E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তবে কি জামায়াতই লিলনের খুনি ?

২০১৪ নভেম্বর ১৬ ২০:০৯:৩৯
তবে কি জামায়াতই লিলনের খুনি ?

সুনন্দা নাসরিন : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জঙ্গী সংগঠন জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ’ এর জঙ্গীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলামকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

তবে এই নামে বাংলাদেশে কোনো সংগঠনের কার্যক্রম আছে কি না-সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টীমের প্রতিষ্ঠাতা জসীমউদ্দীন রাহমানী জামায়াতের সংগঠক ছিলেন। একই ভাবে প্রতিটি জঙ্গী সংগঠনের সাথে জামায়াতের গভীর সম্পৃক্ততা গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে এসেছে বারবার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ভয়ংকর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলাম বরাবরই জামায়াতের টার্গেট ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি সহকর্মীদের বলেছেন জামায়াতের হুমকির কথা।

এ কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সন্দেহের তীর জামায়াতের দিকেই। তবে পুলিশের নজর অন্য দিকে সরিয়ে দিতে ফেসবুকে পেইজ খুলে এভাবে এ কে এম শফিউল ইসলামকে হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী পুলিশ। তবে এই নামে বাংলাদেশে কোনো সংগঠনের কার্যক্রম আছে কি না- সে বিষয়ে প্রশাসন এখনো নিশ্চিত নয় বলছেন গোয়েন্দারা। তবে যে কারণেই এই অধ্যাপককে হত্যা করা হয়ে থাকুক না কেন তা উদঘাটন করা হবে বলেছেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।

'আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২' নামের ফেইসবুক পাতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করা হয়েছে, যে পৃষ্ঠাটি খোলা হয়েছে হত্যাকান্ডের প্রায় ৫ ঘন্টা পর। এই পাতায় প্রথম পোস্টেই দাবি করা হয়েছে,'আমাদের মুজাহিদীনরা আজকে রাজশাহীতে এক মুরতাদকে কতল করেছেন যে তার ডিপার্টমেন্টে ও ক্লাসে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছিল।' আর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ ওই পৃষ্ঠায় নিজেদের পরিচয়ে বলেছে, 'উই আর দি হেল্পারস অব শরিয়া ইন বাংলাদেশ।উই আর মুজাহিদিন সাবিলিল্লাহ।'

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এমন একজন মেধাবী শিক্ষককে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, ঘাতকেরা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের,নাকি কোন জঙ্গী সংগঠনের- তা তদন্তে মাঠে নেমেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

লিংকে ফেসবুকের পোস্টে কালো প্রেক্ষাপটে শফিউল ইসলামের ছবি দিয়ে তার ওপর লাল কালিতে ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। ছবির নিচে লেখা হয়েছে- এ কে এম শফিউল ইসলাম (ফাইল ক্লোজড)/ অপরাধ এপ্রিল ২০১০/ শাস্তি প্রদান নভেম্বর ২০১৪। এরপর ইংরেজিতে লেখা হয়েছে- 'উই ডোন্ট ফরগেট। ইনশাল্লাহ উই উইল নট ফরগেট আদারস।' এই আদার্স বা ‘অন্যরা’ কারা? তাদের নাম পৃষ্ঠার শুরুতেই মুছে ফেলা হয়েছে। ফেসবুক পৃষ্ঠার কভার ফটোতে মোট পাঁচটি ছবি দিয়ে তিনটি লাল রঙে আড়াআড়ি ‘ক্রস’ চিহ্ন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে। নিচের সারিতে ব্লগার রাজীব হায়দার, আশরাফুল আলম ও শফিউল ইসলামের ছবি লাল কালিতে কেটে দিয়ে নিচে লেখা হয়েছে ‘খতম’। ওপরের দুটি ছবিতে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন ও রাকিব মামুনের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে ‘প্রথম প্রচেষ্টা: সমাপ্ত, দ্বিতীয় প্রচেষ্টা: আসছে...!’ এ পৃষ্ঠায় হুমকি দেওয়া হয়েছে- “ইসলাম বিরোধী সকল নাস্তিক-মুরতাদ সাবধান !!!”

জামায়াতের ছাত্র শাখা শিবিরের ক্যাডারদের দিকে যখন শফিউল ইসলামের হত্যার অভিযোগের আঙ্গুল পুলিশের নজর অন্য দিকে সরিয়ে দিতে ফেসবুকে পেইজ খুলে এভাবে দায় স্বীকার করা হচ্ছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী পুলিশ এবং গোয়েন্দারা।

এই পৃষ্ঠায় হাতে গোনা যে কটি পোস্ট আছে তার মধ্যে কয়েকটিতে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদনের বরাত দেওয়া হয়েছে। একটি পোস্টে লেখা হয়েছে “সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি থাকার সময় অধ্যাপক শফিউল ইসলাম দাড়ি কাটা এবং পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তে শিক্ষক নিয়োগ করে। বোরকা পরে ছাত্রীদের ক্লাসে আসা নিষিদ্ধ করে। এতে অনেক ছাত্রীকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বোরকা ছাড়তে হয়েছে।' আনসার আল-ইসলাম ইরাক ও সিরিয়ার সক্রিয় একটি ইসলামী জঙ্গি সংগঠন, যারা সালাফি মতাদর্শের অনুসারী এবং ‘শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার’ নামে জঙ্গি কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

আনসার-আল-ইসলাম নামে বাংলায় ফেসবুক পৃষ্ঠাটি খোলা হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। আর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামের ফেইসবুক পৃষ্ঠাটি খোলা হয়েছে শনিবার(১৫ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে। এর আগে বিকাল ৩টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে (৪৮) ক্যাম্পাস সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকার বাসায় ফেরার পথে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন,“আনসার-আল-ইসলাম নামের কোনো সংগঠনের কথা আমাদের জানা নেই। জঙ্গীরা নতুন নতুন সংগঠন তৈরি করে পুলিশের নজর এড়াতে।সেক্ষত্রে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ নামে কোনো সংগঠনের নামে প্রচারণা চালাতে পারে জঙ্গীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত শিবিরের ক্যাডারদের হাতে খুন হওয়া তৃতীয় শিক্ষক শফিউল ইসলাম লিলন। বগুড়ার বাসিন্দা অধ্যাপক শফিউল ইসলাম লিলন বাউল সাধক লালনের ভক্ত ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েন।

এর আগে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে তার ক্যাম্পাসের বাসায় হত্যা করে লাশ বাসার পাশের ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তার আগে ২০০৪ সালে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর গ্রামে খুন হয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনূস আলী। তাকে হত্যার দায়ে শিবিরের দুই জঙ্গির মৃত্যুদন্ড হয়।

লেখক : সংবাদকর্মী।

(ওএস/অ/নভেম্বর ১৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test