E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

প্রাচ্যের সক্রেটিস ড. জিসি দেব

২০২৪ মার্চ ২৩ ১৭:০৮:৫৬
প্রাচ্যের সক্রেটিস ড. জিসি দেব

গোপাল নাথ বাবুল


প্রতিবছর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে পালিত হয় বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস। এদিন পত্রিকার পাতায় সবার নজর কাড়ে একটি হাস্যজ্জ্বল ছবি। যিনি দর্শনশাস্ত্রে বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করেছেন এবং বাংলাদেশের দর্শনশাস্ত্রে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের আধুনিক দর্শনের পথিকৃৎ বিশ্ববরেণ্য এ মানবতাবাদী দার্শনিককে তাঁর অবদানের জন্য প্রাচ্যের সক্রেটিসও বলা হয়। তিনি হলেন বহুমুখী প্রতিভা, অসামান্য পান্ডিত্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের কিংবদন্তি অধ্যাপক শহীদ ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব পুরকায়স্থ। যিনি ড. জিসি দেব নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৯৭১ সালে এদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনারা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই ক্ষণজন্মা মনীষী, আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেবকে হত্যা করেছিলেন। 

এই দার্শনিক পন্ডিত ব্যক্তিত্ব ব্যক্তিগত জীবনে অকৃতদার হলেও তিনি ২ জন ২ ধর্মের ছেলে-মেয়ে দত্তক নিয়েছিলেন এবং দত্তক নেওয়ার পর থেকেই তাদের শিখিয়েছিলেন তাঁর ভেতরে পুষে রাখা মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলীর আদি রচয়িতা চন্ডীদাসের সে অমর বাণী ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’

প্রথমে দত্তক নিয়েছিলেন তাঁরই ছাত্র জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে। কারণ, আর্থিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যেতো। তখন হলের মূল ফটক বন্ধ পেয়ে রেলিং বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকবার দারোয়ানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে প্রভোস্ট জি সি দেবের কাছে নালিশ গেলে তিনি জ্যোতিপ্রকাশকে ডেকে পাঠান। ঘটনা বৃন্তান্ত শুনে শাস্তির বদলে তিনি জ্যোতিপ্রকাশকে বাইরের কাজের বদলে তাঁর বইয়ের ডিকটেশনের কাজে সাহায্য করতে বলেন এবং নিজের বাড়িতে স্থান দিয়ে অসহায় ছাত্রটির থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব নেন। এরপর এক পর্যায়ে জ্যোতিপ্রকাশকে পালক পুত্র হিসেবেই গ্রহণ করেন ড. জি সি দেব। লেখাপড়া শেষে জ্যোতিপ্রকাশ আরেক গল্পকার পূরবী বসুকে বিয়ে করার পর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দু’জনই ১৯৬০-এর দশকের শেষে আমেরিকায় পাড়ি জমালে জি সি দেব দত্তক নেন সাহিত্য পরিমন্ডলের আরেক মেয়ে রোকেয়া সুলতানাকে। ২ জন ছেলে-মেয়ে ভিন্ন ধর্মের হলেও তিনি তাঁর অসম্প্রদায়িক দর্শনকে তাদের জীবনচর্যায় প্রতিফলিত করেছিলেন। উল্লেখ্য, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত একজন একুশে পদক বিজেতা প্রখ্যাত গল্পকার। মেয়ে রোকেয়াকে বিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলি নামের এক যুবকের সাথে। মেয়ের জামাই ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পাশে।

বড় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন এ প্রখ্যাত দার্শনিক। ২৫ মার্চ, ১৯৭১-এর কালো রাতে অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে পুরো ঢাকা শহর বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এলাকায় গুলিবর্ষণের প্রচন্ড শব্দ আর ভীত-অসহায় মানুষের আর্তচিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় ড. দেবের। তিনি ঘরেই অস্থির পায়চারি শুরু করেন। সারারাত ধরে তাঁর বাড়ির উপর গুলি বর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা। ভয়ে কাতর মেয়ে সুলতানাকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে ওরা কিছু করবে না।’

ভোরের আলো তখনও উঁকি মারেনি। কাছের কোনও মসজিদ থেকে ভেসে এল ফজরের আজান। জগন্নাথ হলের সামনে তখন গিজ গিজ করছে পাক-হানাদাররা। আহত-নিহত অনেক দেহ হলের মাঠে জড়ো করা হয়েছে। মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে নিয়ে তিনি সারারাত নির্ঘুম রাত কাটান। ভোরের দিকে মেয়ে রোকেয়াকে বললেন, ‘মা তুমি একটু চা করো। আমি ততক্ষণে একটু ভগবানের নাম নিই।’

ঠিক সে সময় পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল দরজা ধাক্কাতে থাকে এবং উর্দুতে চিৎকার করে হুংকার দিতে থাকে, ‘কাঁহা মালাউন কাঁহা, সালে মালাউন কা বাচ্চা দরোয়াজা খোল্।’ দরোজা খুলতেই পাকিস্তানি সেনাদের একজন প্রফেসর দেবকে দেওয়ালের সাথে ঠেসে ধরেন। পালিত কন্যা রোকেয়ার স্বামী মোহাম্মদ আলি সেদিন শ্বশুরকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন এবং খান সেনাদের মন গলানোর জন্য কলেমা পড়তে থাকেন। কিন্তু এতে কোনো কাজ না হলে ড. দেব নিজেও ২ হাত উপরে তুলে ‘গুড সেন্স গুড সেন্স’ বলে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এতেও কোনো কাজ না হলে ড. জি সি দেব খান সেনাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘বাছারা, তোমরা কী চাও ?’ এর উত্তরে একজন সেনা তাঁর মাথায় রাইফেল দিয়ে আঘাত করেন এবং অন্যজন তাঁর বুকে ও মেয়ে জামাই-এর বুকে ব্রাশ ফায়ার করেন। ফলে দু’জনই ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। প্রতিহিংসার উম্মুখত্ততায় অন্যান্য সেনারা তাঁদের প্রাণহীন দেহে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করতে থাকে। রোকেয়া সুলতানা আকস্মিক আক্রমণ ও হত্যাকান্ডে অচেতন হয়ে পড়েন। ২৬ মার্চ বিকেলে জগন্নাথ হলের পশ্চিম পাশে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেওয়া হয় জামাই-শ্বশুরের লাশ।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পাকিস্তানে নিজ জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও তিনি দেশত্যাগ করেননি। এমনকি, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি একাত্মতা ঘোষণা করেন। ১৯৬৭ সালে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে মহান শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থাকার পরও তিনি এমন নিরাপদ জীবনকে পেছনে ফেলে শিক্ষার্থী, সহকর্মী, দেশ ও জনগণের টানে দেশে ফিরে আসেন এবং পাক-হানাদার বাহিনীর নির্মম গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দেন।

সেদিন পাক-সেনারা একজন মানবিক দার্শনিককে শুধু হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল একজন মানবিক মূল্যবোধের অবয়বকে। আর তিনি ছিলেন মোহাম্মাদ আলি, যিনি নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে এক রক্তসম্পর্কহীন হিন্দু শ্বশুরকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে রেখেছিলেন মানবিকতার এক অমূল্য নিদর্শন। ইচ্ছে করলে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পারতেন। কারণ, পাক-সেনাদের লক্ষ্য তিনি ছিলেন না। পাক-হানাদারদের এমন অমানবিক কাহিনীতে আমরা মোহাম্মদ আলির মতো একজন অমূল্য মনুষ্যত্বের পরিচয় পাই। আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক ফেরিওয়ালারা যদি এমন দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতেন, তাহলে সত্যিকার অর্থে মানবতার জয় হতো।

ড. দেব দর্শন শাস্ত্রকে অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করেছিলেন। তিনি সমন্বয়ী দর্শন প্রচার করেছেন। তিনি মনে করতেন, সার্থক দর্শন মানে জীবন দর্শন। তিনি জড়বাদ-ভাববাদের মধ্যে সমন্বয় করতে চেয়েছেন। এক পন্ডিতের কাছে ভারতীয় ঐতিহ্যের বেদ-বেদান্ত-উপনিষদের পাঠ নেওয়ার পর ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের প্রতি এক গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাঁর। রামকৃষ্ণ মিশন ও খৃষ্টানমিশনারি স্কুলে পড়ার সময় তিনি মানবপ্রেম ও মানবসেবার প্রতি গভীর দীক্ষা লাভ করেন। একদিকে যেমন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সমন্বয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, তেমনি প্রভাবিত হয়েছেন ভগবান বুদ্ধদেবের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, ইসলামের সাম্য ও খৃষ্টধর্মের প্রেমের অমৃতময় বাণী দ্বারা। তিনি কোনো এক ধর্মের ডালে আটকা পড়েননি। তিনি ভগবান বুদ্ধের জন্মবার্ষিকীতে যেমন অনর্গল বক্তৃতা করতেন তেমনি হযরত মুহম্মদ (স) এর জন্মবার্ষিকীতেও বক্তৃতা করতেন। তিনি মনে করতেন, যে কোনো ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার অধিকার সবার আছে। নিজেকে তিনি একজন মানুষ হিসেবেই দেখতেন এবং বিশ্বাস করতেন ‘মানবতাই প্রকৃত ধর্ম।’ এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমার দার্শনিক মত জনসমাকীর্ণের রাজপথের উপরই পড়েছিল। সে অমূল্য রতœ সেখান থেকেই কুড়িয়ে পেয়েছি। তাকে আমার নিজের বলা চলে না। আমি শুধু আমার ছেঁড়া কাপড়ে তাকে ভাল করে জড়িয়ে জনসাধারণের সামনে হাজির করেছি।’ (‘আমার জীবন দর্শন’- হাসান হাফিজুর রহমান)।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করে আহরণ করেন বহুমুখী জ্ঞান ও চিন্তাধারা। পৃথিবীবিখ্যাত সকল দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারকদের প্রচারিত ধর্ম ও বিভিন্ন সভ্যতার মানবকল্যাণকর শুভ দিকগুলো তিনি প্রচার করতে উদ্বুদ্ধ হন তত্ত্বসর্বস্ব দর্শন আলোচনার বাইরে সমন্বিত ব্যবহারিক রূপে।

তিনি সারাজীবন মানবতার জয়গান গেয়েছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে জীবনবাদী চেতনার ঐশ্বর্যে বিশ্ববাসীকে একাত্ম অভিন্ন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মানবকল্যাণ এবং জ্ঞানের নতুন দুয়ার উম্মেষে আতৃত্যু সাধনা করে যাওয়া এ মহান দার্শনিক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত এবং বহুল প্রশংসনীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মৃত্যুর মাত্র কিছুদিন আগে তিনি তাঁর জীবন ঘনিষ্ট মানবিক দর্শন প্রচারের জন্য তাঁর সম্পত্তির অর্ধেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন, যা দ্বারা ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাকি অর্ধেক তাঁর পালিত পুত্র-কন্যা জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও রোকেয়া সুলতানাকে দান করে যান। ড. দেব ১৯৬০ সাল থেকে আমৃত্যু পাকিস্তান দর্শন সমিতির নির্বাচিত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় জীবনঘনিষ্ঠ ও মানবতাবাদী দর্শন প্রচারার্থে ১৯৬৪ সালে ঢাকায় স্থাপিত হয় ‘দর্শন ভবন’। দর্শনের দুর্লভ সব গ্রন্থের সমারোহে নানাবিধ আয়োজনে এটি উপমহাদেশের দর্শনশাস্ত্র চর্চায় যোগ করে অন্যরকম এক মাত্রা। তিনি যুক্তরাজ্যের ‘দি ইউনিয়ন অব দ্যা স্টাডি অব জেনারেল রিলিজিয়নস্’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ^বিদ্যালয়ের ‘ফিলসফি অব সায়েন্স’-এর সদস্য নির্বাচিত হন।

ড. জি সি দেবের জন্ম ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বৃটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের পঞ্চখন্ড পরগনার (বর্তমান সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা) লাউতা গ্রামে। তাঁর বাবা ঈশ^রচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ এবং মা শরৎ সুন্দরী দেবী। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় উত্থানপতনের কারণে তাঁর পূর্বপুরুষ পঞ্চম শতকে গুজরাটের আদিনিবাস ত্যাগ করে সিলেটে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি স্থানীয় মিশনারীদের তত্ত্বাবধানে বড় হন। শৈশব থেকেই ড. দেব খুবই মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মূলত তখন থেকেই ড. দেবের এ দুর্দান্ত চিন্তাশক্তির উম্মেষ ঘটেছিল। ১৯২৫ সালে তিনি বিয়ানীবাজার উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা রিপন কলেজ থেকে ১৯২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে দর্শন বিষয়ে বিএ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে দর্শনে এমএ এবং ১৯৪৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন রিপন কলেজে। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৫৭ সালে ঢাকা হলে (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) হাউস টিউটর এবং একই বছর জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাবি’র দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালে প্রফেসর পদে পদোন্নতি পান। ষাটের দশকের শেষের দিকে ড. দেব পেনসিলভেনিয়ার ‘উইলকস্ ব্যারে’ কলেজে শিক্ষকতা করেন। স্বল্প সময়ে তিনি সেখানে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং সেখানে তার গুণমুগ্ধরা তাঁর মানবিক দর্শন প্রচারের লক্ষ্যে ‘দি গোবিন্দ দেব ফাউন্ডেশন ফর ওয়ার্ল্ড ব্রাদারহুড’ প্রতিষ্ঠা করেন।

ড. জি সি দেবের মোট গ্রন্থ ৯টি। তার মধ্যে জীবদ্দশায় সাতটি এবং মৃত্যুর পর ২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘আইডিয়ালিজম অ্যান্ড প্রগ্রেস’ (১৯৫২), ‘আইডিয়ালিজমএ’ (১৯৫৮), ‘দি ফিলোসফি অব বিবেকানন্দ অ্যান্ড দি ফিউচার অব ম্যান’ (১৯৬৩), নিউ ডিফেন্স অ্যান্ড এ নিউ এ্যাপলিকেশন’, ‘আমার জীবন দর্শন’ (১৯৬৭), ‘তত্ত্ববিদ্যাসার’ (১৯৬৬), ‘দি প্যারাবুলস অব দি ইস্ট এবং মাই’ (১৯৮৪) গ্রন্থগুলো। ১৯৮৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ এবং ২০০৮ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ (মরণোত্তর) প্রদান করেন। দর্শন শাস্ত্রে অবদানের জন্য তিনি দর্শন সাগর উপাধি পান।

সুতরাং শহীদ অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব পুরকায়স্থ তাঁর জীবনব্যাপী সাধনায় মানবদর্শনের রূপরেখা আমাদের সামনে উপস্থাপন করে গেছেন। এখন আমাদের উচিত, তাঁর দর্শনভাবনায় প্রাণিত হয়ে মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা। তাহলেই তাঁর পবিত্র আত্মা শান্তি লাভ করবে। পরিশেষের ২৫ মার্চের সকল শহীদসহ বুদ্ধিজীবী ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব এর ৫৩ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test