণের এই ব্যাপকতার পিছনের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, ইসলামী মূলবোধ মেনে না চলা এবং অপরাধীর শাস্তিনা পাওয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা ও তাদের তৎপরতাও দায়ী। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতনকারীরা বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যায়।

১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ বিশেষ বিধান আইন করা হয়। পর্যায়ক্রমে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন করা হয়। ২০০৩ সালে এ আইন আবার সংশোধন করা হয়। ধর্ষণের শাস্তি কত ভয়ানক, তা অনেকেই জানেন না। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯ ধারায় ধর্ষণের বিচার হয়। এ আইনে ধর্ষণের সর্বনিম্ন শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ করা হয়েছে। আইনের ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে, তাহলে সে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডীত হবে। এ ছাড়া অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। ৯(২) উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ-পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডীত হবে। অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডীয় হবে। উপধারা ৯(৩)-এ বলা হয়েছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে ওই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যু দন্ডেদন্ডীত হবে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করে, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডেদন্ডীত হবে ও এর অতিরিক্ত অর্থদন্ড হবে। ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ডেদন্ডীত হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডিতদ হবে।

এদেশে ধর্ষণের পাকাপোক্ত আইন আছে ঠিকই কিন্তু আইনেকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আইনের যারা প্রয়োগ করবেন তারা ঐ আইনের পথে হাটেন না। কখনো অর্থের লোভ কখনোবা হুমকি ধমকিতে শুরুতেই গলদ দেখা দেয়। মামলার চার্যশিট গঠনের সময় ফাক ফোকর থেকে যায়। তাই শেষে রায়ে ধর্ষিত কিংবা নির্যাতনের শিকার লোকজন সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হন। ধর্ষণ যেহেতুক মস্ত অপরাধ এসব মামলাগুলোর ক্ষেত্রে চার্যশিট গঠনের সময় কোন মেজি্েট্রটে অথবা পুলিশের কোন পদস্থ কর্মকর্তার নজরদারিতে করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে চুড়ান্ত রিপোর্টেও সময় ভিক্টিমের স্বাক্ষাত গ্রহন করা যেতে পারে। তাতে করে গোপনে চার্যশীট দাখিলের ফলে যে জটিলতা তৈরি হয় তা কমে আসবে।

ধর্ষণ রোধের উপায় কি? দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলেন- ভাল মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয় না ; পোশাকের সমস্যার কারনে মেয়েরা ধর্ষিত হয়। অনেকে আবার বলেন বেহায়াপনা করে স্বল্প কাপড়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে ধর্ষণ হবে না তো কি হবে? আর কোন আলেম বলবেন- ‘পর্দা প্রথায় ফিরে আসলে ধর্ষণ আর হবে না।’ আবার অনেকে বলবেন- ‘কঠোর শাস্তি দিলে ধর্ষন কমবে।’ আমি এসব কোনটার পক্ষেই নই। সেই মক্কা-মদিনায়র আরব দেশে পর্দা মানা হয় সেখানেও তো ভুরি ভুরি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। তাদের শাস্তি প্রকাশ্য শিরচ্ছেদ। কৈ সেখানেও তো ধর্ষণ বšধ হচ্ছে না। আমাদের দেশ থেকে যেসব অসহায় নারী আরব দেশে যান তাদের আনেকেইতো দেশে াক্ষত ফিওে আসতে পারেন না। তারা কোননা কোন ভাবে নারী নির্যাতনের শিকার হনই। আমাদেও দেশের নারী শ্রমিকরা আরব দেশে গিয়ে পর্দায় থেকেও কেন যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন? যৌন নির্যাতন বন্ধে আগে মানুষিকতা বদলাতে হবে।

নারী দেখলেই কেন ধর্ষণ করতে হবে? সব দোষ নারীর? সব দোষ পাশাকের ? এমন মানোষিকতা কেন আমাদের। ধর্মে নারীকে পর্দা করতে বললেও পুরুষদেরও চোখ অবনত রাখতে বলা বয়েছে। তবে শুধু নারীর দোষ কেন? নারীর রুপ যৌবন পুরুষকে মোহিত করবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে তার উপর পশুর মতো ঝাপিয়ে হতে হবে কেন? ধর্ষণ কমাতে হলে আগে পুরুষের মাঝে মানুবিক গুণাবলী জাগ্রত করতে হবে। ধর্ষণ রোধে আমাদের সচেতন হতে হবে । অবাধ মেশামেশার সুযোগ, লোভ-লালসা-নেশা, উচ্চাভিলাষ, পর্নো সংস্কৃতির নামে অশ্লীল নাচ-গান, যৌন সুড়সুড়িমূলক বই-ম্যাগাজিন, অশ্লির নাটক-সিনেমা ইত্যাদি কামোত্তেজনা মানুষকে প্রবলভাবে ব্যভিচারে প্ররোচিত কওে তা বর্জন করতে হবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। সময় মত বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা ও যৌন শিক্ষার গ্রহন করতে হবে। বাজে সঙ্গ ও নেশা বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি নারীকেও শালিন হতে হবে। যৌন উত্তেজক পোষাক বর্জন করতে হবে। প্রবল কামোত্তেজনা মানুষকে পশুতুল্য করে ফেলে। ব্যাপকভাবে কামোত্তেজনা সৃষ্টিকারী উপকরণগুলোর কাছাকাছি চলে গেলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আর কোনো উপায়ই থাকে না।

ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে কেবল আইনের কঠোর প্রয়োগও কোনো কাজ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যার যার পারিবারিক বলয়ে ধর্মানুশীলনে একনিষ্ঠতা, পোশাকের শালীনতা, অশ্লীল সংস্কৃতিচর্চার পরিবর্তে শিক্ষণীয় বিনোদনমূলক ও শালীন সংস্কৃতি চর্চার প্রচলন নিশ্চিতকরণ। আর এটা করতে হলে কেবল রাজনৈতিক বক্তৃতা, আইনের শাসন প্রয়োগ বা ফতোয়া দিলেই চলবে না, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যার যার অবস্থানে থেকে স্কুল-কলেজ মাদরাাসা-মক্তব-মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সমাজের অন্য বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্ব্বোপরি কঠোর শাস্তির বিধান ও প্রয়োগ নিশ্চত করতে হবে। নারীকে মর্যাদার আসনে বসাতে হবে। পর নারীকে কখনো মা, কখনো বোন, কখনোবা মেয়ে ভাবতে হবে। তাদের উপর লুলুপ দৃষ্টি নয়; মায়ামমতার দৃষ্টি দিতে হবে। তবেই ধর্ষন কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test