E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আশুতোষ মুখার্জীকে নিয়ে বিষোদগার অমার্জনীয় অপরাধ

২০২৪ এপ্রিল ০৬ ১৬:৩৪:৩৬
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আশুতোষ মুখার্জীকে নিয়ে বিষোদগার অমার্জনীয় অপরাধ

কামরুল ইসলাম


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা নিয়ে বঙ্গভঙ্গের পক্ষের উত্তরাধিকাররা, হাল আমলের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতি বিরোধীরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে  বিষোদগারে লিপ্ত হয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০ একর জমি দিয়েছেন এবং নবাব পরিবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন।  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়সহ গোঁড়া হিন্দুরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন। এই অভিযোগ তুলে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কট্টর ডানপন্থীরা একের পর এক মিথ্যাচার করছেন। সেই মিথ্যাচারে সুবিধাপন্থী 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'র কথিত কতিপয় লেখকরা উস্কে দিয়ে বলছেন, রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা নিয়ে জনশ্রুতি আছে। তথ্যপ্রমাণ হীন এমন প্রচেষ্টা যারা করছেন, তারা কৌশলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে জ্ঞানতীর্থ বিদ্যাঙ্গনকে কলুষিত করতে তৎপর হয়েছে। ইদানিং বহু তর্কবিতর্ক লক্ষ্য করছি, যা অপ্রয়োজনীয় আবর্জনার মতো। 

প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাডলার কমিশনের সুপারিশকে আলোচনায় আনতে চাই। সাডলার কমিশনের ইতিবাচক সুপারিশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯১৭ সালে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ড. মাইকেল সাডলারকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিশন গঠিত হয়। সেই কমিশনের সদস্য ছিলেন– স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ড. জিয়া উদ্ দীন আহমদ, স্যার ফিলিপ হার্টগ, ড. গ্রেগরী, অধ্যাপক রামজে মুর। Britinnica-য় উল্লেখ আছে, '1917 the government appointed the Sadler Commission to inquire into the conditions and propects of the University of Calcutta, an inquiry that was in reality nationalwide scope.'

এই কমিশন ১৯১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ইতিবাচক সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন। কলকাতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প কার্যক্রমে উপাচার্য হিসেবে ১৯২০ সালের ১লা ডিসেম্বর যোগ দেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্ট্রার স্যার ফিলিপ হার্টগ। প্রকল্প কার্যক্রমের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিষয়ক অধ্যাদেশ ভারতীয় আইন সভায় গৃহিত হয়। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ( Dacca University Act of 1920, Act No. XV111, was passed by the Legislative Council that recieved the the assent of Governor General on 23 March. Source:www.du.ac.bd) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন গৃহিত হবার পর কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে মতামত গৃহীত হয়।

উদারপন্থী ইহুদি বংশোদ্ভূত শিক্ষানুরাগী পরিবারে জন্ম স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগের প্রচেষ্টায় একটি আন্তর্জাতিক মানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্যার হার্টগ তাঁর 'Some Aspects of Indian Education – Past & Present' গ্রন্থে ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাসহ বিবিধ বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রাক পর্বের ইতিহাস প্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৮৯৯ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্বরত ছিলেন। এই সময় তিনি বঙ্গভঙ্গের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাকে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়, ১) পশ্চিমবঙ্গ, ২) পূর্ববঙ্গ ও আসাম। লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরূদ্ধে আন্দোলন, যা 'স্বদেশী আন্দোলনে' পরিণত হয়। এই আন্দোলন রীতিমতো বৃটিশদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে।

এ ছাড়াও লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালে 'ইউনিভার্সিটি এ্যাক্টে'র সংশোধনের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের উপর অযাচিত বিধি আরোপ করে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা লংঘন করেন। একই সাথে 'ইউনিভার্সিটিজ এ্যাক্টে'র মাধ্যমে সরকার থেকে মনোনীত অধিকসংখ্যক সদস্যরা স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্তি হতে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাতা, অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কঠোর শর্তাবলী যুক্ত করা হয়। যাকে রাজনৈতিক ভাষায় বলতে হয়, সাম্রাজ্যবাদের নগ্নরূপ।
বঙ্গভঙ্গের বিরূদ্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ সচেতন বাঙালি ও বুদ্ধিজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হন। বাংলার দেশপ্রেমিক সাহসী যুবকেরা স্বদেশী আন্দোলন ঝাঁপিয়ে পড়ে। বৃটিশদের ভাষায় এটিকে বলা হয় সন্ত্রাসবাদ।

বৃটিশরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে তাদের সমর্থক সৃষ্টি করার কৌশল নেয়। সেই কৌশলের সুবিধাভোগী ঢাকার নবাবরা। বাণিজ্যিক স্বার্থে বৃটিশরা বাংলাকে ভাগ করার প্রচেষ্টার পক্ষে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বঙ্গভঙ্গের মধ্যেই বৃটিশরা হিন্দু ও মুসলিম বিরোধ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। সেই প্রচেষ্টায় আংশিক সাফল্য লাভ করেন ঢাকার নবাবদের দ্বারা। এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য উল্লেখ করেছেন। নবাবরা বৃটিশ শাসকদের নিকট থেকে ১লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য পেয়েছিল। কিন্তু বাংলার সিংহভাগ জনগণ বঙ্গভঙ্গকে প্রতিরোধ করে। যার ফলশ্রুতিতে লর্ড কার্জন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

লক্ষ্য করা যায়, মুসলিম সমাজের উন্নতির নামে হিন্দু বৈরিতার সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ১৯০৬ সালে ঢাকায় সম্মিলনের মাধ্যমে নবাব সলিমুল্লাহ 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠন করেন। এই সম্মেলনে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নিন্দাসহ প্রতিবাদ জানানো হয়।

ভারতের বুদ্ধিজীবী প্রগতিশীল এবং উদারচিন্তার মুসলিম নেতৃবৃন্দ নবাব সলিমুল্লাহ'র বঙ্গভঙ্গ সমর্থনকে নিন্দা জানায়। জনগণ বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে থাকে, যা বৃহৎ আন্দোলনে রূপ নিতে থাকে। বৃটিশ শাসকরা আন্দোলনের কারণে ১৯১১সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত করতে বাধ্য হয়। ঢাকার নবাবদের সাথে জনগণের বিস্তর দূরত্ব বেড়ে যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কৌশল হিসেবে ঢাকায় মুসলিমদের জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দাবী নিয়ে নবাব সলিমুল্লাহ সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় তিনি অগ্রসর হতে পারেননি। এসময় বাংলার জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবসহ প্রধান ভূমিকা রাখেন। কারণ শেরে বাংলার নাম পুরো ভারত জুড়েই বিস্তৃত ছিল।

১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিজ ঢাকায় আসেন। এই সময় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে নবাব সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীসহ ১৯সদস্যের প্রতিনিধি দেখা করেন। লর্ড হার্ডিজ পূর্ব বাংলার সুযোগ সুবিধাসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যুক্তি অবহিত হন। ২৭ মে স্যার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি তিনি গঠন করেন। এই কমিটির সদস্যরা হলেন– ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওাব আলী চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিতমোহন চট্ট্যোপাধ্যায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ এ.টি আচির্বলভ, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক শামসুল ওলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী ( আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর জেমস, অধ্যাপক সি ডব্লিউ পিক, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য। এই কমিশন গঠিত হবার পর দেখা দেয় বিশ্বব্যাপি প্রথম মহাযুদ্ধ। বৃটিশরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তথাপি নাথান কমিটি ৪০০ একর জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের মতামত দেন। এই জায়গা ছিল-ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট সেন্ট্রাল হাউস, সেক্রেটারিয়েট ও গর্ভনমেন্ট প্রেস। উল্লেখ্য ১৯২১ সালে রমনা এলাকায় পূর্ববঙ্গ ও আসামের পরিত্যক্ত ভবনসহ ৬০০ একর জমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান তাঁর আলোচনায় বিষয়টির সত্যতা উপস্থাপন করেন। আর নবাব সলিমুল্লাহ'র জমি দানকে ' এটা মিথ্যাচার গল্প' বলে অভিহিত করেন। বঙ্গভঙ্গের পরবর্তী উত্তরাধিকাররা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শিক্ষাবিদ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মিথ্যাচারের একটি গল্পকে বার বার উপস্থাপন করছেন।

প্রথমেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে আলোচনা তুলে ধরছি। তথ্য উপাত্তে কেউ কোন প্রমাণ তুলে ধরতে পারেননি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছেন। গড়ের মাঠের মিথ্যা গল্প দিয়ে কবিগুরুকে কলুষিত করার চক্রান্ত অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি। কারণ কবিগুরু সেই সময় পূর্ববাংলায় ছিলেন। তার তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রচুর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। গড়ের মাঠের গল্প যখন মিথ্যা প্রমাণিত হলো, তখন ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলরা বলতে থাকে–১. জনশ্রুতি আছে, ২. কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যাঁদের সাথে ওঠাবসা করতেন তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন।

এই নিবন্ধে ২টি কমিটির সদস্যদের নাম দেয়া হয়েছে। তাঁরাওতো কবিগুরুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মিথ্যাচারের মূল লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই সংগীতটি স্বদেশী আন্দোলনের সময় রচিত হয়েছে। কবিগুরুকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাকারী হিসেবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে দ্বিতীয় আন্দোলন হবে জাতীয় সংগীত বর্জন ও পরিবর্তনের। ডানপন্থী লেখক বুদ্ধিজীবীদের চক্রান্ত সকলেই বুঝতে পেরেছেন। তাদের ধারাবাহিক ব্যাখ্যা ইতিহাসের বিকৃতি বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এমন একজন বাঙালি, যাঁকে শিক্ষাবিদ, বাংলার বাঘ বলা হয়। তিনি পুরো ভারতবর্ষে সেই সময় আলো ছড়িয়েছেন। এমনকি বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করবেন? প্রশ্নটি নিয়ে কিছু তথ্য অনুসন্ধান করলাম।

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ১৯০৬-১৯১৪ এবং ১৯২১-১৯২৩ সালে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ১৮৫৭ সালে বড় লাট কার্নিং ভারতে 'দ্য এ্যক্ট অব ইনকরপোরেশন' পাশ করার মধ্য দিয়ে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের সূচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে কলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শিক্ষা বিস্তারের পথ সুগম হয়।

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁর মেধার কারণে ১৮৮৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হন। তিনি গণিতবিদ হিসেবে ১৮৮৭-৮৯ সাল পর্যন্ত গণিতের উপর একাধিক বক্তব্য রেখেছেন। ১৯০৪ সালে বিচারপতি হিসেবে চাকুরিতে যোগ দেন। ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন যখন তুঙ্গে তিনি তাঁর মেধা মননের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হন। তিনিই লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংকোচন নীতি এবং কঠোর বিধি নিষেধের অধ্যাদেশের বিরোধিতা করেন। কলকাতার বিদ্ব্যৎ সমাজ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনুদানে বিধি নিষেধের ফলে, একটা সমাবর্তনে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ' চাই না টাকা। না খেয়ে থাকব। আমাদের মাস্টারমশাইরা না খেয়ে থাকবেন, তাও দাসত্ব স্বীকার করবেন না। ফ্রিডম ফার্স্ট, ফ্রিডম সেকেন্ড, ফ্রিডম অলওয়েজ...।" [শিশির রায়, আনন্দবাজার, ০২ মার্চ ২০১৯]

বৃটিশ শাসকরা অর্থের ছাড় প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা, কঠোর বিধি নিষেধের বহিঃপ্রকাশ স্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপ করতে থাকে । আর্থিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে। বৃটিশরা বঙ্গভঙ্গ রদের সময় কলকাতার বিদ্ব্যৎসাহী সমাজের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর যে আচরণ সৃষ্টি করে তা নিশ্চয়ই কাম্য নয়। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই সময় বৃটিশদের উপরও চাপ প্রয়োগ করেন। সেই চাপ ছিলো, অন্যত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর বিধি নিষেধ প্রত্যাহার, আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি এবং উচ্চশিক্ষার জন্য কয়েকটি অধ্যাপক পদ সৃষ্টিতে ছাড়পত্র দিতে হবে। এই দাবী নিশ্চয়ই যৌক্তিক। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানের এরূপ দায়িত্বজ্ঞান সময় উপযোগী ও প্রশংসনীয় বলে মনে করি।

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ই 'সাডলার কমিশনের সদস্য হিসেবে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি পাঠক্রমসহ শিক্ষক নিয়োগে পরামর্শ ও ভূমিকা রাখেন, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত একটি গর্বিত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন, মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, অধ্যাপক এফ সি টার্নফ, অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার, অধ্যাপক জি এইচ ল্যাঙলি, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্সহ খ্যাতিমান শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধসহ সকলের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত রাখা হয়।

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বাংলা ভাষার নিদর্শন সংগ্রহ, গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ, বাংলায় গণিতসহ বিজ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য যে ভূমিকা রেখেছেন, তা একটু তুলে ধরা যেতে পারে:

১. ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে তিনি রেজিস্ট্রারকে এফ.এ, বি.এ, এম.এ, স্তরে দেশীয় ভাষা প্রচলনের প্রস্তাব দেন। পরে সেটি সিনেট সভায় আলোচিত হয়। তাঁর প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেন, মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ আনন্দ মোহন বসু। কিন্তু সিনেটে প্রস্তাবটি ১১-১৭ ভোটে বাতিল হয়ে যায়।

২. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, প্রাচীন ভারত, ইসলামিক ইতিহাস, সংস্কৃতি, ফলিত রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাঁর সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন, অধ্যাপক সি ভি রমন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা, অধ্যাপক হাসান সুরাবর্দি, অধ্যাপক জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, অধ্যাপক গণেশ প্রসাদসহ প্রমুখ।

৩. বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির নিদর্শন সংগ্রহ, প্রকাশে তাঁর অসামান্য অবদান তুলে ধরেছেন আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন। তিনি উৎসর্গ পত্রে লিখেছেন, 'যাঁহার উৎসাহ ভিন্ন এই পালাগানগুলি সংগৃহীত হইতো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোর দুর্দ্দিনেও যিনি উচ্চ শিক্ষাকল্পে আমাদের প্রযত্ন একদিনের জন্য শিথিল হইতে দেন নাই, সেই অপরাজেয় কর্ম্মবীর, বঙ্গ-ভারতীর আশ্রয়তরু, জ্ঞানরাজ্যের কল্পবৃক্ষ স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সিএসআই, এম.এ, ডি.এল, ডি.এস.সি, পি-এইচডি. মহোদয়ের করকমলে ভক্তির এই সামান্য অর্ঘ্য 'মৈমনসিংহ-গীতিকা' অর্পিত হইল।' শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন, ২৪ নভেম্বর ১৯২৩। এইভাবে তিনি বাংলা ভাষার গবেষণা গ্রন্থ প্রণয়নে সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী অবদান রেখেছেন।

৪. স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে ক্যালকাটা ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ দেশে বিদেশের গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বহু শিক্ষা সংক্রান্ত সোসাইটির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহের বই, পত্রিকা ৮০ হাজারের উপর, যা কলকাতা ন্যাশন্যাল লাইব্রেরিতে 'আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সংগ্রহশালায়' সংরক্ষিত আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকে নিয়ে ডানপন্থী লেখকরা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে বিতর্কে নিয়ে মূলতঃ কট্টর মিথ্যাচার করছেন। তাঁরা ইতিহাসের সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করতে চায়। কবিগুরু কতটা উদার ছিলেন, তা সকলেই জানেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর কবিগুরু ঢাকায় আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। ঢাকার নবাবদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন। ১৯২৬ সালে কবিগুরুর সংবর্ধনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ হল, জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা মিউনিসিপালিটি, হিন্দু মুসলিম সেবা সংঘ, ঢা.বি ছাত্র সংসদ সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৩৬ সালে কবিগুরুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডি.লিট সম্মাননায় ভূষিত করেন।

নবাব সলিমুল্লাহ ১৯১৫ সালে ১৬ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। নবাবদের কিছু অবদান অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে। সেইসব অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁদের নামে হল, মেডিকেল কলেজ বিদ্যমান আছে। যেমন – স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। এই হলটি ১৯২১ সালে মুসলিম হল নামে পরিচিত ছিলো। ১০ বছর আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দীর প্রস্তাবে 'সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ' নামকরণ করা হয়।

ঢাকার কালেক্টর রবার্ট মিডফোর্ড ১৮২০ সালে মিডফোর্ড হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেন । ১৮৩৬ সালে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি হাসপাতালের জন্য দান করেন। তাঁর মৃত্যুর পর লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৮ সালে হাসাপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৫৭ সালে ঢাকা মেডিকেল স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। এই স্কুলে ১৯০৩ সালে নবাব সলিমুল্লাহ প্রসূতি ও মহিলা বিভাগের জন্য অনুদান প্রদান করেন। ১৯৬২ সালে স্কুলটি ঢাকা মিডফোর্ড মেডিকেল কলেজ নামে পাঠদান শুরু করে। একবছর পর ১৯৬৩ সালে নাম পরিবর্তন করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ করা হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের নাম 'স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতাল'।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবকারীদের একজন সদস্য হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন সলিমুল্লাহ। কিন্তু জমি দানের কোন তথ্য কেউ পায়নি।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিম ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পূর্ববঙ্গীয় সমাজ', সৈয়দ আবিল মকসুদ প্রণীত ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা' গ্রন্থ দুটিতে বিশদ আলোচনা পড়লে সকলেই অনুধাবন করতে পারবেন।

নবাব সলিমুল্লাহকে কবিগুরুর প্রতিপক্ষরূপে দাড় করানোর একটি চক্রান্ত বলে মনে হয়েছে। যারা করছেন, তারা যে সলিমুল্লাহকে ভালোবেসে করছেন, তা কিন্তু নয়। নবাব পরিবারের উত্তরাধিকারীরাও লজ্জা পাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা নিয়ে এই সময় যাঁরা পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী। কট্টর ডানপন্থীরা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, রাষ্ট্র সৃষ্টির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে চায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তের পর ডানপন্থীরা মিথ্যাচার করেছে। এরাই একসময় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কাফের হিসেবে ফতোয়া দিয়েছে। হাল আমলে অসাম্প্রদায়িক প্রতিভাধর সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে 'মুসলিম পন্থী' কবি হিসেবে তুলে ধরার খণ্ডিত অপপ্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কবিগুরুর প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে অসংলগ্ন লেখা মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করা যায়। গতকালও সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরআন শরীফের প্রথম অনুবাদক গিরিশচন্দ্রকে নিয়ে মিথ্যাচার নিবন্ধ একজন পণ্ডিত ব্যক্তি শেয়ার করেছিলেন। সেই মিথ্যাচারে পূর্ণ নিবন্ধটির সূত্র হিসেবে দৈনিক সংগ্রাম, জিবব্রাইলের ডানা, আল মদিনা, সাইবার-মোজাহিদ দেখে বিস্মিত হলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য, এই সমস্ত কথিত পণ্ডিততুল্য ব্যক্তিরাই মিথ্যাচারকে উস্কে দিয়ে ডানপন্থীদের উৎসাহিত করছেন। তাদের অনুসারিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতায় কবিগুরুর সংশ্লিষ্টতাকে 'জনশ্রুতি' বলে প্রকারান্তরে মিথ্যাচারের পক্ষে অবস্থানকে সদর্পে জানিয়ে দিতে চায়।

বাংলাদেশ কেন, সকল দেশেই মিথ্যাচার, গুজব অমার্জনীয় অপরাধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা নিয়ে যারা প্রপাগাণ্ডা সৃষ্টি করছেন, তাদের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। বাংলাদেশে কোন গুজব, মিথ্যাচার, প্রপাগাণ্ডা জনগণ বিশ্বাস করে না। শৈশবে গৃহশিক্ষক 'বলাই পণ্ডিতের উচ্চারিত বাণীটা মনে পড়ে গেলো– 'সত্যং বদ, ধম্যং চর। স্বাধ্যায়নে মা প্রমদঃ। সত্যান্ন প্রমদিতব্যম। ধর্মান্ন ভব। আচার্যদেবো ভব। অস্মাভব পরশুর্ভব। হিরণ্যমস্তৃত্যং ভব। শত্যং শরদ আয়ুষো জীব সৌম'। যার অর্থ হলো– 'সত্য কথা বলবে। ন্যায় আচরণ করবে। বিদ্যাচর্চার পথ বর্জন করবে না। সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ো না। ন্যায় আচরণের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ো না। সৎ ভিন্ন অন্য পথে যেও না। পিতা মাতা গুরুকে দেবতা জ্ঞান করবে।'

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স) এর একটি উদ্ধৃতি তিনি বলতেন, 'জ্ঞানী মানুষকে সত্য -মিথ্যা, ভালো- মন্দ, ধর্ম-অধর্ম প্রভৃতি বিচারের সক্ষমতা দান করে। জ্ঞানার্জন কর।'

বর্তমানে যারা মিথ্যাচার করছেন, তাদের কোন যুক্তি নেই। যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে, লিখে যাচ্ছে। এসব বিভ্রান্তি থেকে পাঠকরা সচেতন থাকবেন বলে প্রত্যাশা

করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কিছু বিষয়ে তথ্যাদিসহ আলোচনা উপস্থাপন করলাম। সকলেই যুক্তিবোধের দ্বারা পরিচালিত হবেন। যাঁরা প্রাচ্যের বিদ্যাতীর্থ 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক : কবি ও সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test