E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নাই..

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৬:০৪:১৫
নাই..

মীর আব্দুল আলীম


শুধু নাই আর নাই। এদেশের নারীরা ক্ষমতায়; সমতায় নাই। উন্নত রাস্তাঘাট আছে; রাস্তায় শৃঙ্খলা নাই; হরিদ্বারে মানুষের জীবন যাচ্ছে সড়কে। মানুষের জীবনের মূল্য যেন নাই। ব্যবসায় সততা নাই; সিন্ডিকেট দখল করে আছে ব্যবসা। খাবারে বিষ; কোথাও ফ্রেশ খাবার নাই। মাদক নিয়ন্ত্রণ নাই। মানবতা নাই। চিকিৎসায় বিশৃঙ্খলা; অর্থ নাই তাই গরিবের চিকিৎসা নাই। শিক্ষাতেও গড়বড়; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী আছে; আগের শিক্ষার মান নাই। ধর্ষকরা বসে নাই; সর্বোচ্চ বিদ্যা পিঠেও ধর্ষিত নারী তাই। শিক্ষক আছেন; শিক্ষকদের নীতি নৈতিকতা নাই। মায়া মমতা নাই; জন্মদাতা পিতা মাতার মর্যাদা নাই। এদেশে সংবাদমাধ্যমের অভাব নাই; ভুয়া সাংবাদিকে ভরা দেশ তাই। সাংবাদিকতা আগের জায়গায় নাই। নাই আর নাই। এ দেশটাতে নাই এর যেন শেষ নাই।

দ্রব্যমুল্য উদ্ধগতি বলতেই হয় গরিব, মধ্যবিত্ত কেউ আর ভালো নেই, সুখে নেই। সম্প্রতি ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘ চাল তেলসহ সকল পণ্যেও দাম উর্দ্ধমুখী : জীবনের চাকা ঘোরাতে পারছে না নিম্ন আয়ের মানুষ’ এমন শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের নানা কথা লেখা আছে প্রতিবেদনটিতে। ‘কেমন আছেন?’ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে রিক্সা চালক মিজানের সাফ কথা, ‘বালা নাইক্কা’। রিক্সার চাকাতো ভালই চলছে, আমরাও তো ভাড়া ঠিকঠাক মতই দিচ্ছি বলতেই- ছন্দে ছন্দে একদমে রিক্সা চালকের উত্তর- ‘চাল-তেল, আটা-ময়দার দাম আকাশ ছোঁয়া, কী কইরা ঘুরাই জীবনের চাকা।’ সেদিন কঠিন সত্য কথা বললেন- রমনার চা বিক্রেতা সাইফুল। ‘বালা থাহনের কোনো পথই খোলা নাই। পর্তেকদিন চরকির মতন ঘুইরা চা বিক্রি কইরা যা আয় অয় তা দিয়া জীবনের চাকা ঘোরাইতে পারি না ‘ দ্রব্যমূল্য নিয়ে এমন অভিযোগই এখন সবার।

এদেশে নারী ক্ষমতায় কিন্তু সমতায় নাই। বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রেই নারীর অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নারী ভুমিকা রাখছে। এদেশে নারী রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় এগিয়ে কিন্তু অধিকারে পিছিয়ে। নারীদের ইবিাচক অগ্রগতি আছে। সেই অগ্রগতি এখনো নারীকে পুরোপুরি স্বাধীন করতে পারেনি। নারী এখনো ঘরের মধ্যে বন্দি। বিচার, সহিংসতা, নির্যাতন প্রশ্নে নারী এখনো অবহেলার শিকার। নারীর অর্জন এমন কেন?

সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর অগ্রগতি বড় ভূমিকা রাখলেও নারীর অবস্থা আজও তেমন বদলায়নি। ঘরে বাইরে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশের ৬৫ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করেছেন, ৩৫ শতাংশ অন্য কারো দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের একটি বেসরকারী সংস্থার পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, গত তিন বছরে পনের বছরের কম বয়সী কিশোরীরা বেশী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসময়ে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৪৩ শতাংশের ওপর ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে এবং ২৭ শতাংশ নারী স্বামী, শ্বশুড় বাড়ির লোকদেও হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। নারী নির্যাতনের স্বিকার হয় কিন্তু বিচার হয় না। বিচারহীন সংস্কৃতির কারনে দেশে নারী নির্যাতন বাড়ছে।

দেশে কিন্তু নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন আছে; প্রয়োগ নেই। রয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। হুঙ্কার দেয়া হচ্ছে নারী সমতার। তা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না নারী নির্যাতন, ব্যভিচার, হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দেশে এ জাতিয় নারী নির্যাতন এবং যৌন হয়রানীর ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। নিত্যই ব্যভিচার ও ধর্ষণকামিতার ঘটনা ঘটছে। রোধ হচ্ছে না। নির্যাতিত হচ্ছে স্কুল ছাত্রী, রোগী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ। কেউ বাদ যাচ্ছে না। নিজ গৃহে, হাসপাতালে, রাস্তা ঘাটে, চলন্ত বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে ঘটছে এই নির্যাতনের পৈচাশিক ঘটনা। নারী নির্যাতন করছে স্বামী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারি, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা এমনকি পীর-মুরশিদরা।

আমরা পুরুষরা প্রায়ই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়েন। মঞ্চ সেমিনারে বলেন, নারীরা মায়ের জাতি, নারী নির্যাতন করবেন না। মাইকে গলা ফাঁটিয়ে বক্তৃতা করেন-“বউ পেটানো লোক আমি দু‘চোখে দেখতে পারি না।” এজাতিয় ভদ্রলোকেরা বিচার সালিশে নারী নির্যাতনকারী পুরুষ পেলে বেশ শায়েস্তাও করেন। এ বিষয়ে নসিহত করেন; হাদিস কোরানের আলোকে পরামর্শ দেন-“বউ ঘরের লক্ষী; কখনো বউ পেটাবেন না। আল্লাহ নারাজ হবেন।” কিন্তু নিজ ঘরে ঢুকলেই এদের অনেকেই এক অন্য মানুষ। বউয়ের কাছে এলেই মুখোশ খুলে যায় ওদের। আমাদের সমাজে নেতৃত্বদানকারী এমন পুরুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভুঁড়ি ভুঁড়ি। কি রাজনৈতিক, কি ডাক্তার, উকিল, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক কেউ বাদ নেই এ তালিকা থেকে। তারা বিবেক সম্পন্ন উঁচু তলার মানুষ তবুও এ কর্মটি করেন নির্লজ্জভাবে। যারা জনগনকে সচেতন করবেন; নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবেন; তারাই যদি নির্যাতন করেন তাহলে নারী নির্যাতন বন্ধ হবে কি করে? নির্যাতিত নারীরা যেখানে আইনী আশ্রয় খোঁজেন সেখানেও সমস্যা।

এ ব্যাপারে একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রসংঙ্গ না আনলেই নয়। তিনি কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের এক থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঐ ওসি সাহেবের স্ত্রীরর দিন কাটতো ওপরওয়ালাকে স্মরণ করে, যেন ঐ দিন নির্যাতনের মাত্রা একটু কম হয় এই আশায়। দোষে দুষ্ট বললে ভুল হবে, বলতে হবে তিনি গুণে গুণান্বিত ওসি! অতি নিরবে বউ পেটাতে পেটাতে তথাকথিত নারী নির্যাতন বিরোধী এই ওসির একদিন থলের বিড়াল বের হয়ে গেল। এক রাতে থানার নিজ কক্ষে ওসি সাহেবর বউ পেটানো আসামীকে নিজের হাতে ডান্ডা মেরে বাসায় ফিরেন। সেদিন একটু বেশীই রাগেন তিনি। নিজের পশু চরিত্রও সামাল দিতে পারেননি। সেরাতে ঐ মহান ওসি নিজেই তাঁর প্রথম স্ত্রীকে শুধু পিটাননি সন্তানসহ ঘর থেকেই বের করে দেন। তার অধিনস্থদের সামনেই থানা কম্পাউন্ডে ঘটে এসব। পরদিন নারীবাদী এই ওসির বউ পেটানো মুখোশ থানার বাউন্ডারী পেরিয়ে জনসমক্ষে ফাঁস হয়ে যায়। এই হচ্ছে আমাদের সমাজের নারী নির্যাতনের নমুনা।

ধর্ষকরা বসে নাই; সর্বোচ্চ বিদ্যা পিঠেও ধর্ষিত নারী তাই। দেশে ধর্ষণ খুব বেশি হচ্ছে। অসহনীয় মাত্রায় নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনায় সঠিক বিচার হচ্ছে না বলেই দেশে ধর্ষণ বেড়েছে। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধর্ষণের খবর পাই তা, প্রকৃত ধর্ষণের বোধ করি অর্ধেকও না। ধর্ষিতা হয়ে প্রকাশ করে ক'জন? এ লজ্জার কথা জানায় কি করে অবলা নারী? তাছাড়া ধর্ষণের বিচার ক'টা হয় যে নারী ধর্ষণ হলে থানা আদালত পর্যন্ত যাবে? ধর্ষণের পর বিচার চাইতে গিয়ে যা হয় তাতো নির্যাতন আর গণধর্ষণ!

সর্বশেষ, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক তরুণী। ২৮ জানুয়ারী রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হওয়া ঐ তরুণী ও তাঁর মাকে অপহরণও করার হয়। তাদের হাসপাতাল ফটক থেকে মাইত্রেবাসে তুলে নিয়ে এমন ভয়ভীতি দেখানো হয় যে তারা পরে এ ঘটনা অস্বিকার করে। ধষর্ণের প্রায় প্রতিটি ঘটনা এমনই হয়। ভয়ে মুখ খুলতে চায় না ধর্ষিতা ও তার পরিবার। কথা না বলার চাপ মেয়েদের উপর। মুখ খুললেও ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষিত হলে শ্লিলতাহানীর শিকার হলে পরিবার থেকে বলা হয় চুপ থাকতে হবে, নইলে মান যাবে। আবার মেয়েদেরও পুলিশের উপর আস্থা থাকে না। তাই বিচারহীনসাংস্কৃতি নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ধর্ষণের অনেক তথ্য উপাত্ত প্রকাশিত আছে, কিন্তু সঠিক কোন পরিসংখ্যান বা তথ্য আমাদের নেই। এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে কোথাও না কোথাও প্রতি ২১ মিনিটে একটি করে ধর্ষণকাণ্ড ঘটে। প্রকৃত সংখ্যাটা সম্ভবত এর চাইতে বহু গুণ, কেননা ৯০ শতাংশ ধর্ষণই লোকলজ্জায় কিংবা পরিবারের অমতে গোচরে আনা হয় না। এই বিপুল পরিমাণ ধর্ষণের যারা শিকার, তাদের ১৮ শতাংশই নাবালিকা, অনেকেই চার-ছয় বছরের শিশু। সর্বোপরি নথিভুক্ত ধর্ষণকান্ডগুলির ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষকরা ধর্ষিতাদের আত্মীয়, স্বজন, নিকট প্রতিবেশী বা পূর্বপরিচিত। আর এখানেই সামাজিক ভরসা ও বিশ্বাসের সনাতন, সযত্নলালিত ধারণাগুলি ভাঙ্গে পড়ার প্রসঙ্গটি উঠে পড়ে। দেহরক্ষীর হাতে নিহত হওয়ার মধ্যে যেমন বিশ্বাসহানি রযেছে, তেমনই বিশ্বাসভঙ্গের ব্যাপার আছে আত্মজনের হাতে যৌননিগ্রহের ঘটনায়ও। যাকে রক্ষা করার কাজে নিযুক্ত, তাকেই হত্যা করা যেমন কৃতঘ্ন বিশ্বাসঘাত, আত্মীয়তা কিংবা পূর্বপরিচয়ের সূত্রে অর্জিত বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ করাও সমান নারকীয়তা।

শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ধর্ষণের পরিণতিই এক ও অভিন্ন হলেও এ ধরনের ধর্ষণকে ইদানীং ‘পারিবারিক হিংসা’র পর্যায়ভুক্ত করা হয়। পরিবারের ভিতরে পুরুষ আত্মীয় ও গুরুজনদের দ্বারা বা পরিবারের বাহিরে নিকট প্রতিবেশীদের দ্বারা যৌননিগ্রহের শিকার হওয়া মহিলারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের দুর্গতির কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না, পুলিশের কাছে অভিযোগ করা তো দূরস্থান। কারণ পরিবারই সেই নিগ্রহ-লাঞ্ছনার কথা চেপে যায়, লাঞ্ছিতাকে পরিবারের সামাজিক মর্যাদাহানির ভয় দেকিয়ে চুপ করিয়ে রাখে, প্রায়শ তাাদের দূরে কোথাও পঠিয়ে দেয়। তাতে পরিবারের ‘মর্যাদা’ অক্ষত থাকে, ধর্ষক পুরুষ আত্মীয়ও নিষ্কলঙ্ক থাকে যায়। আর এখানেই ভিতরে ভিতরে চলতে থাকে পিতৃতন্ত্রের লীলা, নারীর প্রতি বৈষম্যের অনুশীলন। পরিবারের গন্ডির মধ্যে শুরু হওয়া এই অনুশীলনই বৃহত্তর সমাজেও ছড়িয়া পড়ে।

ধর্ষিতা ধর্ষণের স্বীকার হননা কেবল; ধর্ষিতাকে নিয়ে আজে বাজে কথাও রটনা করা হয়। ধর্ষকদের পক্ষ নেওয়া ক্ষমতাধরগণ ধর্ষিতা নারীর পোশাক-আশাক, ‘স্বভাব-চরিত্র’, একাকী, ‘অসময়ে’ পথে চলার দুঃসাহস নিয়ে কটাক্ষ করে কার্যত ধর্ষকদের অপরাধ লঘুকরতে সচেষ্ট হন। তখন তাতে ধর্ষিতা নারীর মর্যাদা ও সম্মান ভূলুণ্ঠিতই হয় বটে! পুলিশ যখন ধর্ষণকারী দুর্বৃত্তের সাথে ধর্ষিতা মহিলার ‘আগে হতেই সম্পর্ক থাকা’র অজুহাত দেয়, তখনও দুষ্কৃতী-দমন অপেক্ষা তার শিকারদের দোষ ধরার কদর্য চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটা ধর্ষকদেও প্রশ্যয় দেয়ার সামিল। এ কারণেই ধর্ষণ বাড়ছে।

যৌন নির্যাতন করছে জনপ্রতিনিধি, কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারি, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী,আয়া,বুয়া; গৃহবধু। রাস্তা ঘাটে, চলন্ত বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গৃহে ঘটছে এই পৈচাশিক ঘটনা। কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। যৌন হয়রা! ধর্ষনের পর খুন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে থাকছে না বয়স, স্থান, কাল, পাত্রের ভেদ। দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ব্যভিচারের চূড়াান্ত- প্রকাশ্য ধর্ষণকামিতা। রাত-বিরাতে নয় শুধু, দিনদুপুরে প্রকাশ্য ধষর্ণের ঘটনাও ঘটছে। শুধু ধর্ষণই নয়, রীতিমতো গণধর্ষণ হচ্ছে। অপসংস্কৃতি আর ভিনদেশীসংস্কিৃতির আগ্রাসন আমাদের সমাজকে কতটা ক্ষতবিক্ষত করছে তা হালআমলের ধর্ষণের চিত্র দেখলেই বেশ টের পাওয়া যায়। বাসের ভেতরে ধর্ষিত হচ্ছে মেয়েরা,শিক্ষাঙ্গনে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, এমপির কথিত এপিএসর দ্বারাও এদেশে ধর্ষিত হচ্ছে যুবতী। এই হলো বাস্তবতা। তবে এটি নতুন কোন বিষয় তা নয়; বলা যায় আমাদের সমাজ বাস্তবতার এক করুন চিত্র। কছু মানুষরূপী নরপশু সভ্যতার ভাবধারাকে পাল্টে দিতে হাযেনার নখ মেলে বসেছে। অপরাধের সাজা না হলে এ জাতিয় অপরাধ বাড়ছে।

দেমে ফ্রেস বিষমুক্ত খাবার নাই। প্রতিনিয়তই খাবারের সাথে বিষ আমাদের পেটে পরছে। আমরার খাবার খাব, আর সেই খাবার হবে বিশুদ্ধ; বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। এটাতো আমাদের অধিকার। আমরা কি বিশুদ্ধ খাবার পাচ্ছি? মাছে, ভাতে, আমে, জামে, কোথায় নেই বিষ? ক’দিন আগে এক বিখ্যাত কলামিষ্ট তার লেখায় লিখেছিলেন- “আমরা প্রতি জনে; প্রতি ক্ষনে; জেনে শুনে করেছি বিষ পান।” প্রতি দিন আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে কোন এক মাত্রায় বিষ মেশানো আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খাদ্যে ভেজালের শাস্তি ৭ থেকে ১৪ বছর কারাদন্ড। ক’জনকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। বোধ করি একজনকেও না। তাই ভেজালকারবারীরা ভেজাল মিশাতে সাহস পাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজাল নেই বললেই চলে। আমাদের পাশের দেশ ভারত, ভুটানেও ভোক্তা অধিকার আইন খুবই কর্যকর। সেসব দেশে খাদ্যে ভেজাল প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তিও হয়। আর ভেজাল পণ্য বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। বাংলাদেশে ভেজার খাদ্যের কঠোর আইন আছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঠিকভাবে ফলোআপ করে না। লোক দেখানো অভিযানও চলে মাঝেমাঝে। কেউ ধরা পড়লে আইনে ফাঁকফোঁকড়ে আবার বেরিয়ে যায়। শাস্তি হয় না। তাই তারা ভেজাল মেশাতে সাহস পায়। কঠিন শাস্তি দরকার।

ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ-ব্যাধি আমাদের পেয়ে বসেছে। হঠাৎ করে কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হার্ড বিকল হচ্ছে, ফুসফুস ঝাজড়া হয়ে যাচ্ছে। ভেজাল আর বিষাক্ত খাবার খেয়ে পঁচে যাচ্ছে আমাদের দেহ। রোগী বেড়েছে; রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে বেড়েছে হাসপাতালও। প্রতিদিন মানুষ লাশ হচ্ছে। আমার পরিবারের কষ্টের কথাটাই না হয আগে বলি- ক্যন্সারে মারা গেছেন চাচা-চাচী, মামা, শ্বশুর আর ফুফতো ভাই। অচেনা রোগে বাবাকে হারিয়েছি বছর দুই আগে। মা অসুস্থ হয়ে বিছানায়। ৫ বছর আগে ভাইয়ের একটা কিডনি ফেলে দিতে হয়েছে; আরেকটাতে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। মায়ের মতো বড় বোনটা বেশ ভালোই ছিলেন এতো দিন। হঠাৎ শুনি তাঁর ফুসফুসের এমন অবস্থা যে চিকিৎসকের ভাষায় সেটা নাকি ঝজড়া হয়ে আছে, তাঁর হর্টের অবস্থা প্রায় যায়যায়, কিডনিও শেষ পর্যায়ে। এদেশের প্রতিটি পরিবারেই আমার মতো এমন কষ্টের অনেক গল্প আছে।

ভেজাল আমাদের জীবনে যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তেল, মসলা, লবণ, মুড়ি, চিনি, মাছ, দুধ, ফলমূল, সবজি, গুঁড়াদুধ, কেশতেল, কসমেটিকস সর্বত্রই ভেজাল। ফলের জুস, কোমল পানীয় এসবের বেশির ভাগই কৃত্রিম কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফল প্রথমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়, পরে ফরমালিন দিয়ে প্রিজারভ করা হয়। দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিরিয়ানি, জিলাপি, জুস, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারে সস্তাা দামের টেক্সটাইল গ্রেড বিষাক্ত রং ব্যবহার করে থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাবারে কৃত্রিম রং এবং জুসে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এমনকি আমাদের জীবন রক্ষাকারী ওষুধও ভেজাল থেকে শতভাগ মুক্ত নয়। খেতে ফলানো চালে, ডালেও ভেজাল। ক্রোমিয়াম নামক বিষ পাওয়া যাচ্ছে ওসবে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং ইথোফেন ব্যবহার করে আম, কলা, পেঁপে, আনারস, বেদানা, ডালিম, আপেলসহ এমন কোনো ফল নেই যা পাকানো না হয়। আবার ১০০/২০০ মি. গ্রা. বোতলজাত প্রভিট (ইথোফেন) বাজারজাত করা হয়- যা সবজির সজীবতা রক্ষা করে। এই প্রকারের কেমিক্যালটি ব্যবহার করে তরি-তরকারিকে দীর্ঘস্থায়ী করা হয়- যা বাজারের সবজির মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শুধু ফলমূল, মাছ আর সবজিতেই নয়- মিষ্টির দোকান হতে শুরু করে মুদিদোকানের নিত্যপণ্য আর মনোহারি প্রসাধনীর এমন কোনো বস্তু নেই যাতে কেমিক্যালের সংশ্রব নেই।

মাংসও ভেজাল মুক্ত নয়। অধিকাংশই খামারের গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়াসার ও খাবার সোডা। এতে গরু দ্রুত মোটাতাজা হলেও এর মাংস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব গরুর মাংস খেলে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও মানুষের লিভার ও কিডনি ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, দেশে ল্যাব পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলেও শিশু খাদ্যের অন্যতম উপাদান দুধে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টিতে এখনো গুরুত্ব দেয়নি বিএসটিআই। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন আমলে না নেয়ায় নগরীর ছোট বড় অধিকাংশই দুগ্ধজাত প্রতিষ্ঠানে অবাধে ভেজাল ও বিষাক্ত উপাদানযুক্ত দুধ, চাল, আটা, ডাল, মাছ ও ফলমূলসহ নানা বিষাক্ত খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো বছর রমজানের সময় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ভেজাল এবং নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রেতা ও উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে বিষাক্ত খাদ্যের ছোবল থেকে দেশ বাঁচাতে এখনো সময়োপযোগী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। শুধু বাজারই বিষ মেশানো খাদ্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। নামিদামি হোটেল, চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুডের দোকানদাররা এ ধরনের খাদ্য দেদার বিক্রি করছে। আর আমরাও যেনে শুনে প্রতিনিয়ত বিষ খেয়ে চলেছি।

দেশের নদীগুলোওতো ভালো নাই। নদীর কান্না কেউ শুনতে পায় না। প্রতিনিয়ত এ দেশের নদীগুলোর উপর জুলুম চলছে। নদীহন্তারকরা নদীকে গলাটিপে হত্যা করছে। অনেক নদী হারিয়ে গেছে এরই মধ্যে। ফিবছর ধরেই নদী দুষণ, দখল চলছে। আমাদের দেশে ‘নদী রক্ষা’ আইন আছে, তবুও নদী দখল হয়, নদীর টলমলে পানিতে বর্জ্য ফেলা হয়। সে আইন মানে না কেউ; আইন মানতে বাধ্যও করা হয় না। সর্বশেষ গত ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। সে রায়ে নদী দখলদারদের নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এর পর কোন নদী দখলকারী, নদী হন্তারক কোন শিল্পপতির ঋণ নদী দখল দুষণের কারনে বন্ধ রয়েছে তা আমাদের জানা নেই। কোন রাজনৈতিক নেতা নদী দুষণ, দখল করার অপরাধে নির্বাচন করতে পারেননি এমন নজরিও নেই দেশে। হয়তো কোন শিল্পপতি কিংবা রাজনৈতিক নদী দখল দুষণের সাথে জড়িত নন। তাহলে নদী দুষণ-দখল করছে কারা? হাইকোর্টের রায়ের পর নদী দখল দুষণ কোনটাইতো কমেনি বরং বেড়েছে! বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐতিহাসিক সে রায় এখনো কার্যকর হয়নি; কোন দিন হবেওনা হয়তো।

দেশের নদী দখল এবং দূষণ মুক্ত করতে অনেকের মুখেই নানা কথা শোনা যায়; মাঝেমাঝে নদী রক্ষায় রাষ্ট্রীয় হম্বিতম্বি হয় কিন্তু নদীরক্ষায় কাজ খুব কমই হয়। এ দেশের নদী হন্তারকরা দুর্বল নয়। বেশ হোমরা-চোমরা। তাই দু-একটি লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান ছাড়া নদীখোরদের টিকিও ছুঁতে পারছে না কেউ। তাই নদীগুলো দখল এবং দূষণ মুক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ঘিরে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা আর বালু নদীর অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন।

ঢাকার চারপাশের চার নদী- বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা আর বালু। এই নদীগুলো ঢাকার প্রাণ। দূষণ দখলের কবলে থেকে রাজধানীর কোল ঘেঁষা নদীগুলোকে আর বাঁচানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দূষণ বাড়ছে, বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যা। রাজধানী ঢাকার পরিবেষ্টিত নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার শত চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, র‌্যালি কোনো কিছুই কাজে আসছে না। এই নদীগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক লেখালেখি হয়েছে, টেলিভিশনেও সংবাদ সম্প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। শঙ্কার কথা এই যে, রাজধানীর কোণঘেঁষা এসব নদী না বাঁচানো গেলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে, ঘটতে শুরুও করেছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে। এখনই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

প্রতিটি সরকারই আশ্বাস দিয়েছে অবৈধ দখলমুক্ত এবং নদীর দূষণ দূর করে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানোর। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। নদী পারাপার হতে এখন নাকে রুমাল চেপে রাখতে হয়। দূষিত পানির তীব্র গন্ধে পেট মোচড় দিয়ে ওঠে। কোথাও নদীর পানিকে পানি বলে মনে হয় না। মনে হয় পোড়া মবিল। এর ওপর দিয়ে মাঝি তার নৌকা বাইছেন। দূষিত হতে হতে পানি তার স্বাভাবিক ঘনত্বটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে অনেক নদীতে আগে থেকেই মাছ নেই। শীতলক্ষা ও বালুতে মাছ ধরতে জেলেদেও দেখা যায় না। মাছ থাকার মতো অবস্থা নেই। অথচ এই শীতলক্ষাতে ইলিশ পর্যন্ত মিলতো। শীতলক্ষার পানি দিয়ে একসময়কার বিখ্যাত সোডা ওয়াটার পর্যন্ত তৈরি হতো।

বোতলের গায়ে লিখা থাকতো মেড বাই শীতলক্ষা ওয়াটার। তখন স্থানীয়রা মনে করতো শীতলক্ষার পানি পান করলে রোগবালাই ভালো হয়ে যায়। এখন মুখের সামনেই সেই পানি নেয়া যায় না। হাত চুলকায়। আমাদেও নদীগুলো এখন বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। পলিথিন, ট্যানারিসহ শিল্পকারখানা ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিষাক্ত বর্জ্যে ভরপুর নদীর পানি। এক সময়ের প্রমত্তা এসব নদীর পানিতে স্রোত নেই। এগুলোকে মরা নদী বললে অত্যুক্তি হবে না।

নদী তীরের আন্দোলনকারী মানুষের শত চিৎকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তা বাবুদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। সরকারও নিচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। আমাদের নদীগুলো দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নদী নিজে নিজে সংকুচিত হয় না; নদীকে সংকুচিত করা হয়। নদীর পানি রাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্বিচারে দূষিত করে ফেলা হচ্ছে টল টলে নদীর পানি। এক শ্রেণির নদী হন্তারক প্রতিনিয়তই তা করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের খবর, স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদ, পরিবেশবাদীদের আহ্বান এবং প্রকৃতির কান্না কি সরকার শুনছে?

নদীর শত্রুরা কি সরকারের ক্ষমতার চেয়েও অধিক ক্ষমতাশালী? তা না হলে তাদের কেন রোধ করা হচ্ছে না? দেখা গেছে প্রতি ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জড়িত এবং সাধারণ মানুষ ও নদী ক্ষতির শিকার। ক্ষমতা বদলের পালায় বরাবরই ক্ষমতাসীনদের যাঁতাকলে নদীগুলো নিষ্পেষিত হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগসহ সারা দেশের নদী ভরাট, স্থাপনা তৈরি এবং নদীর তীরে বা অংশে ইট, বালু, পাথর, বাঁশ প্রভৃতি ব্যবসার ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তার পরোয়া করছে না দখলদাররা। আদালতের কাজ আদালত করেছেন, দখলদার করছে দখলের কাজ। প্রশ্ন হচ্ছে, আইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সরকার কার হয়ে কাজ করছে; চোরের না সাধুর? ঢাকার চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার দূষণ ও নদীর ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থমূলক রিট মামলা দায়ের করেন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। এর রায়ে ঢাকার চার নদী রক্ষায় নয়টি নির্দেশ দিয়েছেন।

উদ্ধমূখী বস্ত্র এবং গার্মেন্টস শিল্পও ভালো নাই। দেশের বস্ত্র শিল্পে সংকট চলছে বহু বছর ধরে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিল্প কারখানা। কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। বিদেশের শ্রমবাজারও মন্দা। এতে মানুষের আয় কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি তার আগের তিন মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৭২ ভাগ কমেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১৬ ভাগ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু পরবর্তিতেতা আর ধরে রাখা যায়নি। গত বছরের তুলনায় আগস্টে রপ্তানি কমেছে ১২ ভাগ আর সেপ্টেম্বরে কমেছে পাঁচ ভাগ। চলতি বছর বাংলাদেশের পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। যা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৯১ ভাগ বেশি। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখন সংশয় দেখা দিয়েছে। ছোট কারখানাগুলো তাল মেলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে বেকার হচ্ছে বহু শ্রমিক। অনেকেরই এখন কাজ নেই। হাতে পয়সা নেই। তারমধ্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।

সব কিছুতেই নেগেটিভ সুচক। শুধু নাই নাই আর নাই। দেশে যেকোন সময়ের চেয়ে এগিয়েছে। পদ্ম সেত, মেট্রেরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, উড়াল আর পাতাল সড়ক, আধুনীক বিমানবন্দর পেয়ে মুগ্ধ দেশবাসী। বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা বেড়েছে। সংকট আর নানা সমস্যা দেশের ভালো কাজে সুনামে হুল ফুঁটাচ্ছে। দুষণমুক্ত দেশ, বিষমুক্ত খাবার, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, নিরাপদ সড়ক, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি আর বসবাসেরর জন্য উপযুক্ত বাংলাদেশ চায় দেশের মানুষ। আমরা সেই দেশের প্রত্যাশায় রইলাম।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test