E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্ব পানি দিবস 

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন পরিমিত বিশুদ্ধ পানি  

২০২৪ মার্চ ২১ ১৭:০১:১৯
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন পরিমিত বিশুদ্ধ পানি  

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


২২ মার্চ শুক্রবার বিশ্ব পানি দিবস ২০২৪। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমাদের শরীরে প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগই পানি। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পানি পানের বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্য, অধিক কর্মদক্ষতা, ভালো ত্বক, ওজন কমানো এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে খাবারের পানির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ খাবার পানি ছিল না। সময়ের ব্যবধানে এখন মানুষের বিশুদ্ধ পানি পানের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পানি পান করাটা যতটা জরুরি ঠিক ততটা জরুরি পরিমিত পরিমাণ পানি পান করা। পানি উপকারী বলে মাত্রাতিরিক্ত পানি পান করাটাও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রতিদিন ২৪০ মিলিলিটার মাপের ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত, যা কিনা গড়ে দুই লিটারের মতো হতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পানের সুবিধার জন্য সঙ্গে পানির বোতল বহনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া অফিসেও যাতে সময় মতো প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পানের ব্যবস্থা করার জন্য মিটিং চলাকালেও টেবিলে বাড়তি পানির জগ এবং গ্লাস রাখা যেতে পারে। পরিমিত পানি পান করা নিয়ে অধুনা মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলেও সঠিক পরিমাণ পানি পানের হিসেবটা কিন্তু বহু বছর আগেই করে আসছেন ইংল্যান্ড-আমেরিকার চিকিৎসকরা। ১৯৪৫ সালে মার্কিন খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ড অব ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল পানি পানের সঠিক হিসেব দিতে গিয়ে বলেন, একজন নারীর প্রতি এক হাজার ক্যালরির জন্য শরীরে এক লিটার পানি প্রবেশ করা উচিত। একইভাবে দুই হাজার ক্যালরি পরিমাণ খাবার গ্রহণ করলে দুই লিটার পানি এবং ২৫০০ ক্যালরি খাবারের জন্য আড়াই লিটার পানি প্রবেশ করা দরকার। এক্ষেত্রে এর পুরোটা যে সরাসরি পানি পানের মাধ্যমে হতে হবে তেমন নয়, যেসব ফলমূল এবং সবজিতে প্রচুর পানি আছে সেগুলোও পানির বিকল্প উৎস হতে পারে।অন্যদিকে ১৯৭৪ সালে পুষ্টিবিদ মার্গারেট ম্যাকউইলিয়ামস এবং ফ্রেডরিক স্টেটের লেখা ‘নিউট্রেশন ফর গুড হেলথ’ বইয়ে তারা জানান, একজন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এই দুই জন লেখকও দাবি করেছেন এই ৬ থেকে ৮ লিটার পানির মধ্যে সবজি, কোমল পানীয়ও অন্তর্ভুক্ত।

নিরাপদ পানি যেভাবে পাবেন

বিশুদ্ধ পানির জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রাচীন ও বড় শহরে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করা হয়েছিল। এই ঢাকা শহরেও ওয়াটার ওয়ার্কসের কাজ প্রথম শুরু হয় ১৭৭৪ সালে। এর কাজ শেষ হয় ১৮৭৮ সালে। এতে ঢাকার নবাব দান করেছিলেন প্রায় দুই লাখ টাকা। এবার ভাবুন তো, বর্তমানে সেই টাকার মূল্য কত? এখন সহজে পানি বিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়া আমাদের হাতের মুঠোয়।

শুধু তা-ই নয়, এই আধুনিক সময়ে পানি বিশুদ্ধ করে পান করা আমাদের জীবন যাপনেরই অংশ হয়ে উঠেছে। কেউ ফুটিয়ে তো কেউ বিভিন্ন গ্যাজেট ব্যবহার করে সে কাজটাই আমরা করছি প্রতিদিন।

কেন বিশুদ্ধ পানি

এখন এটা সবাই জানে যে পানি বিশুদ্ধ করে না খেলে টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া ও জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া পেটের রোগেও ভুগতে হয় প্রায়ই। তাই এসব রোগ-বালাই দূরে রেখে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে পানি বিশুদ্ধ করতেই হয় যেকোনো উপায়ে হোক না কেন।
বন্যা, বর্ষা, তীব্র তাপপ্রবাহ বা খরায় জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। নিরাপদ পানি বলতে আমরা বুঝি বিশুদ্ধ পানি, যাতে কোনো জীবাণু, সেডিমেন্ট বা ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকবে না। নিরাপদ পানি শুধু যে পানীয় হিসেবেই দরকার, তা নয়। হাত ধোয়া, কাঁচা শাকসবজি ধোয়া, রান্নাঘরের বাসনকোসন নিরাপদ পানি দিয়ে না না ধুলে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আমরা নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে পারি।

১. পানি ফোটানো : পানি ফুটতে শুরু করার পর আরও ৩ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করার পর পানি ছেঁকে ব্যবহার করুন। ১ মিনিট ফোটালে বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া (কলেরা, টাইফয়েডের জীবাণু) ও প্রোটোজোয়া মরে যায়; কিন্তু ভাইরাস, যেমন হেপাটাইটিস এ–এর ভাইরাস মুক্ত করার জন্য ৩ মিনিট পর্যন্ত ফোটানো অতি জরুরি।

২. বৈদ্যুতিক পানি পরিশ্রুতকারী যন্ত্র : আজকাল বাজারে খাওয়ার পানি বিশুদ্ধ করার জন্য যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। পানি বিশুদ্ধ করতে ভালো ব্র্যান্ডের ও মানের যন্ত্রের ওপর ভরসা করা যায়।

৩. পুনঃঅভিস্রবণ : এই প্রক্রিয়ায় একটা অর্ধভেদ্য পর্দা ব্যবহার করে দ্রবীভূত, অদ্রবণীয় রাসায়নিক ও ব্যাকটেরিয়া দূর করা যায়।


৪. ক্লোরিনের ব্যবহার : পানিতে ৫ শতাংশ ক্লোরিন যোগ করলে রোগজীবাণুমুক্ত করে পানি পান করার উপযুক্ত হয়।

৫. পাতন : পানিতে তাপ প্রয়োগ করে বাষ্পীভূত করে ওই বাষ্পকে শীতল করে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করা হয়। এতে কোনো রোগজীবাণু থাকে না। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ দ্বারা রোগজীবাণু বিনাশ করা যায়সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ দ্বারা রোগজীবাণু বিনাশ করা যায়

৬. আয়োডিন : ট্যাবলেট বা তরল আয়োডিন পানিতে যোগ করে রোগজীবাণুমুক্ত করা যায়।

৭. সূর্যালোক : প্লাস্টিকের বোতলে পানি রেখে সূর্যালোকে রাখলে রোগজীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে।

৮. মাটির পাত্রে পানি পরিশ্রুত করা : তিনটি মাটির পাত্র একটির নিচে আরেকটি রেখে পর্যায়ক্রমে বালু, পাথরের মধ্যে পানি প্রবাহিত করা হলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব।

৯. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি : সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণ দ্বারা রোগজীবাণু বিনাশ করা যায়। তবে শোধনের পর বিপরীত অভিস্রবণ বা পুনঃঅভিস্রবণেরও প্রয়োজন হয়।

১০. নির্লবণীকরণ : সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করা যায় দুই ভাবে। পানি ফুটিয়ে বাষ্পীভূত করার পর তা শীতল করে সুপেয় পানিতে পরিণত করে। ফিল্টারের মধ্যে পানি প্রবাহিত করেও লবণমুক্ত করা যায়।

১১. বৃষ্টির পানি : বৃষ্টির পানি ফিল্টার করে বা ফুটিয়ে খাওয়া যায়

গবেষকরা জানিয়েছেন, পান করা এই পানি শরীর থেকে ঘাম, মূত্র এবং নিশ্বাসের সঙ্গে বের হয়ে আসে। আমাদের শরীরের পানির পরিমাণ ১ থেকে ২ শতাংশ কমে গেলে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।তাই আমাদের সকলের উচিত পরিমিত পরিমানে পানি পান করা ও নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যেন পানি দূষণ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা।পানি নিরাপদ হোক, জীবন নিরাপদ হোক।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test