E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অগ্নিকাণ্ড: দুর্ঘটনা নয়, অবহেলার মাশুল

২০২৪ মার্চ ০৪ ১৫:৪২:৫৩
অগ্নিকাণ্ড: দুর্ঘটনা নয়, অবহেলার মাশুল

গোপাল নাথ বাবুল


ফের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হলো রাজধানী ঢাকা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় ঢাকার একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বেইলি রোডের ‘গ্রিণ কোজি কটেজ ভবন’ নামক আটতলা ভবনে আগুন লাগলে রাতভর ১৩টি ইঞ্জিন দ্বারা ফায়ার সার্ভিসের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও এ ঘটনায় কমপক্ষে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের এবং গুরুতর আহত হয়েছে ২২ জন। ফায়ার ফাইটাররা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ৪২ জন-সহ মোট ৭৫ জনকে উক্ত ভবন থেকে বের করে আনতে সমর্থ হন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন জানান, আহতদের অবস্থা খুবই গুরুতর। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির ১ম তলার একটি রেস্তোরায় প্রথমে আগুন লাগলেও পরবর্তীতে দ্রুত ওপরের তলাগুলিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এরই মধ্য দিয়ে প্রশাসনের আরও একটি গাফিলতির উদাহরণ আমাদের সামনে ধরা দিল এবং আবারও ভয়াবহ আগুন ও মর্মান্তিক মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি ঘটল রাজধানী ঢাকায়। এ অগ্নিকান্ড আরও একবার জানিয়ে দিল যে, রাজধানী ঢাকা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সংঘটিত তাজরিন ফ্যাশনের ঘটনায় যদি গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার হোসেনের বিচার সময়মতো শেষ হতো, তাহলে হয়তো পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, সীতাকুন্ডের বিএম ডিপো, মগবাজারের ওয়্যারলেস এলাকার ‘রাখি নীড়’, নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুড, বঙ্গবাজার মার্কেট ও সর্বশেষ বেইলি রোডের ‘গ্রিণ কোজি কটেজ’ ভবনের ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু দেখতে হতো না দেশবাসিকে। এভাবে প্রতিবার দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। গঠন হয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি। আশ্বাস দেওয়া হয় সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। কিছুদিন পর সবকিছু চাপা পড়ে যায়। আরেকটি নুতন দুর্ঘটনা ঘটলে আবারও সরকার নড়েচড়ে বসে। প্রতিবারের মতো এবারও ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জিসান এবং ‘চা চুমুক’ রেস্টুরেন্টের মালিক আনোয়ারুল হক ও শাকিল আহমেদ রিমনকে আটক করা হয়েছে। যথারীতি জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তদন্তও শুরু করেছে। তবে এ তদন্ত শেষ হবে কিনা হলফ করে কেউ বলতে পারছেন না। কারণ, ২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার ‘রাখি নীড়’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু ঘটনার প্রায় তিন বছর হতে চললেও মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি বলে জানা যায়। ফলে বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বুকের শার্টের বোতাম খুলে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায় এবং সাধারণ জনগণকে জানান দেয়, তারা বিচারের উর্ধ্বে, এদেশে কোনও বিচার ব্যবস্থা তাদের টিকিটিও স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না।

এ ব্যাপারে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। গত শুক্রবার বিকেল ৩টায় তিনি তার ফেসবুক পেজের এক পোস্টে লেখেন, বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মৃতের সংখ্যা ৪৬ ছাড়িয়েছে। এর দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে যাদের গাফিলতির কারণে এই নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হলো। স্বজনহারাদের আর্তনাদ, অপূরণীয় ক্ষতি ও অনেক পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যত কীভাবে নির্মমতায় শেষ হয়ে গেল, এর বিচার হবে কিনা জানি না। বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিল, আমাদের ভবনগুলোর অব্যবস্থাপনা ও দেখভাল করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার ব্যর্থতা। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে করা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি ৬২ জনকে দায়ী করেছিল, যারা ভবন নির্মাণ ও তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দায়ীরা সবাই ছাড় পেয়েছে। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়ীদের সব তথ্য দিয়েছিলাম। অপ্রিয় হলেও সত্য, তদন্ত রিপোর্টে যাদের দায় নিরূপন হয়েছিল তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলাও রজু করা হয়নি। স্বল্প সময়েই সবকিছু স্তিমিত হয়ে যায়। প্রভাবশালীরা সবকিছুই ম্যানেজ করে ফেলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবেই অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ভূল›িঠত করে দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

সীতাকুন্ড বিএম ডিপোর অগ্নিকান্ডে তেজস্ক্রিয়তার কারণে অনেকের চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন ব্যক্তিগত চক্ষু চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক আহতদের মধ্যে ৬৩ জনের চোখের সমস্যা পান বলে জানিয়েছিলেন। যাদের একজন দৃষ্টি হারিয়েছিলেন, ৬ জনের কর্ণিয়া ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল এবং ১৫ শতাংশের গুরুতর সমস্যা হয়েছিল। সেবার ৮৬ ঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। পুলিশ বাদী হয়ে ৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তদন্ত শুরু হওয়ার পূর্বে আসামিদের জামিন হয়ে গিয়েছিল। উক্ত ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে ৯জন ফায়ার ফাইটারও নিহত হয়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত আগুন নেভাতে গিয়ে সীতাকুন্ড ট্র্যাজেডির ৯ জনসহ মোট ২৬ জন ফায়ার ফাইটার নিহত এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। অপরের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তাঁরা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তাপুরের তাজরীন ফ্যাশন্সে অগ্নিদুর্ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাজরীন ফ্যাশন্স এর মালিকসহ ১৩ জনের নামে মামলায় ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর মামলার চার্জশীট এবং ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলেও মামলা কখন শেষ হবে তা অনিশ্চিত। তার মানে ধীরে ধীরে এ মামলা একদিন অকার্যকর হয়ে যাবে। আমাদের দেশে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো এমনই হয়। এ মামলার ভবিষ্যত কার্যক্রম এখন প্রায় নিবু নিবু অবস্থায় রয়েছে।

এখন বলা হচ্ছে, বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুনের ঝুঁকির কথা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। জানা যায়, ভবন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে কর্তৃপক্ষ দায় সারে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইনউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে কোনও অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ভবন মালিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে চায়। কিন্তু এ সংস্থাটির ওপর দায়িত্ব ছিল, এসব অনিয়ম দেখার। ভবন মালিকরা হলেন ব্যবসায়ী। ওরা ব্যবসা ও নিজেদের স¦ার্থে সবকিছু করতে পারেন। যা আমরা করোনাকালীন প্রত্যক্ষ করেছি। পেঁয়াজ নিয়ে পেঁয়াজবাজি, ডাল নিয়ে ডালবাজি ও চাল নিয়ে চালবাজি তো হরহামেশাই চলছে। কোনো না কোনো দ্রব্য নিয়ে ওরা নিত্য জনগণের সঙ্গে মশকরা করে চলছেন। কিন্তু সরকার জনগণের করের টাকায় বেতন দিয়ে এগুলো দেখার দায়িত্ব যাদের দিয়েছে, তারা কী এসব অনিয়ম ঠিকমতো দেখেছেন ? তিনবার চিঠি দেওয়ার পরও যখন ভবন মালিক অগ্নিনিরাপত্তার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেননি, তখন উক্ত সংস্থার কর্মকর্তারা কোথায় ছিলেন? তারা কেন সময়মতো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি? সময়মতো ব্যবস্থা নিলে হয়তো আজ এতগুলো মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হতো না। প্রতিবারই বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমনিতে সারাবছর জননিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠানসমূহ থাকে চরম দায়িত্বহীন ও উদাসীন।

আরো অমানবিক ব্যাপার হলো- ভবনটিতে একটি মাত্র ছোট সিঁড়ি ছিল। তার ওপর আবার স্তরে স্তরে রেস্টুরেন্টের গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। ফলে কেউ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সুযোগ পাননি। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান একে একে ৪৬ জন। ঢাকায় প্রত্যেক ভবন কর্তৃপক্ষের এসব ব্যাপারে বরাবর অবহেলা লক্ষ্য করা যায়।

এসব অগ্নিদুর্ঘটনায় প্রতিবারই কিছু লোকের লোভের আগুনে প্রচুর লোক পুড়ে অঙ্গার হলেও সচেতনতার বালাই নেই সংশ্লিষ্ট মহলের। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৭১ জন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে এ ধরণের ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ৩১ দফা সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি দফা ছিল- জরুরী ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেওয়া। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী দুর্ঘটনায়ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি একই রকম ১৭ দফা সুপারিশ সম্বলিত তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছিল। ওই সময় কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিদুর্ঘটনায় ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো-দু’বারই পেশকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করা হয়নি। উক্ত প্রতিবেদনদ্বয়ের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন হলে আজকে হয়তো বেইলি রোডের ট্র্যাজেডি ঘটতো না।

নিমতলী ও চুড়িহাট্টা দুর্ঘটনার পরে প্রতিবারই সরকার বলেছিল, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা কঠোরভাবে নিষিদ্ধের কথা এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা না মেনে কাউকে কোনো রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থের মজুত বা ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। পরবর্তীতে সীতাকুন্ড ট্র্যাজেডি প্রমাণ করলো- ওইসবই সরকারের অন্তরের কথা ছিল না, ছিল মুখের কথা মাত্র। যদিও তাজরীন ফ্যাশন্স, নিমতলী, চুড়িহাট্টা, হাসেম ফুডস্ ও সীতাকুন্ড ট্র্যাজেডিসহ বেইলি রোডের ঘটনাগুলো ছিল অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড।

ফায়ার সার্ভিসের যে পরিসংখ্যান, তা বিশ্লেষন করে জানা যায়, বছর বছর অগ্নিদুর্ঘটনার পরিমাণ, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলছে। ২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪৫ জন আহত, ২৮৪ জন নিহত ও আর্থিক ক্ষতি ২৫৭ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ৬২৪ টি অগ্নিকাণ্ডে ১৩০ জন নিহত, ৬৭৭ জন আহত ও আর্থিক ক্ষতি ৩৮৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে ২৪ হাজার ৭৩৪ টি অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৮৪ জন নিহত, ৫৬০ জন আহত ও আর্থিক ক্ষতি ৩৩০ কোটি ৪১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ২১ হাজার ৭৩ টি অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৫৪ জন নিহত, ৩৮৬ জন আহত ও আর্থিক ক্ষতি ২৪৩ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ২১ হাজার ৬০১ টি অগ্নিদুর্ঘটনায় ২১৯ জন নিহত, ৫৭৬ জন আহত ও আর্থিক ক্ষতি ২১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা আর্থিক। ২০২২ সালে মোট অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে ২৪ হাজার ১০২টি, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৬৮৫টি বেশি। এ সময় অগ্নিকান্ডে ১৩জন নারীসহ মোট ৯৮জন নিহত হন এবং আহত হন ৪০৭ জন। আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। ২০২৩ সালে সারাদেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে নিহত হন ১০২জন এবং আহত হন ২৮১ জন। মোট আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা।

দেখা যায়, গত ৭ বছরে মোট অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৬৩ টি। এতে মোট নিহত ১ হাজার ১৭১ জন, আহত ২ হাজার ৯৩২ জন ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৫ টাকা।

উক্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে বাসা বাড়ি ও আবাসিক এলাকায়। গত ২০২১ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮১৮ টি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু রান্নাঘর হতে আগুন লাগার ঘটনা ছিল ৩ হাজার ৫৪৪ টি। নগরবিদরা বলছেন, যতদিন গাফিলতি শোধরাবে না, অপরাধীদের শাস্তি হবে না, ততদিন নিরাপদ হবে না এ শহর।

সুতরাং এসব ঘটনাগুলোকে কোনোভাবে দুর্ঘটনা বলা যায় না। এগুলো হলো অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড। মূলত মুনাফালোভী ও দায়িত্ব পালনে উদাসীন এবং অসৎ সরকারি কর্মকর্তারাই এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এভাবে বারবার কিছু মানুষের লোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে অসংখ্য মানুষ, ধ্বংস হয়ে যাবে অসংখ্য পরিবার ও সাজানো সংসার, তা কোনোভাবে মানা যায় না। তাই সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক আসল দোষী ও অর্পিত দায়িত্ব পালনে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দানকারি সরকারি কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা হোক এবং তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হোক।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test