E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সংকট কালের পরামর্শ !

২০১৪ নভেম্বর ৩০ ১৮:৫৯:৩৯
সংকট কালের পরামর্শ !

চৌধুরী আ.হান্নান : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ব্যর্থতার জন্য দলীয় নেতাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রধান কারণ হলো- সংকটকালে তাঁকে বুদ্ধি না দেওয়া। বর্তমানে দলটির মহাসংকট কাল চলছে। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশংকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথচ জে. জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিতে বিজ্ঞ-ঝানু রাজনীতিকের অভাব নেই। তবে কেন তাঁরা দলীয় প্রধানকে প্রয়োজনের সময় বুদ্ধি পরামর্শ দেন না?

দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকলে পরামর্শ দেওয়া স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করা সব সময় নিরাপদ নয়। সরকার বা দলের আচরণ যখন স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠতে থাকে তখন সরকার প্রধানকে বা দলীয় প্রধানকে মন্ত্রনা দেওয়ার সাহস কেহ পায় না। তাছাড়া দলের ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু যখন ‘অন্য কোথাও’ তখন প্রকৃত হিতাকাংখীরা হতাশ হয়ে পড়ে, নিজেদের গুটিয়ে রাখতে চায়।

নিকট অতীতের ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে বিএনপি প্রধান বর্তমানে অস্থির আছেন। গত বছর শেষ ৬ মাসে বিএনপি-জামায়াত জনগণকে যে বিভীষিকাময় অস্থিরতা ‘উপহার’ দিয়েছে তার একটা ফিরতি মূল্য থাকবে না!

বলা হচ্ছিল প্রয়োজনের সময় উপদেশ দেওয়ার কথা। প্রসংগত বলা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকের প্রায় এক যুগ স্থায়ী যুদ্ধে দুই দেশের প্রায় দশ লাখ লোক মারা গিয়েছিল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিয়াদ ইব্রাহীম ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে আসার জন্য সাদ্দাম হোসেনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পরিনতিতে তাকে হত্যা করে লাশ তার স্ত্রীর নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরামর্শ পছন্দ না হলে পরামর্শদাতার জীবন সংশয় হতো। প্রতিপক্ষ, সন্দেহভাজন প্রতিপক্ষকে সাদ্দাম হোসেন জীবিত রাখা পছন্দ করতেন না। তার দুই পুত্র ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করে এ সকল কাজে উৎসাহ পেতেন। বন্দুকের ডগায় ৩০ বছর দেশ শাষণ করেন সাদ্দাম।

মোঘল বংশের তৃতীয় সম্রাট আকবর মাত্র ১৩ বছর বয়সে সিংহাসন লাভ করেছিলেন এবং প্রায় ৫০ বছর ভারত শাসন করেছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন নিরক্ষর-লিখতে ও পড়তে পারতেন না। তিনি রাজসভায় সকলের মতামত শ্রবণ করতেন, সকল ধর্মাবলম্বির মত শুনতেন, প্রশ্ন করে সঠিক বিষয় জেনে নিতেন। তিনি রাজ্য শাসনে ও রাজনীতিতে বিস্ময়কর সফলতা এনেছিলেন। বিনয়, উদারতা, রাষ্ট্রনায়কোচিত মন না থাকলে কেউ অন্যের মতামতকে গ্রহণ করতে পারে না।

বিএনপিকে নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে পরিনত করা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় হতে পারে কিন্তু তা সরকারের জন্য শুভ হতে পারে না। সরকারকে বিএনপি একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। রাজনৈতিক এমন পরিস্থিতিতে সরকারের স্বৈরাতান্ত্রিক চরিত্র প্রকাশ পেতে বাধ্য। এ অবস্থায় রাজনৈতিক কৌশল, কুট কৌশল অবলম্বন করে বর্তমান সরকার যদি আগামী ২০ বছর ক্ষমতা আকড়ে থাকতে চায়, সে দুর্ভাগ্যের দায় বিএনপি ও এড়াতে পারে না।

রোমানিয়ার চসেস্কু ২৫ বছর, ফিলিপাইনের মার্কোস ২০ বছর, ইরানের রেজা শাহ পাহলোভি ৩০ বছরের অধিক ক্ষমতা আকড়ে ছিলেন। বিএনপি অনেক বেশি খেতে চেয়েছিল, ফলে কিছুই খেতে পারেনি।

বিগত ৯ম সংসদের ৪১৮ কর্ম দিবসের মধ্যে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া মাত্র ১০ দিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। তাহলে তিনি কিভাবে নিজেকে জনগণের নেত্রী দাবি করেন? বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করতে চাই সিনিয়র নেতাদের ধমকাবেন না বরং অতীত কর্মের জন্য জনগণের নিকট ক্ষমা চান। তারপর নতুন করে শুরু করুন যাতে গণতন্ত্র রক্ষায় আপনার দল ও অবদান রাখতে পারে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test