E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নয়, ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরী

২০১৪ নভেম্বর ২৮ ২০:১৮:১৫
গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নয়, ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরী

মো. আতিকুর রহমান : প্রতিবারই উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর কথা বলে বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। মূলত: সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর লাগামহীন দুর্নীতি, অপব্যয় ও তাদের নীতিমালা বহিঃভ’ত অধিক বিলাসী ব্যয়ের খর্গ মূল্যবৃদ্ধির নামে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ জনগণের ঘাড়ে। তা বইবার ক্ষমতা সাধারণ জনগণের আছে কি নেই, তা যেন দেখার কেউ নেই? বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন তিনগুন বৃদ্ধি এবং তেল-গ্যাসের নতুন নতুন সন্ধান মেলার পরেও এসবের মূল্য বৃদ্ধির পায়ঁতারা জাতির জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। বিশেষ করে গ্রাহকের অর্থে পরিচালিত সংশ্লিষ্ট সেবামূলক কোম্পানিগুলোর অধিক দূর্নীতি ও অপব্যয়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগহীন এলাকায় এলপি গ্যাসের দাম বেশী, মানুষের আয় বৃদ্ধি, অপচয় রোধের কথা বলে দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যা আমাদের মতো সাধারণ জনগণের জন্য অধিক উদ্বেগের কারণ। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে তেলের দামো কম, তাই দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য না বাড়িয়ে ভোক্তাদের অর্থে পরিচালিত উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিক দূর্নীতি ও ব্যয় সংকোচনে আর্থিক শৃঙ্খলা আনায়নের দিকে নীতি-নির্ধারকদের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া জরুরী। যা গ্রাহকদের অধিক মূল্য পরিশোধের ভোগান্তি কিছুটা হলেও রোধ করা সক্ষম হবে। তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাসে বিলাসী ব্যয় সংকোচনে বাংলাদেশ ব্যাংক মোটর কার ও জিপ ক্রয় এবং বিশেষ সাজসজ্জার করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যয় নিরূপনের দিকনির্দেশনা দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করি। তবে এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেইদিকে সংশ্লিষ্টদের অধিক নজর দিতে হবে। 

যদিও বর্তমান বাস্তবতায় সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে অধিক গুরুত্ব না দিয়ে সকল প্রকার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির যে পাঁয়তারা করছে এর আর্থিক চাপ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলবে। যা সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগের পরিস্থিতি নাজুক করে ফেলবে। যাতায়াত ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় পড়বে বিরূপ প্রভাব। মূল্যবৃদ্ধির সুযোগে পরিবহণ মালিকরা ইচ্ছা মতো ভাড়া বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে। কেননা এদেশে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ সময় সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতাই অধিক পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়াও উৎপাদনমুখি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, তৈরী পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য সকল শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিঘিœত করবে। ইতিমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এখন এক কেজি সবজি ৪০ টাকা নিচে আর কেনা সম্ভব হয় না। এমন এক বাস্তবতায় নতুন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কথা শুনে কেউই তেমন শান্তিতে ও স্বস্তিতে থাকতে পারবে না। একদিকে মূল্যস্ফতির কারণে অভাব-অনটন তো রয়েছে, তারমধ্যে দফায়-দফায় বাড়ীভাড়া, পরিবহণ ভাড়া ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের অভাব, ইত্যাদি গরিব ও নি¤œবিত্ত মানুষগুলোর কষ্টের মাত্রা আরো শতগুন বাড়িয়ে দিবে। যা কারো জন্যই কাম্য হতে পারে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে জনগণ আরো দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। ফলে বর্তমান সরকার দেশকে অনাহার ও দারিদ্র্যমুক্ত করার যে চিন্তা-ভাবনা করছে, তা এক কথায় বিফলে যাবে। তাই হুটহাট করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য না বাড়িয়ে এইগুলোর অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করাসহ সীমাহীন ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা যায় সেই ব্যাপারে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এইগুলোর উৎপাদন ও মজুদ কিভাবে বৃদ্ধিসহ বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে উক্ত সংকট মোকাবেলা করা যায়, সেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে। যা হয়তো বা মূল্যবৃদ্ধির চাইতেও হবে অধিক কার্যকর।

যদিও ইতিমধ্যেই জ্বালানী সংকট মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ওপর অধিক জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিপরীতে আমরা সীমিত ব্যবহারযোগ্য গ্যাস ও কয়লার মজুদ রেখে নবায়ণযোগ্য জ্বালানি উৎসগুলোর উপর অধিক গুরুত্ব না দিয়ে বরং দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, অপরিকল্পিত হারে দফায় দফায় এইগুলো মূল্য বৃদ্ধি, পাবলিক ও প্রাইভেট পরিবহনে একই মূল্যে গ্যাস সরবরাহ, গাড়ীতে সিএনজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে ব্যর্থতা, বাসাবাড়ীতে রান্নার কাজে মাত্র একটি দিয়াশলাই কাঠি বাঁচাতে গিয়ে একধরনের গ্রাহকের দ্বারা সারাদিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখার প্রবণতা, ৪০০ টাকা গ্যাস বিল প্রদানের বিপরিতে সীমাহীন গ্যাস ব্যবহারের হীনপ্রবণতা, অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের যোগসায়োশে অবৈধ সংযোগ প্রদান ও অর্থ জালিয়াতি, গ্যাস ও কয়লা অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে সংশ্লিষ্টদের অধিক ব্যর্থতা, বোতলজাত এলজি গ্যাস ও সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্যের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর বিলাসবহুল ব্যয় নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা না থাকা, প্রকৃত মূল্য নির্ধারনে ব্যর্থতা, কয়লা নীতিমালা বাস্তবায়ন না হওয়া, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিক অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে জ্বালানি ঘাটতি পূরণে সংশ্লিষ্টদের অধিক উদাসিনতা, উক্ত খাতে বিনিয়োগকারী আকৃষ্টকরণে অধিক ব্যর্থতা, সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সাথে অস্বচ্ছ চুক্তি সম্পাদন এবং তাদের দ্বারা অধিক ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি অধিক জনসংখ্যা ও শিল্প-কারখানা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে চাহিদা মেটাতে ব্যর্থতার ফলে উক্ত সংকট যেভাবে ঘনীভূত হচ্ছে, তা হয়তো-বা সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। যা ভোক্তাদের স্বাভাবিক চাহিদাকে বিঘিœত করবে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি এবং উৎপাদনমুখী শিল্পের কার্যক্রম ব্যহত হবে। তাই সময় থাকতেই সংশ্লিষ্টদের উচিত এইগুলোর অবৈধ, যত্রতত্র ও সীমাহীন ব্যবহারের ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ আনা, অহেতুক ব্যবহার বন্ধে গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বর্তমান স্বল্প মজুদের ওপর নিজেদের অধিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বারোপ করা জরুরী। যা দেশ ও জাতিকে বিরাজমান ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে সক্ষম হবে। যদিও ইতিপূর্বে সরকার বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় বিদ্যুৎ সংযোগের শর্ত আরোপ করে বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ লোডের বিপরিতে সৌর প্যানেল স্থাপন বাধ্যতামূলক করে ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ভোক্তাদের চতুরতা এবং একশ্রেণীর ব্যবসায়িক ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর যোগসাজশে সোলার প্যালেল ভাড়া দেওয়ার হীনপ্রবণতা এবং সংযোগ পাওয়ার পর প্যানেল সরিয়ে নেওয়ার ফলে উক্ত শর্তের কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি, যা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করি। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারকে শর্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে আগে দূর্নীতিমূক্ত করতে হবে। যা কিছুটা হলেও উক্ত শর্তের কাঙ্খিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

ইতিমধ্যেই রাজধানীসহ সারাদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যে তীব্র সংকট ও হাহাকার পরিলক্ষিত হয়েছে এবং উক্ত বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখিও হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের লোড শেডিং, গ্যাস রেশনিং, গ্যাসের জন্য সিএনজি ষ্টেশনে লম্বা লাইন দিয়ে অলস বসে থাকা, গৃস্থথলীয় রান্নাবান্না ও শিল্প কারখানায় উৎপাদন কাজে তীব্র সংকট, অবৈধ সংযোগ ও দূর্নীতি মতো এমন অনেক ঘটনা যেন প্রতিদিনকার স্বাভাবিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে, যা কাম্য নয়। এখনিই যদি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের তরফ হতে গ্যাস ও কয়লার খনিজ অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস যেমন-সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ শক্তি, জলস্্েরাত প্রবাহ শক্তি, হাইড্রোজেন শক্তি ও জৈব গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ ও সরবরাহকৃত গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবহারের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা সম্ভব না হয়, তবে তা হবে দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ। এক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব সংকট নিরশনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের তরফ হতে সবধরনের উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

এক্ষেত্রে চাহিদানুয়ায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত সরকারকে নতুন করে আর কোন সংযোগ প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গণপরিবহণ বাদে সকল প্রাইভেট পরিবহণের জন্য গ্যাস নিদ্ধিত করতে হবে। প্রাইভেট পরিবহনের জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে বাসাবাড়ী ও আবাসিক শ্রেণীভূক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ নতুনের ক্ষেত্রে যেমন- বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ফ্ল্যাট বা কলোনিসমূহ এবং অব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত ছাত্রবাস, ল্যাবরেটরিজ, কেন্টিন, হাসপাতাল, মেস, শিশুসদন, ডাকবাংলা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, খাবার হোটেলগুলোতে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহারের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে সরকারকে সরবরাহকৃত গ্যাসের মাসিক মূল্যের চাইতে ক্রয়কৃত বোতলজাত গ্যাসের মূল্য কিছুটা হলেও কম নির্ধারন করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারী ক্রয়ে উৎসাহিত হয়। ক্রয়মূল্য নির্ধারনের আগে বিলাসী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে আনুষাঙ্গিক ব্যয় সমন্বয় করে যৌক্তিক পর্যায়ে প্রকৃতমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। গ্যাসের সীমাহীন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের মতো গ্যাস ব্যবহারকারীদেরকেও কার্ড এর আওতায় আনতে হবে। এতে গ্রাহকদের মাঝে এর যত্রতত্র ব্যবহার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি শিল্প কারখানায় চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে গ্যাস সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি কারখানায় আলাদা রির্জাভট্যাংগ তৈরী করতে হবে এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উক্ত কারখানায় প্রতিদিন চাহিদানুয়ায়ী গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কারখানাগুলোর গ্যাস ক্রয়ের ক্ষমতা সহনিয় পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিক দূর্নীতি, অবৈধ সংযোগপ্রদান, অর্থ জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি ও সেবাপ্রদানে অধিক বিলম্ব ও ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এখনও দেশে আনাচে-কানাচে যেসব স্থানে অবৈধ সংযোগ রয়েছে তা দ্রুত খুঁজে বের করে স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে এবং উক্ত কাজে সচেতন জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিক অবৈধ কাজ পরিহারে দোষীদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির বিধান ও তা দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অধিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে গ্যাস ও কয়লা খনিজ অনুসন্ধান ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে সংশ্লিষ্টদের অধিক মনোনিবেশ করতে হবে। কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা দ্রুত নিশ্চিত করা সরকারের নীতিনির্ধারকদের অন্যতম ও প্রধান নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। এই ক্ষেত্রে সরকারকেই দৃশ্যত সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। এরপরও যদি সরকার ও সংশ্লিষ্টরা উক্ত কাজ বাস্তবায়নে অধিক ব্যর্থতার পরিচয় দেয়, তবে উক্ত সংকট জনজীবনে মহামারি আকারে বিরাজ করবে। যা দেশের সার্বজনীন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জ্বালানি নিরাপত্তা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। তবে আমাদের মতো বিশাল জনগোষ্ঠীর এইদেশে জ্বালানী চাহিদা মেটানো স্বল্প মেয়াদে সম্ভব না হলেও, দীর্ঘ মেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও যথাযথ ব্যবহার কার্যক্রমের দিকে সরকারকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভয়াবহ সংকট নিরশনে দেশ ও জাতির জন্য হবে সরকারের সফল পদক্ষেপ।

যদিও ইতোমধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশকিছু দেশ বায়ুশক্তি, সামুদ্রিক ঢেউ ও তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট জ্বালানির ওপর অধিক নির্ভরশীলতাকে কমিয়ে আনার জন্য বৈচিত্রময় জ্বালানি মিশ্রণকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট নিরশনে কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের চারপাশে প্রকৃতিসম্পদ ও এখান কার পরিবেশ বিশেষ করে সবকিছু অনুকুলে থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা জ্বালানি চাহিদা নিশ্চিতকরণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি মিশ্রণ গড়ে তুলতে পারছি না, তার যথাযথ কারণগুলো দ্রুত চিহিৃত করে সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদিও আমাদের দেশে জৈব গ্যাস প্রযুক্তি ইতিমধ্যে সম্ভাবনাময়ী খাত হিসেবে চিহিৃত হয়েছে, যা ইতিবাচক। এটাকে কিভাবে আরো অধিক কার্যকরী ও ব্যবহার উপযোগী করা যায় সেই উপায়গুলো দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। যদিও সরকারের বেশকিছু উদ্যোগ এক্ষেত্রে আমাদের মনে আশার সঞ্চয় করে। তা হলো ইতোমধ্যেই বায়ূপ্রবাহ শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষুদ্র প্রয়াসে কক্সবাজারের চকোরিয়া চিংড়ি খামার স্থাপন এবং ব্রাকের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১১টির মতো টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে। জলবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এখানে ৭টি ইউনিটের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৩০ মেগাওয়াট। এছাড়াও তরঙ্গবিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুৎ থেকে কিভাবে জ্বালানি সংকট লাগব করা যায় সেই ক্ষেত্র গুলো নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করি। তবে কিভাবে উক্ত উৎসগুলো থেকে আরো অধিক জ্বালানি উৎপাদন, বিনিয়োগকারী সৃষ্টি ও শিক্ষিত বেকার যুবকদের ঋণপ্রদানের সহায়তায় দিয়ে উক্ত কাজে আগ্রহ বাড়ানো যায় সেই বিষয়গুলোর দিকে সংশ্লিষ্টদের অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। কেননা জলবায়ূবান্ধব অর্থনীতি এবং উন্নয়নের জন্য হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসগুলোর প্রতি সংশ্লিষ্টদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া এই মুহূর্তে অধিক জরুরী বলে মনে করি। যদিও এই কথাটি সত্য, এখন এদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ উক্ত জ্বালানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাকি প্রায় ৪১ ভাগ মানুষ এরমধ্যে ৭৬ ভাগ শহর ও ২৮ ভাগ গ্রামের মানুষ উক্ত সুবিধা ভোগ কওে যা দুঃখজনক। এক্ষেত্রে চাহিদানুয়ায়ী জ্বালানি ঘাটতি পূরণে সরকারকেই সম্ভাব্য সবধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উক্ত কাজে দেশের সম্ভাবনাময়ী সুবিশাল মানবসম্পদকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে জ্বালানি সংকট নিরমূলে যা যা করণীয় তা দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের অধিক উদ্যোগী ও কার্যকরি ভুমিকা পালন করতে হবে।

ইহা বাস্তবায়নে অধিক বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করতে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে অধিক প্রচারের ব্যবহা গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগের বিপরিতে ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদিত জ্বালানি পর্যাপ্ত বাজারজাতকরণের সার্বিক নিশ্চয়তা প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এইসব প্রকল্পে অধিক প্রশিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ ও আার্থিক সহায়তা দিয়ে এই ধরনের কাজের মাধ্যমে আত্মকর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণে ব্যাংক ও বিত্তবাদদের এগিয়ে আসতে হবে। সকল প্রকার গ্যাসের সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও বৈষম্যরোধ করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ব্যাংক লোন প্রদান ও সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য বাস্তবভিত্তিক বাজার ও ব্যবহারকারী তৈরী ও তাদের অধিক আগ্রহ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বিপরিতে যেন লাভের মুখ দেখতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাইভেট পরিবহণকে গ্যাসের আওতামুক্ত করতে হবে। গ্রাহকদের সক্ষমতা অনুযায়ী যৌক্তিক পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। অবৈধ সংযোগ দ্রুত উচ্ছেদ, পরিবহনে সিএনজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদেরকে কার্ডের আওতায় আনায়নসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎসগুলোর প্রতি অধিক দৃষ্টি দেওয়া বর্তমান পরিস্থিতে অধিক জরুরী। সরকারের উচিত হবে নিজেদেরকে সকলপ্রকার বির্তকের উর্ধ্বে রেখে দক্ষতা, সততা ও বিশেষজ্ঞদের ধ্যান ধারণাকে নিয়ে সমন্বিত প্রশাসনিক পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশবাসীকে বিদ্যুৎ, গ্যাস তথা সকলপ্রকার জ্বালানি সংকটের হাত থেকে রক্ষা করা এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য নিরাপদ ও সুন্দর স্বদেশভূমি নিশ্চিত করা। তাই আমরা মনে করি, অধিক মূল্যবৃদ্ধি নয় বরং উক্ত সংকট নির্মূলে উল্লেখিত বিষয়গুলো কতদ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন জনগণ আপনাদের কাছে এমনটিই প্রত্যাশা করেন।

লেখক: কলামিষ্ট, উত্তরা, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test